নতুন জামাকাপড়ের মতো এখন পুজোয় চাই নতুন জুতো। কিন্তু আগে একটা সময় ছিল, যখন বাঙালির পুজোয় নতুন জামাকাপড় ও জুতোর পাশাপাশি আর একটা অপার্থিব চাহিদা ছিল— পুজোর গান। পঞ্চাশ থেকে আশির দশকে বাঙালি পুজোর গানে মজে থাকত। দোকানে দোকানে লাইন পড়ে যেত এইচএমভি-র পুজোর গানের রেকর্ড কেনার জন্য। রেকর্ড প্লেয়ারে সেই গান বাজত অনেকেরই ঘরে, পাড়ায় পাড়ায় নানান অনুষ্ঠানে।
পুজোর গানের বই ‘শারদ-অর্ঘ্য’ কেনার জন্য হুড়োহুড়ি কম কিছু ছিল না। শারদ-অর্ঘ্যের ভিতরে প্রতি পাতায় থাকত দু’টি করে গান, সঙ্গে শিল্পীর ছবি। সে সময় শারদ-অর্ঘ্যের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। এখনও পুজোর গান বেরোয়। তবে পঞ্চাশ থেকে আশির দশক পর্যন্ত পুজোর গানের যে উন্মাদনা ছিল, তা এখন আর নেই। বলতে গেলে, আশির দশকের শেষের দিক থেকেই বাঙালির পুজোর গান নিয়ে মাতামাতি কমে এসেছে। তাই এখনও বাঙালি ঘুরে ফিরে সেই হেমন্ত, সতীনাথ, মান্না, শ্যামল, তরুণ, সন্ধ্যা, আরতি, প্রতিমা, নির্মলাদের গানই শুনছে।
পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে গানের জগতের নানা মাধ্যমেও। দু’পিঠে দু’টি গান নিয়ে রেকর্ডের যুগ ছিল পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত। চারটি গান নিয়ে এলপি ছিল ষাটের দশকে। পরে এল বারোটি গানের এলপি। তার পর এল ক্যাসেট। এখন সিডি, আরও কত কী! আর এদের ভিড়েই আজ হারিয়ে গিয়েছে পুজোর গান।
আসীম কুমার মিত্র
রসপুর, হাওড়া
আবদুর রহিম
সীমান্ত গুহঠাকুরতার প্রবন্ধের (‘রাম ও রহিমের ইতিহাস’, ২১-৯) সাপেক্ষে আবদুর রহিম সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলতে চাই। এই উপমহাদেশে প্রায় হাজার বছর ধরে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে আদান-প্রদান এবং মেলামেশার ফলে একটা নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঘরানা গড়ে উঠেছিল। যার চরম বিকাশ আমরা দেখতে পাই মোগল সম্রাট আকবরের প্রায় ৫০ বছরের রাজত্বকালের শেষ ৩০ বছর। আবদুর রহিম নিঃসন্দেহে তার এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। ‘খান-ই খানান’ ছিল তাঁকে সম্রাট আকবর প্রদত্ত মোগল সাম্রাজ্যের তৎকালীন সর্বোচ্চ উপাধি, যার অর্থ ‘খানদের খান’ বা লর্ড অব লর্ডস। তাঁর বাবা বৈরাম খাঁ-ও এই উপাধিতে ভূষিত ছিলেন। বৈরাম খাঁকে আকবর নির্বাসনে পাঠান মক্কায়। পথে গুজরাতে আততায়ীর হাতে তিনি নিহত হন। আবদুর রহিমের বয়স তখন মাত্র চার। সম্রাট আকবরই সেই বালকের প্রতিপালনের দায়িত্ব নেন। আবদুর রহিমের পাণ্ডিত্যে কতটা আস্থা রেখেছিলেন সম্রাট, তা বোঝা যায় যখন আকবর তাঁর প্রিয়তম সন্তান কিশোর শাহজাদা সেলিমের শিক্ষক-অভিভাবক হিসাবে নিযুক্ত করেন ২৬ বছরের আবদুর রহিমকে।
আবদুর রহিম ছিলেন বহুভাষাবিদ। তিনি লিখেছেন হিন্দি ফার্সি, সংস্কৃত, খড়ি বোলি, ব্রজবুলি, অবধি ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষায়। বাবর তাঁর ‘বাবরনামা’ লিখেছিলেন চাঘতাই তুর্কিতে। আকবরের সময়ে সেই ভাষার ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। তখন কাজের মূল ভাষা বলতে ফার্সি। অতএব আকবরের নির্দেশে আবদুর রহিম চাঘতাই তুর্কি থেকে বাবরনামা ফার্সিতে অনুবাদ করেন। অর্থাৎ, চাঘতাই তুর্কিও তাঁর আয়ত্তে ছিল। আকবরের দরবারে আসা প্রথম জেসুইট মিশনের পাদরিরা জানিয়েছেন, আবদুর রহিম পর্তুগিজ ভাষাও জানতেন।
এ ছাড়াও তিনি ছিলেন এক জন দক্ষ সেনানায়ক, বহু সফল সমর অভিযানে নিজে নেতৃত্ব দিয়েছেন, বহু গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে সঙ্গী হয়েছেন সম্রাট আকবরের। ৫০ বছরের বেশি রাজনৈতিক জীবনে আবদুর রহিমের শেষ জীবন মোটেই ভাল কাটেনি। জাহাঙ্গীর এবং তার তৃতীয় পুত্র শাহজাহানের মধ্যে মসনদ নিয়ে ১৬২২ সাল নাগাদ যে চরম সংঘাত শুরু হয়, তার মাঝে পড়ে যান তিনি। আবদুর রহিম ছিলেন দাক্ষিণাত্যে, শাহজাহানের সেনাদলে। জাহাঙ্গীরের ধারণা হয়, শাহজাহানকে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে মদত দিচ্ছেন আবদুর রহিম। ক্ষিপ্ত হয়ে জাহাঙ্গীর তার রোজনামচায় (জাহাঙ্গীরনামা) রুমির গুলিস্তানকে উদ্ধৃত করে লেখেন “নেকড়ের বাচ্চা যতই মানুষের মধ্যে বড় হোক আসলে নেকড়েই হবে… তাঁর বাবাও শেষে আমার বাবার সঙ্গে এমন আচরণ করেছিলেন…।” এ দিকে আবার শাহজাহান মনে করেন, তাঁর সেই সময়ের সামরিক বিপর্যয়গুলোর জন্য দায়ী আবদুর রহিমের বিশ্বাসঘাতকতা। সেই সময় আবদুর রহিম লেখেন “সত্যের সঙ্গে থাকলে হারাব জগৎ/ মিথ্যার সঙ্গ দিলে পাব না রাম।”
আগরার তখত দখলকে কেন্দ্র করে পিতা-পুত্রের এই ভয়ঙ্কর লড়াইতে বৃদ্ধ আবদুর রহিম এক নাতি বাদে তাঁর সব সন্তান এবং নাতিদের হারান। তাঁদের কাউকে হত্যা করা হয় শাহজাহানের নির্দেশে, কাউকে জাহাঙ্গীরের নির্দেশে। পরে অবশ্য জাহাঙ্গীর এবং নুরজাহান নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ আবদুর রহিমের উপর কিছুটা সদয় হন। জাহাঙ্গীর তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে মহাবত খাঁকে দিয়ে দেওয়া ‘খান-ই খানান’ উপাধি আবার তাঁকে ফিরিয়ে দেন। ওই সময়ে দিল্লিতে ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু হয় আবদুর রহিম খান-ই খানানের। চিকিৎসকের সাক্ষ্য অনুযায়ী, ৭২ বছরের বৃদ্ধ আবদুর রহিমের মৃত্যু ছিল যথেষ্ট বেদনাদায়ক। দিল্লির পূর্ব নিজামুদ্দিন অঞ্চলে স্ত্রী মাহ বানু বেগমের স্মৃতিসৌধের ভিতরেই সমাধিস্থ করা হয় তাঁকে। স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে বিশাল সেই সৌধ নির্মাণ করিয়েছিলেন আবদুর রহিম। মোগল ভারতে স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে এমন বিশাল আকারে নির্মিত সম্ভবত সেটাই প্রথম স্থাপত্য।
নিজামুদ্দিন অঞ্চলের যেখানে শায়িত আছেন আবদুর রহিম, তার থেকে হাঁটা পথ দূরে সুফি সন্ত নিজামুদ্দিন আওলিয়ার দরগা। দরগার ভিতরে শায়িত রয়েছেন আর এক বিখ্যাত মরমিয়া কবি, শিল্পী হজরত আমির খসরু (১২৫৩-১৩২৫)। সেই সমাধির পাশেই রয়েছে মহান কবি মির্জা গালিবের (১৭৯৭-১৮৬৯) কবর। আমির খসরু, আবদুর রহিম এবং মির্জা গালিব— এই তিন মহান কবিই তাঁদের জীবন এবং লেখায় জয়গান গেয়েছেন সমস্ত রকম ধর্মীয় গোঁড়ামিমুক্ত এই উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলমান সহ এক যৌথ ভালবাসার সংস্কৃতির।
দেবরাজ রায় চৌধুরী
রাজমহল রোড, মালদহ
বোতলের জল
বোতলবন্দি জলের কারবার সর্বত্র রমরমিয়ে চলছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জলের গুণমান ঠিক আছে কি না, সেটা সাধারণ মানুষের জানা খুব জরুরি। আর্সেনিক বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের মতে, কিছু জল-কারখানায় যথেচ্ছ পরিমাণে মাটির নীচ থেকে জল তোলা হয়। এর ফলে জলের সঙ্গে আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডের মতো রাসায়নিকের মেশার সম্ভাবনা থেকেই যায়। মানুষ অজানতেই বোতলবন্দি জল পান করার ফলে বিভিন্ন রোগের শিকার হতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদে জানা যায় যে, প্রশাসন মাঝেমধ্যে কিছু বেআইনি জলের কারখানা বন্ধ করে। অপর দিকে, মানুষ এখন বোতলবন্দি জল পান করতে অভ্যস্ত। ব্যক্তিগত লাভের জন্য মাটির নীচের জল তুলে বিক্রি বন্ধ হওয়া দরকার। আবার বোতলবন্দি জলের ঠিক গুণমান বজায় রাখার জন্য এফএসএসএআই-এর অনুমোদন জরুরি। এ ছাড়া সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে নিয়মিত জল পরীক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা করা হোক।
শুভশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়
বহড়ু, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
কেন এই কার্ড
বহু অপেক্ষার পর ডিজিটাল রেশন কার্ড পেলাম। আগে ডাউনলোড করা কার্ড নিয়ে ডিলারের কাছে যেতে বলেছিল, অরিজিনাল কার্ড চাই। এখন কার্ড নিয়ে যেতে বলল ‘নন সাবসিডি কার্ড’-এ কিছু মেলে না। তা হলে এই কার্ড কেন দেওয়া হল? কেন্দ্রীয় সরকার ফ্রি রেশন কাদের দিচ্ছে? দুয়ারে রেশন কি শুধু বিপিএল কার্ডের জন্য?
অমিত রায় চৌধুরী
কলকাতা-৪৭