BJP

সম্পাদক সমীপেষু: বিজেপি ও বাম

২০১১-য় সিপিএম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পরাস্ত হওয়ার পর, ২০১৬ থেকেই সিপিএমের নেতারা এক ভাঙা রেকর্ড চালানো শুরু করলেন— মোদী মমতার গোপন আঁতাঁতের তত্ত্ব।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৪ ০৪:১০
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

রাহুল গান্ধী ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় বাংলায় এসে সিপিএম নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, বাংলায় বিজেপির কেন এত বাড়বাড়ন্ত (‘বিজেপি বাড়ল কেন, সিপিএমের কাছে প্রশ্ন রাহুলের’, ৩-২)। উত্তরে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য শতরূপ ঘোষের ব্যাখ্যা, রাজ্যে গত ১০-১২ বছরে আরএসএস-এর স্কুল এবং প্রশিক্ষণ শিবির তৈরি হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার। সে জন্যই বাংলায় বিজেপির এত বাড়বাড়ন্ত। অর্থাৎ, প্রকারান্তরে শতরূপ বিজেপির বাড়বাড়ন্তের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করেছেন। মনে রাখা দরকার, বিজেপির বৃদ্ধি শুধু বাংলায় হয়নি, প্রায় গোটা দেশেই হয়েছে। সে জন্য কারা দায়ী, সেটা শতরূপ বলেননি।

Advertisement

বাংলায় বিজেপির রমরমার পিছনে শতরূপ ঘোষ, মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তীদের অবদান কি কোনও অংশে কম ছিল? ২০১১-য় সিপিএম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পরাস্ত হওয়ার পর, ২০১৬ থেকেই সিপিএমের নেতারা এক ভাঙা রেকর্ড চালানো শুরু করলেন— মোদী মমতার গোপন আঁতাঁতের তত্ত্ব। সিপিএমের শক্তি যত ক্ষয় হতে থাকে, ততই সিপিএম নেতৃত্ব বুঝতে পারেন যে, তাঁদের পক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোকাবিলা এক প্রকার অসম্ভব। ২০১৬-র পর থেকেই সিপিএমের একটা অংশ অলিখিত ভাবে প্রচার করতে শুরু করে, বিজেপিকে শক্তিশালী করতে হবে, কারণ বিজেপিই পারবে মমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে। গোপনে এই তত্ত্ব প্রচারের পর থেকেই সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা দলে দলে বিজেপির খাতায় নাম লেখানো শুরু করলেন। যার ফলে প্রতিটি নির্বাচনে দেখা গেল, সিপিএমের যে পরিমাণ ভোট কমেছে, ঠিক সেই পরিমাণ ভোট বেড়েছে বিজেপির। সেই ভোট আর কিছুতেই নিজেদের দিকে টানতে পারলেন না বামেরা। সিপিএমের মিটিং মিছিলে ব্রিগেডের সমাবেশে লোক হয় ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে ভোট চলে যাচ্ছে বিজেপির ঝুলিতে। সিপিএম নিজেদের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ করতে গিয়েছিল বলেই আজ বাংলায় বিজেপির এত বাড়বাড়ন্ত।

রতন চক্রবর্তী, উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

Advertisement

ভুল স্লোগান

‘বাংলায় বিজেপির কেন এত বাড়াবাড়ি’— রাহুল গান্ধীর এই প্রশ্নের উত্তরে সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ যা বলেছেন তা বাস্তবের এক খণ্ডচিত্র মাত্র। বিজেপির এ রাজ্যে বেড়ে ওঠার পিছনে নিজেদের ভূমিকাটিকে শতরূপ তাঁর উত্তরে সন্তর্পণে এড়িয়ে গিয়েছেন। রাজ্যে তাঁরা ৩৪ বছর শাসন ক্ষমতায় ছিলেন। সেই দীর্ঘ সময়ে তা হলে রাজ্যে কেমন বামপন্থার চর্চা করেছেন যে, ক্ষমতা থেকে তাঁরা সরে যেতেই রাজ্যে বিজেপি তথা দক্ষিণপন্থার রমরমা ঘটে গেল? বাস্তবে দক্ষিণপন্থার বেড়ে ওঠার জমিটি তাঁদের শাসনেই তৈরি। দীর্ঘ রাজত্বে বামপন্থার চর্চা তাঁরা কতটুকু করেছেন? বাস্তবে তাঁরা ক্ষমতায় টিকে থাকতেই ব্যস্ত ছিলেন। রাজ্যের মানুষের যে অংশটি আজ বিজেপির দিকে যাচ্ছেন, তাঁরা বামেদের কার্যকলাপের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েই যাচ্ছেন। নীতিগত আকর্ষণ থেকে নয়। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার ভাবনা থেকে বামেরাই এ রাজ্যে বিজেপিকে শক্তিশালী করেছেন। তার জন্যই ২০১৯-এ তাঁরা ‘আগে রাম পরে বাম’ এই স্লোগান তোলেন। তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের সমর্থনের জোরেই বিজেপি এ রাজ্য থেকে লোকসভায় এক লাফে ১৮-তে পৌঁছে যায় এবং বামেরা শূন্যে পরিণত হন।

শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গির যে কথা শতরূপ বলেছেন, তা বাগাড়ম্বর মাত্র। তাঁদের শাসনে শ্রেণি সংগ্রামের কিছুই ছিল না। ছিল শুধুই ক্ষমতার ভোগদখলের রাজনীতি। কর্মীদের নিয়ে সাধারণ রাজনীতির চর্চাটুকুও তাঁরা করেননি, বামপন্থা দূরের কথা। আর তা করেননি বলেই আজ তাঁদের সমর্থকদের মধ্যেই বিজেপির সমর্থন সবচেয়ে বেশি। তাঁদের কাজকর্মের মধ্য দিয়ে তাঁরা শুধু বামপন্থাকে কালিমালিপ্ত করেছেন এমন নয়, নবজাগরণ, স্বাধীনতা আন্দোলন, পঞ্চাশ-ষাটের দশকে সংগ্রামী বামপন্থী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলার যে গৌরবময় ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, সে সব কিছুকেই তিল তিল করে নষ্ট করেছেন। সেই ফাঁক বেয়েই উঠে এসেছে দক্ষিণপন্থী শক্তি। তাঁদের সব অপকীর্তির মাসুল বাংলাকে আগামী বহু দিন দিয়ে যেতে হবে।

সমরেন্দ্র প্রতিহার, কলকাতা-৪

ঐক্যের পথ

‘পশ্চিমবঙ্গ ও ইন্ডিয়া’ (৩১-১) সম্পাদকীয়টির সূচনার গল্পটি বেশ আকর্ষণীয়। ২৩ জুন, ২০২৩-এ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সভাপতিত্বে ১৬টি বিরোধী দলের উপস্থিতিতে পটনায় প্রথম বৈঠক সংঘটিত হয়েছিল। এর পরে ১৭-১৮ জুলাই কংগ্রেস শাসিত কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে আয়োজিত বৈঠকে অংশ নেয় ২৬টি দল। জোটের নাম হয় ‘ইন্ডিয়া’। সেই সঙ্গেই কার্যত মুছে যায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের অস্তিত্ব। প্রথম জোটের সভাপতি নীতীশ কুমার জোটের মঞ্চ ছেড়ে এখন এনডিএ-তে। কংগ্রেসের বলিষ্ঠ যুব নেতা সাংসদ রাহুল গান্ধী এখন পশ্চিমবঙ্গে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’-য় বিভিন্ন জেলায় ঘুরছেন। সন্দেহ নেই, রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রায় আট থেকে আশি সকলেই ভিড় করছেন। তৃণমূল ‘ইন্ডিয়া’র জোটসঙ্গী। অথচ, পশ্চিমবঙ্গে উপস্থিত হওয়া ইস্তক রাহুলের যাত্রাপথে এত বাধা এল, সেটা দুর্ভাগ্যজনক বইকি। প্রবন্ধে সঠিক ভাবেই বলা হয়েছে— বাস্তব পরিস্থিতিকে কংগ্রেস নেতৃত্ব যথেষ্ট গুরুত্ব দেননি, তার মাসুলও গুনে চলেছেন। আসলে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস হীনবল। বিরোধী ঐক্যের স্বার্থে বাস্তববাদী নীতি অনুসরণ করা তাঁদের কর্তব্য। আবার, সেই উদ্দেশ্য সাধনে কংগ্রেসকে উৎসাহ দেওয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীরও কর্তব্য। তিনি ঘুরপথে রাহুলের বিরোধিতা করছেন। রাহুলও ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতি অনুসরণ করেছেন বাংলায়। কারণ, তিনি জানেন ইন্ডিয়া জোটের মঞ্চ ইতিমধ্যেই নড়বড়ে। হারাধনের ছেলেরা একটি একটি করে হারিয়ে যাচ্ছে। সম্পাদকীয়ের শেষে যথার্থই বলা হয়েছে, গণতন্ত্রের স্বার্থে দেখতে হবে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বাস্তব যেন ঐক্যের পথে কাঁটা হয়ে না দাঁড়ায়।

প্রবীর কুমার সরখেল, পশ্চিম মেদিনীপুর

বিরোধীর কাজ

সম্পাদকীয় ‘শব্দ এবং নীরবতা’ (২-২) বর্তমান রাজনৈতিক আবহে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতীয় অর্থনীতি যখন টালমাটাল অবস্থায়, সেই সময়ে ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও ও অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহের উদারনীতির হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আমাদের দেশের অর্থনীতি। দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকেও যে রক্ষা পেয়েছিল ভারত, এই কথাটার মধ্যে কোনও অত্যুক্তি নেই। তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের পক্ষ থেকে আগামী দিনের জন্য বিশাল কিছু স্বপ্নের ফেরি হয়তো ছিল না, কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল যথেষ্টই চোখে পড়ার মতো। অথচ প্রচারের ঢক্কানিনাদ সত্ত্বেও শ্লথতম বৃদ্ধির দশকটি হল নরেন্দ্র মোদীর শাসনকাল।

২০৪৭-এর মধ্যে উন্নত অর্থব্যবস্থার উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা প্রচার হচ্ছে। কিন্তু সমাজে অর্থনৈতিক অসাম্য, বেকারত্ব বৃদ্ধি, চাষিদের নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশ জুড়ে লাগাতার আত্মহত্যা, এর কোনও দাওয়াই বর্তমান সরকারের কাছে আছে বলে মনে হয় না। কিংবা কর্পোরেট দুনিয়ার স্বার্থে সেটা তারা চায় না। ফ্যাসিবাদী শাসক মাত্রেই জানেন, মানুষ শিক্ষিত ও সুস্থ থাকলে তাঁর অন্যান্য চাহিদা বৃদ্ধি পাবে নিরন্তর। তাই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ অবহেলিত থাকে দিনের পর দিন। এই কারণেই তাঁরা ধর্মীয় মেরুকরণের মাধ্যমে মানুষের মন বিক্ষিপ্ত করে সমাজে বিভাজনের প্রয়াস জারি রাখেন। বিরোধী দলগুলো যদি মানুষকে সচেতন না করে, তবে দেশের বিপদ।

অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement