Harisadhan Dasgupta

সম্পাদক সমীপেষু: শতবর্ষে হরিসাধন

অষ্টাদশ আর ঊনবিংশ শতকে ঘটে যাওয়া বাংলার নবজাগরণের সাংস্কৃতিক, সামাজিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, শৈল্পিক উপাদানসমূহে চলচ্চিত্রের কোনও স্থান ছিল না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৪ ০৭:৩৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

‘শতবর্ষ স্মরণে হরিসাধন দাশগুপ্ত’ (আনন্দ প্লাস, ১৬-৪) প্রসঙ্গে কিছু কথা। ১৯৫৫ সালে মুক্তি পেল পথের পাঁচালী, আর ঠিক তার পরের বছর, ১৯৫৬ সালে নির্মিত হল একটি তথ্যচিত্র, নাম— দ্য স্টোরি অব স্টিল। চিত্রনাট্য— সত্যজিৎ রায়, ক্যামেরা— ক্লদ রেনোয়া, আবহসঙ্গীত— রবিশঙ্কর, সম্পাদনা— হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়। আর পরিচালনা করলেন তথ্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে অবিসংবাদিত, কিংবদন্তি হরিসাধন দাশগুপ্ত। চলচ্চিত্র জগতের দিকপাল শিল্পীদের তৈরি সেই তথ্যচিত্র কী উচ্চতায় পৌঁছেছিল, তা আমরা অনুমান করতে পারি। বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক চলচ্চিত্রে পথের পাঁচালী-র প্রভাব যতটা, তথ্যচিত্রের ক্ষেত্রে দ্য স্টোরি অব স্টিল-এর প্রভাব তেমনই। কিন্তু ক’জনই বা দেখেছি সেই অনবদ্য সৃষ্টি? ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি’-র প্রায় সকলে জড়িয়ে ছিলেন এই তথ্যচিত্রটির নির্মাণে। প্রত্যেকে প্রায় সমবয়সি।

Advertisement

অষ্টাদশ আর ঊনবিংশ শতকে ঘটে যাওয়া বাংলার নবজাগরণের সাংস্কৃতিক, সামাজিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, শৈল্পিক উপাদানসমূহে চলচ্চিত্রের কোনও স্থান ছিল না। কিন্তু গত শতকের চল্লিশের দশকের শেষের দিক থেকে হরিসাধনের হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্রে যে কাণ্ডটা ঘটল, তাকে বাংলা সিনেমার নবজাগরণ বলতেই পারি। কেন বলছি হরিসাধনের হাত ধরে? ১৯৫১-তে তৈরি জঁ রেনোয়ার ছবি দ্য রিভার যখন কলকাতায় শুটিং চলছে, তিনি কলকাতায় এক জন সহকারীর খোঁজ করতে জানতে পারেন হরিসাধনের কথা। হরিসাধন তাঁকে যথাযথ সহায়তা করেন। তাঁরই সূত্র ধরে রেনোয়ার সঙ্গে সত্যজিৎদের পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা, আর হাতে-কলমে কাজ শেখা। যার জেরে তৈরি হয় পথের পাঁচালী ছবিটি।

পড়াশোনা করতে চললেন ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া, এবং পরে লস অ্যাঞ্জেলেসে। চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে পড়াশোনা করেন হরিসাধন। আরভিং পিচেলের কাছে হাতে-কলমে শিখলেন চলচ্চিত্র নির্মাণের খুঁটিনাটি। কলকাতায় ফিরে মন দিলেন তথ্যচিত্র নির্মাণে। তৈরি হল কালজয়ী সব তথ্যচিত্র। পাঁচথুপি— আ ভিলেজ ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল, গ্লিম্পসেস অব ইন্ডিয়া, দ্য মালাবার স্টোরি, প্যানোরামা অব ওয়েস্ট বেঙ্গল, দি অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ইন ইন্ডিয়া, কোনার্ক— দ্য সান টেম্পল। ১৯৪৮ থেকে শুরু করে কয়েক দশকে পঞ্চাশটির কাছাকাছি তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন হরিসাধন দাশগুপ্ত।

Advertisement

তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘরে বাইরে ছবি তৈরির উদ্যোগ। সত্যজিতের লিখিত চিত্রনাট্য, বংশী চন্দ্রগুপ্তের শিল্প নির্দেশনা আর প্রোডাকশন ডিজ়াইন, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের আবহসঙ্গীত পরিচালনা, অজয় করের ক্যামেরায় তৈরি হওয়ার কথা ছিল ছবিটির। অভিনেতা-অভিনেত্রী সব ঠিক হওয়া সত্ত্বেও প্রযোজকের গড়িমসিতে সেই ছবি আর হয়ে ওঠেনি। উত্তরপাড়া রাজবাড়িতে বেশ কিছু শটও নেওয়া হয়েছিল। শোনা যায়, এই জন্য হরিসাধন তাঁর যতীন দাস রোডের বাড়ি বিক্রি করে দেন, এবং বিশ্বভারতীকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ডাবল ভার্শন গ্রন্থস্বত্ব কেনেন। পথের পাঁচালী তৈরির বেশ কিছু বছর আগে এই সিনেমাটি তৈরি হলে ভারতীয় চলচ্চিত্রের আধুনিক ইতিহাস হয়তো অন্য ভাবে লেখা হত।

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৭

স্মৃতিটুকু

প্রচেত গুপ্তর ‘বাঙালির হালখাতায় হারানো-প্রাপ্তি’ (রবিবাসরীয়, ১৪-৪) প্রবন্ধটিতে অধুনা বঙ্গজীবনের বাস্তব ছবি উঠে এসেছে। প্রতিনিয়ত শহরের বুকে যে হারে বাঙালিদের বাড়ি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে একান্নবর্তী পরিবার, তা আশঙ্কাজনক। প্রবন্ধকার যথার্থই বলেছেন, একটা সময় ছিল, বাঙালি বাড়িতে এক বেলায় উনিশ, কুড়ি বা বাইশটা করে পাত পড়লেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। আর এখন সেই বৃহৎ পরিবার ভাঙতে ভাঙতে ছোট ছোট শিলাখণ্ডে পরিণত হয়েছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুমনও। নিঃসঙ্গ কৈশোর আনন্দের সন্ধানে যন্ত্রমুখী হচ্ছে।

তবে বাজারু বাঙালি মাছ কেনায় খুব সাবধানি। তাই বাজারে যে মাছওলার বঁটি নেই, তার বিক্রি নেই। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের মুখে শুনেছি, এক বার এক গ্ৰামে আউটডোর শুটিং চলছে। ম্যানেজারবাবু লাঞ্চের জন্য একগাদা কইমাছ এনে হাজির। সমস্যার ব্যাপার, কে কাটবে এতগুলো মাছ? দেখা গেল, সন্ধ্যা রায় বঁটি নিয়ে মাছ কাটতে বসে গেলেন। আজকের দিনে ভাবা যায়?

বিশ্ববিখ্যাত শিল্পকলা রসিক শহিদ সুরাবর্দি যখন জার্মানিতে ছিলেন, তখন তাঁর কয়েক জন রুশ ও জার্মান বান্ধবী তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বাঙালিদের বৈশিষ্ট্য কী? শহিদ তাঁদের বাঙালির আড্ডার কথাই বলেছিলেন। রাস্তার রকওয়ালা বাড়িগুলো বিকেলের পর সব ভর্তি থাকত। কোথাও রাজনীতির আলোচনা, কোথাও মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল। ধুন্ধুমার কাণ্ড। এখন সেই রকে কুকুর শুয়ে থাকে। বাঙালি স্মৃতিসর্বস্ব হয়েই টিকে আছে।

ধ্রুবজ্যোতি মণ্ডল, কলকাতা-৩৪

দায়হীন

প্রতিটা রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে নানা প্রতিশ্রুতি রয়েছে, কিন্তু উপেক্ষিত হয়েছে পরিবেশ। পরিবেশ সম্পর্কিত নীতি প্রণয়নের অঙ্গীকার, ও পরিবেশ রক্ষায় দায়বদ্ধতা দেখানোর সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। পরিবেশকে ধ্বংস করেই চলে উন্নয়নের রাজনীতি। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে জাতিপুঞ্জের পরিবেশ-সম্পর্কিত সংগঠন ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) রিপোর্ট। যেখানে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানির অতি ব্যবহারের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তনের সতর্কবার্তা, ও সঙ্কটের অশনি সঙ্কেত। সঙ্গে শিল্পবিপ্লব-পূর্ব যুগের তুলনায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রিতে আটকে রাখার প্রতি আবেদন। কারণ, বর্তমান তাপমাত্রার থেকে যদি ১ ডিগ্রি তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়, তা হলে পৃথিবীর মেরু প্রদেশের বরফের গলন শুরু হবে। দেখা দেবে জলবায়ুর বড়সড় পরিবর্তন।

বিগত দুই দশকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আবহাওয়াজনিত প্রাকৃতিক বিপদের সংখ্যা ছিল ৭,৩৪৮টি, যার ফলে প্রাণহানির সংখ্যাও নেহাতই কম নয়, ১২ লক্ষেরও বেশি। দুশ্চিন্তার কথা হল, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের রাষ্ট্রনায়কেরা প্রতি বছর নিয়ম করে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার বিষয়ে মিলিত হন। যেখানে উন্নত দেশগুলির তরফে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলির জীবাশ্ম জ্বালানির অবাধ ব্যবহারকেই দায়ী করা হয়। অন্য দিকে, উন্নয়নশীল দেশেরও অভিযোগ থাকে ইউরোপের শিল্পবিপ্লব ও নগরায়ণ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী।

ভারতের ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বির্পযয়ে মৃতের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। প্রায় ১৮ লক্ষ হেক্টর জমির শস্য নষ্ট হয়েছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বিপুল। আদালতের পর্যবেক্ষণ, সুস্থ পরিবেশে বসবাস হল নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। দুঃখের বিষয়, সরকার বদলায়, কিন্তু পরিবেশ সম্পর্কে উদাসীনতা চলতেই থাকে।

সৈকত বিশ্বাস, বোলপুর, বীরভূম

অপব্যয়

নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে একটি বিষয় জানাতে চাই। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে কলকাতা হাই কোর্ট কোনও মামলার ক্ষেত্রে যখন রায়দান করছে, প্রায়শই পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই রায়দানের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ আদায়ের জন্যে সুপ্রিম কোর্টে ছুটে যাচ্ছে বড় বড় আইনজীবীকে নিয়োগ করে সাধারণ মানুষের করের টাকা খরচ করতে। এটা কেন হবে?

অবিলম্বে এই পন্থা বন্ধ করতে আদালত যেন রায়দানের সঙ্গে এই আদেশও দেয় যে, কোনও একটি মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চ বা ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেওয়ার পর রাজ্য সরকার (বা অন্য কোনও সরকার) যখন তার পুনর্বিচারের জন্যে সর্বোচ্চ আদালতে যাবে, তখন মামলার ব্যয়ভার অভিযুক্তকেই বহন করতে হবে। সাধারণ মানুষ কেন এই দায়ভার নিজেদের কষ্টার্জিত করের বিনিময়ে বহন করবে? আদালত এই ব্যবস্থা করলে কথায় কথায় দিল্লি ছোটা বন্ধ হবে, সাধারণ মানুষও করের টাকার অপব্যয় থেকে মুক্তি পাবে।

সুব্রত সেনগুপ্ত, কলকাতা-১০৪

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement