‘ফ্ল্যাট ও গাছ’ (১৬-১১) শীর্ষক চিঠিতে, গাছ কেটে বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে নতুন গাছ লাগানোর জন্য লেখক আইন তৈরির কথা বলেছেন। যে কোনও ক্ষেত্রে গাছ কাটার বিষয়ে বন দফতরের আইন আছে। আইনে বলা আছে, বাড়ির একটি গাছ কাটা হলে পরিবর্তে তিনটি চারাগাছ লাগাতে হবে এবং রাস্তার পাশে একটি গাছ কাটলে পরিবর্তে পাঁচটি চারাগাছ লাগানোর নিয়ম। এক জন ব্যক্তি অনুমতি সাপেক্ষে বছরে তিনটির বেশি গাছ কাটতে পারেন না। এখন গ্রামীণ এলাকায় কেউ গাছ কাটলে তাঁর কাছ থেকে পাঁচ বছরের জন্য ‘সিকিয়োরিটি মানি’ নেওয়ার কথা। পাঁচ বছর পরে যদি দেখা যায় নির্দিষ্ট সংখ্যক চারাগাছ পোঁতা হয়নি অথবা চারাগাছ পুঁতলেও তার সঠিক পরিচর্যা হয়নি, তা হলে সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয় না। আইন তো আছে, কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই আইন প্রয়োগ করার মতো পরিকাঠামো বন দফতরের নেই।
রতন চক্রবর্তী
উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
গাছের প্রাণ
আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ‘গাছের প্রাণ আছে’ বলেছেন না বলেননি, তা নিয়ে ‘গাছের প্রাণ বলেননি’ (১২-১১) এবং ‘গাছের প্রাণ বলেছেন’ (১৮-১১) পড়লাম। অতি প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ জানত, গাছের প্রাণ আছে। আমাদের বৈদিক সাহিত্যে এর উল্লেখ আছে। বৃক্ষদেবতা হিসেবে উল্লেখ অনেক প্রাচীন সাহিত্যে ও আদিবাসী সমাজে অনেক আগে থেকেই রয়েছে। এ ছাড়া প্রাণের ক্রমবিকাশে, এককোষী প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের উদ্ভবের যে চিত্র আমরা পাই, তাতেও কী ভাবে ক্রমবিকাশের এক পর্যায়ে একটি শাখা উদ্ভিদ ও অন্য শাখা প্রাণীদের দিকে বিস্তৃত, তা স্পষ্ট দেখানো আছে। ডারউইন সাহেব প্রাণীর বিবর্তনের উপর ‘অরিজিন অব স্পিশিস’ বইটি যখন লেখেন (১৮৫৯), তখন জগদীশচন্দ্রের (১৮৫৮-১৯৩৭) বয়স মাত্র এক বছর। গাছেরও যে প্রাণ আছে, এ কথা প্রথম কে বলেছিলেন, অজ্ঞাত।
জগদীশ বসু দেখিয়েছিলেন, উদ্ভিদেরও প্রাণীদের মতো সুখদুঃখের অনুভূতি আছে। এ ছাড়া উদ্ভিদ গরম, ঠান্ডা, শব্দ প্রভৃতিতে উদ্দীপিত হয়। তাঁর আবিষ্কৃত ‘ক্রেস্কোগ্রাফ’ যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি অতি সূক্ষ্ম ভাবে গাছের বৃদ্ধি মাপতে সক্ষম হন। প্রাণী ও উদ্ভিদের মাঝে অনেক সাদৃশ্যের প্রমাণও তিনি দেখিয়েছিলেন। যুগান্তকারী গবেষণা, সন্দেহ নেই। বিলেতের এক পত্রিকায় গবেষণার খবর প্রকাশ পাওয়ার পর কাগজে কার্টুন বার হয়— মুলো খেতে মালি প্রবেশ করামাত্র সমস্ত মুলো ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
চন্দ্রশেখর লাহিড়ী
কলকাতা-৮১
রাম ও সীতা
বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘তোমার দুটো হাতের আশ্রয়ে’ (২৬-১১) শীর্ষক নিবন্ধে বলেছেন, ‘‘জনতা জনার্দনের অসংবেদনশীলতায় নিজের প্রাণপ্রিয়াকে ত্যাগ করতে বাধ্য হওয়ার যন্ত্রণা ভোগ করা গণতান্ত্রিক রাম...।’’ বাল্মীকি রামায়ণের ‘উত্তরকাণ্ড’-এর এই কাহিনির অনেক আগেই কিন্তু ‘যুদ্ধকাণ্ড’-এর যুদ্ধশেষে রাবণবধ ও লঙ্কাজয় করে রাম সীতাকে উদ্ধারের পরেই তাঁকে ত্যাগ করেছিলেন। রাম পতিব্রতা সীতাকে বলেছিলেন, ‘‘সীতে! তোমার চরিত্রে আমার সন্দেহ উপস্থিত হইয়াছে, সুতরাং তুমি আমার সম্মুখে অবস্থিতি করিয়া নেত্ররোগীর সম্মুখস্থিত দীপশিখার ন্যায় আমাকে দুর্বিষহ যন্ত্রণা দিতেছ।’’ অর্থাৎ সীতার চরিত্রে সন্দেহ জনতা-জনার্দনের নয়, সন্দেহ স্বয়ং সীতাপতি রামচন্দ্রের।
রামায়ণে আছে ‘কালান্তক-যমসদৃশ’ রামকে উপস্থিত কেউই সীতার হয়ে অনুনয়-বিনয় করতে সাহস করেননি। অপমানিত সীতা বিষাদগ্রস্ত হয়ে লক্ষ্মণকে বললেন, ‘‘আমার চরিত্রে অবিশ্বাস করিয়া ভর্তা আমাকে জনতা-সমক্ষে পরিত্যাগ করিলেন। অতএব আমি অগ্নিতে প্রবেশ করিব।’’ রাম তখন ইশারায় সীতার অগ্নিপ্রবেশে সায়ও দিলেন। জনকনন্দিনী সীতা অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই চার দিক থেকে নারীরা দুঃখে ও হতাশায় চিৎকার করে উঠল। রাক্ষস ও বানররা সকলে তখন হাহাকার করছিল। ‘বাগ্মিশ্রেষ্ঠ’ রাম সেই সময় অগ্নিদেবকে বললেন, ‘‘আমি যদি পরীক্ষা না করাইয়া জানকীকে গ্রহণ করি, তাহা হইলে লোকে বলিবেন যে দশরথের পুত্র রাম নির্বোধ ও কামাত্মা।’’ অর্থাৎ জনতা-জনার্দন সীতা সম্পর্কে কোনও কটূক্তিই করেনি, এটা ছিল রামের অনুমানমাত্র।
দেবতারা ছাড়াও ইন্দ্রলোক থেকে লঙ্কাভূমিতে নেমে এসেছিলেন রাজা দশরথ, যিনি পুত্রবধূ সীতাকে কিছুটা কৈফিয়তের সুরেই বলেছিলেন, ‘‘বৈদেহী! রাম যে তোমাকে পরিত্যাগ করিয়াছিলেন তজ্জন্য ক্রুদ্ধ হইও না; কারণ ইনি বিশুদ্ধির নিমিত্ত এইরূপ কার্য করিয়াছিলেন।’’ উপস্থিত দেবতারাও রামকে বলেছিলেন, ‘‘প্রাকৃত মানুষের ন্যায় বৈদেহীকে উপেক্ষা করিতেছেন কেন?’’ রাম এর উত্তরে একটি কথাই বলেছিলেন যে তিনি নিজেকে কেবলমাত্র এক জন মানুষ বলেই জানেন। অর্থাৎ নিজের কথা অনুযায়ী রাম শেষ পর্যন্ত দোষেগুণে ভরা রক্তমাংসের এক জন মানুষই ছিলেন। রামের চরিত্রে দেবত্ব আরোপের সঙ্গে সঙ্গে তাই সীতাকে ত্যাগের জন্য জনতা-জনার্দনের তথাকথিত অসংবেদনশীলতাকে দায়ী করাটাও খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। (গ্রন্থসূত্র: ‘বাল্মীকি-রামায়ণ’ উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, বসুমতী সাহিত্য মন্দির)
পীযূষ রায়
কলকাতা-৩৪
ক্লাসে মোবাইল
‘স্কুল পড়ুয়াদের মোবাইল নিষেধ’ (১১-১২) শীর্ষক সংবাদে প্রকাশ, সম্প্রতি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল আনার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। প্রধান শিক্ষকের লিখিত অনুমতি ব্যতিরেকে ক্লাস চলাকালীন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও পঠন-পাঠনের প্রয়োজনে মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন না। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক জন শিক্ষক হিসেবে, এই তালিবান-সুলভ ফতোয়া প্রসঙ্গে কিছু কথা।
যখন সারা দুনিয়া কম্পিউটারকে আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করেছিল, তখন এ রাজ্যে তার ব্যবহার আটকানো হয়েছিল। প্রাথমিকে ইংরেজি শিক্ষাও বন্ধ হয়েছিল। ওই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের খেসারত পরবর্তী প্রজন্মকে এখনও দিতে হচ্ছে। বর্তমানেও প্রযুক্তিবিরোধী ধারাই বজায় রাখা হয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ফরমানে। সারা পৃথিবীতেই যখন জ্ঞান আহরণের জন্য মুদ্রিত পুস্তকের বদলে ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন এই পশ্চাৎপদ সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। অনেক বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার নেই। কোনও কোনও বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার থাকলেও, সেখানে সাম্প্রতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের তথ্যযুক্ত বই নেই বললেই চলে। তথ্যভাণ্ডার হিসেবে ইন্টারনেট-যুক্ত মোবাইল ফোন সহজেই সে অভাব দূর করে চলেছে। সকল শিক্ষকের সিধুজ্যাঠা-তুল্য পড়াশোনা বা স্মৃতিশক্তিও নেই। সহজে বহনযোগ্য মোবাইলের গুগল, চটজলদি তথ্য সরবরাহ করে বিদ্যাচর্চায় সুবিধার পরিবেশই তৈরি করে। মোবাইলের মাধ্যমে পাঠ্যের প্রয়োজনীয় ছবি, ভিডিয়ো বা চলচ্চিত্রের অংশও তাৎক্ষণিক ভাবে শিক্ষার্থীদের দেখানো যায়। যা তাদের মনোযোগ ও পাঠের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি করে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, দশম শ্রেণির বাংলা সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসের নিবিড় পাঠের সঙ্গে ‘কোনি’ চলচ্চিত্রটির অংশ মোবাইলে শ্রেণিকক্ষে দেখে, শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি হতে দেখেছি। এ ছাড়া পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত প্রোজেক্ট তৈরির কাজে ইন্টারনেট-যুক্ত ফোন আজ শিক্ষার্থীদের কাছে অপরিহার্য। তাই সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাই। সচিত্র পর্নো-সাহিত্যের বই ছাপা হয় বলে যেমন বিদ্যামন্দিরে বইয়ের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়নি, তেমন মোবাইল ফোনের সাহায্যে দুষ্কর্ম করা যায় বলে, সুকর্মের দিকটি অবহেলা করা উচিত? মাথার যন্ত্রণা উপশমে মাথাটাই কেটে ফেলা কি সমাধান?
কৌশিক চিনা
মুন্সিরহাট, হাওড়া