—প্রতীকী ছবি।
‘ক্ষুধার রাজ্য’ (৮-৩) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কোনও খাদ্যই পায়নি, এমন শিশুর সংখ্যা ভারতে সাতষট্টি লক্ষ। যা ভারতের স্থান নির্ধারণ করেছে দক্ষিণ এশিয়ার সব ক’টি পড়শি দেশের পিছনে। কার্যত স্বাধীনতার ৭৬ বছর পার করে ‘অমৃতকাল’ পর্বে এ দেশের ক্ষুধা ও অপুষ্টির এমন গ্লানিকর চিত্রটি কবি মণীন্দ্র গুপ্তের কবিতার লাইনকে মনে করিয়ে দেয়— “শব্দ অধোবদন হয়ে আছে লজ্জায়।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রক বৈশ্বিক ক্ষুধাসূচকের মাপকাঠির ভিতর যে পদ্ধতিগত ত্রুটিই খুঁজে পাক, এই আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে ক্রমাগত নেমে ২০২৩ সালে ১২৫টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান হয়েছে ১১১-য়। তীব্র আর্থিক দুর্দশায় ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানও ওই ক্ষুধাসূচকে ভারতের আগে। তালিকায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ, নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশও। ভারতের স্কোর ২৮.৭ পয়েন্ট, যা ক্ষুধার মাত্রায় ‘গুরুতর’। সূচক অনুযায়ী, শিশুদের উচ্চতার সঙ্গে ওজনের অনুপাতেও দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ভারত, ১৮.৭ শতাংশ। ২০২১ সালের অক্টোবরে সরকারি পোষণ ট্র্যাকার অ্যাপ-এ কিন্তু উল্লেখ ছিল, এ দেশে ৩৩ লক্ষেরও বেশি শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত। পঞ্চম জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষাতেও উঠে আসে, এ দেশে অপুষ্টির কারণে ৩২ শতাংশ শিশুর ওজন কম, আর দীর্ঘস্থায়ী ও মারাত্মক অপুষ্টির কবলে যথাক্রমে ৩৫ শতাংশ ও ১৯ শতাংশ শিশু। বৈশ্বিক ক্ষুধাসূচক নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বদা কেন তবে এত উষ্মা বা অসন্তোষ? অপুষ্টির সঙ্গে স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়কে জড়িয়ে সরকারের রাজনৈতিক চর্চার বিস্তর অভিযোগ থাকলেও শোচনীয় বিষয় এটাই যে, ভারতে বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় যখন বর্তমানে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ২.১ শতাংশ ধার্য হয়েছে, বৈশ্বিক ব্যয়ের গড় সেখানে প্রায় ৯ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র বিধি অনুযায়ী, হাসপাতালে যেখানে ১০০০ জনের জন্য অন্তত ৩.৫টি শয্যা থাকা প্রয়োজন, এ দেশে এখন মাত্র ১.৪টি। দীর্ঘ কালের এই অনিবার্য সমস্যার আজও কেন যথোপযুক্ত সুরাহা করা সম্ভবপর হল না? কার্যত, কেন্দ্র এই ক্ষুধাসূচককে যতই অস্বীকার করুক, নীতি ও উন্নয়ন উপদেষ্টা সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে, শিশু-অপুষ্টির কারণে ভারত তার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৪ শতাংশ এবং উৎপাদনশীলতার ৮ শতাংশ হারায়। সমীক্ষা বলছে, ভারতের রোগ-ব্যাধির ১৫ শতাংশের জন্য দায়ী শিশু ও মায়ের অপুষ্টি।
ক্ষুধা ও অপুষ্টির আরও একটি বাস্তব কারণ সমীক্ষায় উঠে আসে— এ দেশে ২০১১ সালের জনশুমারির উপর ভিত্তি করে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের অধীনে গ্রামীণ ও শহুরে জনসংখ্যার যথাক্রমে ৭৫ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ এর আওতাধীন। যে-হেতু, ২০২১ সালের জনশুমারি এখনও ধার্য হয়নি, ফলে সঠিক ভাবে বিপুল দারিদ্রপীড়িত অনাহারক্লিষ্ট লোকসংখ্যার হিসাবটি এখানে আওতার বাইরে বা বাদই থেকে যায়। ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজ়েশন-এর (ফাও) ২০২৩ সালের জুলাইয়ের এক রিপোর্টে জানা যায়, ভারতের তিন-চতুর্থাংশ দরিদ্র মানুষ নিম্ন আয়ের কারণে সুষম খাদ্য জোগাড় করতে পারেন না। এর সঙ্গে রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিবেদনে ‘জ়িরো হাঙ্গার-২০৩০’ বা এই নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়েছে। ভারত যখন ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে, তখন এই প্রশ্নটি নিঃসন্দেহে জাগে— ক্ষুধা ও অপুষ্টির শিকার হওয়া অসংখ্য দুঃস্থ-অভুক্ত দেশবাসীর ক্ষুন্নিবৃত্তির বিষয়ে কল্যাণকামী রাষ্ট্রটির আদৌ কি কোনও পরিকল্পনা আছে?
পৃথ্বীশ মজুমদার, কোন্নগর, হুগলি
কুসংস্কার নয়
‘কিশোরী বয়সে পিরিয়ডসের সমস্যা, সমাধান কোন পথে’ (স্বস্তিপাঠ, ২৪-২) শীর্ষক প্রবন্ধে পিউবার্টি মেনোরেজিয়া সংক্রান্ত প্রসঙ্গটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। তবে বেশ কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রয়োজন বোধ করি। শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব। কিন্তু উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে মানুষ চেতনাহীন, কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আমাদের সন্তানেরা যদি কখনও বাঘ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়, তবে আমরা তাদের বাঘ সম্পর্কে বই দেব, সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাব, আর অনেক কিছু জানাব। একই ভাবে, ঋতুচক্র (পিরিয়ড) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেটি আমাদের মেয়েদের জীবনে কয়েক দশক ধরে থাকবে। এই বিষয়ে ছেলেমেয়েদের বিজ্ঞানসম্মত সঠিক শিক্ষাদান করাটা অত্যন্ত জরুরি। বেশির ভাগ পরিবারেই ছোট শিশুরা বিজ্ঞাপনে বা তাদের বাড়িতে কোনও ভাবে ন্যাপকিন দেখে বাবা-মাকে প্রশ্ন করে বস্তুটি কী। তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নানা কথা বলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়। একটা সুস্থ-সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটা মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। এতে বরং শিশুদের মনে পিরিয়ডস সম্পর্কে ভয় ও লজ্জার জন্ম হয়।
শুধু মেয়েদেরই নয়, ছেলেদেরও এ বিষয়ে অবগত করা জরুরি। তারা যদি জানতে আগ্রহী হয়, তবে তাদের মিথ্যে না বলে জানানো উচিত, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদেরও নানান দৈহিক পরিবর্তন ঘটে। বয়ঃসন্ধিকালে বা এখনকার দিনে বয়ঃসন্ধির কিছু আগেই অনেক কিশোরীর ঋতুচক্র শুরু হয়। ফলে বিষয়টি যে অস্বাভাবিক কিছু নয়, মেয়েদের এমন শারীরিক পরিবর্তন এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, সেটা মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরও বোঝাতে হবে। একই সঙ্গে তাদের শেখাতে হবে নারীদের সম্মান করা, কোনও সমস্যায় পড়লে তাদের সাহায্য করার মতো বিষয়গুলিও।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০ শতাংশ মেয়ে বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় ঋতুমতী হওয়ার পর স্কুল যাওয়া ছেড়ে দেয় কিংবা মাসের ওই পাঁচ দিন স্কুলে আসে না। ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, কালিম্পং, সুন্দরবনের মতো দুর্গম, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে সুস্বাস্থ্য বিষয়ে কোনও উপযুক্ত ধারণা নেই। মেয়েরা অনেক সময়ই তাদের প্রয়োজন ও সমস্যার কথা পরিবারের লোকজনের কাছে খোলাখুলি প্রকাশ করতে পারে না। উল্টে শেখে মন্দিরে না যাওয়া, রান্নাঘরে না ঢোকার মতো নানান কুসংস্কার। একমাত্র রাষ্ট্রই পারে সচেতনতার মাধ্যমে সমাজের চিরাচরিত কুসংস্কারগুলিকে দূর করতে। এর জন্য বিদ্যালয়ের চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণি থেকেই বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ঋতুচক্রের বিষয়টি ছেলেমেয়েদের বোঝাতে হবে। দূর করতে হবে কুসংস্কার এবং গড়ে তুলতে হবে মানবতাবোধ। খুব ছোট থেকেই শিক্ষার্থীদের মানবতাবোধে উদ্দীপিত করতে পারলে, আগামী প্রজন্মকে মানবিক ও দায়িত্ববান নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা যেতে পারে।
একই সঙ্গে সমস্ত স্তরে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। বিদ্যালয়ের পাশাপাশি বাড়ির মানুষগুলিরও সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে যাতে তাঁরাও বাড়িতে যৌনশিক্ষার উপযুক্ত পাঠ দিতে পারেন ছেলেমেয়েদের। কুসংস্কারমুক্ত সুস্থ-সুন্দর দায়িত্ববোধসম্পন্ন এক সমাজ গড়ে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে সকলকেই।
সুকৃত মোদক, বোরহাট, পূর্ব-বর্ধমান
বিপজ্জনক
আজকাল শিশুদের জন্য ছোট ছোট রঙিন প্যাকেটে নানা ধরনের মুখরোচক খাবার বিক্রি হয়। অনেক খাবারের প্যাকেটে থাকে একটা ছোট খেলনা— হুইসল, লাট্টু ইত্যাদি। এই খেলনাগুলো বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তৈরি নয়— শিশুরা এগুলো সহজেই নাকে ঢুকিয়ে দিতে পারে, বা গিলে ফেলতে পারে। সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে, এমনকি প্রাণের আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে। এগুলোর রঙের বা প্লাস্টিকের মান কেমন, শিশুরা মুখে দিলে ক্ষতি করবে কি না, তারও পরীক্ষা হয় বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে ক্রেতা সুরক্ষা দফতর এবং স্বাস্থ্য দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
অমলেন্দু চন্দ, কলকাতা-৯৯