অমর্ত্য সেন।
অমর্ত্য সেনের ‘রাজনৈতিক আগ্রহই আমাকে...’ (রবিবাসরীয়, ১৮-৮) স্মৃতিচারণ এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপক সেন আমার এক ক্লাস নীচে পড়তেন। আমি ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ছিলাম। তিনি ছিলেন অর্থনীতির। তারও আগে, তখন তিনি প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি হননি, আমরা দুই বন্ধু (অন্য জন সুহৃদ মল্লিক, পরবর্তী কালে আইএএস) শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের সময় গিয়েছিলাম। ঠাঁই নিয়েছিলাম ভেল্টুদাদের (সুব্রত রায়, নেপাল রায়ের নাতি) বাড়ি। তার পাশের বাড়িটা অমর্ত্যদের। রাত্তিরে আমাদের দু’জনের শয়নের ব্যবস্থা হয়েছিল সেখানে। তখনই প্রথম পরিচয়। তখন তাঁকে দেখেছি, এক বুদ্ধিদীপ্ত, প্রাণচঞ্চল, টগবগে তরুণ।
অমর্ত্য সেনের নিশ্চয় মনে আছে, কলেজে পড়ার সময় আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়া থেকে এক দল ছাত্রছাত্রী কলকাতায় এসেছিলেন (বোধ হয় মগজ ধোলাই করতে)। প্রেসিডেন্সি কলেজের ফিজ়িক্স থিয়েটার গ্যালারিতে ওঁদের সঙ্গে প্রেসিডেন্সির ছাত্রদের এক বিতর্ক সভার আয়োজন হয়েছিল। কমিউনিস্ট ডিক্টেটরশিপ ভার্সেস ওয়েস্টার্ন ডেমোক্র্যাসি, এ রকম একটা কিছু বিষয় ছিল বিতর্কের। অমর্ত্য সেন, পার্থসারথি গুপ্ত এঁরা বিতর্কের বিষয় থেকে সরে এসে আমেরিকানদের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার, এবং বহির্বিশ্বে ওঁদের আগ্রাসন নীতির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।
কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনের সময় তাঁর সক্রিয় ভূমিকার কথা মনে আছে। বেশ মনে আছে, ওই সময় তাঁর খাকি ট্রাউজ়ার এবং সাদা হাফ শার্ট পরে ব্যস্ততার চেহারাটি। প্রেসিডেন্সি কলেজ ম্যাগাজিনে অতি প্রাঞ্জল এবং মেদহীন গদ্যে লেখা তাঁর প্রবন্ধ ‘বিজ্ঞান বনাম বিজ্ঞাপন’ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম।
শান্তিনিকেতন থেকে আসার দিন অমর্ত্য আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, শান্তিনিকেতন কেমন লাগল। বলেছিলাম পরিবেশ তো দারুণ সুন্দর। তিনি সহাস্যে বলেছিলেন, আপনি তো দেখছি ছবিকে বাদ দিয়ে ফ্রেমের প্রশংসা করছেন। আমার লেখা বই ‘কলেজ স্ট্রীটের দিনগুলি’তে এ সব কথা লিখেছি। এক কপি অধ্যাপক সেনকে তাঁর হার্ভার্ডের ঠিকানায় পাঠিয়েছিলাম। পেয়েছিলেন কি না জানি না।
অধ্যাপক সেন বলেছেন, আমাদের ছাত্রজীবনে কফি হাউস ছিল শ্রমিকদের কো-অপারেটিভ। পরে এক সময় ইন্ডিয়ান কফি বোর্ড অধিগ্রহণ করে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। আমাদের সময় কফি হাউস ইন্ডিয়ান কফি বোর্ডের অধীনেই ছিল। দু’এক বছর পরে ওরা ছেড়ে চলে গেলে, শুনেছি, জ্যোতি বসুর উদ্যোগে কো-অপারেটিভ হয়। কফি বোর্ডের আমলে এক কাপ গরম কফির দাম ছিল মাত্র চার আনা (পঁচিশ পয়সা)। আর কী দারুণ কফি ছিল! তার গন্ধে হলঘর ম ম করত। এখন যে অখাদ্য কফি দেয় তা আর কহতব্য নয়।
সুশীল ঘোষ
কলকাতা-৮
পড়তে হয়
‘কে করবে পড়াশোনা’ (২৫-৮) চিঠিটি পড়লাম। পত্রলেখিকার সঙ্গে একমত। পড়াশোনা অবশ্যই করা উচিত এবং সেটা করা উচিত বিশেষ কোনও উদ্দেশ্য মনের মধ্যে না রেখে। খোলা মনে। চিঠিতে দু’টি প্রশ্ন করেছেন এবং উত্তরও নিজেই দিয়েছেন। প্রথম প্রশ্ন: কাশ্মীরের জনগণের মতামত, গণভোট নেওয়া হয়েছিল ভারতভুক্তির সময়? উত্তর: না, রাজা হরি সিংহ চেয়েছিলেন, তাই অন্তর্ভুক্তি।
প্রশ্ন হল, কী করে জানা গেল কাশ্মীরের মানুষের মতামতের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র রাজা হরি সিংহের ইচ্ছাতেই কাশ্মীর ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল? ইতিহাস তো বলছে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ কাশ্মীরের সাধারণ মানুষই গড়ে তুলেছিলেন, শেখ আবদুল্লার নেতৃত্বে। এবং সেই সময়ের কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের অবিসংবাদিত নেতা শেখ আবদুল্লা কাশ্মীরের ভারতভুক্তির পক্ষেই ছিলেন। তাঁর মতামতকে সাধারণ মানুষের মতামত বলে ধরে নেব না কেন?
দ্বিতীয় প্রশ্ন: হায়দরাবাদের রাজা কি চেয়েছিলেন ভারতভুক্তি? উত্তর: না, সেখানকার জনগণ চেয়েছিলেন ভারতভুক্তি, তাই অন্তর্ভুক্ত।
সত্যিই পত্রলেখিকার একটু পড়াশোনা করা দরকার। কে বলল হায়দরাবাদের মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছিল? কে বলল সেখানে গণভোট হয়েছিল? এবং সর্বোপরি কে বলল হায়দরাবাদের নিজাম ভারতভুক্তির সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করে সম্মতি দেননি? ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হায়দরাবাদের নিজাম ওসমান আলি খান ভারত সরকারকে চিঠি পাঠিয়ে জানালেন যে তিনি হায়দরাবাদের ভারতভুক্তিতে সম্মত। ওই বছরেরই ১১ অক্টোবর নিজামের প্রতিনিধি দল খসড়া চুক্তিপত্র নিয়ে দিল্লি গেলেন। চুক্তির বয়ান বল্লভভাই পটেলের পছন্দ হল না। লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভিপি মেননকে দিয়ে নতুন খসড়া করে প্রতিনিধি দলের হাত দিয়ে পাঠালেন, যেটা নিজামের এগ্জ়িকিউটিভ কাউন্সিলে ৬-৩ ভোটে গৃহীত হল। নিজাম ভারতভুক্তিতে সম্মতি দিলেন, কিন্তু সই করার ব্যাপারে কালক্ষেপ করতে লাগলেন। গড়িমসি করার প্রধান কারণ ইতিমধ্যে মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল-মুসলিমিন বা রাজাকার দলের নেতা কাশিম রিজ়ভি নিজামের ওপর বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করতে লাগলেন এবং রাজ্য জুড়ে অবরোধ সৃষ্টি করলেন যাতে নিজামের প্রতিনিধিরা দিল্লি যেতে না পারেন।
বাধ্য হয়ে নিজাম কাশিম রিজ়ভির লোকেদের নিয়ে নতুন প্রতিনিধি দল তৈরি করলেন এবং তখন থেকেই কাশিম রিজ়ভি ডি-ফ্যাক্টো নিজামের দায়িত্ব নিয়ে নিলেন। নিজামের কোনও ক্ষমতাই রইল না। নতুন ডেলিগেশন যে খসড়া চুক্তি তৈরি করল তা ইংরেজদের সঙ্গে নিজামের যে চুক্তি ছিল তারই কিছু অদল-বদল। চুক্তি এক বছরের। ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর নিজাম শর্তাধীন হায়দরাবাদের ভারতভুক্তির সম্মতিপত্রে সই করলেন।
তার পর হায়দরাবাদ চুক্তির শর্তগুলো লঙ্ঘন করতে শুরু করল। পাকিস্তানকে গোপনে অর্থ দেওয়া, প্রাইভেট আর্মি তৈরি করা ইত্যাদি। সব থেকে যেটা ভাবনার ব্যাপার ঘটল তা হল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর উদ্দেশ্যে বিরাট সশস্ত্র রাজাকার বাহিনী তৈরি করা হল। এ বার আর ভারত সরকারের পক্ষে চুপ করে বসে থাকা সম্ভব হল না। ১৯৪৮ সালের ৩১ অগস্ট ভারত সরকার চরমপত্র দিয়ে রাজাকার বাহিনীকে নিষিদ্ধ করতে বলল। হায়দরাবাদ অস্বীকার করল। ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সৈন্য হায়দরাবাদে প্রবেশ করল। চার দিন বাদে নিজাম আত্মসমর্পণ করলেন এবং ভারতের দাবি মেনে নিলেন। এ বার প্রশ্ন: এর মধ্যে জনগণের ইচ্ছার ব্যাপারটা কোথায়?
অরুণাভ ঘোষ
হাবরা, উত্তর ২৪ পরগনা
নিয়ম মেনে হোক
যে সরকারই ক্ষমতাই আসে, নিজের দলের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান করে দিতে বিভিন্ন রকমের প্রতিষ্ঠান ও পদ তৈরি করে। সেখানে দলীয় আনুগত্যই প্রাধান্য পায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ, প্রশাসনিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক পোস্ট তৈরি হয়। সেখানে যেমন সরকারের আর্থিক লাভ হয় তেমনি আবার মেধাবী ছেলেমেয়েরাও দলীয় আনুগত্য কিংবা আর্থিক সম্বল না থাকায় বঞ্চিত হয়। এমনকি স্থায়ী চাকরিতেও বেনিয়ম দেখা যায়। যোগ্যতমের যদি সঠিক বিচার না হয় তা হলে সামাজিক পরিবেশের ভারসাম্যটাই নষ্ট হয়ে যায়। আর এই কারণে শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য কিংবা প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অদক্ষতা প্রকাশ পাচ্ছে। সরকারি চাকরি যা-ই হোক চুক্তিভিত্তিক অথবা সরকারি বেতন কাঠামো অনুযায়ী তা একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হওয়া উচিত। যাতে কোনও ভাবেই মেধাবী ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত না হয়। সমস্ত সরকারি নিয়োগই নিরপেক্ষ কমিশনের মাধ্যমে হওয়া উচিত। সরকারের পরিবর্তন হয়। দলীয় আনুগত্যও বদলে যায়। কিন্তু তা বলে সরকারি পরিষেবা কি থমকে থাকে? সেখানে কেন নিরপেক্ষতা ও উৎকর্ষতা বজায় থাকবে না?
কৌশিক সরকার
রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১। ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।