‘আগুনে যে পোড়ে না’ (সম্পাদক সমীপেষু, ২৪-৩) শীর্ষক চিঠিতে একটি ভুল থেকে গিয়েছে। পত্রলেখক সেখানে ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯ সালে আনন্দবাজারে আগুন লাগার পরের দিনের কাগজ ছাপানো প্রসঙ্গে লিখেছেন যে, তিনি জেনেছিলেন পাশের অন্য একটি ইংরেজি দৈনিকের ছাপাখানা থেকে নাকি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরের দিনের কাগজ ছাপানো হয়েছে। সত্য ঘটনা হল, পরের দিনের কাগজ ছাপানো হয়েছিল আনন্দবাজারের নিজস্ব প্রেসেই, অন্য কোনও ছাপাখানায় নয়। ৪ সেপ্টেম্বর সকালে যে আনন্দবাজার পত্রিকা পাঠকদের হাতে পৌঁছল, তার প্রথম পৃষ্ঠাতেই ‘পুড়িয়াও যাহা পোড়ে না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ছিল। সেখানে স্পষ্ট ভাবে লেখা ছিল— “পত্রিকা ভবনের যে দুটি তল কার্যত ধ্বংস হইয়া গিয়াছে সেখানেই ছিল আনন্দবাজার পত্রিকার বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগের সর্বস্ব। অবশ্য পত্রিকার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিভাগও একই সঙ্গে ধ্বংস হইয়া গিয়াছে। কিন্তু যে কোনও সংবাদপত্র প্রকাশের ব্যাপারে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ বিধ্বস্ত হইয়া গেলে সংবাদপত্র প্রকাশ শুধু দুরূহ নয়, এক অসম্ভব চিন্তা। চরম বিপর্যয়ে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করিতেই উদ্যোগী হইয়াছেন আনন্দবাজার পত্রিকার পরিচালক এবং কর্মীরা। বস্তুত নিজস্ব ভবনের বাহিরে সাময়িক আস্তানায় বসিয়া তাঁহারা শনিবারের কাগজ পাঠকদের হাতে তুলিয়া দিবার জন্য কাজ করিয়া গিয়াছেন।”
ওই একই দিনে প্রকাশিত অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রেখে শনিবারের, অর্থাৎ ৪ সেপ্টেম্বরের পত্রিকা প্রকাশের কাজ আগুন নেবানোর আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। এর জন্য আনন্দবাজারের প্রেস কর্মীরাও নিরলস ভাবে কাজ করে গিয়েছিলেন। ফলে নিজস্ব প্রেস থেকেই পরের দিনের কাগজ বার করা সম্ভব হয়েছিল। এর জন্য বাইরের কোনও সাহায্যের প্রয়োজন পড়েনি।
সুমন চক্রবর্তী
কলকাতা-৫৭
একই মুদ্রা
যে সব সংবাদমাধ্যম তাঁর সরকারের দোষত্রুটি তুলে ধরছে, সেগুলির উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন (‘প্রচারমাধ্যমকে ফের হুঁশিয়ারি মমতার’, ৯-৩)। সাম্প্রতিক নির্বাচনে অনিয়ম, আনিসকাণ্ডে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকার নানা অসঙ্গতি, তোলাবাজি ও দুর্নীতির বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে সরব হওয়ার জন্য সংবাদমাধ্যম তাঁর রোষের শিকার। কিছু দিন আগে তিনি বলেছিলেন, যে সংবাদমাধ্যম তাঁর সরকারের ইতিবাচক দিক তুলে ধরবে তাদের ‘সাপোর্ট’ দিতে হবে। তাঁর এই ধরনের ভাষা গণতন্ত্রের পক্ষে ভাল নয়। যদিও তিনি বলেন ‘আমরা বিজেপির মতো নই’, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, দুই সরকারই মুদ্রার এ পিঠ-ও পিঠ।
জহর সাহা
কলকাতা-৫৫
গৌরী সেন
“ঋণও নহে, ক্ষতিপূরণও নহে— রাজ্যের কল্যাণ কর্মসূচিকে চালাইয়া যাইতে হইলে রাজস্বের অধিকতর নির্ভরযোগ্য ও সুস্থায়ী উৎসের প্রয়োজন” বলেছেন সম্পাদক (‘গৌরী সেন কোথায়’, ১৫-৩)। তাঁর মতে, অর্থের ‘প্রশস্ততম পথ’ হল শিল্পায়ন। এই সুপরামর্শের পথে বিস্তর বাধা, যা মূলত রাজনৈতিক। রাজ্য রাজনীতি চাইছে স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, বিনামূল্যে রেশন, নানা ভাতা ও সহায়তা প্রকল্পের ক্রমবৃদ্ধি, যা ভোটব্যাঙ্ক বাড়াচ্ছে। এখানে রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজি, বিবেকানন্দ থেকে কার্ল মার্ক্স প্রমুখ মনীষীর সেই দর্শন উপেক্ষিত, যার সার কথা— মানুষ সমাজের থেকে প্রয়োজন মতো নেবে আর সাধ্যমতো সমাজকে দেবে। অর্থনৈতিক কাজে সমাজে উপযুক্ত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শ্রম দেওয়া বিধেয়। রাজ্য বাজেটে এই দর্শনের বড় অভাব। ফলে অর্থোপার্জনের স্বাভাবিক রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের ভূ-বৈচিত্র, জনবিন্যাস, ঐতিহ্য অনুযায়ী অর্থোপার্জনের প্রধান রাস্তা কৃষি ও কৃষি-সহায়ক শিল্প। এখানে কৃষিতে স্বাবলম্বনের সঙ্গে সারা বছর ন্যূনতম খাদ্যে স্বনির্ভরতার ভরসা আছে। এই অর্থনৈতিক ভরসা চলে যাচ্ছে সদ্যসমাপ্ত উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনের ফলে, যেখানে কেন্দ্রের আনা তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের রাজনৈতিক প্রতিফলন পাওয়া গেল না। এর প্রভাব পশ্চিমবঙ্গেও পড়তে বাধ্য। এ রাজ্যে উৎপাদক চাষি অভাবী দরে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন স্রেফ জমিটুকু রক্ষার ভরসায়। কৃষি লাভজনক না হওয়ায় উৎপাদক শক্তি বাইরের রাজ্যে চলে যাচ্ছে। রাজ্যে ফসলের বাজার, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণের অভাবে অন্য রাজ্য থেকে ফসল কেনার ফলে রাজস্ব বৃদ্ধির বদলে হ্রাস হচ্ছে। এখন শুনছি বন্ধ হয়ে যাওয়া বা দেনাগ্রস্ত চালু চালকলও কিনে নেবে কর্পোরেট সংস্থা। বর্তমানে সুগন্ধী চাল, চিনি, ভোজ্য তেল, আলু ইত্যাদি চাষের ব্যবস্থা দখল করবে কর্পোরেট ব্যবসায়ী। এ রাজ্যে কৃষি উৎপাদন অন্য রাজ্যে গিয়ে প্যাকেটজাত হয়ে এ রাজ্যেই বিক্রি হবে দু’গুণ তিন গুণ দরে। এ ভাবে এ রাজ্য ক্রমে কাঁচামাল তৈরি করে প্রস্তুত পণ্যের ক্রেতা হলে রাজস্ব কমতেই থাকবে।
পশ্চিমবঙ্গের জমির আকার ও চরিত্র, জলসেচ, ক্ষুদ্র জমির উপর বিপুল জনসংখ্যার ভরসা শিল্পায়নের পথে বাধা হয়ে যাচ্ছে। কৃষিব্যবস্থা সাধারণ ভাবে অসংগঠিত, প্রকৃতিনির্ভর ও প্রত্যক্ষ করের বাইরে। ফলে কৃষি লেনদেনে রাজস্ব আয়ের স্থিরতা আশা করা মুশকিল। শিল্প ও পরিষেবার ক্ষেত্র ঠিক উল্টো। নির্মম সত্য এই যে, শিল্পায়নকে বাধা দিয়ে যাচ্ছে শাসকের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বড় বড় কারখানা মিথ্যে পুনরুজ্জীবনের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির আড়ালে পরে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কর্পোরেট সংস্থার কাছে।
কৃষি, শিল্প, পরিষেবা— তিন ক্ষেত্রেই এ রাজ্য বিক্রেতার বদলে ক্রেতা, উৎপাদকের বদলে ভোক্তা হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতি ক্ষেত্রে স্থায়ী সম্পদ নির্মাণের বদলে ক্রমাগত অপচয় ও অবক্ষয় হয়ে চলেছে। ‘কল্যাণ কর্মসূচি’ ভোট টানছে বটে, কিন্তু স্বল্পস্থায়ী ও সাধারণ ভাবে শ্রমবিযুক্ত। এই কর্মসূচি দরিদ্র ভোটারকে কোনও রকমে টিকিয়ে রাখতে পারে, কিন্তু মানবসম্পদ হিসেবে সমৃদ্ধ করতে পারে না। শিরোনামে যে হুগলির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গৌরী সেনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি কিন্তু সবাইকে দান করতেন না, দেনাগ্রস্ত গরিব মানুষকে উদারচিত্তে দান করতেন। সেখানে রাজনীতির বিনিময় প্রথা ছিল না। সেই জন্যই গৌরী সেন আজও শিরোনামে আসেন।
শুভ্রাংশু কুমার রায়
চন্দননগর, হুগলি
ঋণ বাড়ছে
বর্তমানে বিনামূল্যে বাড়িতে রেশন, স্বাস্থ্যসাথী, এবং লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের অনুদান রাজ্য জুড়ে সাড়া ফেলেছে। প্রতি মাসে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ করে সরকার এই সব অনুদান প্রকল্প চালাচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার মান উন্নত করলে স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে হাজার হাজার কোটি টাকা দিতে হত না। সকলকে কাজের মাধ্যমে রোজগারের সুযোগ করে দিলে সামান্য রোজগারও সম্মানজনক হত। কিন্তু সরকার অনুদানকে উন্নয়নের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। জনগণের কাঁধে ঋণের বোঝা বাড়ছে।
প্রদ্যোত পালুই
বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
পলিথিন দূষণ
কাটোয়া স্টেশন ঢোকার আগেই বাঁ দিকে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কেবল পলিথিন আর থার্মোকলের স্তূপ। পচা-পরিত্যক্ত পলিথিন গোটা এলাকাকে দূষিত করছে। পলিথিন আর থার্মোকলের বেহিসাবি ব্যবহার কী ভাবে প্রকৃতিকে কলুষিত করছে, তার প্রমাণ এটি। নিজেদের স্বার্থেই আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।
স্বপন কুমার ঘোষ
মধ্য ঝোড়হাট, হাওড়া