সেবন্তী ঘোষের ‘স্কুলের শিক্ষা কাজে লাগছে কি’, (১৩-৬) শীর্ষক প্রবন্ধটির সঙ্গে সহমত পোষণ করি। আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে-পড়া অভিভাবকদের কথা বাদই দিলাম, তথাকথিত ‘এগিয়ে থাকা’ অভিভাবকরাও আজও সন্তান ‘মানুষ’ করা বলতে বোঝেন ‘টিউশন থেকে টিউশনান্তরে’ ভ্রমণ করানো ও নোটের পাতা গিলিয়ে নম্বর বাড়ানো। দুই দশকের বেশি সময় চারটি স্কুলে শিক্ষকতা করার সুযোগ ঘটেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি স্কুলে থাকাকালীন সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে দেখেছি, অত্যন্ত রূঢ় ভাবে নিজের এক ছেলের তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিতে। ছেলে কলকাতা ময়দানের তিন প্রধান ক্লাবের একটিতে সাব জুনিয়র ফুটবল টিমে সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তাঁর বাবা তাঁকে যেতে দেননি। অজুহাত, “ও সব করে কিস্যু হবে না!” ছেলেটির শিক্ষক হিসেবে আমি সুপারিশ করতে গেলে তিনি বলেছিলেন, তার চেয়ে ভাল করে পড়াশোনা করুক। যত খরচ লাগুক তিনি দিয়ে দেবেন। অর্থাৎ, এক জন শিক্ষকের কাছেও শিক্ষা বলতে পাঠ্যপুস্তকের বাঁধা পাঠ বোঝায়। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক পরিমণ্ডলে তাদের মধ্যে জীবনবোধ গড়ে তোলার ন্যূনতম প্রচেষ্টা আজও নেই।
ভিন্ন ধারার শিক্ষা ভাবনা ও তার প্রয়োগ বড্ড বেশি দরকার এই করোনা-পরবর্তী অস্থির সময়ে। যমুনা নদী ঘেরা উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা ব্লকের একটি স্কুলে আমার এক সহকর্মী যখন পুঁথিগত বিদ্যায় পিছিয়ে-থাকা, ডানপিটে শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচালন সমিতির সভায় সাঁতার ও কবাডি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব দেন, পত্রপাঠ তা খারিজ হয়ে যায়। এবং তাঁকে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হিসাবে পাঠদানে যথেষ্ট মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই শিক্ষক এখন ভাবনার ভিন্নতা ছেড়ে গতানুগতিক ‘মাস্টারি’ করেই দিন কাটাচ্ছেন।
তন্ময় মণ্ডল, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
সাইকেলের পথ
মেয়েদের স্কুলে বিনা পয়সায় সাইকেল দেওয়া হয় বলে সাইকেলের ব্যবহার প্রচুর বেড়েছে। সাইকেল এমন এক পরিবহণ ব্যবস্থা, যা এক দিকে দীর্ঘমেয়াদি, সাশ্রয়ী এবং অন্য দিকে দূষণমুক্ত। আক্ষেপ, সরকারের তরফে সাইকেলকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে না। পরিবহণ দফতর থেকে ২০০৮ সালে শহরের ৩৮টি রাস্তায় সাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে যেটি বাড়িয়ে ১৭৪টি করা হয়। এতে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফলে পরিবহণ দফতর ৬২টি ছেড়ে ১১২টি রাস্তায় সাইকেল চলাচলে অনুমতি দেয়। নিয়ম না মানলে ১০০ টাকা জরিমানা এবং ধরপাকড়ও চলে। করোনাকালে এবং পরবর্তী আনলক পর্বে অকারণ ছোঁয়াচ বাঁচাতে সাইকেলের প্রয়োজনীয়তা মানুষ বুঝতে পারেন, এবং ব্যবহারও প্রচুর বেড়ে যায়। শহরের রাস্তাকে কী ভাবে সাইকেল চালানোর উপযুক্ত করা যায়, কেএমডিএ সে বিষয়ে ২০১৯ সালে একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করায়। তার রিপোর্ট ২০২১ সালে জমা পড়ে।
দুর্ভাগ্য, আজ পর্যন্ত কার্যকর করা হয়নি ‘কম্প্রিহেনসিভ বাইসাইকেল প্ল্যান’। সাইকেলের ব্যবহার বাড়াতে, আলাদা লেন তৈরি করতে উদ্যোগী হোক পরিবহণ দফতর।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
ভেজালে সাবধান
ভারতে দেড় হাজারেরও বেশি ধরনের আম পাওয়া যায়, আর পশ্চিমবঙ্গে একশোরও বেশি। তার মধ্যে মূলত আমরা হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, আম্রপালি ও লক্ষ্মণভোগ খেয়ে থাকি। এ বছর আমের দাম বেশ খানিকটা বেশি, কারণ ফলন খানিকটা কম। তাতে কী, বাঙালির আম খাওয়াতে ভাটা পড়ে না। কিন্তু প্রিয় এই ফলই বয়ে আনতে পারে মারাত্মক রোগ। কারণ, কেনার সময় আমরা খেয়াল করি না, যে আম আমরা কিনছি সেটা গাছে পাকা, না ইথিলিনে পাকা, না কি ক্যালসিয়াম কার্বাইডে পাকা।
২০১১ সালে ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক-এর অন্তর্গত ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া একটি নির্দেশিকা দিয়ে বলেছে যে, ক্যালসিয়াম কার্বাইডকে কোনও ভাবেই ফল পাকানোর জন্য যেন ব্যবহার করা না হয়। তাতে মানুষের শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধতে পারে। যেমন— বদহজম, জন্ডিস, গ্যাসট্রিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজ়মা, লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়া-সহ ক্যানসারের মতো মারণরোগ। শিশুরা রাসায়নিক পদার্থের বিষক্রিয়ার ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কার্বাইড বিক্রিয়ার মাধ্যমে ফলকে কাঁচা থেকে পাকা অবস্থায় নিয়ে আসে। ফলটি কাঁচা, কিংবা আধাপাকা, যে অবস্থায় থাকুক না কেন, কিছু কিছু ফলের বাইরে এবং ভিতরে কার্বাইডের প্রভাব এতটাই ঘটে যে, ভিতরে-বাইরে ফলটি রঙে ও স্বাদে প্রাকৃতিক ভাবে পাকা ফলের মতো হয়ে যায়। কোনও কোনও ফলের কেবল বাহ্যিক বর্ণ আকর্ষণীয় হয়ে পড়ে। টকটকে লাল, হলুদ, গোলাপি বর্ণ দেখে মানুষ আগ্রহী হয়ে ফল পছন্দ করে কিনে নিয়ে যান। তিনি জানতে পারেন না, ওগুলির ক্ষতি করার ক্ষমতা কতটা। আবার কিছু কিছু সময় দেখা যায়, এই কার্বাইডের প্রভাবে ফলের গায়ে কালো কালো দাগ, আর সেখান থেকেই পচন শুরু হয়। এতে এক দিকে যেমন ফলের পুষ্টি, গুণাগুণ নষ্ট হয়, অপর দিকে ফল খেতে বিস্বাদ, পানসে, শক্ত ও তেতো স্বাদযুক্ত মনে হয়। শুধু আম নয়, তাতে শামিল কলা, টমেটো, আনারস, পেঁপের মতো ফল-আনাজও।
ইথিলিন দিয়ে যদি ফল পাকানো হয়, তাতে বিষক্রিয়া হয় না। কিন্তু তাতে খরচটা একটু বেশি। ভারত সরকারের নির্দিষ্ট গাইডলাইনও আছে এর ব্যবহারের। কিন্তু এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ক্যালসিয়াম কার্বাইড-সহ বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে আম, কলা, কাঁঠাল, আনারস এবং অন্যান্য ফল পাকাচ্ছেন। মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন, স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে পড়ছেন।
এর দায় কে নেবে? এই বিষয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা বা শাস্তির বিধান আছে কি না, জানা নেই। গোটা রাজ্য জুড়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কলা পাকানোর কিছু ব্যবস্থা আছে, যে হেতু কলা সারা বছর পাওয়া যায়। কিন্তু আম, কাঁঠাল, আনারস, টমেটো পাকানোর ব্যবস্থা ক’টা আছে, জানা নেই। অথচ মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, দিল্লি, লখনউ, বেঙ্গালুরুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল পাকানোর ব্যবস্থা আছে। যেখান থেকে রফতানির কাজও হয়, আবার সেই রাজ্যের মানুষও ভাল ফল কিনতে পারেন। এ রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে আমের ফলন, এবং বিদেশে বাংলার আমের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও, পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভাবে আমরা আমের রফতানি ঠিকমতো করে উঠতে পারি না।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, এবং প্রশাসনের তৎপরতার মাধ্যমে ফল, শাক, আনাজ ও খাদ্যদ্রব্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
অঙ্কুশ সাহা, সচিব, ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রুট এক্সপোর্টার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন
এক শতাংশ কম
এমপ্লয়িজ় প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ইপিএফ-এ সুদ কমে ৮.১% হওয়ায় চারিদিকে তুমুল চর্চা চলছে। বিষয়টি যে হেতু সঙ্ঘবদ্ধ কর্মিবর্গ সংক্রান্ত, তাই সংবাদপত্রে, টিভিতে রাজনীতির কর্তাব্যক্তিরা সরব হয়েছেন। তবে আমজনতা যে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড, বা পিপিএফ-এ বিনিয়োগ করেন, সেখানে কিন্তু বহু দিন যাবৎ সুদ লভ্য ৭.১%।
অর্থাৎ, অসংগঠিত ক্ষেত্রে যে হেতু আদায় করার জোট-শক্তি নেই, তাই আয়করে ছাড়ের সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে এই ১ শতাংশ কম সুদ ধার্য করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, আয়করে ছাড়ের সুবিধা কিন্তু ইপিএফ-এও মেলে।
সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা-৯১