মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছেন, বাড়তি ৩%-এর বেশি ডিএ দেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। ফাইল ছবি।
‘কী পেলে খুশি হবেন নন্দলালেরা’ (৭-৩), রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য খুবই যুক্তিসঙ্গত। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছেন, বাড়তি ৩%-এর বেশি ডিএ দেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। বর্তমানে রাজ্য সরকারি কর্মীরা ১০৫% ডিএ পেয়ে থাকেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেলে সরকারি কর্মীদের ডিএ দেওয়ার রীতি চালু হয়। সেই সময় সরকারি কর্মীদের বেতন খুবই কম ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি হলে অল্প বেতন পাওয়া কর্মীদের অসুবিধা হত। সেই দিক বিবেচনা করে তখন ডিএ প্রথা চালু করেছিল সরকারের নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু বর্তমানে সরকারি কর্মীদের বেতন প্রচুর বেড়েছে। এখন বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটলে তাঁদের কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তাই ডিএ দেওয়া অযৌক্তিক। তা ছাড়া একই বাজার থেকে যখন সবাই সমমূল্যে জিনিস কিনছেন, তখন কেন শুধু বেছে বেছে উচ্চহারে বেতনভোগী সরকারি কর্মীদের ডিএ দেওয়া হবে? সাধারণ মানুষের করের টাকায় সরকার চলে, এবং কর্মীদের বেতন দেওয়া হয়। যাঁদের স্বল্প আয়, নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, ভারতে এই শ্রেণির সংখ্যাই বেশি। মূল্যবৃদ্ধি হলে মোটা অঙ্কের মাইনে পাওয়া সরকারি কর্মীদের অসুবিধার কথা ভেবে যদি সরকারকে ডিএ দিতে হয়, তা হলে শত কোটি স্বল্প আয়ের মানুষের চলে কী করে? তাঁদের কথা কে ভাববে?
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উচিত আইন সংশোধন করে মহার্ঘ ভাতা তুলে দেওয়া। মহার্ঘ ভাতা মানে তেলা মাথায় তেল দেওয়া। দেশের সিংহভাগ মানুষকে বঞ্চিত করে সরকারি কর্মীদের ‘জামাই আদর’ এ বার বন্ধ হোক। বর্তমানে ডিএ নিয়ে আন্দোলনরত কর্মীদের ধর্না মঞ্চে ঘোলা জলে মাছ ধরার জন্য সব বিরোধী দলনেতা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। দলীয় রঙের বিভেদ ভুলে একই মঞ্চে সবাই হাজির হচ্ছেন। এই বিরোধী নেতারা গদিতে থাকলে কি কর্মীদের দাবিমতো ডিএ মেটাতে পারতেন?
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি
তাচ্ছিল্য কেন
‘কী পেলে খুশি হবেন নন্দলালেরা’ শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে, বিরোধী নেত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে বলেছিলেন, যে সরকার ঠিকমতো ডিএ দিতে পারে না, তার ক্ষমতায় থাকার কোনও নৈতিক অধিকার নেই। যদিও সেই সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য সরকারের ডিএ-র ফারাক ছিল সামান্যই। অথচ, বর্তমানে ২০১৫ সাল থেকে রাজ্য সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, পুলিশ-সমেত বহু সরকারি ও সরকার-পোষিত সংস্থার কর্মীদের ডিএ বকেয়া পড়ে আছে। ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে ‘নন্দলাল’ বলা তাচ্ছিল্যের সূচক, এই ধরনের মন্তব্য এড়িয়ে যাওয়াই বরং মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদার সঙ্গে মানানসই।
কিছুটা হুমকির ছলে মুখ্যমন্ত্রী পেনশন বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছেন। পেনশনে রাজ্য সরকারের অংশীদারি কতটুকু? মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, বাম আমলে সরকার ৩৪ বছরে ৩৩ শতাংশ ডিএ দিয়েছিল। এই কথাটাও ঠিক নয়। কেবল ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৮ সাল অবধি হিসাব করলেও দেখা যায়, ১৮২% ডিএ দেওয়া হয়েছিল। তার পর ১৯৯৮ সালে নতুন বেতন কাঠামো প্রচলিত হওয়া থেকে ২০০৯ সাল অবধি ৩৪% মহার্ঘ ভাতা প্রদান করা হয়। পরবর্তী বেতন কাঠামো চালু হয় এই ২০০৯ সালেই, এবং তখন থেকে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকাকালীন এই এক বছরে ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা প্রদানের হার ছিল ২৩ শতাংশ।
অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি
বকেয়া ডিএ
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলি, দশ বছর অন্তর প্রতিটি বেতন কমিশনের মূল বেতনের সঙ্গে বছরে দু’কিস্তি (জানুয়ারি ও জুলাই), অর্থাৎ মোট ২০ কিস্তি ডিএ-র মোট শতাংশ পরবর্তী বেতনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পরবর্তী বেতন কমিশনের নয়া বেতন নির্ধারিত হয়৷ কেন্দ্র এবং অন্যান্য রাজ্যে এই নিয়ম প্রযোজ্য হলেও আমাদের রাজ্যে তা হয় না৷ বাম আমলে এই নিয়ম অনেকটা মানা হলেও বর্তমান সময়ে ডিএ দেওয়াটা সরকারের ইচ্ছার উপর এসে দাঁড়িয়েছে। যেমন, এই রাজ্যে পঞ্চম বেতন কমিশনের ২০ কিস্তি বা ১২৫% ডিএ শেষ হওয়ার কথা ছিল ১ জানুয়ারি, ২০১৬-তে৷ কিন্তু রাজ্য তা টেনে নিয়ে গিয়েছে ১ জানুয়ারি ২০১৯-এ৷ রাজ্য কর্মীদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার এবং অন্য রাজ্য সরকারগুলি নিদিষ্ট নিয়মে (এআইসিপিআই) মেনে ডিএ দিতে পারলে এই রাজ্য তা পারবে না কেন?
মলয় মুখোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক, কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ়
নেশামুক্তির নামে
‘নেশামুক্তি কেন্দ্রে ঝলসে মৃত যুবক’ (১২-৩) সংবাদটিতে সোনা সাহা নামে পঁচিশ বছরের এক যুবকের অসহায় মৃত্যুর চিত্র উঠে এল। একটি প্রাণ এ ভাবে চলে গেল কেন? মনে এল, গত বছর এমনই এক বেসরকারি নেশামুক্তি কেন্দ্রে নেপাল রায় নামক বছর চল্লিশের এক যুবকের অসহায় আত্মসমর্পণের কাহিনি (‘পিটিয়ে খুন’ নেশামুক্তি কেন্দ্রে, ধৃত, ১৯-০৯-২২)। অনুরূপ দুর্ভাগ্যজনক দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের আবাসিক বিদ্যালয় ও সরকারি মানসিক হাসপাতাল, পাভলভের চৌখুপিতেও। মোটা অঙ্কের অর্থমূল্য দিয়ে এই সমস্ত আবাসিক কেন্দ্রে অসহায় পরিবার সন্তানকে রেখে আসে সুস্থতার আশায়। দুর্বল পরিকাঠামো ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণহীন কতিপয় ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত এই সব কেন্দ্রে প্রথম দিকের যত্নআত্তি সময়ের সঙ্গে ক্ষীণ হয়ে যায়। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ওষুধ-পথ্য প্রয়োগে হিংস্র মনোভাব, কাউন্সেলিং-এর অভাব, সর্বোপরি স্নেহ-ভালবাসাহীন অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা আবাসিক ‘না-মানুষ’দের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। এক দিকে কর্তৃপক্ষের চোখরাঙানি, অপর দিকে স্বাভাবিক জীবনের হাতছানি, এই দোলাচলে আবাসিকদের মনের অবস্থা ঠিক কী রকম হয়, তা কল্পনারও অতীত।
মনে পড়ল বছর কয়েক আগে মানসিক চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র পাভলভ হাসপাতালে গলায় ডিম আটকে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। আক্ষরিক অর্থেই জীবন্মৃত হয়ে, অপ্রশস্ত, আলো-বাতাসহীন চৌখুপিতে আবাসিকরা দিনাতিপাত করতে বাধ্য হন। নিয়মিত বিধিপালনের বিষয়টিও এক প্রকার অনুপস্থিত থাকে। এই সব কেন্দ্রের অবহেলা ও উৎপীড়নের কাহিনি মাঝেমধ্যে সংবাদপত্রে জায়গা করে নিলেও, প্রশাসনের সার্বিক নজরদারির অভাবের জন্য এ ব্যবসা চলতেই থাকে।
সুপ্রতিম প্রামাণিক, আমোদপুর, বীরভূম
পতঙ্গের প্রাণ
কীটপতঙ্গকে পরিবেশের বন্ধু ভাবতে প্রাণিত করবে সুমন প্রতিহারের প্রবন্ধটি (পতঙ্গরা বাঁচলে বাঁচব আমরা, ৯-৩)। কিছু কিছু কীটপতঙ্গের দংশন যন্ত্রণায় আমরা তাদের উপকারী সত্তার দিকটি বিস্মৃত হই। গ্রামাঞ্চলে প্রায়শই নদী বা খালের ধারের বাঁধ পরিচ্ছন্নতার নামে চেঁছে দিই। বিশেষ করে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চালু হওয়ার পর এটি হচ্ছে। ফলে কীটপতঙ্গের দল বাসস্থান হারাচ্ছে ও মারা যাচ্ছে। ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে ইদানীং এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ স্প্রে করা হচ্ছে। ব্যয় কম হওয়ায় এর ব্যবহার গ্রামবাংলায় খুব জনপ্রিয়। কিন্তু এতে ঝোপঝাড় বিনষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কীটপতঙ্গরাও মারা পড়ছে। এই সব রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধ হোক। নদী বা খালের ধার চেঁছে ফেলারও দরকার নেই।
প্রদীপ রঞ্জন রীত, আমতা, হাওড়া