Swami Vivekanda

সম্পাদক সমীপেষু: স্বামীজির পুজো

স্বামীজি সমগ্র মানবজাতিকে সেই স্থানে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন যেখানে বেদ, বাইবেল বা কোরান— কিছুই নেই। আছে শুধু মানুষ এবং মানবধর্ম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২১ ০৪:৫৬
Share:

‘মনের মণ্ডপে মানুষপুজো’ (১৯-১০) শীর্ষক প্রবন্ধে সুকান্ত চৌধুরী লিখেছেন “সহস্র শিব-দুর্গার আরাধনার পথ বিবেকানন্দই দেখিয়েছেন।” নরনারায়ণের সেবা, শিবজ্ঞানে জীব সেবাই ছিল স্বামীজির ধর্ম। স্বামীজির লেখা মানবিক চিঠিগুলি অনেক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত বহন করে। প্রমদাদাস মিত্রকে লিখিত এক পত্রে স্বামীজি লিখেছেন, “পরোপকারই ধর্ম, বাকি যাগযজ্ঞ সব পাগলামো।” ১৯০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বামী ব্রহ্মানন্দকে লিখিত এক পত্রে স্বামীজি বলেন, “যদি একজনের মনে এ সংসার নরককুণ্ডের মধ্যে একদিনও একটু আনন্দ ও শান্তি দেওয়া যায়, সেইটুকুই সত্য, এই ত আজন্ম ভোগে দেখছি— বাকি সব ঘোড়ার ডিম।” ১৮৯৭ সালে দুর্ভিক্ষের সময় আলমোড়া থেকে স্বামী ব্রহ্মানন্দকে পাঠানো এক চিঠিতে লিখেছেন, “জল তুলসীর পুজো করে ভোগের পয়সাটা দরিদ্রদের শরীরস্থিত জীবন্ত ঠাকুরকে ভোগ দিবে তা হলে সব কল্যাণ হবে।” খরচ বাঁচিয়ে কলকাতার ডোমপাড়া, হাড়িপাড়ায় দুর্ভিক্ষপীড়িত গরিবদের সাহায্য করার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বামীজি।

Advertisement

শেষ জীবনে ভয়ঙ্কর শারীরিক যন্ত্রণা সত্ত্বেও সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ তাঁর শিষ্য শরচ্চন্দ্রকে বলেছেন, “ভাতের ফ্যান গঙ্গায় গড়িয়ে পড়ে জল সাদা হয়ে যাবে, এই রকম অন্নসত্র হয়েছে দেখব তবে আমার প্রাণটা ঠাণ্ডা হবে।” স্বামীজি সমগ্র মানবজাতিকে সেই স্থানে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন যেখানে বেদ, বাইবেল বা কোরান— কিছুই নেই। আছে শুধু মানুষ এবং মানবধর্ম।

অনিমেষ দেবনাথ

Advertisement

নাদনঘাট, পূর্ব বর্ধমান

বিরহী পাঠক

‘পুজোতেও চাই’ (সম্পাদক সমীপেষু, ১-১১) চিঠির প্রেক্ষিতে বলতে চাই, জরুরি পরিষেবা বলতে হাসপাতাল, খবরের কাগজ, দুধ, শ্মশান‌কেই বোঝায়। এদের মধ্যে খানিক কম গুরুত্বের পরিষেবা খবরের কাগজ। খবর তো এখন পকেটে ফেসবুক লাইভের দৌলতে। যে কাগজ বিক্রেতা প্রতি দিন সাইকেলে দুয়ারে কাগজ দিয়ে যান, বিশেষ করে বর্ষায়, ঝড়ে, বৃষ্টিতে জল ভেঙে, কাগজে জলের আঁচড়টা না লাগে তা সামলে, কনকনে সকালের শীতকে উপেক্ষা করে, তাঁর রবিবারেও ছুটি নেই। বছরে সাকুল্যে সাত দিন ছুটি, পুজোয় নাগাড়ে চার দিন ছুটি। এ যুগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প, উপন্যাস পড়ার অভ্যাসের দাস খুব কমই আছেন। চ্যানেলে চ্যানেলে ২৪ ঘণ্টার খবর দেখার পরেও পড়ার অভ্যাস ধরে রাখতে পেরেছেন ক’জন? তবে সকলের কাগজ পাঠের উৎসাহ দমাতে পারেনি টিভির স্পট থেকে তুলে-আনা গরম খবর। সেই পাঠকদেরই, নিত্য দিন প্রেমিকের দেখা পাওয়ার ইচ্ছার মতো, এক দিনও খবরের কাগজের বিরহ সহ্য হয় না। তাই নাগাড়ে চার দিন খবরের কাগজ না পাওয়ার ক্ষোভ।

অঞ্জন কুমার শেঠ

কলকাতা-১৩৬

ছুটি থাক

পুজোর ক’দিন খবরের কাগজ ছাপার যে‌ দাবি করা হয়েছে ‘পুজোতেও চাই’ চিঠিতে, সেটি খুব একটা গ্রহণযোগ্য নয় বলেই মনে করি। প্রেস চালাতে গেলে বাইন্ডিং, সার্কুলেশন, মার্কেটিং, এবং এ সব পরিদর্শনের জন্য যে‌ দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের দরকার, তাঁদেরকে পুজোর আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হবে। তা ছাড়া পুজোর এই ক’দিন খবর পরিবেশন তো থেমে থাকে না। কাগজগুলোর ই-সংস্করণ প্রত্যেক দিন‌ই বেরোয় এবং তা সহজে পড়ে ফেলাও যায়‌। উৎসবের এই ক’দিন নাহয় কাগজ ছাপা বন্ধ‌ই থাক। সবার কথাই তো ভাবতে হবে।

শঙ্খ অধিকারী

সাবড়াকোন, বাঁকুড়া

উলের দিন

তৃষ্ণা বসাকের ‘সোজা উল্টোর উলটপুরাণ’ (৩১-১০) প্রসঙ্গে বলি, দিদিমা, ঠাকুমাদের হাতে বোনা উলের সোয়েটার, পুলওভার,কার্ডিগান আজও উঁকি দেয় আমাদের আলমারিতে, আমাদের দিয়ে যায় স্নেহের ওম। হয়তো সেই গরম জামাগুলো এখন আর হালফ্যাশনের নয়, তবুও স্মৃতিতে মাখামাখি। মনে পড়ে, মায়ের বোনা সোয়েটার পরে কোনও কাজে বেরিয়েছি, এক অপরিচিত মহিলা হঠাৎ গায়ে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করে বসলেন, “কে বুনেছে, তোমার মা?” তার পর ভাল করে আঙুল বুলিয়ে সোয়েটারের ডিজ়াইনটা বুঝে নিলেন নিঃসঙ্কোচে। আবার মনে পড়ে মা সারা দিনের খাটনির পর উল-কাঁটা বুনে চলেছেন। হয়তো বাবার সঙ্গে মায়ের সেই দিনই কোনও বিষয়ে ঝগড়া চলছে, কিন্তু কোলে উলের বলে সেই বাবার জন্য জ্যাকেট বোনা চলছে পরম যতনে।

মা স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। টিচার্স রুমে সোয়েটারের বিষয়ে, উল বোনা নিয়ে কী সব সুগভীর আলোচনা চলত। মনে পড়ে, মায়ের ডায়েরিতে কত না রকমারি ডিজ়াইন টুকে রাখা ছিল। উল বোনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, এক বার মায়েদের স্কুলের বড়দি ফতোয়া জারি করলেন যে, শুধুই টিচার্স রুমে উল বোনা যাবে, ক্লাসে নৈব নৈব চ।

সুদীপ দাশ

কলকাতা-৭০

শতবর্ষে

‘দুই প্রতিভার শতবর্ষ’ (কলকাতার কড়চা’, ২৫-৯) শীর্ষক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই কৃতি বাঙালি পরিচালক অসিত সেন এবং হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় সম্বন্ধে আরও কিছু জানাতে এই পত্রের অবতারণা। অসিত সেন সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেছিলেন অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়ের পূর্বরাগ (১৯৪৭) ও বিমল রায়ের অঞ্জনগড় (১৯৪৮) ছবিতে। একক পরিচালক হিসাবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ১৯৪৮ সালে অসমিয়া বিপ্লবী ছবিতে। তাঁর পরিচালিত প্রথম বাংলা ছবি চলাচল মুক্তি পায় ১৯৫৬ সালে। অসিত বরণ, অরুন্ধতী দেবী, নির্মল কুমার অভিনীত এই ছবিতে জাদুসম্রাট পি সি সরকারও অভিনয় করেছিলেন। জনপ্রিয় এই ছবিটি নিয়ে ১৯৭০ সালে হিন্দিতে করেছিলেন সফর। অভিনয়ে ছিলেন রাজেশ খন্না, শর্মিলা ঠাকুর, ফিরোজ খান। সেই ছবিও জনপ্রিয় হয়, সেরা পরিচালক হিসাবে অসিত সেন পেয়েছিলেন ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার।

১৯৫ঌ সালে আসে সেই বিখ্যাত ছবি দীপ জ্বেলে যাই। সুচিত্রা সেনের দুর্ধর্ষ অভিনয়। সঙ্গে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে ও কণ্ঠে অবিস্মরণীয় গান ‘এই রাত তোমার আমার’। এই গানে অভিনীত চরিত্রে ছিলেন স্বয়ং পরিচালক অসিত সেন। এই ছবিটিও ১৯৬৯ সালে হিন্দিতে অসিত সেনের হাতে হয়ে ছিল খামোশি নামে। প্রযোজক এবং সুরকার ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। রাজেশ খন্না, ওয়াহিদা রহমান, ধর্মেন্দ্র অভিনীত এই ছবিও বিখ্যাত হয়। খামোশি (১৯৬৯) হল রাজেশ খন্নার প্রথম জনপ্রিয় ছবি। বাংলায় উত্তর ফাল্গুনী আর হিন্দিতে মমতা তৈরি করেন— দু’টি ছবিতেই সুচিত্রা সেন দ্বৈতচরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেন।

অসিত সেন শেষ ছবি করেন বাংলাতে, ১৯৮৫ সালে প্রতিজ্ঞা। অভিনয় করেছিলেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়, উৎপল দত্ত প্রমুখ।

হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় বিখ্যাত চিত্রপরিচালক বিমল রায়ের সহকারী হয়ে দো বিঘা জমিন (১৯৫৩) আর দেবদাস (১৯৫৫) ছবিতে কাজ করেছিলেন। একক পরিচালক হিসাবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ১৯৫৭ সালে হিন্দি মুসাফির ছবিতে। প্রথম ছবিতে চমক, নায়ক দিলীপ কুমার স্বকণ্ঠে গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে ‘লাগি নাহি ছুটে’। হৃষীকেশ পরিচালিত আনাড়ি (১৯৫৯), অনুরাধা (১৯৬০), আশীর্বাদ (১৯৬৮), সত্যকাম (১৯৬৯), আনন্দ (১৯৭১) জাতীয় পুরস্কার পায়। ফিল্ম ফেয়ার, বিএফজেএ পুরস্কারও পেয়েছিলেন হৃষীকেশ।

দাদাসাহেব ফালকে এবং পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হৃষীকেশের ছবিগুলি কাহিনি আর সঙ্গীত— দুইয়ের জন্যই অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল।

বিশ্বনাথ বিশ্বাস

কলকাতা-১০৫

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement