Soil Pollution

সম্পাদক সমীপেষু: দূষিত নগরী

অল্প পরিসরে বহু মানুষ যে ভাবে রাস্তাঘাটে জ্বালানি পুড়িয়ে অটোমোবাইল বা বিদ্যুতের ব্যবহার করছেন, তা প্রচুর তাপ উৎপাদন করছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:১২
Share:

‘গোড়ায় গলদ’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে (৭-৯) লেখা হয়েছে, পৃথিবীর বেশ কয়েকটি শহর নিয়ে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গত সাত দশকে কলকাতাতেই তাপমাত্রা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক, সাও পাওলো বা সিডনির থেকে কলকাতার গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি অনেক বেশি। গত সাত দশকে এই শহরগুলিতে যেখানে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ০.২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে কলকাতার তাপমাত্রা বেড়েছে ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতের তুলনায় গোটা একবিংশ শতাব্দী জুড়ে আরও বাড়বে তাপপ্রবাহ। গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্ব বাড়বে, কমবে শীতকালের পরিধি। পাশাপাশি ভারী বর্ষণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে চেন্নাই, কোচি, কলকাতার মতো উপকূলবর্তী শহরগুলিতে ঘন ঘন বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে।

Advertisement

শহরতলির তুলনায় কলকাতার তাপমাত্রা বাড়ার কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ। উঁচু উঁচু বাড়ি কাছাকাছি থাকায় বায়ুমণ্ডল তাপমুক্ত হতে পারছে না। অল্প পরিসরে বহু মানুষ যে ভাবে রাস্তাঘাটে জ্বালানি পুড়িয়ে অটোমোবাইল বা বিদ্যুতের ব্যবহার করছেন, তা প্রচুর তাপ উৎপাদন করছে। দূষণের কারণে কলকাতার উপরে একটা কুয়াশার স্তর থাকে। তাই ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপমাত্রার বিকিরণ হতে পারে না। ফলে তৈরি হচ্ছে ‘হিট আইল্যান্ড’। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে শহর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পুকুরগুলো। মানুষও ততটা সচেতন নন পরিবেশ নিয়ে। তাই এলাকায় পুকুর ভরাট হলে যে গণপ্রতিরোধ গড়ে ওঠার কথা, সেটাও তেমন দেখা যায় না। জলাশয়গুলির উপর স্থানীয় জলবায়ু নির্ভর করে। পুকুর বুজিয়ে দিলে সেই ভারসাম্য নষ্ট হয়।

কলকাতার তাপমাত্রা ও দূষণ কমাতে প্রচুর গাছ লাগানো প্রয়োজন। ফুটপাতে গাছ লাগানোর জন্য যে জায়গা বরাদ্দ করা হয়, তাতে গাছ বাড়ে ঠিকই, কিন্তু জায়গার অভাবে শিকড় ছড়াতে পারে না। এর মধ্যে খোঁড়াখুঁড়ি বা নির্মাণকাজ হলে শিকড়ের অনেকটাই কাটা পড়ে। ফলে গাছের ভিত দুর্বল হয়ে যায়। একটু ঝড় হলেই তাই কলকাতায় প্রচুর গাছ পড়ে যায়। উদ্যানবিদরা বলছেন অনেকটা ফাঁকা জায়গা জুড়ে ওই গাছগুলি লাগালে এমন সমস্যা হবে না। কারণ, সে ক্ষেত্রে শিকড় অনেক দূর ছড়াতে পারবে। ফলে, গাছের গোড়া আলগা হবে না।

Advertisement

রবীন রায়, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

অনুদানের পুজো

‘নিয়ম মেনে পুজোর ডাক’ (৮-৯) সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা বলতে চাই। রাজ্য সরকার ৩৬ হাজার ক্লাবকে ৫০ হাজার করে টাকা অনুদান দেবে। তাতে ব্যয় হবে ১৮০ কোটি টাকা। পাঁচ বছরে ৯০০ কোটি টাকা। সঙ্গে বিদ্যুতের বিলের ভর্তুকি ধরলে আরও কয়েকশো কোটি টাকা খরচ বাড়বে। প্রশ্ন, এত বছর ধরে রাজ্যে সরকারি অনুদান ছাড়া কি দুর্গাপুজো বন্ধ ছিল? তা হলে কেন সরকারের কোষাগার থেকে এই বিশাল ব্যয়ের দায়িত্ব নিল সরকার? এই পরিমাণ টাকা দিয়ে কি রাজ্যে বিদ্যালয়, হাসপাতাল, ছোট ছোট কারখানা তৈরি করা যেত না? তাতে রাজ্যে স্থায়ী উন্নয়ন হত। আবার, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে যখন এ বছর মানুষকে ঘরে থেকে উৎসব পালন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তখন রাজ্য সরকারের তরফে পুজো কমিটিকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া পুজোয় বাড়তি উৎসাহ দেওয়া নয় কি? জাঁকজমক করে পুজো করলে মানুষ ঠাকুর দেখতে বেরোবেনই। তৃতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখে এ বার নিয়ম রক্ষার পুজোর আয়োজন করলে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানো যেত না কি? কেরলের ওনাম উৎসব থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন ছিল।

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি

বরণীয়

স্বপন সোমের ‘কথাশিল্পীর দেওয়া পাঁচ টাকাই তাঁর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার’ (রবিবাসরীয়, ৫-৭) শীর্ষক লেখাটি পড়ে ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের শতবর্ষের সূচনার কথা জানতে পারলাম। তাঁর সম্বন্ধে কিছু বলার বা লেখার ইচ্ছা বহু দিন ছিল। আমার এই অশীতিপর বয়সে বহু বার তাঁর গান শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। ১৯৫৫ সালে শ্রীরঙ্গম (পরে ‘বিশ্বরূপা’) মঞ্চে তাঁর ‘কবির খেয়ালে প্রেমময় তুমি সম্রাট শাহজাহান’ গানটি শুনি। স্বপনবাবু তাঁর লেখায় বিস্তৃত ভাবে বেসিক ও ছায়াছবির গানের কথা লিখেছেন। দু’-একটি কথা লিখব, যেগুলো এই লেখায় নেই।

ধনঞ্জয়বাবু নবীন শিল্পীদের খুঁজে বার করতেন। উত্তর কলকাতার এক গানের অনুষ্ঠানে মৃণাল চক্রবর্তীর গান শুনে খুশি হয়ে তাঁর সঙ্গে হোটেল সিসিলে দেখা করতে বলেন। মৃণাল চক্রবর্তী তাঁর সঙ্গে দেখা করলে তিনি রেকর্ড করার জন্য সুরকার দিলীপ সরকারকে চিঠি লিখে দেন। দিলীপবাবু ‘যমুনা কিনারে শাহজাহানের স্বপ্ন’ গানটিতে সুর দেন। সেই গানই মৃণালবাবুকে জনপ্রিয় করে। শুধু চিঠি লিখেই নয়, মৃণালবাবুর গান যাতে তাঁর গানের রেকর্ডের আগে বেরোয়, গ্রামোফোন কোম্পানিকে সেই অনুরোধও করেন। নতুন শিল্পীর জন্য নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিতেও তিনি কুণ্ঠিত হননি। সনৎ সিংহ ও পান্নালাল ভট্টাচার্য তাঁর কাছে গান শিখতেন। এক দিন গানের ক্লাসে দেরি করে আসায় ঘর থেকে বার করে দেন এবং দু’জনকেই কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন। প্রয়োজনে কঠোর হতেও দ্বিধা বোধ করতেন না। তথ্যটি সনৎ সিংহ টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন।

স্বপনবাবু তৎকালীন উদীয়মান তরুণ শিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথাও বলেছেন। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য তাঁর সুরে অনেক গান করেছেন। ‘শূন্য ঘরে ফিরে এলাম’ গানটি তো এত দরদ দিয়ে গেয়েছেন, যা মরমের মধ্যে গেঁথে গিয়েছে। অথচ, হুগলি কলেজে পড়ার সময়ে সতীনাথ যখন বলেছিলেন “আমি যখন সুর দেব ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যকে তখন দেখবি”— তাঁর বন্ধুরা তাঁকে উপহাস ও বিদ্রুপ করতে শুরু করেন। উত্তরকালে ধনঞ্জয় নিজে তাঁর সুরে শুধু গাননি, তাঁর কাছ থেকে নতুন গান চেয়েও নিয়েছেন। ‘যদি ভুলে যাও মোরে’ রেকর্ড হওয়ার পরই অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে যায়। আমি ১৯৪৫ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে (অধুনা পাকিস্তান) তাঁর গান শুনেছি। সেই দূর দেশেও তাঁর গান জনপ্রিয় হয়েছিল। ‘ধনঞ্জয় গীতি মন্দির’ স্মরণ অনুষ্ঠানে আমিও কয়েক বার গিয়েছি, দেখেছি এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও তাঁর গান মন দিয়ে শুনছেন।

তাই পরিশেষে বলি, তাঁর নিজের গান ‘আমায় তুমি ভুলতে পারো’। কিন্তু ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যকে ভোলা সহজ নয়। নজরুলের কথায় ‘কেউ ভোলে না’। ভবিষ্যতেও তাঁর সঙ্গীতকীর্তি স্মরণীয় হয়ে থাকুক, শতবর্ষে এই শ্রদ্ধাটুকু জানাই।

পরাগ রঞ্জন ঘোষ, কলকাতা-৯১

ভুল তথ্য

সৌরীশ মিশ্রের লেখা ‘অভিনেতা ধনঞ্জয়’ (সম্পাদক সমীপেষু, ১২-৯) শীর্ষক চিঠিটিতে ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের অভিনয় জীবন নিয়ে একটি তথ্য দেওয়া হয়েছে, যেটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। পত্রলেখক ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নির্মল দে পরিচালিত সাড়ে চুয়াত্তর ছায়াছবির অন্নপূর্ণা বোর্ডিং হাউসের বাসিন্দা অখিলবাবুর চরিত্রে ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য অভিনয় করেছেন বলে জানিয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই জাতীয় একটি ভুল তথ্য বেশ কিছু বছর ধরে বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। বস্তুত, সেই সময়ের সুপুরুষ গায়ক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের চেহারা সম্বন্ধে যাঁদের বিন্দুমাত্র ধারণা আছে, এই ভুল তাঁরা করতে পারেন না। উল্লেখ্য, সিনেমায় তিন বাঙালি গায়ক— মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র এবং সনৎ সিংহ অভিনয় করলেও ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য শুধু নেপথ্য গায়ক হিসেবে এই সিনেমায় যুক্ত ছিলেন। এই সিনেমার ‘এ মায়া প্রপঞ্চময়’ গানটি ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের গলায় গাওয়া, কিন্তু সিনেমায় ঠোঁট মিলিয়েছিলেন অখিলবাবু চরিত্রে কোনও এক স্বল্পখ্যাত অভিনেতা, প্রখ্যাত গায়ক নন।

ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement