Bengali Language

সম্পাদক সমীপেষু: বিকল্প পাঠ্যক্রম

দেড় দশক ধরে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতার ফলে বুঝতে পারি, প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের মধ্যে বাংলা পড়তে এবং লিখতে পারে, এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৩ ০৪:২৭
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বিশ্বজিৎ রায়ের “‘সহজ’ পাঠের খোঁজে” (৫-৮) শীর্ষক প্রবন্ধটি অত্যন্ত সময়োচিত ভাবনা বলে মনে করি। বাংলা ভাষা লেখা ও পড়ার সূচনার ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহজ পাঠ বহুলপ্রচলিত। কিন্তু এই দু’টি বইতে যে সমাজচিত্র ফুটে উঠেছে, তার সঙ্গে বর্তমান সময়ের মিল খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টকর। তাই যে উদ্দেশ্য নিয়ে সহজ পাঠ-কে বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা সার্বিক ভাবে সফল হচ্ছে বলে মনে করি না। বরং, এগুলি তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণিতে (যখন শিক্ষার্থীরা বাংলা লিখতে ও পড়তে শিখে যায়) অন্তর্ভুক্ত করা যায়। আঞ্চলিক ভাষায় পাঠ্যক্রম রচনা করার ভাবনাটিও সমর্থনযোগ্য মনে হয়েছে।

Advertisement

দেড় দশক ধরে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতার ফলে বুঝতে পারি, প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের মধ্যে বাংলা পড়তে এবং লিখতে পারে, এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে। ক্রিয়াপদ প্রয়োগ করতে ভুল করে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রচুর। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৮০ শতাংশ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদেরও লিখতে দেখি ‘আমি খায়’, ‘সে বিদ্যালয় যাই’। ‘র’-এর জায়গায় ‘ড়’ আর ‘ড়’-র জায়গায় ‘র’ প্রচুর ব্যবহার করে। এ ছাড়াও, অন্যান্য বানান ভুল একটি অতি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলা ভাষার পঠনপাঠনের উন্নতি সাধন করার জন্য বিকল্প পাঠ্যক্রম তৈরি করার সময় ঘনিয়ে এসেছে বলে মনে করি।

উদ্ধব সৎপতি, রাইপুর, বাঁকুড়া

Advertisement

আঞ্চলিক শব্দ

বিশ্বজিৎ রায়ের প্রবন্ধটির জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। লেখার একটা জায়গা আমাকে বিশেষ ভাবে আকর্ষণ করেছে। লেখক লিখেছেন, প্রমিত বাংলার পাশাপাশি নানা আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করারও চেষ্টা করা যেতে পারে। পাঠদান কালে আমি এই আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করে আশাতীত ফল পেয়েছিলাম।

পড়াচ্ছিলাম জ্যামিতির অঙ্কন। একটা অঙ্কন শেখাতে গিয়ে কাঁটা-কম্পাস নিয়ে বোর্ডে এঁকে বোঝাচ্ছিলাম। একটা বৃত্তের চাপ আঁকতে হবে। এই চাপের মাপটা কত হবে, ছাত্রছাত্রীদের কিছুতেই বোঝাতে পারছিলাম না। আমি শুধু বলছিলাম চাপটা হবে যে কোনও মাপের। মনে পড়ে গিয়েছিল একটি আঞ্চলিক শব্দ। শব্দটি হচ্ছে ‘আরদা’। আমি বললাম চাপটা হবে ‘আরদা’ মাপের। ছাত্রছাত্রীরা সমস্বরে জানিয়েছিল যে তারা এ বার পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে বৃত্তের চাপের মাপ কত হবে। বুঝলাম আঞ্চলিক শব্দেরও দম এবং প্রাণ দুটোই আছে।

সঞ্জয় চৌধুরী, সুলতানপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

সংশোধন হয়নি

বিশ্বজিৎ রায়ের সময়োপযোগী প্রবন্ধটিতে মূল্যবান মতামত প্রকাশ করা হয়েছে। গত দুই দশক ধরে ছোটদের বাংলা ভাষা শেখাতে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হল। তার সবটাই যে ব্যর্থ হয়েছে, তা বলা যায় না। তবে, আমাদের তুলনামূলক আলোচনায় দেখেছি বর্ণ পরিচয় ও সহজ পাঠ-এর কোনও বিকল্প চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। নানা ভাবে প্রচেষ্টা চলুক। সময়ের পরিবর্তন ও বিজ্ঞান প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের মাতৃভাষা শেখানোর জন্য আধুনিক ভাবনাগুলি কার্যকর করা দরকার। তা সত্ত্বেও বলা যায় যে, ফিরিয়ে আনা হোক বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আসল বর্ণ পরিচয় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আসল সহজ পাঠ। তার সঙ্গে অঙ্ক শেখানোর প্রাথমিক পাঠ হিসাবে ধারাপাত।

এই প্রসঙ্গে বলা ভীষণ প্রয়োজন যে, গত এক দশক ধরে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ে যে পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে, তাতে বহু অসঙ্গতি আছে। নতুন পাঠ্যক্রম চালু করার দশ বছর পরেও এই নিয়ে কোনও সংশোধন বা সংযোজনের চেষ্টা হয়নি। বিদ্যালয়স্তর থেকে প্রতিটি বিষয় শিক্ষকদের মতামত আহ্বান করে, তা বহু পরিবর্তন ও সংশোধনের খুবই প্রয়োজন।

সন্দীপ সিংহ, হরিপাল, হুগলি

ভুলে ভরা

এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকের পরিবেশবিদ্যা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অলচিকি লিপিতে পায়নি ছাত্রছাত্রীরা। একেবারে ছোট থেকেই যারা সাঁওতালি মাধ্যমে পড়ে অভ্যস্ত হয়েছিল এবং সাঁওতালি মাধ্যমেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল, তাদের বাধ্য করা হল ইংরেজি অথবা বাংলা মাধ্যমের বই পড়ে উচ্চ মাধ্যমিকের পরিবেশবিদ্যার পরীক্ষা দিতে। তিন বছর আগে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুলগুলোর জন্য ২৮৪ জন শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা হলেও, কার্যক্ষেত্রে তা কমই হয়েছে। উপরন্তু সাঁওতালি ভাষা এবং অলচিকি লিপি না-জানা বহু প্রার্থীকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে।

বর্তমানেও শিশু শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সাঁওতালি মাধ্যমের অলচিকি লিপিতে যতগুলো বই আছে, তার সব ক’টিই অজস্র ভুলে ভরা, অপ্রাসঙ্গিক শব্দ বা বাক্যে ভর্তি। অনেক সমীকরণ দেওয়া নেই, অথচ বলা আছে ‘এত নম্বর সমীকরণ থেকে পাই...’। শুধু তা-ই নয়, গত দু’বছর ধরে সাঁওতালি মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীরা অজস্র ভুলে ভরা বই নিয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। বইগুলোর পরিমার্জনার কথাও ভাবা হচ্ছে না। পরিকাঠামোগত অভাবের সঙ্গে শিক্ষক-অপ্রতুলতাকে সঙ্গী করেই এগিয়ে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার কি তবে শুধুমাত্র হুল বা আদিবাসী দিবসের মতো দিনগুলোতেই আদিবাসীদের জন্য গালভরা ভাষণ দেবেন?

পার্শাল কিস্কু, রানিগঞ্জ, পশ্চিম বর্ধমান

টাকা পাইনি

গত বছর দক্ষিণ কলকাতার একটি সরকারি কলেজে কেমিস্ট্রি অনার্সে ভর্তি হই অনলাইনে। অ্যাডমিশন ফি হিসাবে ৩৫ হাজার ৭৫০ টাকা জমা করি। এর পর অন্য কলেজে সুযোগ পাওয়াতে ওই কলেজের অ্যাডমিশন বাতিল করি ১ অক্টোবর ২০২২ তারিখে। ইউজিসি-র অর্ডার অনুসারে ৩১ অক্টোবর ২০২২-এর মধ্যে অ্যাডমিশন বাতিল করলে সম্পূর্ণ টাকা ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু এর পরেই বিড়ম্বনার শুরু। আগের কলেজে বহু বার সশরীরে গিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। প্রথম দিকে সুরক্ষাকর্মী বলতেন ওয়েবসাইটে লক্ষ রাখতে। কিন্তু কয়েক মাস পর আবার কলেজে উপস্থিত হলে উনি রীতিমতো হুমকি দিয়ে বার করে দেন আমাকে। কখনও কলেজ অফিস বা অধ্যক্ষের কাছে পৌঁছতে দেওয়া হয়নি। এ বছর ১৯ মে ওই কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার-এর কাছে ইমেল মারফত অভিযোগ পাঠাই। আজ পর্যন্ত উত্তর আসেনি। তার আগে এপ্রিল মাস থেকে ইউজিসি-র ই-সমাধান পোর্টালে পাঁচ বার আমার এই অভিযোগ জানাই। তারাও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দায়সারা উত্তর দিচ্ছে। স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হিসাবে এই পরিমাণ টাকা আমার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।

সৃজনছন্দ দত্ত, আমডিহা, পুরুলিয়া

অপরিচ্ছন্ন

মোহিত রায় ‘ডাস্টবিনের সন্ধানে’ (১৯-৭) শীর্ষক প্রবন্ধে আমাদের চতুর্দিকের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের ছবিটি যথাযথ তুলে ধরেছেন। বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বাজার প্রায় সর্বত্রই অপরিচ্ছন্নতার দৃশ্য প্রকট। যত্রতত্র মেলে কাগজের টুকরো, বিভিন্ন দ্রব্যাদির অপচনশীল মোড়ক, প্লাস্টিক বা পলিথিন সামগ্রীর টুকরো। এ থেকে বোঝা যায় আমাদের শিক্ষার হার বেড়েছে, কিন্তু পরিচ্ছন্নতাবোধ বাড়েনি। যত্রতত্র ময়লা ফেলা কেবল নান্দনিকতারই পরিপন্থী নয়, তা অস্বাস্থ্যকর ও সংক্রামক ব্যাধি বিস্তারে সহায়কও।

প্রদীপ রঞ্জন রীত, আমতা, হাওড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement