গত বিধানসভা ভোটের দিন শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চার গ্রামবাসীর মৃত্যুর তদন্ত এখনও বিশ বাঁও জলে (‘ফিরে এল ভোট, তদন্ত শেষ হল না শীতলকুচির’, ১৭-৪)। রাজ্য পুলিশের অভিযোগ, চার গ্রামবাসীর মৃত্যুর তদন্তে বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করেনি কেন্দ্রীয় বাহিনী। তদন্তকারীদের দাবি, ওই ঘটনায় একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী তাঁদের জানিয়েছিলেন, গোলমালের সময় শূন্যে গুলি চালিয়েছিলেন জওয়ানেরা। পরে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা ফের ঘটনাস্থলে এলে গোলমাল ব্যাপক আকার ধারণ করে। ওই সময়ই বুথ লক্ষ্য করে ওই জওয়ানেরা গুলি চালান বলে তদন্তে জানতে পারেন তদন্তকারীরা। এমনকি ফরেন্সিক তদন্তেও বুথ লক্ষ্য করে গুলি চালানোর প্রমাণ মিলেছিল বলে সূত্রের দাবি। তিন বছরেও তার কিনারা হল না।
দাড়িভিটের ঘটনা ঘটেছিল সেপ্টেম্বর, ২০১৮। স্থানীয় স্কুলের ছোট ছোট পড়ুয়ারা পঠনপাঠন ছেড়ে প্রতিবাদ করছিল। তাদের অভিযোগ ছিল ইংরেজি, অঙ্ক শিক্ষকের পরিবর্তে শিক্ষা দফতর থেকে উর্দু, সংস্কৃত বিষয়ের শিক্ষক পাঠানো হয়েছিল। প্রতিবাদ, অবরোধ সামাল দিতে পুলিশের গাড়ি আসে। লাঠি চলে, ইট বৃষ্টি হয়, বোমা ফেলা হয়, গুলি চলে, গুলিতে ওই স্কুলের উনিশ-কুড়ির দু’জন প্রাক্তন ছাত্র, তাপস বর্মণ ও রাজেশ সরকার, নিহত হন। সিআইডি তদন্ত ভার হাতে নেয়। এখানে প্রায় ছ’বছর অতিক্রান্ত, সিআইডি তদন্তে কোনও অগ্রগতি হয়নি। এখানে তো অনেক প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন, সর্বোপরি ঘটনাস্থলে পুলিশের গাড়ি ছিল। তার পরও জানা গেল না কোন জায়গা থেকে গুলি চলেছিল।
শীতলকুচির ঘটনার চার্জশিট দেওয়ার লক্ষ্যে জোরকদমে তদন্ত চললেও দাড়িভিট ঘটনার তদন্ত সেই লক্ষ্যে এগোল না কেন? সম্প্রতি কলকাতা উচ্চ আদালতে সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারক সিআইডি তদন্তে কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন, বোমাবাজি হওয়ায় তদন্তভার এনআইএ’র হাতে তুলে দেন। রাজ্য সরকার সিঙ্গল বেঞ্চের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে গেলেও সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল রাখে। আদালত থেকে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকেও রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল। দায়সারা সেই রিপোর্ট দেখে বিচারকের যথার্থ পর্যবেক্ষণ এবং আক্ষেপ, ছাত্র-মৃত্যুর মতো অভিযোগ সত্ত্বেও প্রশাসন উদাসীন। এই উদাসীনতা শুধু একটি ক্ষেত্রেই নয়, অনেক ঘটনায় উল্লেখ করা যায়। হাওড়ার আমতায় কলেজ ছাত্র আনিস খানের মৃত্যুও একই ভাবে সমাজকে নাড়া দিয়েছিল। সে ক্ষেত্রেও প্রশাসনের দিকে অভিযোগ উঠেছিল। তার বিচারও আজও অধরা।
দেখা যাচ্ছে, যে ক্ষেত্রে অভিযোগের আঙুল প্রশাসন বা শাসক দলের দিকে উঠেছে, সেই সব ক্ষেত্রে তদন্তে প্রশাসন উদাসীন থাকছে। আবার যে ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে দোষী প্রমাণ করতে পারলে শাসক দলের রাজনৈতিক সুবিধা, সে ক্ষেত্রে অনেক সময় তদন্তের ক্ষেত্রে প্রশাসন অতি সক্রিয় হয়ে যায়। শীতলকুচি, দাড়িভিট এবং আনিস খানের মৃত্যুর মামলায় তদন্তের গতি দেখলেই সেই সত্য উঠে আসে।
এটা সুস্থ প্রশাসনের নজির তৈরি করে না। গণতন্ত্রও দুর্বল হয়।
অসিত কুমার রায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
ধর্মের ঢাল
‘নিজের কথা নিজে বলা’ (৩১-৫) শীর্ষক সাবির আহমেদের প্রবন্ধ ঘিরে এই চিঠি। সংখ্যাতত্ত্বের নিরিখে তিনি যথার্থই লিখেছেন, ইন্দিরা গান্ধী তাঁর রাজনৈতিক জীবনে আইনসভায় প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে সহনাগরিক মুসলমানদের যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের পরিচয়, বিশেষ করে আজকের অসমে হিন্দুত্ববাদী শক্তির দাপটের নিরিখে শ্রীমতী গান্ধীর আমলে সে রাজ্যে আনোয়ারা তৈমুরের মুখ্যমন্ত্রিত্বের যে বিষয়টি তুলে এনেছেন, সেটি ইতিহাসের প্রতি সুবিচার। প্রবন্ধকার এ আর আন্তুলের কথা লিখেছেন। রাজনীতিক হিসেবে আন্তুলেকে ঘিরে বিতর্ক থাকলেও কেন্দ্রের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী থাকাকালীন হেমন্ত কারকারের হত্যা ঘিরে তদন্তের দাবিতে তিনি সরব হয়েছিলেন।
প্রবন্ধকার শ্রীমতী গান্ধীর সময়কালের কথা বললেও, যেটা বলেননি সেটা হল— পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরা সব স্তরের নির্বাচনেই প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে চির দিন মুসলমান সমাজকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। প্রশাসনিক দায়িত্বে মুসলমানদের নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সৈয়দ মনসুর হাবিবুল্লাহের মতো অভিজাত স্তর থেকে উঠে আসা মানুষকেও যেমন তাঁরা গুরুত্ব দিয়েছিলেন, তেমনই আবদুল বারি বা আনিসুর রহমানের মতো প্রত্যন্ত গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষককেও গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তবে ধর্মনিরপেক্ষতার অন্যতম মূল সূত্র, সংখ্যালঘুর অধিকার সুনিশ্চিত করা— এই প্রশ্নে ভারত চির দিন নতজানু হয়ে থাকবে পণ্ডিত নেহরুর প্রতি।
আরএসএস-এর রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি ভারতের মুসলমানদের নাগরিক অধিকারই দিতে চায় না। তাদের তাত্ত্বিক ভিত্তির অন্যতম নির্মাতা গোলওয়ালকর তাঁর ‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ তত্ত্বে ভারতের মুসলমানদের হিন্দুদের (রাজনৈতিক হিন্দুদের) অধীনস্থ থাকার নিদান দিয়ে গিয়েছেন। সেই তত্ত্বকে বাস্তবায়িত করাই সঙ্ঘ, বিজেপির লক্ষ্য। প্রবন্ধকার যে বিগত দশ বছরে সংসদে মুসলমান স্বার্থের পরিপন্থী আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন, সেটি এই সংখ্যাগুরু আধিপত্যবাদেরই নিদর্শন। সেই সব আইন প্রণয়নে বিজেপির কী ভূমিকা, তা আমাদের অজানা নয়। কিন্তু আলোচ্য হওয়া প্রয়োজন অবিজেপি রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা। বিজু জনতা দল, তৃণমূল কংগ্রেস, এআইএডিএমকে-র মতো আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকাও আলোচনাতে উঠে আসা দরকার।
অতীতে ভারতে যে যে রাজনৈতিক দল সরকার পরিচালনা করেছে, মুসলমান সমাজের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন, আধুনিক প্রযুক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা, বিজ্ঞানমুখী স্বাস্থ্যব্যবস্থা— এই সব বিষয়ে তাঁরা কখনও আন্তরিক ভূমিকা নেয়নি। দুর্ভাগ্য, বিজেপির সে দিন এত রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও দেশের অন্য রাজ্যগুলি মুসলমান সমাজে আধুনিক শিক্ষা ঘিরে তেমন কোনও উদ্যোগ করেনি। সাচার কমিটির রিপোর্টে বেরিয়ে আসছে মুসলমান সমাজের আর্থ-সামাজিক দুরবস্থার কথা। আইনসভাতে মুসলমান প্রতিনিধিরা যদি নিজেদের সমাজের আর্থিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সঙ্কট ঘিরে কখনও কোনও প্রাইভেট বিল আনার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতেও পারেন, তা হলে দলমত নির্বিশেষে সমস্বরে সবাই সেই সাংসদদের বলবেন ‘সাম্প্রদায়িক’।
গৌতম রায়, ভাটপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
উদাসীনতা
বারুইপুর বাইপাস সংলগ্ন পদ্মপুকুর থেকে শাসনগামী রাস্তার পাশে পথচারীদের হাঁটার যে রাস্তা এবং বাগান নির্মিত হয়েছিল, তা দীর্ঘ দিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন চলাচলের অযোগ্য। সৌন্দর্যায়নের জন্য যে শতাধিক বাতিস্তম্ভ লাগানো হয়েছিল, তার সবগুলিই চুরি হয়ে গিয়েছে। রাস্তার ধারের রেলিংয়ে আবার নতুন করে গত বছর যে বাতিগুলি লাগানো হয়েছিল, সেগুলিও বিগত কয়েক মাস ধরে আর জ্বলে না। পাশেই দু’টি মদের দোকান থাকায় সন্ধ্যার পর অন্ধকারে ডুবে যাওয়া ওই এলাকা সমাজবিরোধীদের আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রাস্তার পাশে বসার জন্য যে গ্রানাইটের আসন নির্মিত হয়েছিল, তার পাথরগুলি পর্যন্ত ভেঙে উপড়ে ফেলা হয়েছে। গোটা রাস্তা এখন পার্থেনিয়াম গাছের জঙ্গলে ঢাকা পড়ে গেছে। জঙ্গল এবং ঝোপঝাড়ে ঢাকা রাস্তায় নিত্যদিন সাপের আনাগোনাও চোখে পড়ছে। এ দিকে সৌন্দর্যায়নের জন্য যে গাছগুলি রোপণ করা হয়েছিল, সেগুলি অধিকাংশই নষ্ট হতে বসেছে পরিচর্যার অভাবে। এই বিপুল চুরি হওয়া সরকারি সম্পত্তির কোনও তদন্ত হয়েছে কি না জানা নেই। অথচ, মানুষের করের টাকাতেই তা নির্মিত হয়েছিল।
সৌম্যকান্তি মণ্ডল, কলকাতা-১৪৪