Farm Bills 2020

সম্পাদক সমীপেষু: চাষির কথা কোথায়?

কৃষিনীতিতে কোথাও চাষির স্বার্থরক্ষার কথা নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share:

‘দ্বিচারিতা করে টেকা কঠিন’ (১৪-৯) নিবন্ধে বিশ্বজিৎ ধর নয়া কৃষিনীতিতে চাষির সঙ্কটকে তুলে ধরেছেন। এই নীতি সাধারণ চাষির স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে কৃষিপণ্যের বৃহৎ ব্যবসায়ীদের কথা ভেবেই তৈরি হয়েছে। অতিমারির সময়েও বিদেশে কৃষিপণ্যের রফতানি বৃদ্ধি তার প্রমাণ। অত্যাবশ্যক পণ্য আইন সংশোধনও সাধারণ চাষি কিংবা দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষা করেনি। মহারাষ্ট্রের চাষিরা ১ টাকা কেজি দামে পেঁয়াজ বেচেছেন। বাজারে সেই পেঁয়াজ এখন ৪০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই দাম ২০০ টাকা কেজিতে থামবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ ভয়ঙ্কর দুরবস্থার মধ্যে পড়লেও কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার— উভয়েই হাত গুটিয়ে বসে আছে। রাজ্য সরকার দু’-একটা শুকনো হুঙ্কার ছাড়ছে, যার না আছে ঝাঁজ, না আছে ভার। দু’হাতে মুনাফা লুটছে কৃষিপণ্যের বড় ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

কৃষিনীতিতে কোথাও চাষির স্বার্থরক্ষার কথা নেই। চাষি কী ভাবে ন্যায্য দাম পাবেন বা সরকার তা পাওয়ার ক্ষেত্রে কী ভূমিকা নেবে, সে কথা বলা নেই। দ্বিতীয়ত, ন্যায্য দাম পাওয়ার পাশাপাশি চাষের বিপুল খরচ চাষিদের কাছে একটা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বীজ, সার, কীটনাশক প্রভৃতি কৃষির প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির কোনওটিরই নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নেই, রয়েছে দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিদের হাতে। ফলে প্রতি বছর লাফিয়ে দাম বাড়ছে এগুলির। এই দামের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা অধিকাংশ ছোট চাষির নেই। ফলে ছোট চাষিদের কাছে চাষ লাভজনক থাকছে না। তাঁরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন এবং শেষ পর্যন্ত জমি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এই ভাবে ছোট চাষি ক্রমশ কৃষি-মজুরে পরিণত হচ্ছেন। নয়া কৃষিনীতিতে এর প্রতিবিধানের কোনও ব্যবস্থা নেই।

শিলাই মণ্ডল

Advertisement

গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর

স্বাগত কর্পোরেট

কোনও সমস্যায় মানুষ একশো বছর ধরে ভুগছেন, অথচ আমরা তার নিরাময়ের কথা ভাবছি না, এমনই এক সমস্যা হল এ দেশের কৃষক সমস্যা। হতে পারে, বর্তমান সরকার যে পদক্ষেপ করেছে, তা কৃষকদের বর্তমান অবস্থার উন্নতির সহায়ক হবে না। কিন্তু কৃষকরা এখনই বা কী এমন ভাল অবস্থায় আছেন? ফসল থেকে লাভ তো দূর, খরচটাই পুরো তুলতে পারেন না। ঋণ নিলে শোধ করতে পারেন না। পুরো ব্যাপারটাই এত দিন এই ভাবে চলেছে। তা হলে নতুন করে কৃষকের আর কী ক্ষতি হবে?

প্রয়োজন, বিকল্প ভাবনা ও উদ্যোগ। যে দু’টি উপায় উঠে এসেছে, মজুতদারির সীমা তুলে দেওয়া এবং চুক্তিচাষ চালু করা— দুটোই এত কাল ধরে হয়ে এসেছে। পার্থক্য হল, এত দিন মজুতদারির লাভ তুলেছে মধ্যস্বত্বভোগীরা, এবং চুক্তিচাষের ফায়দা তুলেছেন ভাগচাষিদের মালিক। এ বার মজুতদারির সীমা তুলে দেওয়ায় এবং চুক্তিচাষকে কর্পোরেটের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ায় কতকগুলি পরিবর্তন হতে পারে। প্রথমত, কৃষিজাত পণ্য মজুতের সীমা তুলে দেওয়ায় কৃষিপণ্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। আমরা প্রতি বছর দেখি, কৃষকরা ফসলের দাম না পাওয়ায় তা জমিতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বা রাস্তায় ফেলে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এই ফসলই মজুত করা হলে কৃষকরা অতিরিক্ত ফসলের খরচটুকু অন্তত পাবেন। জোগান থাকলে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিজ পণ্যের দাম লাগামছাড়া হবে না।

দ্বিতীয়ত, কর্পোরেটের সঙ্গে কৃষকদের চুক্তিভিত্তিক রফা হলে কৃষিতে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান-নির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে। একই ফসল অতিরিক্ত না ফলিয়ে, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ফসল ফলানো, সারা বছর ধরে বিভিন্ন রকমের ফসল, সবজি, মশলা, ফুল ইত্যাদি চাষ করে জমি থেকে কিছু না কিছু আয়ের ব্যবস্থা করা, সহ-ফলনের মাত্রা ও গুণমাণ বৃদ্ধি— কৃষকদের অনুকূলে যাবে। কৃষিপণ্যের রফতানি বৃদ্ধি পাবে। তৃতীয়ত, সংরক্ষণ ও বণ্টনব্যবস্থা উন্নত হবে। উৎপাদিত ফসল ও আনাজ সংরক্ষণের জন্য আমাদের দেশে প্রচুর হিমঘর প্রয়োজন, যা সরকারের একার পক্ষে গড়ে তোলা কঠিন। বেসরকারি বিনিয়োগ হলে, বিনিয়োগকারীরা নিজের স্বার্থে ফসল সংরক্ষণে হিমঘর তৈরি করবেন।

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ফসলের বণ্টনব্যবস্থা। চাহিদা অনুযায়ী বণ্টন না হওয়ায় অনেক সময় সবজির দাম লাগামছাড়া হয়, নষ্টও হয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সরকারি আমলা ও শাসক দলের যোগসাজশ ও দুর্নীতি। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর আলু কেলেঙ্কারি হয়। এখন যেমন চলছে। কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ক্রয়, বিপণনের পুরোটাই অনিয়ন্ত্রিত ও দুর্নীতিতে ভরা। পুরো ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু নিয়মের অধীন করতে গেলে কৃষির সঙ্গে কর্পোরেট জগৎকে জড়ানো একান্ত প্রয়োজন।

কৌশিক সরকার

রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া

চুক্তির ফাঁদ

লোকসভার বাদল অধিবেশনে বিরোধীদের প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন করা হল। ভারতীয় কৃষিতে অবাধ কর্পোরেট অনুপ্রবেশ ঘটবে এ বার। গণবণ্টন ব্যবস্থার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু ছাড়া সরকার তার নির্ধারিত দামে কৃষকদের ফসল বিক্রির সুবন্দোবস্ত করে উঠতে পারেনি। এখন চুক্তিচাষের মাধ্যমে চাষিদের কর্পোরেট সংস্থার গোলামে পরিণত করার রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। চাষিরা কোন ফসল চাষ করবেন, কী ভাবে করবেন, সেচব্যবস্থা, কীটনাশক-সহ যাবতীয় উপকরণ কতটা, কী মূল্যে কিনবেন, এবং তার ব্যবহার কৌশলও কর্পোরেটই ঠিক করবে। ফসলের দাম নির্ধারণও তারা করবে। এর পর উৎপাদন আশানুরূপ না হলে তার দায় চাষির। সামন্তযুগের নব সংস্করণ বলা যায়। সুদের বিনিময়ে টাকা ধার নিয়ে, সেই টাকায় চাষ করে, উৎপাদিত ফসল মহাজনের ঠিক করে দেওয়া দামে, তাঁকেই বিক্রি করতে বাধ্য করা হল চুক্তিচাষ। যত দিন যাচ্ছে, সব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বলবৎ করার প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর যেন শেষ নেই।

সূর্যকান্ত চক্রবর্তী

তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর

দুষ্টচক্র

তূর্য বাইন যথার্থই লিখেছেন (‘আলুসেদ্ধটুকুও যখন জোটে না’, ১৫-৯) বাঙালি এখন আর দুধে-ভাতে বা মাছে-ভাতে নেই। বেশির ভাগই আলু-ভাতে খেয়ে টিকে আছেন। প্রতি বছর কৃষকরা খুব আশা নিয়ে আলু চাষ করেন। হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া প্রভৃতি জেলার কৃষি অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় আলুর ফলনের উপর। অপ্রিয় হলেও সত্য, বাংলার মাত্র কয়েক জন হিমঘর মালিক কলকাতায় বসে ঠিক করে দেন কৃষকের কাছ থেকে কত দামে আলু কেনা হবে। ফলে পরিশ্রমের ফসল তুলে কৃষককে তা জলের দরে বেচতে হয়। হিমঘরে আলু রাখেন, এমন কৃষকের সংখ্যা সামান্য। বেশির ভাগ আলু বিভিন্ন কৃষকের নামে থাকে ব্যবসায়ী, ফড়ে, হিমঘর মালিকদের হাতে। জলের দরে কেনা আলু কয়েক মাস পরে হিমঘর থেকে বেরিয়ে চার গুণ দামি হয়ে যায়।

সন্দীপ সিংহ

হরিপাল, হুগলি

ইছামতী সংস্কার

পশ্চিমবঙ্গের সবজি ভান্ডার হিসেবে খ্যাত স্বরূপনগর ব্লক। সেই ব্লকের চারঘাট, শাঁড়াপুল নির্মাণ, সগুনা ও গোবিন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বৃহৎ অংশ ইছামতীর প্লাবনে জলের তলায়। নদী তো কবেই মরে গিয়েছে কচুরিপানায় ডুবে। মন্ত্রী হওয়ার আশায় কেউ কেউ কোমরে গামছা বেঁধে, হাতে হাঁসুয়া নিয়ে মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান ভোটের আগে। ভোট-শেষে বর্ষা এলেই মজে-যাওয়া ইছামতী ডুবিয়ে দেয় ধান, পাট, পটল, কাঁকরোল, ঢেঁড়স, উচ্ছে, বেগুনের খেত। সবজির দাম চড়ে রাজ্যে। সরকার ইছামতীর কচুরিপানা, পলি সরিয়ে দুই তীরে বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করলে স্বরূপনগরের সবজি ভান্ডার বাঁচে।

সরবত আলি মণ্ডল

স্বরূপনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement