—প্রতীকী ছবি।
মোহিত রায় পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের শব্দবাজির শব্দের সীমা ৯০ ডেসিবেল থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে এই প্রসঙ্গে বেশ কিছু যুক্তিতর্কের অবতারণা করেছেন তাঁর ‘কতটা সীমা পেরোলে তবে’ (১৭-১) শীর্ষক প্রবন্ধে। কিন্তু, সম্পূর্ণ প্রবন্ধে কোথাও খুঁজে পেলাম না, এর ফলে সমাজের কী সুবিধা হবে আর কেনই বা উনি শব্দবাজির শব্দসীমা বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করলেন। বরং অত্যন্ত সূক্ষ্ম ভাবে মসজিদে আজানের সঙ্গে মন্দিরে মাইক বাজানো কিংবা কালীপুজো ও দেওয়ালির রাতে শব্দবাজি ফাটানোর তুলনা টেনে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের তাস খেলতে চেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রবন্ধকার কারখানার হাতুড়ি পেটার শব্দ, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের বাজি ফাটানোর শব্দসীমার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সুকৌশলে ওই সব উন্নত দেশের অন্যান্য শব্দহীনতার কোনও উচ্চারণ করলেন না। উন্নত দেশে রাস্তা দিয়ে গাড়ি যায় নিঃশব্দে, কেউ হর্ন বাজানোর কোনও প্রয়োজনই অনুভব করে না। আমাদের দেশে বিকট শব্দে হর্নের আওয়াজ থেকে স্কুল, হাসপাতাল— কিছুই পরিত্রাণ পায় না। এমনিতেই আমাদের দেশে বাড়িতে, পাড়ায়, তথা সমগ্র সমাজজীবনে উচ্চ শব্দের আধিক্য লক্ষ করা যায়। প্রকৃতিগত ভাবেই আমরা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে পছন্দ করি। তা ছাড়া, শব্দের কারখানার যে উদাহরণ তিনি দিয়েছেন, সেখানে যে শব্দ শ্রমিককে সহ্য করতে হয়, সেই শব্দ সমগ্র দেশের মানুষকে সহ্য করতে বাধ্য করা এক ধরনের অদ্ভুত দাবি। এ ছাড়াও, অসুস্থ, বৃদ্ধ, শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের দিকে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া উচিত, কারণ লাগামহীন শব্দবাজি এঁদের কাছে শুধুমাত্র বিপজ্জনক নয়, প্রাণঘাতীও হতে পারে।
এই প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ্য যে, বর্তমানে আমাদের সমাজজীবনে যে কোনও শোভাযাত্রা, পিকনিক, বিয়ের অনুষ্ঠান ইত্যাদি ছুতোনাতায় যে রকম বল্গাহীন ভাবে ডিজে বক্স ও মাইক বাজানো হয়, তাতে সাধারণ মানুষের প্রাণ এমনিতেই ওষ্ঠাগত এবং এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ সচরাচর উন্নত দেশে দেখা যায় না। তা ছাড়া, তিনি দিল্লি আদালতের রায়ও উল্লেখ করলেন না। দিল্লিতে অস্বাভাবিক দূষণের পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে গত দু’বছর ধরে দেওয়ালিতে সমস্ত রকম বাজি ফাটানোই নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
দূষণের নিরিখে শহর কলকাতা কিন্তু দিল্লির থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। সেই কারণেই শুধুমাত্র বিভাজন করার জন্য বিকট শব্দে শব্দবাজি ফাটানো আর মসজিদের আজানকে এক গোত্রে ফেললে সেটা নিতান্ত অবিচার হবে। কারণ, আজানের শব্দে কারও প্রাণ গিয়েছে বলে কিন্তু কখনও শোনা যায়নি।
সুরজিৎ কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি
দেশের প্রাণ
দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘ধর্ম-কাঁটায় গণতন্ত্র’ (২৬-১) শীর্ষক প্রবন্ধটির বিষয়ে কিছু কথা। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হল, সে রাষ্ট্র কোনও ধর্মের প্রতিই পক্ষপাতিত্ব করবে না, ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না, কোনও ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী হবে না, কোনও ধর্মকে কোনও প্রকার অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করবে না ও কাউকে ধর্ম পালনে বাধ্য করবে না। সেই বৈশিষ্ট্যগুলির কথা মাথায় রেখে এ বার বোধ হয় ‘ধর্মনিরপেক্ষ আমার দেশ ভারতবর্ষ’ বলতে একটু অস্বস্তি মনে হলেও হতে পারে। স্বয়ং শাসক সরকার এই ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশেই এক ধার্মিক ক্রিয়াকর্মের পিছনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিল, যা কোনও এক ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্বের ছবি পরিষ্কার করে দিয়েছে। ধর্মীয় আবেগের সুড়সুড়ি লাগিয়ে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেই আগামী ভোটের মঞ্চকে একটু শক্ত করে বেঁধে নেওয়া হল, এটা বুঝতে বোধ হয় কারও অসুবিধা হয়নি। সরকার অর্ধ দিবস ছুটি ঘোষণা করল, যাতে মানুষজন রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা ঘরে বসেই চাক্ষুষ করতে পারেন। একটা মূর্তি প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে সারা দেশ জুড়ে সরকারি ছুটি! দেশের প্রায় আশি শতাংশ মানুষই যেখানে হিন্দুধর্মাবলম্বী, সেখানে শাসক দলের হিন্দু ধর্মের দেবতার মূর্তি প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে যে কর্মকাণ্ড দেখলাম, তার কি খুব প্রয়োজন ছিল?
প্রবন্ধকারের কথা সত্যি— ধর্মীয় মেরুকরণের বাড়বাড়ন্তের জন্য বিরোধীপক্ষ তার দায় এড়াতে পারে না। আগামী দিনগুলিতে পারস্পরিক দোষারোপের অধ্যায় ছেড়ে বিরোধীপক্ষের জোটশক্তির লড়াই দেখতে সেই বাকি জনগণ তাকিয়ে থাকবে। যাতে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যগুলি সুরক্ষিত থাকে।
স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০
ব্যর্থ নীতি
দিল্লিতে জি২০ সম্মেলনের পরে কেন্দ্রের শাসক দল যেমন ভাবে নিজের ব্র্যান্ড ইমেজ তুলে ধরতে চাইছিল, তা এক প্রকার ব্যর্থ। সম্মেলনে চিন বা রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকরা কেউ আসেননি। অনেকে ভেবেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতেই তাঁরা আসেননি। কিন্তু পরে বোঝা যায়, সম্ভবত আসল কারণ এই যে, এই রকম রুটিন সম্মেলনকে রাশিয়া বা চিন গুরুত্ব দেয় না। সম্মেলনের আগে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সবাই নিজেদের মতামত দিলেও জি২০-র মঞ্চে সব দেশই নীরব। জি২০ সম্মেলনে ভারত যা খরচ করেছিল, ইন্দোনেশিয়া তার অর্ধেকও করেনি। কারণ, এই সম্মেলনের তেমন গুরুত্ব নেই।
এখন ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধে ভারত সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। অন্য দিকে, ব্রিকসের সদস্য হিসাবে ইরানকে আমন্ত্রণ করে চিন পশ্চিম এশিয়ার উপর নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে, যা আমেরিকা বা ভারতের পক্ষে ক্ষতিকারক। ভারত যতই আফ্রিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুক না কেন, আগে থেকেই চিন সেখানে যে ভাবে বিনিয়োগ করে উন্নত করেছে, তাতে চিনের বিকল্প এই মুহূর্তে কেউ নেই। করোনাকালে ভ্যাকসিন বিলি করে কেন্দ্রের শাসক দল বিশ্বের কাছে যে আনুগত্যআশা করেছিল, তা তেমন ভাবে মিলছে বলে মনে হয় না।কাতার যে ভাবে ভারতীয় নৌ আধিকারিকদের শাস্তি ঘোষণা করল, তা এক কথায় নজিরবিহীন। শুধু সন্দেহের বশে, কোনও প্রমাণ ছাড়া, এমনকি ভারতের অনুরোধওউপেক্ষা করে।
কফিনের শেষ পেরেক হল মলদ্বীপ। মুইজ়্জ়ু সরকার আসার আগেই সবাই জানত, সম্পর্কের অবনতি হবে। কারণ, তিনি চিনপন্থী। তবে চিন সফর শেষ করে আসার পরেই লক্ষদ্বীপ প্রসঙ্গে মুইজ়্জ়ু সরকার আদেশ দেয়, সব ভারতীয় নৌবাহিনীকে সরে যেতে। ফলে বাণিজ্য আর পর্যটন, দুই-ই মুখ থুবড়ে পড়ল। বিশ্ব জুড়ে সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতা এতটাই প্রবল যে তাকে দেখা যায় না, অনুভব করতে হয়। আজ কেউ কারও বন্ধু নয়।
তন্ময় কবিরাজ, রসুলপুর, পূর্ব বর্ধমান
মোবাইলাসক্তি
“‘মোবাইল গেম’ বিবাদে খুন বন্ধুকে” (১৮-১) শীর্ষক সংবাদটি মর্মান্তিক। শিক্ষকতা করার সুবাদে শিশু-কিশোর মনকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছি। দেখছি কী ভাবে স্মার্টফোনের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে শিশুমন। নতুন প্রজন্ম মাঠে যাওয়া বন্ধ করে ফোন হাতে আশ্রয় নিচ্ছে ঘরের কোণে, ধ্বংস হচ্ছে মনঃসংযোগ এবং ক্রমশ তারা হয়ে পড়ছে অসামাজিক। অভিভাবকরা বাধ্য হন সন্তানের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিতে। অনলাইন ক্লাসের ছিদ্র দিয়ে ঢুকে পড়ে কালনাগিনী। এখন যখন অনলাইন ক্লাস বন্ধ হয়ে অফলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে, তখনও বহু ক্ষেত্রেই অভিভাবকরা বাচ্চাদের থেকে সেই ফোনটি ফিরিয়ে নিতে পারেননি। আশঙ্কা হয় যে, অবিলম্বে অভিভাবকরা যদি স্মার্টফোন-এর যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে কঠোর অবস্থান না নেন, ফল হবে ভয়ঙ্কর।
রাজীব রায় গোস্বামী, সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা