‘মানুষের রক্তেও এখন প্লাস্টিক’ (২৭-৪) শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে এই পত্রের অবতারণা। প্লাস্টিক বর্জনের আহ্বান ও সিদ্ধান্ত বহু দিন ধরে নিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, প্লাস্টিকের ব্যবহার বর্জনীয়। তবু তো আড়ালে-আবডালে চলছে প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার। শিশুদের বেশির ভাগ খাবারই যে সমস্ত কন্টেনার বা প্লাস্টিকের প্যাকেটে থাকে, তা সবই রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। পলিইথাইলিন, পলিস্টেরাইনের মতো রাসায়নিক, যা শিশুদের অত্যন্ত ক্ষতি করতে পারে। শিশুরা না বুঝেই তো চকলেট কিংবা কেকের প্যাকেট চেটে খায়। ফলে এই বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রভাব ওদের শরীরের উপর পড়তে পারে। তাই শিশুদের ব্যাপারে আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। মানুষের রক্তেও এখন প্লাস্টিকের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে— এ আমাদের কাছে এক ভয়ঙ্কর খবর। বিশেষ করে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের কথা ভেবে আমাদের প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতেই হবে। হাটে-বাজারে ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা কেউ যাতে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করতে না পারেন, সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। এর জন্য একটা ব্যবস্থা করা যেতে পারে। একটা বাজার কমিটি গঠন করে তাদের দায়িত্ব দিতে হবে। যাঁরা বাজারে কেনাবেচা করছেন, তাঁদের কেউ যাতে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার না করেন, তা দেখা এবং শাস্তিস্বরূপ জরিমানা আদায় করার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে কিছুটা হলেও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো যেতে পারে।
কুহু দাস
দশগ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর
সচেতনতা চাই
নবনীতা দত্তের সঙ্গে সহমত পোষণ করে ‘মানুষের রক্তেও এখন প্লাস্টিক’ প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু জরুরি কথা। শতকরা প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির গবেষণালব্ধ ফলাফলটি খুবই উদ্বেগের। তবে যে ভাবে মানুষের মধ্যে প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে, এই সত্যটি অপ্রত্যাশিত ছিল না।
প্লাস্টিক দূষণ রোধে সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ, দুটোই সমান জরুরি। ব্যক্তিগত ভাবে আমরা এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ প্রভৃতির ব্যবহার অনেকাংশে বন্ধ করতে পারি। পুরনো অব্যবহারযোগ্য পোশাক থেকে ছোট বড় মাঝারি মাপের ব্যাগ তৈরি করলে নাইলনের ব্যাগ ব্যবহার করতে হয় না। বাজার করতে গেলে এই ব্যাগগুলির সঙ্গে বিভিন্ন সাইজ়ের টিফিন বক্স নিয়ে যেতে হবে, যাতে গুড়, মিষ্টি, মাছ, মাংস, পনির সরাসরি ক্যারিব্যাগে না নিতে হয়। মশলাপত্র কিনতে হবে কাগজের ঠোঙায়। এনে কাচের শিশিতে রাখতে হবে, এতে মশলা ভালও থাকে। আমি নিজে এ ভাবেই প্রস্তুত হয়ে বাজার করতে যাই। এই অঞ্চলের দোকানদাররাও জেনে গিয়েছেন, আমি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ নিই না। দোকানদারকেও সচেতন করতে হবে ক্রেতাদের। এ ছাড়া বাড়িতে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের বালতি, তামা ও স্টিলের জলের বোতল, মাইক্রোওভেনের জন্য কাচের পাত্র ব্যবহার করা যায়। সর্বতো ভাবে চেষ্টা করতে হবে কী ভাবে প্লাস্টিকদ্রব্য এড়িয়ে চলা যায়। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পারলে তো আখেরে নিজেদেরই লাভ।
এই মুহূর্তে প্রতিটি শহর ও শহরতলি এলাকায় নিয়মিত বর্জ্য সংগ্ৰহ করে বিনষ্ট করার সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। মিউনিসিপ্যালিটি এলাকাতেও ভ্যাট উপচে নীচে পড়ে থাকে বর্জ্য। ৫০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ হলেও তা যথেচ্ছ ব্যবহৃত হয়। দেখেছি শিক্ষিত ব্যক্তিরাও সচেতন অবহেলায় চার-পাঁচটা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে বাজার করে নিয়ে যাচ্ছেন! প্রশাসনের কোনও নজরদারি থাকে না। এ ব্যাপারে সরকারকে কঠোর ও সক্রিয় হতে হবে। আগামী জুলাই মাস থেকে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হবে। কিন্তু কতটা তা মান্যতা পাবে, সে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তার চেয়ে বরং এই সব প্লাস্টিক উৎপাদন বন্ধ করে দিলে প্লাস্টিক দূষণ রোধে তা অধিক কার্যকর সিদ্ধান্ত হত। আমজনতাকে সচেতন করার চেয়ে তা অনেক সহজও হত।
রক্তে যখন প্লাস্টিকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, সে তো গোল বাধাবেই, ডেকে আনতে পারে প্রাণঘাতী রোগব্যাধি। মানবসভ্যতা বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তাই এখনই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্লাস্টিক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।
শুভ্রা সামন্ত
বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর
প্রাণঘাতী
আজকাল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত অধিকাংশই জিনিসই প্লাস্টিকের তৈরি। যেমন— চেয়ার, টেবিল, প্লেট, গ্লাস, জলের বোতল প্রভৃতি। এর মধ্যে কতকগুলি জিনিস, যেমন জলের বোতল কিংবা খাওয়ার প্লেট, সেগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও আমরা তা কাজে লাগাই। এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আর এই ব্যবহৃত জিনিসগুলির মধ্যেই নিহিত রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ, যা খালি চোখে দেখা যায় না। পাহাড়ের চুড়ো থেকে অগভীর সমুদ্র, সর্বত্রই দৃশ্যমান এই প্লাস্টিক।
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। হয়তো বাতাসে ভাসমান দূষণ কণার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় এমন বহু রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা এক বার মানবশরীরে আশ্রয় নিলে থেকে যায় বেশ কয়েক দশক, ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। সেই সঙ্গে অঙ্গগুলির স্বাভাবিক বিপাকক্রিয়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ধীরে ধীরে অচল করে দেয় শরীরের বিভিন্ন কোষ। ডেকে আনতে পারে নানাবিধ রোগব্যাধি, যা হতে পারে প্রাণঘাতী।
২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বে ফি বছরে গড়ে ৩৮ কোটি টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এখনই এর ব্যবহার বন্ধ না হলে ২০৪০ সালে প্লাস্টিক বর্জ্য বেড়ে হবে দ্বিগুণ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, খাদ্য, জল বা প্রশ্বাসের সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবশরীরে প্রবেশ করে। অথচ, দূষণের এই ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত হয়েও কিছুতেই ছাড়ছি না আমরা এর ব্যবহার। বরং উত্তরোত্তর জীবনসঙ্গী করে তুলেছি প্লাস্টিককে, যা চরম বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে আমাদের আগামী প্রজন্মকে। সরকার প্রণীত কড়া আইন ছাড়া ক্ষতিকর এই প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করা কঠিন, এটা সকলেই জানেন। কিন্তু এর পাশাপাশি মানুষের আত্মসচেতনতা, মূল্যবোধ যদি জাগ্রত না হয়, তা হলে এই দূষণ রোধ করা সম্ভব হবে কি?
উৎপল মুখোপাধ্যায়
চন্দননগর, হুগলি
পাখিদের জল
এখন ভরা গ্রীষ্ম। চড়ছে উত্তাপের পারদ। খাল, বিল দ্রুত শুকনো হচ্ছে। এই মরসুমে বিপদে পড়ে পাখিকুল। সময়ের সঙ্গে অনেক পাখিই আজ বিরলের তালিকায়। বিশেষ করে শহরের দিকে পাখিদের কলতান তেমন শোনা যায় না। তবুও যে সব পাখি এখনও আমাদের চার পাশে টিকে আছে, এই গরমে পানীয় জলের অভাবে যাতে তাদের অকালপ্রয়াণ না ঘটে, সেই জন্য আমাদের একটু সহায়তা করতে হবে। ছাদে, উঠোনের খোলা জায়গায় বা বারান্দায় বড় মুখওয়ালা (গামলা জাতীয়) পাত্রে ওদের জন্য জল রাখতে হবে। ওদের জন্য প্লাস্টিকের ২ লিটারের বোতলে জল ভরে বড় মুখওয়ালা জলদান পাত্রে উল্টো করে রেখে দিয়ে ‘বার্ড ওয়াটার ফিডার’ করে নিলে এক বার বোতলে জল ভরে দিলেই দু’-তিন দিন আর জল দিতে হবে না। ওরা যতটা জল পান করবে, সেই মতোই জল খরচ হবে। আমরা হাঁস-মুরগির খামারে অনেকেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করি। সারা গ্রীষ্মকাল ধরে শহরের অলিতে গলিতে, গ্রামের বড় রাস্তার ধারে ‘জলসত্র’ বসে। সেই দানের জলে ছাত্রছাত্রী থেকে পথচারী, আমজনতা উপকৃত হন। কিন্তু পশুপাখিদের কথা তেমন ভাবে ভাবা হয় না। সামান্য জলের ব্যবস্থা করে ওদের বেঁচে থাকতে সহায়তা করলে আমাদেরই বাস্ততন্ত্রের ভিত সুদৃঢ় হবে।
অরিজিৎ দাস অধিকারী
সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর