Matua Community

সম্পাদক সমীপেষু: মতুয়া আদর্শ

হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ছিলেন গুরুবাদ বিরোধী। কাউকে দীক্ষা দেননি, দিতে নিষেধও করেছেন। তাঁদেরই উপর বংশগত গুরুগিরির তরিকা তৈরির দায় চাপিয়ে দেওয়া যায় কি?

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ০৫:৩৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

প্রবল আগ্রহ নিয়ে গৌতম চক্রবর্তীর মতুয়া ধর্ম বিষয়ক ‘প্রতিবাদী গ্রামীণ জনতাই গড়ে তুলল মতুয়া ধর্ম’ (রবিবাসরীয়, ১২-৫) শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়তে শুরু করেছিলাম। কিন্তু পাঠান্তে হতাশ হতে হল। মতুয়া ধর্মান্দোলনের অন্তর্ভাবনাকে স্পর্শ করতে না পারার ব্যর্থতা মেনে নেওয়া গেলেও, পরিবেশিত কিছু তথ্য ভুল এবং বিভ্রান্তিকর। এটা ঠিক নয় যে, ‘সব মতুয়াই নমশূদ্র’। নানা বর্ণের মানুষ এখানে একাত্ম হয়েছেন। হরি পাল, নবীন বসু, তিনকড়ি মিয়া, জগদীশ চক্রবর্তী, ওড়িশার বিজয়কৃষ্ণ পাড়ি প্রমুখ মতুয়া মতাদর্শের অগ্রণী প্রচারক। মমতাবালা ঠাকুর মতুয়া সমাজের প্রথম নারী সাংসদ নন। বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে শেখ মুজিবের উদ্যোগে প্রথম সাংসদ কণিকা বিশ্বাস। নমশূদ্র হিসাবে প্রথম নারী সাংসদ বাম আমলের বিভা ঘোষ গোস্বামী। নমশূদ্র নামটি ১৮৮৫ সালে তৈরি— এই তথ্য প্রবন্ধকার কোথায় পেলেন, তা স্পষ্ট নয়। ১৭৭২ সালে হ্যালহেডের মুনশি কর্তৃক রচিত প্রথম বাংলা-ফারসি অভিধানে কিংবা গয়ায় পান্ডাদের সংরক্ষিত নথিপত্রে অনেক আগেই ‘নমো’ নাম পাওয়া যায়। কার্যত, চণ্ডাল অভিধাটি ব্রাহ্মণ্যবাদীদের দেওয়া।

Advertisement

হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ছিলেন গুরুবাদ বিরোধী। কাউকে দীক্ষা দেননি, দিতে নিষেধও করেছেন। তাঁদেরই উপর বংশগত গুরুগিরির তরিকা তৈরির দায় চাপিয়ে দেওয়া যায় কি? ঠাকুরনগরকে পি আর ঠাকুর প্রথম বেসরকারি উদ্বাস্তু কলোনি হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন, তাঁর জমিদারি হিসাবে নয়। যাঁর মধ্যে শক্তির প্রকাশ, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া মতুয়া ধর্মের আদর্শ। শূদ্রের অন্ন এবং স্পর্শ যাঁকে বিচলিত করে, কিংবা ব্রাহ্মণ্যবাদের যাঁরা পৃষ্ঠপোষক, কোন গুণে তাঁরা মনুষ্যকুলের আরাধ্য বলে গণ্য হতে পারেন? মতুয়াদের কাছে কেন তাঁরা শ্রদ্ধার্হ হবেন? বৈষ্ণবদের দু’শোর বেশি শাখার একটি মতুয়া— এমন কথা লিখলে হয়তো দায় এড়ানো যায়, কিন্তু তাতে তার চারিত্রিক-বৈশিষ্ট্য যথাযথ উন্মোচিত হয় না।

