—ফাইল চিত্র।
‘সলিল চৌধুরীর গান নিয়ে রামে-বামে টক্কর’ (৮-৪) প্রতিবেদনটি বেশ কৌতুকপ্রদ। “পথে এবার নামো সাথী, পথেই হবে এ পথ চেনা” গানটি দীর্ঘ দিন ধরেই বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহার করে আসছে। নিঃসন্দেহে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের উদাত্ত কণ্ঠে গাওয়া সলিল চৌধুরীর সুরারোপিত এই গানটি এত দিনে একটি প্রকৃত গণসঙ্গীতের মর্যাদা লাভ করেছে। এই গানটি নির্বাচনী প্রচারে অতি দক্ষিণপন্থী ভারতীয় জনতা পার্টি ব্যবহার করার ফলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকে সঙ্গত ভাবেই প্রশ্ন করেছেন, এই কালোত্তীর্ণ গানটির উপরে কি বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দল অধিকার দাবি করতে পারে? এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর ‘না’। যে কোনও দলেরই স্বাধীনতা রয়েছে, তাদের পছন্দসই গান বা অন্য কোনও শিল্পকর্ম ব্যবহার করার। তা সত্ত্বেও বলা দরকার, বিজেপি ও তাদের মতাদর্শগত পরিচালক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ যে ভারতীয়ত্বের চর্চা করে থাকে, তার সঙ্গে উক্ত গানটির কোনও কালে কোনও সুদূরতম সংযোগও ছিল না, এখনও নেই। এই দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের যে ঘোষিত লক্ষ্য, অর্থাৎ এক দেশ, এক জাতি, এক ধর্ম, তার জেরে ছোট-বড় নেতাদের কেউ বলছেন, নতুন সংবিধান রচনার প্রয়োজন রয়েছে, কেউ সংখ্যালঘু বিষয়ক ধারণার পুনর্মূল্যায়ন চাইছেন, আবার কখনও বা কেউ সরাসরি হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে সওয়াল করছেন। সলিল চৌধুরীর ওই অবিস্মরণীয় গানের বিভিন্ন পঙ্ক্তিতে ভারতের বহুত্বের জয়গান গাওয়া হয়েছে, এবং জাতি-ধর্ম-ভাষা নির্বিশেষে এ দেশ সকলের, এই মত প্রকাশ করা হয়েছে। সেই ধারণা থেকে বিজেপির মতাদর্শের দূরত্ব অসেতুসম্ভব। তাই বামপন্থার প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন নাগরিকদের অনেকেই একটি বিভাজনকামী রাজনৈতিক দলের দ্বারা সলিল চৌধুরীর গানের এই ‘অপব্যবহার’ দেখে মর্মাহত।
তবে তাঁরা এই ভেবে আশ্বস্ত বোধ করতে পারেন, এর ফলে বিজেপির রাজনৈতিক দেউলিয়াপনাই প্রকট হচ্ছে। বাংলার মানুষের মনে দাগ কাটার জন্য উপযুক্ত কোনও আয়ুধ না থাকার জন্যই তাঁদের সলিল চৌধুরীর গানের আশ্রয় নিতে হয়েছে।
প্রসেনজিৎ ঘোষ, উত্তর ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
শিষ্টতার দাবি
সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রী, পার্টিকর্মী এবং সমর্থকদের কাছে বিনীত অনুরোধ, নির্বাচন-প্রচারে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে যা-ইচ্ছা কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। প্রার্থীদের থেকে একটা সুস্থ ভাষা ভোটদাতারা আশা করেন। কেন এত অতিরিক্ত রাগ, চেঁচামেচি? কেন খারাপ ভাষায় বিরোধীদের আক্রমণ করা হচ্ছে? অনেক নেতাই উচ্চশিক্ষিত, মানুষের কাছে সম্মানিত। শীর্ষ নেতারা অপশব্দ ব্যবহার করলে নিচু তলার কর্মীরা মনে করেন, রাজনীতির ভাষা, রাজনীতির কাজ, খুব সহজ। গণতন্ত্র যে-হেতু সবাইকে নিয়ে চলার একটা ব্যবস্থা, তাই যোগ্যতায় শিথিলতা আনা চলে না। অন্যায়ের প্রতিবাদ রাজনীতির প্রাথমিক শর্ত। অসততা, প্রতারণা এবং ভীতি প্রদর্শন দুষ্কৃতীরাই করে থাকে। রাজনৈতিক দলে এদের দাপাদাপি রাজনীতিরই ক্ষতি করছে। অন্য দিকে, প্রচারে দেদার গলা চড়াচ্ছেন নেতারা। মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য নেতার নামে কুমন্তব্য করে চলেছেন সবাই। খুব খারাপ লাগে বড় নেতাদের নিয়ে কুরুচিকর কথা শুনলে। দুর্বিষহ লাগে যখন এক জন কেন্দ্রীয় নেতা রাজ্যপালকে নিয়ে অঙ্গভঙ্গি করেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশু, কিশোর ও যুব প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা।
সমীর চক্রবর্তী, রামরাজাতলা, হাওড়া
ভ্রান্ত নয়
