Society

সম্পাদক সমীপেষু: কেবলই অনুদান

মজুরি মানুষের নিজের কষ্টার্জিত আয়, যা তাঁকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অনুদানকে মানবতার অপমান হিসেবে দেখা হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৩ ০৫:৩৯
Share:

মজুরি হল শ্রমের পরিবর্তে অর্জিত অধিকার। ফাইল চিত্র।

নব দত্তের লেখা ‘এগিয়ে অনুদান, পিছিয়ে মজুরি’ (২৭-২) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলতে চাই যে, অনুদান হল অনুগ্রহ বা দয়ার দান, কিন্তু মজুরি হল শ্রমের পরিবর্তে অর্জিত অধিকার। অনুদান মানুষকে সরকারের উপর নির্ভরশীল করে তোলে, তাতে শাসক দলের ভোটের ময়দানে অনেকটাই সুবিধা হয়। অন্য দিকে, মজুরি মানুষের নিজের কষ্টার্জিত আয়, যা তাঁকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অনুদানকে মানবতার অপমান হিসেবে দেখা হয়। এ বারের রাজ্য বাজেটে অনুদানের পরিসর বেড়েছে। কারণ, কৃষকবন্ধু প্রকল্পে আরও বেশি সংখ্যায় কৃষিজীবী এসেছেন, এবং লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত মহিলারা হাজার টাকা করে পাবেন ৬০ বছর বয়স হলে। কিন্তু কেবল অনুদান বাড়িয়ে কি আখেরে রাজ্যের উন্নয়ন হবে? শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং জীবিকার ভিত্তি হল তাঁর মজুরি। এই ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতির বাজারে পশ্চিমবঙ্গে প্রাপ্ত মজুরির টাকা, যা ভারতের অন্যান্য রাজ্যের চাইতে কম, কি আদৌ মানানসই? মহিলা-শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এই মজুরি আরও কম, এবং এঁদের উপর শোষণও সীমাহীন।

Advertisement

চটকলে মেয়ে-মজুরদের কদর বাড়ছে তাঁরা কম মজুরিতে কাজ করতে রাজি বলে, এই তথ্য উদ্বেগ বাড়ায়। এ রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশাকর্মী বা মিড-ডে মিল কর্মীরা কতখানি পরিশ্রম করে কী সামান্য বেতন পান, তা আমরা সকলেই জানি। এঁদের কথা শাসক দল মোটেই ভাবে না, তাই বাজেটে তেমন চিন্তার কোনও প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলেরও এ ব্যাপারে কোনও হেলদোল নেই।

দিলীপকুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১

Advertisement

মজুরিতে টান

চটকলে অতি সামান্য মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন মেয়ে-শ্রমিকরা, নব দত্তের প্রবন্ধে এই উল্লেখ মনে করিয়ে দিল একশো বছর আগে শ্রমিকনেত্রী সন্তোষকুমারী দেবীর লেখা একটি প্রবন্ধের অংশ। “কর্তৃপক্ষের কেহ কেহ বলেন যে আজ আর তাঁহাদের ব্যবসায়ে পূর্বের ন্যায় লাভ হইতেছে না বলিয়া বাধ্য হইয়াই তাঁহারা শ্রমিকদের ‘খোরাকী’ দেওয়া বন্ধ করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। যুক্তি অসাধারণ সন্দেহ নাই। কিন্তু কথা এই যে আজ যখন আর পূর্বের ন্যায় লাভ হইতেছে না বলিয়া দরিদ্র শ্রমজীবীদের ক্ষুদ-কুঁড়ায় পর্যন্ত টান পাড়িতে তোমরা লজ্জাবোধ করিতেছ না, জিজ্ঞাসা করিতে পারি কি, তখন তোমরা নিজেদের সৃষ্টিছাড়া বাবুয়ানীর কতটুকু পর্যন্ত কমাইতে পারিয়াছ, বা তার জন্য তোমরা কি চেষ্টা করিতেছ?” (বাংলার চটকলের কথা, সংহতি, ১৩৩০, ১ম বর্ষ, ৭-৮ সংখ্যা)। এই বঞ্চনার ধারা আজও চলেছে, কিন্তু এই প্রশ্নগুলি করার মতো নেতা কোথায়? ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনও আজ মজুরদের অধিকার রক্ষায় সক্রিয় নয়।

চণ্ডী চৌধুরী, কলকাতা-৯৯

কংগ্রেসের জয়

২০১১-তে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর থেকেই বাম ও কংগ্রেস ক্রমশ দুর্বল হতে শুরু করে। এর পর কেন্দ্রে ও একাধিক রাজ্যে কংগ্রেস মসনদ হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। রাজ্য কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতা তৃণমূল ও বিজেপিতে চলে যাওয়ায় কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে প্রায় সাইনবোর্ডে পরিণত হয়। সরকার-বিরোধী আন্দোলনে বামেরা রাস্তায় উপস্থিত থাকলেও, কংগ্রেস সেখানেও দুর্বল ছিল। রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরীর মুর্শিদাবাদ সম্পূর্ণ রূপে তৃণমূলের গ্রাসে চলে গিয়েছিল। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সাগরদিঘি কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থীর জয় নিঃসন্দেহে বাম-কংগ্রেস জোটের কাছে অক্সিজেনের মতো। শিক্ষা থেকে চাকরি, পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসন, সর্বত্র যে ভাবে দুর্নীতির শিকড় বেড়েছে, ডিএ থেকে চাকরির বঞ্চনা রাজ্যবাসীকে যে ভাবে আহত করেছে, তাতে উপনির্বাচনে শাসকের বিপক্ষে এই রায় নিঃসন্দেহে এক শিক্ষা। শাসক তথা সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে কোথাও হয়তো বাম-কংগ্রেস জোট নতুন করে মানুষকে আশার আলো দেখাতে সক্ষম হয়েছে। সাগরদিঘি নির্বাচন নিঃসন্দেহে বাম-কংগ্রেস জোটকে পঞ্চায়েতে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবে। বিরোধী দল বিজেপি বিগত বছরের শাসকবিরোধী গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ, সেটাও প্রমাণিত। সবচেয়ে বড় কথা, শাসকের দুর্নীতি ও জনবিরোধী কার্যকলাপে অতিষ্ঠ বঙ্গবাসী পুনরায় বাম-কংগ্রেসে আস্থা দেখিয়ে শাসকপক্ষকে বার্তা দিতে চাইছে। সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফল তাই শাসক এবং বিরোধী, উভয়েরই দায়িত্ব বাড়িয়ে দিল।

ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি

মুসলিম নেই

বাংলা টেলিসিরিয়ালে প্রদর্শিত বহুবিবাহ, পারিবারিক ষড়যন্ত্র নিয়ে বহু মশকরা করা হয় আলোচনা সভায়, সমাজমাধ্যমে। কিন্তু সিরিয়ালে ঈশ্বরভক্তির প্রদর্শন কী ভাবে দর্শক-মনকে কুসংস্কারের আড়ত করে ফেলছে, তা অনালোচিত রয়ে যায়। সিরিয়ালের দৃশ্যে হাতের সিঁদুর পড়ে যাওয়া মানেই স্বামীর দুর্ঘটনা। দেবতার ফুল বাতাস উড়িয়ে আনে নায়িকার মাথায়। নানা দেবী নানা বেশে নায়িকাকে রক্ষা করতে ঘরে ঘরে আবির্ভূত হন। প্রায় প্রতিটি সিরিয়ালে দেখা যায়, নায়িকার কোনও এক দেবীতে অটুট ভক্তি। যে কোনও বিপদে সেই ভক্তিই বিপত্তারণ হয়ে ওঠে। অথচ, পশ্চিমবঙ্গের ৩০ শতাংশ অধিবাসী মুসলিম হলেও, কোনও মুসলিম পরিবার বা মুসলিম সংস্কৃতি বাংলা সিরিয়ালের উপজীব্য হতে পারে না।

শোভন সেন, সাঁতরাগাছি, হাওড়া

হারানো গৌরব

শ্যামবাজারের থিয়েটার পাড়ার শেষ ঐতিহ্যটুকু মুছে ফেলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। রাজা রাজকৃষ্ণ স্ট্রিটের এই ঐতিহাসিক গলিতে সামনের খোলসটুকু রেখে বিজন থিয়েটার ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিশ্বরূপা আর রঙমহল থিয়েটারের জায়গায় আজ আস্ফালন দেখাচ্ছে বহুতল আর দোকানের সারি। রঙ্গনা থিয়েটারের সামনের রাস্তায় বছরখানেক আগে কোনও ছবি বা সিরিয়ালের শুটিং চলছিল। তখন ছবির প্রয়োজনে হলের নাম বদলে করা হয় ‘গন্ধর্ব থিয়েটার’। ছবির কাজ শেষে সেটিকে আর রঙ্গনায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। যাতায়াতের পথে নিত্য চোখে পরে এই অবহেলার চিত্র। থিয়েটার পাড়ার পূর্বগৌরব ফিরিয়ে আনতে সরকারি স্তরে কোনও ব্যবস্থা করা যায় না? এই সময়ের প্রবল বিত্তবান থিয়েটার গ্রুপ এবং অভিনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

অলক রায়চৌধুরী, কলকাতা-৫৫

সঙ্গত্যাগ

‘জ্বলল না মশাল’ (২৬-২) পড়ে প্রতিক্রিয়া জানাতেই হল। এই নিয়ে টানা আট বার ইস্টবেঙ্গল ক্লাব থুড়ি ‘স্পোর্টিং’ ক্লাব ইস্টবেঙ্গল ডার্বিতে মোহনবাগানের কাছে হারল। নাম পাল্টানোর পরেই ‘স্পোর্টিং’ জিনিসটা দল থেকে চলে গিয়েছে। ১৯২০ সালের একটা ক্লাবের এই অবস্থা দেখে আমরা, যারা জ্যোতিষ গুহের আমল থেকে এই ক্লাবের ফ্যান, তাদের মনে হয়েছে এই বার ক্লাব ছাড়ার সময় হয়েছে। আমরা সুকুমার সমাজপতি থেকে রামবাহাদুরকে দেখেছি, শ্যামা থাপা থেকে মনাকেও দেখেছি। যে লড়াকু ইস্টবেঙ্গলকে দেখেছি, এখন তার ছায়াও নেই। ১৯৭৫ সালের ৫ গোলের গন্ধ দিয়ে আর কতকাল চালানো যাবে? তাই আমরা যারা এখানে ষাটোর্ধ্ব এক-কাপের বন্ধু, তারা ইস্টবেঙ্গল ফ্যান ক্লাব থেকে সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম। কলকাতা এখন আর ফুটবলের মক্কা নয়, তা সবাই জেনে গেছে। বাঙালির ভবিষ্যৎ বোধ হয় এখন মাঠের খেলায় নয়, স্টেজের ‘খেলা হবে’-তে।

রঞ্জু মুখোপাধ্যায়, মুড়াগাছা, নদিয়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement