Temporary College Professors

সম্পাদক সমীপেষু: বঞ্চিত পার্শ্বশিক্ষক

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পার্শ্বশিক্ষক হয়েও তাঁদের স্থায়ী শিক্ষকের মতোই দায়িত্ব পালন করতে হয়। শুধু তা-ই নয়, স্থায়ী শিক্ষকদের সমান নির্বাচনী দায়িত্বের মতো রাষ্ট্রীয় কর্তব্যও পালন করতে হয় এঁদের।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৪ ০৬:৪৪
Share:

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার বিদ্যালয় শিক্ষক সঙ্কটের কারণে কোনও ক্রমে অস্তিত্ব রক্ষা করছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন প্রক্রিয়া চালু রাখতে পার্শ্বশিক্ষকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পার্শ্বশিক্ষক হয়েও তাঁদের স্থায়ী শিক্ষকের মতোই দায়িত্ব পালন করতে হয়। শুধু তা-ই নয়, স্থায়ী শিক্ষকদের সমান নির্বাচনী দায়িত্বের মতো রাষ্ট্রীয় কর্তব্যও পালন করতে হয় এঁদের। কিন্তু এই শিক্ষকদের যে ভাবে আর্থিক ও সামাজিক ভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তা এক কথায় অমানবিক। একশো দিনের কাজের জন্য এক জন শ্রমিকের যে আয় বরাদ্দ করা হয়, কোথাও কোথাও তার চেয়ে অনেক কম বেতন দেওয়া হয় এঁদের। হাজার হাজার টাকা ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ফোন বা ট্যাবলেট বিতরণের পিছনে ব্যয় না করে এই পার্শ্বশিক্ষকদের একটা সম্মানজনক বেতন দেওয়া হলে পঠনপাঠনের আরও উন্নতি হবে। ফোনের মাধ্যমে লেখাপড়া যে ঠিকমতো হয় না, তা এখন সর্বজনবিদিত। বরং, এর কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা রসাতলে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। খালি পেটে যেমন সমাজসেবা হয় না, তেমনই খালি পেটে যথাযথ বিদ্যাদানও সম্ভব হয় না। এখন আমরা বৈদিক যুগের মতো ফলের আশা না করে কর্ম করে যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। বাজারে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার মতো প্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং ওষুধের দাম যে ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে এই স্বল্প বেতনে পার্শ্বশিক্ষকদের জীবিকা নির্বাহ করা অসম্ভব। সম-কাজে সম-বেতনের অধিকারকে অগ্রাহ্য করে চরম বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে যে ভাবে এদের শোষণ করা হচ্ছে, তা অপরাধের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। শাসক দল নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থে লক্ষ্মীর ভান্ডারের বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে পারে, অথচ শিক্ষার স্বার্থে এই শিক্ষকদের ভাল ভাবে বেঁচে থাকার উপযুক্ত বেতন দিতে পারে না। এই ব্যবস্থা শুধু সমাজের নয়, রাষ্ট্রের জন্যও লজ্জার।

Advertisement

অজয় দাস, উলুবেড়িয়া, হাওড়া

উন্নতি হচ্ছে?

Advertisement

শিক্ষার ক্ষেত্রে বলা হয়, গুণগত মানে জোর দিতে হবে। কথাগুলো আপাতদৃষ্টিতে ভারী মনে হলেও বাস্তবে হালকা। সেই জন্যই হয়তো পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ‘বনিয়াদি শিক্ষা’র সার্বিক গুণগত মান বৃদ্ধিতে কোনও ‘বাস্তব’ পরিকল্পনা দেখা যায় না। বাজেটেও সেই পরিকল্পনার ছাপ নেই। শিক্ষা যুগ্ম তালিকায় থাকার জন্য কেন্দ্র-রাজ্য ঠেলাঠেলি চলতে পারে, কিন্তু শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্র রাজ্য উভয়েরই সংগঠিত পরিকল্পনা করা উচিত। এ বার ভোট-পরবর্তী বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু সেটা উচ্চশিক্ষাতে, মিড-ডে মিল বা সর্বশিক্ষা মিশনে। এইখানেই প্রশ্ন উঠে যায়, কেন একেবারে শিশু শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষার স্তর থেকেই উন্নত বিশ্বের ন্যায় পড়ুয়াদের সার্বিক বিকাশের জন্য পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়াশিক্ষার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত বা ব্লক ধরে ধরে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ গ্রহণ করা হয় না? কারণ শুধুমাত্র মিড-ডে মিল আর ‘সর্বশিক্ষা মিশন’ দিয়ে শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ অসম্ভব। এতে শুধুমাত্র তাদের বিদ্যালয়-মুখী করা যায়।

এই নিরিখে কিছু প্রশ্ন মনে উদয় হয়। যেমন— এখন বিদ্যালয়গুলোতে কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষার গুরুত্ব তলানিতে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা নাহয় ছেড়েই দিলাম। কারণ সেখানে কোনও কালেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কোনও শিক্ষক নেওয়া হয় না। আর বছরে নামমাত্র একটা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়। তবে, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষার শিক্ষক নেওয়া হলেও এখন অনেক বিদ্যালয়ে ওই পদে শিক্ষক থাকেন না। যদিও বা থাকেন, তাঁদের শিক্ষক ঘাটতি মেটানোর কাজে লাগানো হয়। এই শিক্ষকরা নিজেদের প্রশিক্ষণ কালে যা শিখে আসেন, তা প্রয়োগ করার সুযোগ পান না। হয় বিদ্যালয়ে মাঠের অভাব থাকে নয়তো থাকে না শিক্ষাদানের উপযুক্ত সামগ্রী। অনেক ক্ষেত্রে তো থাকে সদিচ্ছার অভাবও। সুতরাং, সার্বিক উন্নতি কার্যত অসম্ভব।

দ্বিতীয়ত, অনেক বিদ্যালয়ে নেই পর্যাপ্ত ঘর, স্বচ্ছ পানীয় জল, শৌচাগার কিংবা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এই ভাবে ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক বিকাশ ঘটানো যায় কি? তা ছাড়া, সমস্ত ঋতুতে পঠনপাঠনযোগ্য পরিকাঠামো না থাকলে সেখানে ছাত্রছাত্রী বৃন্দের বিকাশ তো দূর অস্ত্, তাদের ঠিকমতো ক্লাসে বসানোর সুযোগ পাওয়া যায় না।

অন্য দিকে রয়েছে বেসরকারি ক্ষেত্রের আগ্রাসী মনোভাব। ওই ঘাটতিগুলো পূরণ করেই এগিয়ে আসে বেসরকারি আক্রমণ। সুন্দর ঝাঁ চকচকে ক্লাসরুম, যাতায়াতের গাড়ি, সুদৃশ্য পোশাকের নিরিখে বেসরকারি স্কুলগুলি টেক্কা দেয় সরকারি শিক্ষামাধ্যমকে। সেখানে থাকে পেশাদারিত্ব, থাকে না সার্বিক বিকাশের ইচ্ছা। সেখানে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সংখ্যা কম। বরং অনেক জায়গাতেই সামান্য অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ করে কাজ চালানো হয়। তবুও অভিভাবকরা বাহ্যিক চাকচিক্যের দ্বারাই আকৃষ্ট হন। বহু ছেলেমেয়ে বেসরকারি স্কুলমুখী হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীর অভাবে প্রচুর সরকারি বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারস্যাপার দেখে মনে হয়, সরকারের সুপ্ত ইচ্ছাও বোধ হয় এটাই। এমনটা হলে সমস্যায় পড়তে হবে প্রত্যন্ত গ্রামের অভাবী শিক্ষার্থীদের। তাদের জন্য কোনও ভাবনার প্রতিফলন কি বাজেটে থাকে?

আমরা এখন দান-অনুদানের অঙ্কেই বিভোর হয়ে থাকি। স্বল্পমেয়াদি সুখে দীর্ঘমেয়াদি সুফলকে বিসর্জন দিই। কিন্তু ওই দানের অর্থ যদি দীর্ঘমেয়াদি ফলের জন্য বিনিয়োগ করা হয়, তা হলে দেশের-দশের ভাল হবে। তা না হলে স্বাধীনতার শতবর্ষেও দেখা যাবে উন্নত দেশের তকমা পেয়েও রাখালরা গরুর পাল নিয়ে মাঠেই যাবে, পাঠশালায় তারা মন বসাতে পারবে না। অর্থাৎ, বিকশিত ভারতে তাদের সার্বিক বিকাশ ঘটবে না।

শুভেন্দু মণ্ডল, বগুলা, নদিয়া

স্কুলের দুর্দশা

এই রাজ্যের সরকার পোষিত বিদ্যালয়গুলির যে কী ভয়ঙ্কর অবস্থা, তার অন্যতম দৃষ্টান্ত ‘নিয়োগ নেই, ইংরেজি পড়াচ্ছেন সভাপতি’ (২১-৭) শীর্ষক সংবাদটি। নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ এবং আরও নানা কারণে স্কুলগুলিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যত বন্ধ। ফলে বহু স্কুলেই দীর্ঘ দিন যাবৎ প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম থাকায় পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। বহু উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবে বিজ্ঞান বিভাগ চালু রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ, এমন অনেক স্কুলও আছে, যেখানে শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া অশোকনগর-সহ বহু স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন অঙ্কও নয়। ঠিক এর বিপরীত চিত্রও আছে অনেক স্কুলে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড়-দু’হাজার, অথচ সেই তুলনায় প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই। এমতাবস্থায় স্কুলগুলিকে টিকিয়ে রাখতে হলে যেখানে উদ্বৃত্ত শিক্ষক আছে, সেখান থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে এনে যে সব স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি আছে, সেখানে নিয়োগ করা জরুরি। এ বিষয়ে সরকার যদি এখনই সজাগ না হয়, তবে সরকার পোষিত স্কুলগুলিকে টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

রতন চক্রবর্তী, উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

টিকিট কাটা

সম্প্রতি রেল কর্তৃপক্ষ বাড়ি থেকে অ্যাপের মাধ্যমে লোকাল ট্রেনের টিকিট কাটার ব্যবস্থা করেছেন। এতে যাত্রীদের অনেক সময় বাঁচছে, খুচরো নিয়ে হয়রানিও বন্ধ হয়েছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষও যদি ঠিক একই ভাবে বাড়ি থেকে টিকিট কাটার ব্যবস্থা করেন, তা হলে আমার মতো যারা মাঝে-মধ্যে মেট্রো ব্যবহার করে, তাদের প্রভূত উপকার হয়।

অমিতাভ সরকার, কলকাতা-৩৬

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement