‘দুনিয়ার হাটে’ (১০-৬) সম্পাদকীয় সরকারকে সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করানোর এক বলিষ্ঠ প্রয়াস। বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দলের ইসলাম ধর্মের প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে দুনিয়া জুড়ে। এই নিন্দা ভারত সরকারকে দিশাহারা করে তুলেছে। বস্তুত, এটা সকল দেশবাসীর কাছেই লজ্জার বিষয়। ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের যে সমাদর ভারতবাসীকে একদা গর্বিত করত, সেটা আজ নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের কার্যকলাপে ভূলুণ্ঠিত। কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের আট বছরের কার্যকালে দেশের ঐক্য ও সংহতি কতটা বিপন্ন, সেটা বোঝা যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সুপরিকল্পিত ভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের লাঞ্ছনার ঘটনাগুলি দেখে। এমন ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। বিজেপি সরকারের মদতে হিন্দুত্ব প্রসারের কর্মসূচি জন্ম দিয়েছে নূপুর ও নবীনের মতো সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ-চালিত মানুষকে। তাঁরা এত দিন ছিলেন বিজেপির ‘সম্পদ’। এখন যখন মুসলিম দেশগুলো রুষ্ট হয়ে ভারত সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, ভারতের আর্থিক ও কূটনৈতিক ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তখন নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি নেতাদের আস্ফালন স্তিমিত। নেতারা মুখরক্ষার্থে বলছেন, এই ঘটনা সরকার সমর্থন করে না। এর পরেই দল তাঁদের সাসপেন্ড ও বহিষ্কার করেছে। এই কারণে আবার তরুণ সমর্থকদের রোষের মুখে পড়েছে নেতৃত্ব।
বিজেপি নিজের জালেই জড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ভাবাবেগ আহত হওয়ার ফলে বিক্ষোভ প্রতিবাদ সংগঠিত হচ্ছে, যা অশান্তি ও হিংসার দিকে যাচ্ছে। প্রশ্ন হল, যেখানে সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা করার ফলে ইউএপিএ আইনে বছরের পর বছর ‘আর্বান নকশাল’ তকমা দিয়ে বিনা বিচারে সাংবাদিক, সমাজকর্মীদের জেলে বন্দি রাখা হয়, সেখানে কেন নূপুর শর্মাদের সংযত করা হয় না? তাঁদের প্ররোচনামূলক মন্তব্যে দেশে অশান্তি, কিংবা বিশ্বে দেশের সম্মান নষ্ট করার দায়ে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে না কেন? সরকারের এই দ্বিচারিতা কেন?
দেবকীরঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়, উত্তরপাড়া, হুগলি
প্রতিবাদের উপায়
সম্প্রতি নূপুর শর্মার মন্তব্যের নিন্দায় সরব হয়েছে প্রায় সব ক’টি মুসলিম রাষ্ট্র। দেশে তাঁর বিষয়ে কিছু পদক্ষেপও করা হয়েছে। তথাপি এতে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার ইঙ্গিত নেই। সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই যে, শুধুমাত্র তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্য যে আগুনে ঘি ঢেলেছে তা নয়, এই বিষবাষ্প অনেক দিন ধরেই সঞ্চিত হচ্ছিল। এনআরসি, সিএএ-সহ নানা আইনে সংখ্যালঘুদের মনে আক্রমণের শঙ্কা বেড়েই চলছিল। অসন্তোষের ফুলকি আর ক্রমাগত নিষ্পেষণের চাপে বিদ্বেষ ও ঘৃণার বাতাবরণ তৈরি হচ্ছিল। সেই সঙ্গে ক্রমাগত অন্যায় উস্কানি, ও প্ররোচনায় ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটানোর চিত্রনাট্য প্রস্তুত ছিলই। তার জেরে রাজ্যবাসীকে এই ভোগান্তি পোহাতে হল। ধর্মের অবমাননা হলে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হতে পারে। প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ সহিংস হলে তা অত্যন্ত বেমানান।
নানা ভাবে প্রতিবাদ সংগঠিত করা যায়। শান্তি মিছিল, মৌন মিছিল, অনশন, অথবা সমাজমাধ্যমেও তর্ক-বিতর্ক চলতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিতর্কিত মন্তব্যটি বিষয়ে কত জন মানুষ অবগত আছেন, তা অনিশ্চিত। বেশ মনে আছে, বামফ্রন্ট আমলে তসলিমা নাসরিনকে নিয়েও আচমকাই শহরের বুকে ব্যাপক প্রতিবাদে সারা শহর অচল হয়েছিল। বাড়ি ফিরতে মানুষ নাজেহাল হয়েছিলেন। আবার বেশ কিছু দিন পরে শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার এক ইংরেজি দৈনিক কাগজের দফতরে ভাঙচুরের ঘটনাও মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন। প্রতিবাদের নামে বিভিন্ন স্থানে দিনভর দাপাদাপি, দাদাগিরি, অগ্নিসংযোগ, আইন অমান্য, বিশৃঙ্খলাই সৃষ্টি হয়েছে কেবল।
ইন্দ্রনীল বড়ুয়া, কলকাতা-১৫
চাই কঠোরতা
‘তাণ্ডব হাওড়ায়, আক্রান্ত পুলিশ’ (১১-৬) সংবাদটি ক্ষতকে আরও দগদগে করল। এই দাবদাহে কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে ১১ ঘণ্টার অবরোধে গাড়ির মধ্যে আটকে-থাকা যাত্রীরা অসুস্থ হলেও, অবরোধকারীরা থোড়াই কেয়ার করে? কেন মুখ্যমন্ত্রীকে করজোড়ে এই অবরোধ, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি থেকে বিরত থাকার আবেদন জানাতে হবে?
পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া এখন জলভাত। হাওড়া, সাঁতরাগাছি থেকে দূরপাল্লার বহু ট্রেন বাতিল করে, স্টেশনে অবরোধ করে, ট্রেন আটকে নিত্যযাত্রীদের হেনস্থা করে, পুলিশের কিয়স্ক বা মোটরবাইক পুড়িয়ে যে আন্দোলন চলল, নূপুর শর্মা তার কতটুকু আঁচ পাচ্ছেন? সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দেশগুলো ভারতকে সার্বিক ভাবে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নীরব। সাধারণ মানুষ যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেন, পুলিশ-প্রশাসনের উপর আস্থা হারান, তা হলে দুষ্কৃতীদের পোয়াবারো। এমনিতেই আবার করোনার রক্তচক্ষু দৃশ্যমান। বিপর্যস্ত অর্থনীতি, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি নিয়ে হেলদোল নেই সরকারের। প্রশ্ন ওঠে, একটা বেফাঁস মন্তব্যকে মূলধন করে এই অশান্তির বাতাবরণ যাঁরা সৃষ্টি করছেন, তাঁদের শাস্তি দেওয়া হবে তো? নূপুর শর্মার কেরিয়ার চিরতরে শেষ হলেও আবার দেশে সম্প্রীতির আবহ ফিরে আসবে তো? প্রশাসনের তরফ থেকে কেন দীর্ঘ অবরোধ তুলতে আরও কঠোর পদক্ষেপ করা হল না, সে প্রশ্নও থেকেই যাবে।
ধ্রুবজ্যোতি বাগচী, কলকাতা-১২৫
ঈশ্বরের অপমান
ধর্ম একটি অতি স্পর্শকাতর বিষয়, এবং ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করা কোনও সম্প্রদায়েরই উচিত নয়। নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দলের মন্তব্য যথেষ্ট হীনবুদ্ধির পরিচয় বহন করে। এর জেরে পশ্চিমবঙ্গে কিছু দিন পূর্বে টানা ১১ ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হল। জেরবার হলেন সাধারণ মানুষ।
সমস্ত ধর্মের মূল কথা জীবের মধ্যে ঈশ্বরের বাস। সেই কথা ভেবেই সুফি আন্দোলন, ভক্তি আন্দোলন থেকে শুরু করে সারা ভারতে বিভিন্ন ধর্ম সংস্কার আন্দোলন হয়েছে। শ্রীচৈতন্যদেব, কবীর, শঙ্করাচার্য, দয়ানন্দ সরস্বতী, গুরু নানক, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, কে নেই ধর্ম আন্দোলনে? প্রত্যেকে ঈশ্বরকে দেখেছেন মানুষের মধ্যে। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করেছে ধর্মের ধ্বজাধারী কিছু ব্যক্তি। জাতীয় সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম। এই তীব্র গরমে জরুরি পরিষেবা থেকে বঞ্চনা করা হল আমজনতাকে, একটা কাজের দিন নষ্ট করা হল। মানুষকে অপদস্থ করা কি ঈশ্বরেরও অপমান নয়?
শুভজিৎ বসাক, কলকাতা-৫০
অগ্রদূত
অমিত দাসের (‘বিদেশেও তিনি আইকন’, ২২-৫) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলতে চাই, রামমোহন রায় যথার্থই নবজাগরণের অগ্রদূত। সব সময় তাঁর ভাবনা ছিল শিক্ষার আধুনিকীকরণের দিকে, যাতে শিক্ষা দৈনন্দিন জীবনে কার্যকর হয়। শিক্ষাখাতে সরকারি ব্যয় নিয়ে ১৮২৩ সালে গভর্নর জেনারেল লর্ড আমহার্স্টকে তিনি যে চিঠি লেখেন, তা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন। জন স্টুয়ার্ট মিল-এর দ্য সাবজেকশন অব উইমেন প্রকাশিত হওয়ার আগেই রামমোহন সমাজে নারীর অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, যে প্রশ্নটি ইউরোপকে ভাবিয়ে তুলেছিল। ভারতীয় সংস্কৃতির আধুনিকীকরণের অন্যতম পুরোধা ছিলেন রাজা রামমোহন। তাঁকে নিয়ে এখনও গবেষণা করে চলেছেন দেশ-বিদেশের ইতিহাসবিদরা।
প্রদীপ মারিক, কলকাতা-১৪৪
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।