ছবি: সংগৃহীত
‘৪ লক্ষ ডলারে বিক্রি হার্জের আঁকা কার্টুন’ (২২-১১) খবরটিতে লেখা হয়েছে, ‘‘...হার্জের লেখা এই ‘বম্বেটে জাহাজ’ গল্পটি নিয়েই হলিউডের পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ বছর কয়েক আগে ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অব টিনটিন’ ছবিটি বানিয়েছিলেন।’’ কিন্তু ওই ছবিটি শুধুমাত্র ‘বম্বেটে জাহাজ’ (‘দ্য সিক্রেট অব দি ইউনিকর্ন’) অবলম্বনে নয়। ‘দ্য ক্র্যাব উইথ দ্য গোল্ডেন ক্লজ়’, ‘দ্য সিক্রেট অব দি ইউনিকর্ন’ এবং ‘রেড র্যাকহ্যামস ট্রেজ়ার’— এই তিনটি কমিকসের গল্প অবলম্বনেই তৈরি হয়েছিল ছবিটি। ছবিতে স্পিলবার্গ বেশ কিছু পরিবর্তনও করেছিলেন, যেমন ‘বম্বেটে জাহাজ’-এর একটি চরিত্র, সংগ্রাহক আইভান আইভানোভিচ সাখারিন-কেই
বানিয়ে দিয়েছিলেন জলদস্যু ‘লাল বম্বেটে’, মানে রেড র্যাকহ্যাম-এর বংশধর, খলনায়ক।
শঙ্খশুভ্র চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৭৮
বাংলার সংস্কৃতি?
সম্প্রতি বিধানসভা উপনির্বাচনের দিন বিজেপি প্রার্থীর নিগ্রহের যে ছবি দেখা গেল, তা থেকে বাংলার কোন সংস্কৃতির পরিচয় ফুটে উঠল? না কি এটিকে শুধু ভোট সংস্কৃতির ছবি বলে উড়িয়ে দেব? গণতন্ত্রের নামে ভোট সংস্কৃতির যে ধারাবাহিক ছবি গত পঞ্চায়েত ভোট থেকে বাংলার বুকে ফুটে উঠছে, তাকে ‘বাংলার সংস্কৃতি’ বলে গর্ব করা যায়?
নরেন্দ্রনাথ কুলে
কলকাতা-৩৪
অদ্ভুত মন্তব্য
মাননীয় জননেতা জয়প্রকাশ মজুমদারকে লাথি মেরে ফেলা হল। সাধারণত এ রকম কিছু ঘটলে, তৃণমূলের এক জন হাই প্রোফাইল নেতা ঘটনা সম্বন্ধে মতামত দিয়ে দেন। এর পর সবাই তাঁর পো ধরে। তৃণমূলের এক নেতা বললেন, জয়প্রকাশবাবুই তো ইচ্ছা করে এ সব ঘটিয়েছেন। পাবলিককে রাগিয়েছেন। ফলে পাবলিক উত্তেজিত হয়ে এই কাণ্ড করে ফেলেছে। তবে এটাও হতে পারে যে জয়প্রকাশবাবু নিজেই লোকজন জুটিয়ে এই কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন। এ রকম উদ্ভট ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যও করা যায়!
সঞ্জয় চৌধুরী
খড়্গপুর
নজির ছিল
‘অযোধ্যা মামলার রায় আজ’ (৯-১১) শীর্ষক সংবাদে প্রকাশ, রায়দানের আগে প্রধান বিচারপতির উত্তরপ্রদেশের মুখ্যসচিব ও পুলিশের ডিজির সঙ্গে আলোচনা এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ।
এই প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৮৬ সালে উমেশ পান্ডে নামে এক আইনজীবী ফৈজাবাদ জেলা জজের আদালতে রামলালার দর্শন ও পুজোর অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। রায় দেওয়ার আগে তৎকালীন জেলা বিচারক মহাশয় জেলা শাসক ও পুলিশের এসপি-কে আদালতে ডেকে পাঠিয়ে জানতে চান, তালা খোলার অনুমতি দিলে তাঁরা আইনশৃঙ্খলার সমস্যা সামাল দিতে পারেন কি না। জেলাশাসক এবং এসপি জানান, তাঁরা সামাল দিতে সক্ষম। তখন জেলা বিচারক ১৯৮৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তালা খোলার অনুমতি দিয়েছিলেন। তাই এ রূপ নজির পূর্বেও ছিল।
ভোলা নাথ নন্দী
মানিকপুর, মেদিনীপুর
এলআইসি
‘আবার কেন এলআইসি! উঠছে প্রশ্ন’ (৮-১১) প্রতিবেদন বিষয়ে কিছু কথা। এ কথা ঠিক যে সরকারি জীবন বিমা সংস্থা বলে আমজনতা এলআইসি-তে টাকা রাখা নিরাপদ ভেবে সঞ্চয় করেন। সেই সঞ্চয় জীবনবিমা কর্তৃপক্ষ ‘নিগম সংশোধনী আইন’ অনুসারে বিমাকারীর স্বার্থকে মাথায় রেখে তার সিংহভাগ (প্রায় ৮০%) সুরক্ষিত সরকারি বা সরকার অধিগৃহীত সংস্থায় বিনিয়োগের অধিকারী।
প্রশ্ন হল, আজ কেন এলআইসি-র টাকা গৌরী সেনের টাকার ভূমিকায় অবতীর্ণ? ফিরে যেতে হয় ১৯৫৬ সালের প্রেক্ষিতে, যখন সারা ভারতে অসংখ্য গজিয়ে ওঠা বেসরকারি বিমা কোম্পানির অনেকেই জনগণের গচ্ছিত টাকা তাঁদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে সুকৌশলে নয়ছয় করে কোম্পানিতে লালবাতি জ্বালিয়ে অনেকটা হাল আমলের চিটফান্ডের আদলে আত্মসাৎ করত। তদানীন্তন প্রজাতন্ত্রী ভারত সরকারের অধিগৃহীত এমত প্রায় ২৫০টি কোম্পানি আর ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের বলিষ্ঠ সন্তান আজকের এই এলআইসি, যার পথ চলা শুরু ১ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬। এর পর বছরের পর বছর তার অতুলনীয় শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। পরে সাধারণ বিমা, ব্যাঙ্ক, তৈলক্ষেত্রের মতো আরও অসংখ্য সংস্থার জাতীয়করণ হয়। একে একে তাদের অনেকেরই বার্ষিক ব্যালান্স শিটে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। কিন্তু এলআইসি ভারত সরকারের একান্নবর্তী পরিবারে উচ্চ রোজগেরে, কিন্তু একান্ত অনুগত পিতৃনিষ্ঠ বাধ্য পুত্রসম। পিতৃবৎ সে দিনের ভারত সরকার আজ নানা আর্থিক, রাজনৈতিক, বৈদেশিক নিপীড়ন নিষ্পেষণে বিপর্যস্ত ও অথর্বপ্রায়। কে আর স্বেচ্ছায় তার অনাহারক্লিষ্ট শীর্ণ দীর্ণ সন্তানদের ভার নেয়।
অন্য দিকে এলআইসি-র ১৯৫৬ সালের ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের শেষে ৩১ লক্ষ কোটি টাকায় (৩১,১১, ৮৪৭ কোটি) পরিণত, সঙ্গে প্রায় ৩১ কোটি বিমাকারী। প্রতিবেদনে উল্লিখিত ওএনজিসি, আইডিবিআই-কে উদ্ধারে, রেলের আধুনিকীকরণে বা প্রস্তাবিত স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে আবাসন ক্ষেত্রকে উদ্ধারেই নয়, এ যাবৎ শুধু প্রধানমন্ত্রী মোদীর জমানায় ১০.৭ লক্ষ কোটি টাকা দুর্বল সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োজিত হয়েছে, যা তার আগের ৬০ বছরের বিনিয়োগের সমপরিমাণ।
বিমাকারী ও বিমাসংস্থার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতেই বিনিয়োগে অতি সতর্কতার প্রয়োজন। বাস্তবে কিন্তু তা ঘটছে না, উদাহরণ অসংখ্য। ২০১৭-১৮’য় নিউ ইন্ডিয়া অ্যাশিয়োরেন্সে বিনিয়োগের ৫৭১৩ কোটি, ২০১৯-২০’র দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের শেষে শেয়ার অবমূল্যায়নে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭৫৭ কোটিতে। অনুরূপ ভাবে, জিআইসি-তে ৫৬৪১ কোটি ২৯৭৯ কোটিতে, এনটিপিসি-তে ৪২৭৫ কোটি ৩০০৩ কোটিতে, হিন্দুস্তান অ্যারোনেটিক্সের ২৮৪৩ কোটি ১৭৫১ কোটিতে আর ২০১৮-১৯’এর একেবারে শেষপাদে আইডিবিআইতে নিয়োজিত ২১৬২৮ কোটি এই ক’দিনেই (২০১৯-২০’র দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের শেষে) ১০৯৬৭ কোটিতে পর্যবসিত। অর্থাৎ কেবল পাঁচটি সংস্থায় মোদীর জমানায় এলআইসি-র নিয়োজিত টাকার শেয়ার অবমূল্যায়িত হয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এই পরিসংখ্যান ভাসমান হিমশৈলের চূড়ামাত্র।
সাম্প্রতিক ছোট-বড় আরও বিভিন্ন সংস্থায় বিনিয়োগের ফলাফলেও ব্যত্যয় ঘটেছে কদাচিৎ। এ কথা বলাই বাহুল্য, বিনিয়োগ আর বিনিময় প্রাপ্তির ফলাফলের নিরিখে নির্ণীত একটি অংশ ‘বোনাস’ হিসেবে বিমাকারী বা তার নমিনিকে যথাক্রমে ম্যাচিয়োরিটি বা মৃত্যুজনিত ক্লেমের সময়ে প্রদান করা হয়। বোঝাই যাচ্ছে, বিমাকারীর বোনাস প্রাপ্তি কী ভাবে এলআইসি-র বিনিয়োগ সাফল্য বা ব্যর্থতার সমানুপাতিক।
তা সত্ত্বেও প্রতিবেদনে পাই - অর্থ মন্ত্রকের দাবি, ‘‘...এখনও জীবনবিমা ক্ষেত্রে প্রথম বছরের প্রিমিয়ামের ৭১ শতাংশ এলআইসির ঘরে আসে... বার্ষিক প্রিমিয়াম বাবদ এলআইসির আয় প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা...।’’ অর্থাৎ দুধেল গরুর থেকে যতটা সম্ভব দুধ দুয়ে পিপাসিত মুমূর্ষুকে বাঁচিয়ে চলো।
উদ্দেশ্য মহৎ হতে পারে, একই সঙ্গে মনে রাখা দরকার, পরিবারে উচ্চ রোজগেরে সন্তানের পরিশ্রমের বিবেচনায় তারও একটু বেশি পরিচর্যা বা সেবার ব্যবস্থা হয়েই থাকে। এলআইসি নামক ‘দুধেল গরু’কেও সবল রাখার চেষ্টাটাও দরকার বইকি, নইলে এক সময় সে মুখ থুবড়ে পড়লে তাকে মৃতসঞ্জীবনী সুধা পান করানোর মতো অনুরূপ সংস্থা বর্তমান ভারত সরকারের আর আছে তো?
মধুসূদন দাশঘোষ
এলআইসি, কলকাতা নগর শাখা-১