গত ৪ মে মোহনবাগান যে তার লক্ষ লক্ষ ভক্তের আশার ফানুস ফাটিয়ে ৩-১ গোলে মুম্বই এফসি-র কাছে পরাজয় স্বীকার করে নেবে, তা কেউ ভাবতেই পারেনি। শুধু আবেগ দিয়ে বা ৬৫ হাজার দর্শকের চিৎকার দিয়ে যে কোনও খেলা জেতা যায় না, সে দিনের খেলা তার প্রমাণ। নামীদামি খেলোয়াড়দের স্কিল তুল্যমূল্য। এখনকার ফুটবলে দরকার স্ট্র্যাটেজি, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত এবং ফুটবলারের দৃঢ় মানসিকতা, যার জন্য এখন মনোবিদদের এত রমরমা। যার অবদান সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় জ্বলে ওঠা। খেলায় জনি-কাউকো যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন, যার ফলে বলের তেষ্টায় ছাতি ফাটল দিমিত্র আর কামিংসের। কফিনের পেরেকটা মারলেন ‘বিপিনবাবু’, যার কারণে মোহনবাগানের নৌকা টলমল। অনেক উত্তেজনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত জিতল ফুটবল।
কিন্তু কয়েকটা জিনিস একটু খারাপও লাগল। মুম্বই এফসি-র ভাল মুভমেন্ট দেখে মোহনবাগান গ্যালারি থেকে এক জনকেও হাত তুলতে দেখলাম না। নিজের প্রিয় দল হেরে যাচ্ছে দেখে খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সারা মাঠে এ রকম শ্মশানের শান্তি অনেক দিন দেখিনি। পুরস্কার দেওয়ার সময়ে দেখলাম গ্যালারি একদম ফাঁকা। মুম্বই দল আমাদের অতিথি। তারা খেলে জিতেছে। অথচ, তাদের সম্মান জানানোর জন্যে গ্যালারিতে কেউ ছিল না। বাংলার দর্শকের স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের তো কোনও দিন অভাব ছিল না। আরও খারাপ লাগছিল, যে সমস্ত পদাধিকারী, আমলা বা সেলেব্রিটি পুরস্কার দিচ্ছিলেন, তাঁদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে। পুরস্কার হাতে তুলে দেওয়া বা গলায় পরিয়ে দেওয়ার সময়ে হাসিমুখ রাখা শোভনীয়। অথচ, অনেকের মুখ দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁরা সেই সহজ কথা মনে রাখেননি। শেষে বলি, খেলা হচ্ছিল ফুটবলের মক্কা কলকাতায়। খেলছিল শতবর্ষ প্রাচীন মোহনবাগান ক্লাব। অথচ, মাঠের মধ্যে লড়াই করছিলেন মাত্র এক বা দু’জন বাঙালি। এর জন্যে কাকে দোষ দেব?
রণজিৎ মুখোপাধ্যায়, মুড়াগাছা, নদিয়া
ঠান্ডায় খেলা
ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির জন্য বর্তমানে অনেক প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। বহু অর্থ ব্যয় করে বিদেশি দক্ষ খেলোয়াড়, নামী প্রশিক্ষকদের আনা হচ্ছে। কিন্তু আশানুরূপ উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। মাঠে প্রচুর দর্শকসমাগম হলেই ফুটবল খেলার মান উন্নত হয় না। উষ্ণ আবহাওয়ায় অথবা বর্ষাকালে কর্দমাক্ত মাঠে খেলা হলে ফুটবলের মান উন্নত হবে না। এমনিতেই উষ্ণ আবহাওয়ায় খেলোয়াড়দের শারীরিক ক্ষমতা কমে যায়। কারণ, তাঁদের অত্যধিক ঘাম হওয়ার ফলে শরীরে জলাভাব হয়, তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। অন্য দিকে, শীতল আবহাওয়ায় খেলোয়াড়দের দ্রুত গতিতে ছোটার ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে।
উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ শীতের সময় ফুটবল খেলার উপযুক্ত পরিবেশ থাকে। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে সমতলে সারা বছরই গরম থাকে। ওখানে ফুটবলের উপযুক্ত আবহাওয়া নেই। সে ক্ষেত্রে দেশের শৈলশহরগুলি হতে পারে ভাল ফুটবল খেলার আদর্শ ঠিকানা। ফুটবলের মান উন্নত করতে হলে শৈলশহরগুলিতে ফুটবল খেলার উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এখানে অনুশীলন করলে খেলোয়াড়দের খেলার মান দ্রুত উন্নত হবে, এমনটাই আশা করা যায়।
সুশান্ত কুমার ঘোষ, হাওড়া
অন্তঃসারশূন্য
বিপুল অর্থব্যয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রচার এক প্রকার অন্তঃসারশূন্য বিষয় বলে মনে করি। একটি দলের মত, আদর্শ ও কাজ বিচার করে গরিষ্ঠসংখ্যক নির্বাচকের পছন্দে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। অথচ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিজ স্বার্থসিদ্ধির প্রয়োজনে যখন তখন দলত্যাগ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভোটদাতাদের ইচ্ছার বা পছন্দের কোনও মূল্যই থাকে না। জনগণের করের টাকায় ও বহু মানুষের শ্রম দানের বিনিময়ে এই নির্বাচন ব্যবস্থাটিরই জলাঞ্জলি হয়ে যায় এতে। দলত্যাগ বিরোধী আইনের কোনও শক্ত বাঁধন না থাকায় এই যথেচ্ছাচার সমানে চলছে। এই সুবিধাবাদী ব্যবস্থা বহাল রাখার জন্য নিজেদের স্বার্থে আইন প্রণেতাগণ উদাসীন থাকেন, আর ‘নির্বাচক’ সাধারণ মানুষের নীরব দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না।
পার্থ সারথি মজুমদার, বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা
অন্ধকার ভবিষ্যৎ
অশোক কুমার মুখোপাধ্যায়ের “বেড়ে চলা অসাম্যই ‘গ্যারান্টি’” (৬-৫) শীর্ষক প্রবন্ধটি তথ্য ও উপস্থাপনার গুণে চমৎকার। ‘ইনকাম অ্যান্ড ওয়েলথ ইনইকোয়ালিটি ইন ইন্ডিয়া’ রিপোর্টে বলা হয়েছে দেশের ধনীতম ১ শতাংশের হাতে দেশের মোট উপার্জনের ২২.৬ শতাংশ এবং মোট সম্পদের ৪০.১ শতাংশ কুক্ষিগত হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা যায়, উপার্জনের নিরিখে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি হল যথাক্রমে ২০.৬ এবং ১০.২ শতাংশ। সমীক্ষা এটাও জানাচ্ছে, আয়ের হিসেবে একদম নীচের স্তরের ৯০ শতাংশ মানুষ যখন কোনও মতে গড় উপার্জনের সমান আয় ভোগ করছে, সেখানে সবচেয়ে ধনী ০.১ শতাংশের আয় গড় আয়ের ২০৬৮ গুণ।
এটা যদি সত্যি হয়, তা হলে বর্তমান সরকারের ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’, যেটি ভারতকে ২০৪৭ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ ভাবে উন্নত দেশে উন্নীত করবে, সকল নাগরিককে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নে শামিল করবে, সেই প্রকল্পগুলি কি পুরোপুরি অন্তঃসারশূন্য? নীতি আয়োগের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ভারতে বহুমাত্রিক দারিদ্র ২০১৩-১৪ সালে ২৯.১৭ শতাংশ থেকে কমে ২০২২-২৩ সালে ১১.২৭ শতাংশ হয়েছে। এই দুই সমীক্ষার পরস্পরবিরোধী তথ্য প্রশ্ন জাগায়, ভারতে কি সত্যিই দারিদ্র ও ক্ষুধা কমেছে? ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পদ কেন্দ্রীকরণের এই ভয়ঙ্কর বৈষম্যমূলক তথ্য অর্থনীতিবিদদের মধ্যে এক শঙ্কার সৃষ্টি করছে, ভারত কি ধীরে ধীরে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজ়ম’-এ আক্রান্ত হচ্ছে?
চলতি লোকসভা ভোটের ঠিক আগে সারা দেশের রাজনীতি নির্বাচনী বন্ড নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো শাসক দলকে বড় অঙ্কের টাকা অনুদান দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ ভাবেই আস্তে আস্তে মুষ্টিমেয় সর্বক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়ীরা এক সময় দেশের সরকার চালনায় গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ করবে। পরিশেষে, মুখে সাম্যের গান গাওয়া হলেও কার্যক্ষেত্রে তথ্য অন্য কথা বলছে। নব্বইয়ের দশকের বিশ্বায়ন ও উদারীকরণের যে সুবিধা জনসাধারণের পাওয়ার কথা, সেটার সুফল ভাগ হয়ে গেছে মুষ্টিমেয় ক্ষমতাশালীর মধ্যে। এর থেকে মুক্তি পেতে গেলে সরকারকে কর কাঠামোয় পরিবর্তন আনতে হবে। ধনবানদের উপর বিত্ত কর, উত্তরাধিকার কর এবং অতিরিক্ত আয়কর চাপাতে হবে, একই সঙ্গে রাজস্বের যাতে ন্যায্য পুনর্বণ্টন হয়, সে দিকে নজর রাখতে হবে।
গৌতম সরকার, কলকাতা-৭৮