The Ganges

সম্পাদক সমীপেষু: কলুষিত নদী

মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কাজকর্মে ক্রমশ কলুষিত হচ্ছে গঙ্গা। নষ্ট হচ্ছে বহমান গঙ্গার শুদ্ধতা এবং স্বচ্ছতা। নৈহাটির গঙ্গার ফেরিঘাট থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে বড় মা’র মন্দির।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:৩৭
Share:

— ফাইল চিত্র।

‘কলুষবাহিনী’ (২৪-১) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। গঙ্গার দূষণ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে নৈহাটি ফেরিঘাটে প্রচারের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। প্রচারের ঠিক দু’দিন আগে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল নৈহাটির গঙ্গার ঘাট ঘুরে দেখার। বেশ আশ্চর্য হলাম, যখন দেখলাম প্রতিমা বিসর্জনের পরেও গঙ্গার জলের ধারেই কাঠামো পড়ে থাকতে। জোয়ারের কারণে যে কোনও সময় সে কাঠামো ভাসিয়ে নিয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। এ ভাবেই প্রতিমার রঙে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক গঙ্গার জলকে যে কলুষিত করে চলেছে, পুজো কমিটিগুলির কাছে তা অজানা নয়। বাংলার নদীর যে কোনও ঘাটে একটু তাকিয়ে দেখলেই চোখে পড়বে অজস্র ভেসে যাওয়া প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ-সহ বিভিন্ন ভাসমান দূষণকারী সব বর্জ্য।

Advertisement

মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কাজকর্মে ক্রমশ কলুষিত হচ্ছে গঙ্গা। নষ্ট হচ্ছে বহমান গঙ্গার শুদ্ধতা এবং স্বচ্ছতা। নৈহাটির গঙ্গার ফেরিঘাট থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে বড় মা’র মন্দির। সেই ক্ষেত্রে গঙ্গাদূষণ রোধে এই ঘাটে ধারাবাহিক ভাবে জনচেতনা প্রসারের উদ্যোগ খুবই জরুরি। বাইরের মানুষ ছাড়াও রাজ্যের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি জেলার মানুষ বড় মায়ের পুজো এবং দর্শন করতে আসেন এই মন্দিরে। চন্দননগরের দিক থেকে দর্শনার্থী এবং সাধারণ মানুষের নিত্যদিন যাতায়াত রয়েছে এই ফেরিঘাট দিয়েই। তবে এটাও ঠিক, বিগত দু’তিন বছর প্রতিমা নিরঞ্জনের পর গঙ্গা পরিচ্ছন্ন রাখতে কলকাতা পুরসভার যথেষ্ট কড়াকড়ি মনোভাব আমাদের নজর কেড়েছে। এ বারও পুজোতে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছিল। সদ্য কলকাতার আর একটি ঘাট বাগবাজার ঘুরে দেখলাম। অন্য পুরসভার ঘাটগুলিতে যেমন যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা নোংরা এবং ব্যবহৃত ক্যারিব্যাগের স্তূপ ছড়িয়ে থাকে, এখানেও ঠিক একই চিত্র। সম্পাদকীয়তে যা বলা হয়েছে “…গঙ্গা নিয়ে প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবচিত্রের মধ্যে যে আলোকবর্ষের ব্যবধান, তাতে বিশেষ আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই”— একেবারে সঠিক। নাগরিকদের উচিত বহমান গঙ্গার শুদ্ধতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা।

বার বার গঙ্গার ঘাট এবং নদীর দুরবস্থায় রাজ্যের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে পরিবেশ আদালতে। অন্য দিকে, মানুষের চেতনা আদালতের নির্দেশে ফেরানো জটিল, যদি না মানুষ মন থেকে সেটি উপলব্ধি করে। নিজের কুঅভ্যাসটি বুঝতে না পারলে গঙ্গাকে দূষণের হাত থেকে মুক্ত করা যাবে না। সুবীর ভদ্র তাঁর চিঠিতে (‘গঙ্গাদূষণ’, ১০-২) যথার্থ উল্লেখ করেছেন— দুর্ভাগ্যজনক ভাবে পতিতপাবনী সেই গঙ্গা নদীর দূষণ বন্ধ করতে আমরা অপারগ! রাজ্যে গঙ্গার তীরবর্তী গ্রাম এবং শহরগুলিতে কঠিন ও তরল অপরিশোধিত বর্জ্যের পর্যাপ্ত শোধনের ব্যবস্থাপনা না থাকায় সেই দূষিত জল গঙ্গায় মিশছে। গঙ্গার পাড়ে দখলদারদের যেমন রমরমা, তেমনই গঙ্গায় মিশছে হোটেল এবং শিল্পাঞ্চলের দূষিত পদার্থও। গঙ্গার দূষণ আজকাল বহুমাত্রিক। নিয়মভঙ্গকারীদের সতর্ক করার পরও যথাযোগ্য সাড়া না দিলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে না কেন?

Advertisement

সুব্রত পাল, শালবনি, বাঁকুড়া

কুশিক্ষার পথে

‘নিগ্রহের ধারা’ (৫-২) শীর্ষক সম্পাদকীয় পড়ে মনে হল বর্তমান সময়ের পক্ষে লেখাটি সত্যিই উপযুক্ত। কারণ, শিক্ষাব্যবস্থায় প্রায়শই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিগ্রহ এবং তাঁদের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন, অশালীন আচরণ পশ্চিমবঙ্গে বাড়াবাড়ি মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে। তার নমুনা আমরা হামেশাই পাচ্ছি। শিক্ষা এখন গৌণ হয়ে পড়েছে‌। সেখানে নানান প্রকল্পের সুবিধা পাওয়াই হল মুখ্য বিষয়। সেই নিয়ে সারা বছর তটস্থ থাকেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বলতে গেলে নানা ধরনের ১৫-২০টি প্রকল্প চলে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে। প্রযুক্তিগত কারণে এবং ছাত্রছাত্রীরা যদি কখনও কোনও প্রকল্পের সুবিধা না পায়, তা হলে শিক্ষা বিভাগের নির্দেশে প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে শিক্ষা দফতরে গিয়ে কৈফিয়ত দিতে হয়।

পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয়গুলিতে বর্তমানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল প্রথা নেই। ফলে প্রায় কিছু না শিখেই কিছু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে যায়। তারাই নবম শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষায় অথবা দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে সেটা মেনে নিতে পারে না। সেই নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চলে বচসা। বিদ্যালয়ের সম্পত্তি ভাঙচুর, রাস্তা অবরোধ, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিগ্রহ পর্যন্ত তা গড়ায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে ছাত্রছাত্রীদের চরিত্র নির্মাণের সহায়ক, সেটা এখন আর বলা যায় না। যদিও একটা সময় সেটাই ছিল। সকল অভিভাবকরাও তা বিশ্বাস করতেন। আশ্চর্য হতে হয়, বিদ্যালয়গুলিতে পরীক্ষা এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা হলে মোবাইল নিয়ে গণ টোকাটুকির খেলায় মেতে ওঠে। প্রতিবাদ করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকাকে শুনতে হয় হুমকি। তাঁদের নামে চলে নানান রকম অশালীন দেওয়াল লিখন।

স্বাভাবিক ভাবেই এক শ্রেণির অভিভাবকেরা সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থায় এটা এক অশনি সঙ্কেত। তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ত্রিশ হাজারেরও অধিক কমে যাওয়ায়। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিগ্রহ, কদর্য ভাষায় হেনস্থা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘেরাও, শ্রেণিকক্ষে ভাঙচুর— এই সমস্ত বিষয় বন্ধ না হলে বঙ্গের সুশিক্ষা ফিরবে না। বা বলা যেতে পারে, কুশিক্ষার দিক থেকে এগিয়ে যাবে আমাদের রাজ্য। এই বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে অভিভাবক-সহ সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিদ্যালয় শিক্ষা আধিকারিকদেরও নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতে হবে। বেহাল শিক্ষাব্যবস্থা থেকে মুক্তি চাই। শিক্ষাব্যবস্থায় এবং শিক্ষার অঙ্গনে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ বন্ধ হোক।

রতন নস্কর, সরিষা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

দূষিত শহর

‘জট অব্যাহত’ (১৪-২) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে এই মুহূর্তে কলকাতার পরিবহণ সংক্রান্ত সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। সিএনজি দ্বারা পরিচালিত গাড়ি আগামী দিনে পরিবহণ বিষয়ক দূষণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। সিএনজি বা কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস একটি স্বচ্ছ জ্বালানি এবং অটোমোবাইলে এর ব্যবহার আমাদের শহরে দূষণ কমাতে সাহায্য করবে। কিন্তু কলকাতায় এই সিএনজি পরিচালিত গাড়ির সংখ্যা কম। তার কারণ, শুধুমাত্র কলকাতাতে সাতটি জায়গায় এই গ্যাস পাওয়া যায়। এইচপিসিএল-এর তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় সারা দিনে মাত্র ৫৫০ কেজি সিএনজি বিক্রি হয়। কিন্তু এর চাহিদা অনেক বেশি। এর চাহিদার ছবি ধরা পড়ে, যখন গাড়িতে এই গ্যাস ভরার জন্য প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে লম্বা গাড়ির মিছিল দাঁড়িয়ে থাকে।

আসলে জমির সমস্যার জন্য এই গ্যাসের পাইপলাইনের কাজের অনেক সমস্যা হয়েছে। জগদীশপুর-বোকারো-ধামরা এই পাইপলাইনের কাজ এখনও চলছে। এ দিকে ইলেকট্রিক চার্জিং পয়েন্টের অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। যদিও ৮৫০টি চার্জিং স্টেশন বসানোর লক্ষ্যমাত্রা ২০২৪-এ নেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে শুধুমাত্র কলকাতা শহরের দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। ২০২১ সালের ২২ মার্চ যখন দু’টি সিএনজি পাম্পিং স্টেশন দিয়ে এখানকার যাত্রা শুরু হল, সবাই ভেবেছিলেন আগামী দিনে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতাতে দু’চাকা ও চার চাকার সংখ্যা প্রায় ১.৮২ মিলিয়ন, যা সে সময় পেট্রল বা ডিজ়েলে চলত। বোঝা যাচ্ছে, কতটা দূষণ কলকাতাকে গ্রাস করেছিল। তবুও পশ্চিমবঙ্গের পাইপলাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াটি ধীর গতিতে হয়েছে। আগামী দিনেও আশাপ্রদ পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম।

অভিজিৎ চক্রবর্তী, বালি, হাওড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement