‘অন্তরের অন্দরে রয়ে গেল গান’ (পত্রিকা, ৯-১১) শীর্ষক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জানাই, অরুন্ধতী দেবী পাঁচটি বাংলা ছবিতে সুরারোপ করেছিলেন।
প্রথম সুরারোপ করেছিলেন ১৯৬২ সালে পীযূষ বসুর ‘শিউলি বাড়ি’ ছবিতে। তাঁর সুরে মৃণাল চক্রবর্তী গেয়েছিলেন ‘রাই জাগো রাই জাগো’। গানটি উত্তমকুমারের লিপে। অমর পালের কণ্ঠেও গানটি ছবিতে শোনা যায়। আরও একটি গান ছিল, ‘আজু মন্দিরে ও মা’।
দ্বিতীয় ছবি ১৯৬৭ সালের ‘ছুটি’। তাঁর সঙ্গীত তত্ত্বাবধানে এই ছবিতে ‘আমার হাত ধরে তুমি’ ও ‘আমার জীবন নদীর ওপারে’ গান দু’টি প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে অমর হয়ে আছে। চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় ও প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় গেয়েছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘এই লভিনু সঙ্গ তব’। আংশিক ব্যবহার হয়েছিল ‘নাই নাই যে বাকি সময় আমার’, ‘ঘরেতে ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে’, ‘আমার মন কেমন করে’ রবীন্দ্রসঙ্গীত। এ ছাড়াও ছবিতে শোনা গিয়েছিল ‘রজনী প্রভাত হল জাগো মন বিহঙ্গম’, ‘ডিমাক ডিমাক ডিম ডুমরু বাজাইয়ে’ গান।
‘মেঘ ও রৌদ্র’ তৃতীয় ছবি, ১৯৭০ সালে। অরুন্ধতীর সঙ্গীত পরিচালনায় মান্না দে গেয়েছিলেন ‘না চাহিলে যারে পাওয়া যায়’ রবীন্দ্রসঙ্গীতটি। এ ছাড়াও ‘বলি গো সজনী যেও না’, ‘সকল জনম ভরে’, ‘ওলো সই ওলো সই’ (আংশিক) রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিলেন প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর গুহঠাকুরতা। ছিল অমর পালের কণ্ঠে ‘সোনার মানুষ ভাসছে রসে’ ও ‘সোনার মানুষ নৈদাপুরে’ বাউল গান।
চতুর্থ ছবি ‘পদিপিসির বর্মি বাক্স’ মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে। মঞ্জুশ্রী চক্রবর্তী গেয়েছিলেন নজরুলগীতি ‘কে নিবি ফুল’, শ্যামাসঙ্গীত ‘দয়াময়ী নামটি মাগো’। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘পাল্কি চলে গগন তলে’ ছড়াটি ব্যবহার করা হয়েছিল।
১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দীপার প্রেম’ তাঁর পঞ্চম তথা শেষ সুরারোপিত ছবি। এই ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিলেন অরুন্ধতী হোমচৌধুরী ‘তোমার খোলা হাওয়া’ ও শ্রেয়া গুহঠাকুরতা গেয়েছিলেন ‘যত বার আলো জ্বালাতে চাই’। এ ছাড়াও গেয়েছিলেন প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভূপেন হাজরিকা।
বিশ্বনাথ বিশ্বাস
কলকাতা-১০৫
কিসের প্রমাণ
‘অযোধ্যার চেয়ে সত্য’ (১১-১১) শীর্ষক নিবন্ধে লেখক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী প্রায় প্রথমেই রামচন্দ্রকে কাল্পনিক চরিত্র না বলে ঐতিহাসিক ব্যক্তি বলে মনে করছেন, আবার শেষ দিকে বলছেন ‘‘আর রামচন্দ্র যদি এক ইতিহাসপ্রসিদ্ধ পুরুষ হন, তবে অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগেকার একটা প্রমাণ থাকা দরকার— প্রত্নতাত্ত্বিক বা সাহিত্যিক।’’ তা হলে প্রথমে রামচন্দ্রকে ঐতিহাসিক ব্যক্তি বলে তাঁর মনে হয়েছিল কেন? তিনি বলছেন, সাড়ে পাঁচশো বছর আগে নবদ্বীপে শ্রীচৈতন্যের জন্মস্থানই নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তা হলে সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগেকার প্রমাণ আসবে কী ভাবে?
কিন্তু আসল প্রশ্ন অন্য: প্রমাণের প্রয়োজন হচ্ছে কেন? জিশু কোথায় জন্মেছিলেন, কবে জন্মেছিলেন তার প্রামাণ্য দলিল কোথায়? তা সত্ত্বেও তাঁর ভক্তদের ধর্মাচরণে, বিশ্বাসে ঘাটতি হচ্ছে কি? জিশুর জন্মদিন হিসেবে ২৫ ডিসেম্বরকে ধরে নিয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষ আনন্দে মেতে ওঠেন। কিন্তু তিনি যে ওই তারিখেই জন্মেছিলেন তার প্রমাণ কী? রাজা হ্যারডের রাজত্বকাল, তাঁর মৃত্যু, দু’বছরের বেশি বয়সি সমস্ত শিশুর হত্যার আদেশ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করে অনেক পণ্ডিত তো জিশুর জন্ম-বছরকে চিহ্নিত করেছেন খ্রিস্টপূর্ব ছয় থেকে চারের মধ্যে।
ম্যাথু বা লুকের সুসমাচারে দেখতে পাই, মেষপালকরা উন্মুক্ত তৃণভূমিতে রাতের বেলা ভেড়াদের পাহারা দেওয়ার সময় দৈববাণী শুনতে পান, প্রভু জিশু জন্মগ্রহণ করেছেন। অ্যাডাম ক্লার্ক প্রমুখ অনেক বাইবেল বিশেষজ্ঞ বলছেন, মেষপালকেরা তৃণভূমিতে ভেড়া চরিয়ে ফিরে আসতেন অক্টোবরের মধ্যেই, কারণ তার পরে এত শীত পড়ে যেত যে উন্মুক্ত চারণভূমিতে খোলা মাঠে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ত। অতএব এটা ধরে নেওয়া অসমীচীন নয় যে জিশুর জন্ম অক্টোবরের আগেই হয়েছিল। কিন্তু সমস্ত মানুষ ২৫ ডিসেম্বরকেই জিশুর জন্মদিন ধরে নিয়ে আনন্দ করেন, প্রার্থনা করেন। কারণ কী? ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের আমলে রোমান ক্যাথলিক চার্চ সর্বপ্রথম ২৫ ডিসেম্বরকে জিশুর জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করে। এটি সম্ভবত সূর্যের দক্ষিণায়নের সঙ্গে জড়িত। রোমের চিরাচরিত পেগান উৎসব ডিসেম্বরের শেষে শুরু হত বলে, তার সঙ্গে জিশুর জন্মদিনকে জুড়ে দিয়ে খ্রিস্টধর্মের দিকে পেগানদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা।
আজও যে-সব দর্শনার্থী বেথলেহেমে যান, তাঁদের দেখানো হয় প্রভু জিশু কোথায় জন্মেছিলেন। তাঁরাও ভক্তিভরে সেখানেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কিন্তু জিশু ঠিক কোথায় জন্মেছিলেন সত্যিই কেউ জানে কি? বাইবেল বিশেষজ্ঞ রেভারেন্ড ইয়ান পল তো সরাইখানায় তাঁর জন্ম হয়েছে তাও মানতে রাজি নন। তাঁর মতে, বাড়ির যে ঘরে অতিথি বা বাইরের লোককে থাকতে দেওয়া হত তাকেই "Inn" বলা হত।
কিছু প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং বাইবেল বিশেষজ্ঞ বলছেন, জিশুর জন্ম হয়েছিল উত্তর-ইজ়রায়েলের গালিলি প্রদেশের একটা ছোট্ট গ্রাম বেথলেহেমে। জুডিয়া প্রদেশের বেথলেহেমে নয়। তাঁদের যুক্তিও প্রণিধানযোগ্য। মেরি ও জোসেফ যেখানে থাকতেন, সেই নাজারেথ থেকে গালিলির বেথলেহেম মোটে আট মাইল, যেখানে জুডিয়ার বেথলেহেম একশো মাইল। আসন্নপ্রসবা এক নারী ওই প্রচণ্ড শীতের মধ্যে গাধার পিঠে চেপে একশো মাইল পথ পাড়ি দেওয়ার ঝুঁকি নেবেন, ভাবা কষ্টকর। পক্ষান্তরে আট মাইল অনেকটাই গ্রহণযোগ্য। তবু আজও লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী জুডিয়ার বেথলেহেমকেই প্রভু জিশুর জন্মস্থান ধরেন। কারণ জিশুর জন্মের প্রায় সাড়ে তিনশো বছর পরে, রোমান সম্রাট প্রথম কনস্টানটাইনের মা হেলেনা ঘোষণা করেন, তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়েছেন যে জিশু জুডিয়ার বেথলেহেমেই জন্মেছিলেন।
আসলে, এই অবতারেরা কোথায় কোথায় জন্মেছিলেন, কোথায় তাঁদের পায়ের ছাপ, ভক্তের কাছে তা অবান্তর। অযোধ্যা মামলার রায়ের মূল্যায়ন করছি না, কিন্তু পাঁচশো বছরের বিবাদ-বিতর্কের সমাধানে, বিভিন্ন পক্ষের আইনজ্ঞদের উপস্থিতিতে দীর্ঘ শুনানির শেষে পাঁচ প্রবীণ বিচারক একমত হয়ে একটি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন, এবং সমস্ত পক্ষই বিনাবাক্যে তা গ্রহণ করেছে— এ ঘটনা সমস্ত ভারতবাসীকে অত্যন্ত গর্বিত করেছে। আদালতের বাইরে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ বিচারব্যবস্থার প্রতি যে আস্থা দেখিয়েছেন, তা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার বুনিয়াদকেই মজবুত করেছে। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। নিঃসন্দেহে কিছু বিশেষ প্রবণতার এবং বিশেষ উদ্দেশ্যের মানুষ অত্যন্ত হতাশ। কোথাও একটা মিছিল হয়নি, একটা ইটও ছোড়া হয়নি, এ তাদের চিন্তার অতীত ছিল। সেই মানুষেরা পকেটে নুনের শিশি নিয়ে অপেক্ষায় ছিল, আগুন লাগলে তাতে আলু পুড়িয়ে খাওয়া যাবে। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে টিভিতে, খবরের কাগজে মানুষকে উস্কানি দেওয়ার বিপজ্জনক খেলায় মেতেছে, যার পরিণতি ভয়ানক হতে পারে। তবে আমরা সতর্ক আছি।
অরুণাভ ঘোষ
হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
ফ্ল্যাট ও গাছ
ইদানীং বহু পুরনো বাড়িই ভেঙে ফ্ল্যাট হচ্ছে। পুরনো বাড়িতে তিন চারটে করে বড় গাছ থাকত— আম, জাম, নিম... নতুন ফ্ল্যাট তৈরির জন্য এ সব গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু নতুন কোনও গাছ লাগানো হচ্ছে না। এমন আইন করলে হয় না, প্রতিটি বহুতল বাড়ি তৈরির সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি করে গাছ লাগাতে হবেই। ধরা যাক, প্রতি ৭০০ স্কোয়ার ফিট পিছু একটি বড় গাছ। গাছ না লাগালে, ফ্ল্যাটের কমপ্লিশন সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না।
তমাল সেন
কলকাতা-২৮
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।