‘ঐতিহাসিক ভুল’ (৫-৪) সম্পাদকীয় প্রবন্ধে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি ভি নাগরত্ন নোটবন্দি বিষয়ের যে বিরুদ্ধ রায় দিয়েছেন, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি যে পুরোপুরি অপরিকল্পিত ও সাধারণ মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী, সেটি এখানে উপস্থাপন করতে চাওয়া হয়েছে। মানতেই হবে যে, নোটবন্দিতে সাধারণ মানুষের হয়রানি হয়েছিল, সে বিষয়ে সরকারের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সরকারের উদ্দেশ্য যে অসৎ ছিল, সেটা মানা যায় না। আসলে অসাধু ব্যবসায়ী, যাঁদের প্রচুর কালো টাকা আছে তাঁরা, প্রোমোটার, অসাধু ব্যাঙ্ককর্মী, বিভিন্ন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন সমবায় ব্যাঙ্ক, এমনকি সাধারণ নাগরিকের একাংশের অশুভ বুদ্ধির সামনে একটা শুভ প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়েছিল।
যেমন, ব্যবসায়ীরা কালো টাকা সাদা করতে স্থায়ী কর্মচারীদের ২-৩ বছরের বেতন অগ্রিম দিয়ে দিয়েছেন। অনেকে ভরসাযোগ্য কর্মচারীদের সহায়তায় নানা অ্যাকাউন্ট স্বল্প পয়সার বিনিময়ে ব্যবহার করেছেন। হাজার হাজার জ়িরো ব্যালান্স, বা সামান্য ব্যালান্সের অ্যাকাউন্ট যদি তদন্ত করা যায়, দেখা যাবে নোটবন্দির পর এক সঙ্গে কয়েক লক্ষ টাকা জমা পড়ছে, এবং মাসখানেক পর আবার সব টাকা তোলা হয়ে গিয়েছে। কিছু ব্যাঙ্ককর্মী পরিচিত ক্লায়েন্টকে কিছু টাকার বিনিময়ে লক্ষ লক্ষ পুরনো নোট বদল করার অবৈধ সুযোগ করে দিয়েছিলেন। কী ভাবে পুরনো, দেউলিয়া নানা সংস্থার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কালো টাকা সাদা করা যায়, তা সিএ সংস্থাগুলিই বাতলে দিয়েছে।
অনেক কালো টাকা ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে। তাঁদের অনেকেরই টাকা সাদা করার প্রধান হাতিয়ার ছিল সমবায় ব্যাঙ্কগুলো। ব্যাক ডেট-এ ‘শর্ট টার্ম ফিক্সড ডিপোজ়িট’ করে কয়েক মাস পর ভাঙিয়ে নিয়েছেন অনেকে। সমবায় ব্যাঙ্কগুলোর মাথায় কিন্তু রাজনৈতিক নেতারাই বসে আছেন। এটা তাঁদের কাছে একটা খেলা।
দুঃখের কথা, যাঁদের জন্যে সরকার নোটবন্দি করেছিল, তাঁদের মাধ্যমেই কিছু অসাধু লোক তাকে ব্যর্থ করে ছাড়ল। সাধারণ মানুষের আধার কার্ড, অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কোটি কোটি কালো টাকার মালিকরা প্রমাণ করে ছাড়লেন যে, সরকার ভুল করেছিল। নোটবন্দি সত্যিই কি ভুল ছিল?
স্বপন চক্রবর্তী, জগৎবল্লভপুর, হাওড়া
শিক্ষার মূল্য
‘৩ হাজারে অতিথি-শিক্ষক! বিজ্ঞপ্তি স্কুলের’ (৯-৪) প্রতিবেদন বুঝিয়ে দিল, এই রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার হাল কী! এই বিজ্ঞপ্তি সরকারি নয়, সংশ্লিষ্ট স্কুলের পরিচালন সমিতির দেওয়া বিজ্ঞপ্তি। অবাক হওয়ার কিছু নেই। রাজ্যের দিশাহীন শিক্ষাব্যবস্থার চক্রব্যূহে পড়ে সরকার-পোষিত বিদ্যালয়গুলোতে ৪৮ হাজার পার্শ্বশিক্ষক-সহ লক্ষাধিক চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক, কর্মীরা যেখানে মাত্র ১০ হাজার টাকা কিংবা তারও কমে কাজ করছেন, সেখানে দৈনিক ১০০ টাকার অতিথি শিক্ষক চাওয়া তো মামুলি বিষয়। হুগলির পুরশুড়ার ‘চিলাডাঙি রবীন্দ্র বিদ্যাবীথি’-র টিচার ইনচার্জের কথামতো, এই টাকা আবার নিযুক্ত শিক্ষককে দেওয়া হবে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নিয়ে। শিক্ষকের ঘাটতি পূরণ করতে স্কুলগুলো বাধ্য হয়ে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করছে।
এই প্রসঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কথা জানাই। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৯০০-এর কাছাকাছি। হিসাবমতো ৪৭-৫০ জন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু আছেন মাত্র ৮ জন স্থায়ী শিক্ষক, ২ জন পার্শ্বশিক্ষক। অগত্যা ১০ জন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করেছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁরাও একশো দিনের জব কার্ডে শ্রমিকদের প্রাপ্য টাকার চেয়ে কম মজুরি পান এখানে। এই অতি সামান্য অর্থ নিয়ে নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছেন এই সকল অতিথি শিক্ষক। শিক্ষক হওয়ার বাসনাকে চরিতার্থ করতে যৎসামান্য পারিশ্রমিকে নিজেদের মূল্যবান সময় দিচ্ছেন। এমন হাজার হাজার স্কুল আছে। কী সাংঘাতিক শোষণ ব্যবস্থা!
অলকেশ মাইতি, পটাশপুর, পূর্ব মেদিনীপুর