হরিচাঁদ-পুত্র উমাচরণ মতুয়াদের কাছে বিস্মৃত। তাঁর বংশধারার খবর কেউ রাখেন না। অথচ প্রবন্ধকার তাঁকে মতুয়া ধারার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন। এই বিষয়গুলিকে তুলে আনা শেষাবধি মতুয়া ধর্মান্দোলনের তাৎপর্যকে এক জটিল আবর্তের মধ্যে ঠেলে দিতে পারে।

Advertisement

হরেন্দ্রনাথ মণ্ডল, বামনগাছি, উত্তর ২৪ পরগনা

শুকনো কথা

স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভোটে জিতলে যা কর্তব্য’ (২৬-৪) প্রবন্ধটি হতাশ করল। প্রবন্ধকারের লক্ষ্যমাত্রা উন্নত অর্থনীতি, তা-ও ২০২৯-এর মধ্যে। উন্নত অর্থনীতি বলতে যদি আমরা শুধু জিডিপি-র বৃদ্ধি, মুষ্টিমেয়র হাতে বিপুল অর্থ, বল্গাহীন বেসরকারিকরণ ইত্যাদি বুঝি, তা হলে তাতে বিপদ লুকিয়ে আছে।

ত্রিশ বছর আগেই অমর্ত্য সেন তাঁর জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি গ্রন্থে বলেছিলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন হল মানুষের সক্ষমতার বিকাশ’। ‘কর্তব্য’-এ এই বিকাশের পিছনে দৌড়নোর কোনও রোডম্যাপ দেখলাম না। রেজিস্টার্ড বেকারের সংখ্যার প্রবল স্ফীতি, সাধারণ মানুষের সঞ্চয় হ্রাস, শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, ব্যক্তিগত খরচের লাফিয়ে বৃদ্ধি— ভোটে জিতলে এ সব সামলানোর কোনও দিকরেখা প্রবন্ধে নেই। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডে দেখে এসেছি গ্রামের পর গ্রাম জনহীন। সেখানে পাহাড় ভেঙে হচ্ছে পাকা সড়ক। পরিকাঠামোর উন্নয়ন বলতে কী বোঝায়, তা বুঝলাম। কিন্তু বুঝলাম না, কার জন্য পরিকাঠামো? প্রান্তিক কৃষকের জন্য সস্তায় পাওয়ার টিলার, সুলভে সার এবং রাসায়নিক, না কি দিগন্তজোড়া এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন বিমানবন্দর— কোনটা জরুরি?

দেশ এগোনোর মাপকাঠি একটাই— সাধারণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন। তার পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট, কিন্তু আয়াসসাধ্য, নিরন্তর অনুশীলনসাপেক্ষ। শুকনো ভাষণ, প্রতিশ্রুতি দিয়ে, বা প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে, তা অর্জন করা যাবে না।

সুবীর দাশগুপ্ত, কলকাতা-৭৫

অনলাইনে ভোট

‘ভোটকর্মীর ডায়েরি’ (রবিবাসরীয়, ২৮-৪) পড়ে মনে পড়ল আমার চাকরিজীবনে ভোট করাতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা। ভোটে ডিউটির চিঠি আসার পর নতুন কর্মীরা ট্রেনিং পর্ব নিয়ে ভাবতে শুরু করলেও পোড়খাওয়া ভোটকর্মীরা ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে বেশি ভাবেন। ট্রেনিংয়ের পাঠ মুখস্থ থাকলে, বা অভিজ্ঞতা প্রচুর থাকলেও ওই দিনের পরিস্থিতি মুহূর্তে মুহূর্তে পাল্টে যেতে পারে। এমন হবে, তা ধরে নিয়েই সবাই কৌশল ভাবতে থাকেন, ফার্স্ট পোলিং অফিসার থেকে থার্ড/ ফোর্থ পোলিং অফিসার পর্যন্ত। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের আসল সেনাপতি প্রিসাইডিং অফিসার, যাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকে পুরো বুথ-সহ আশপাশের দু’শো মিটার।

ভোটের আগের দিন সাজসরঞ্জাম মালপত্র নিয়ে টিম বুথে পৌঁছনো থেকে চাপ শুরু হয় প্রিসাইডিং অফিসারের উপর। পুরো টিম, সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন, পোলিং বুথে আলো-পাখার বন্দোবস্ত, সবার থাকা বা স্নানাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থা, এ সব রেডি আছে কি না সরেজমিন দেখে সেক্টর অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বন্দোবস্ত করিয়ে নেওয়া প্রথম কাজ। ভোটের আগের রাতে ও ভোটের দিন দুপুরে ভোটকর্মীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয় স্থানীয় ভাবে। এ সবের পর রাত জেগে ভোটের দরকারি কাগজপত্রে লেখাজোখা করে এগিয়ে রেখে ঘুমোতে যাওয়া। সকাল সকাল উঠে তৈরি থাকা পোলিং এজেন্টদের আসার আগে। ইভিএম অপারেশন বা ট্যাগ লাগানো ঠিকঠাক সময়মতো করে নিতে পারলে অর্ধেক যুদ্ধ জয় হয়ে যায়। তবে মেশিন তো, বিগড়ে যাওয়া কারও হাতে নেই। গোটা দশেক পুরসভা-বিধানসভা-লোকসভা ভোটপর্বে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রেখে বিজয়ী হয়েছি।

তবে, ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় অনলাইন ভোট হলে এত কিছুর প্রয়োজন হয় না। খরচও কম, সময়ের অপচয় হয় না, লোকবলেরও এত দরকার নেই। হিংসা, অশান্তি পুরোপুরি এড়ানো যায়। তবে তা দূর অস্ত্!

সৌম্যেন্দ্রনাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

প্রচারে প্লাস্টিক

এ বারের লোকসভা ভোটের প্রচারে নতুন যেটা দেখছি, তা হল ব‍্যানার, ফেস্টুন, ফ্লেক্স-এর ব‍্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, যেগুলোর মূল উপাদান পলিথিন। এর আগে যতগুলো বিধানসভা, লোকসভা, পুর বা পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে, তাতে দেওয়াল লিখন হত ব‍্যাপক ভাবে। আবার অনেক জায়গায় দেওয়ালের উপর কাগজের পোস্টারও মারা হত। কিন্তু এই বছর কলকাতা ও শহরতলিতে দেওয়াল লিখনের পরিমাণ কম। বরং বেশ কিছু জায়গায় প্রার্থীর সমর্থনে দলীয় ব‍্যানার, ফেস্টুন বা ফ্লেক্স পেরেক দিয়ে দেওয়ালে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া আগের মতো রাস্তার দু’পাশের দুটো খুঁটি বা পোস্টের উপর ব‍্যানার, ফেস্টুন লাগিয়ে প্রচার তো আছেই।

এই ধরনের ব‍্যানার, ফেস্টুনগুলো কিছু বছর আগে পর্যন্ত কাপড়ের তৈরি হত। এখন প্রায় সমস্ত ব‍্যানার, ফেস্টুনই পলিথিনের তৈরি। তাই এগুলি সহজে মাটিতে মেশে না। এই জাতীয় প্লাস্টিক ও পলিথিন যে নালা-নর্দমার অন‍্যতম নিকাশিবিরোধী পদার্থ, তা আধঘণ্টার বৃষ্টি হলেই আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাই। অথচ এগুলোকেই ভোটপ্রচারে ব‍্যাপক ভাবে ব‍্যবহার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ব‍্যানার, ফেস্টুন, ফ্লেক্স ঝোড়ো হাওয়ার কারণে ছিঁড়ে গেছে। আগামী দিনে এগুলো আরও বেশি করে ছিঁড়ে যাবে ও জঞ্জালে পরিণত হবে। কোনও রাজনৈতিক দলই ভোট মিটে যাওয়ার পরে এই বস্তুগুলো খুলে নিয়ে পুনর্ব‍্যবহারযোগ‍্য পলিথিনে পরিণত করার উদ‍্যোগ করে না। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও কোনও বিধিনিষেধ আছে বলে মনে হয় না।

ইন্দ্রনীল ঘোষ, লিলুয়া, হাওড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement