“টিকা বেপাত্তা, অগ্রাধিকার মোদীর ‘প্রাসাদ’” শীর্ষক সংবাদ (৪-৫) পড়ে প্রথমেই যে কথাটা মনে হল, তা ওই দিনই ‘দম্ভসৌধ’ সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে— রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো তখন বেহালা বাজাচ্ছিলেন। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না দেশের সাধারণ মানুষকে নরেন্দ্র মোদীরা কোন চোখে দেখেন। জনগণের অর্থ তিনি জনগণের প্রাণরক্ষায় ব্যয় না করে বিলাস আর আত্মপ্রসাদে ব্যয় করছেন। করোনা অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় যখন সমগ্র দেশ বিপর্যস্ত, হাসপাতালে বেড নেই, আইসোলেশন সেন্টার নেই, অক্সিজেন নেই, শ্মশানে ঠাঁই নেই, জনজীবন থেকে কর্মক্ষেত্র এক রকম স্তব্ধ, তখন ২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ‘সেন্ট্রাল ভিস্টা’ চলছে রমরমিয়ে। চলছে দিল্লির বুকে, যেখানে করোনার ভয়ঙ্কর রূপ সমগ্র বিশ্বকে স্তম্ভিত ও বেদনাহত করেছে।
অর্থাভাব দেখিয়ে টিকা দেওয়ার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে চাইছে না কেন্দ্রীয় সরকার। এ ব্যাপারে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে তারা দায়িত্ব থেকে সরে গিয়েছে। নির্দেশ দিয়েছে বাকি টিকাকরণের দায়িত্ব রাজ্য সরকারগুলির। অথচ, স্বাধীনতার পর গত ৭৩-৭৪ বছর ধরে দেখছি, ভারত সরকারই যে কোনও সংক্রামক রোগের প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করেছে, অন্য কারও উপর ছেড়ে দেয়নি। এ বারে তার অন্যথা হচ্ছে। এই প্রথম কেন্দ্র তার দায় রাজ্যগুলির উপর চাপাচ্ছে। অথচ, কেন্দ্র প্রতিষেধক কিনলে যে দামে কিনবে, রাজ্যকে কিনতে হলে চুক্তি অনুযায়ী তার দ্বিগুণ দামে কিনতে হবে। এ ক্ষেত্রে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে টিকা দিতে কেন্দ্রের ব্যয় হত আর বড়জোর ২৫ হাজার কোটি টাকা। ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল তৈরি করতে খরচ হয় ৩০-৩৫ কোটি টাকা, ২০০ কোটি টাকা খরচ করলে ১৬০টিরও বেশি অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি করা যায়। এগুলো গুরুত্বহীন ভেবেই তারা নির্মাণ করছে ‘সেন্ট্রাল ভিস্টা’। তাদের কাছে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে রাম মন্দির নির্মাণ বা সর্দার বল্লভভাই পটেলের সুউচ্চ মূর্তি নির্মাণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেখে মনে হচ্ছে, হাজার হাজার করোনা-আক্রান্ত মানুষের মৃতদেহের উপর গড়ে উঠছে মোদীর ‘প্রাসাদ’।
গৌরীশঙ্কর দাস
খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
রাজতন্ত্র
‘সেন্ট্রাল ভিস্টা’র ২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পকে কেন্দ্রের শাসক দল অগ্রাধিকার দিয়েছে জেনে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর ঘরে মাংস-ভাতের স্বপ্ন দেখার কথা মনে পড়ে যায়। দেশের রাজকোষ ভরাতে একের পর এক রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল বিজেপি তার প্রধানমন্ত্রীর প্রাসাদোপম বাসভবন তৈরির লক্ষ্য স্থির করে ফেলল। যেখানে অতিমারি পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকের দুর্দশা, টিকার অপ্রতুলতা, আর অক্সিজেনের হাহাকারে ভারতবাসীর অবস্থা টালমাটাল, তখন এই ব্যয়বহুল প্রকল্পে কাটছাঁট করে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বৃদ্ধি বাস্তবোচিত ছিল। অবশ্য যে দেশে রাজা এবং পারিষদ বর্গের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যই শেষ কথা, সেখানে প্রজাদের প্রাত্যহিক দুর্দশার চিত্রে কুম্ভীরাশ্রু পতনই বোধ হয় অনিবার্য। বাজেট বরাদ্দে সব কিছুই প্রজার মঙ্গলে, এমন একটি ভাবনার প্রচার করে ক্রমাগত বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রের ভাঁড়ার ভর্তির পরিকল্পনা করা হয়, অথচ রাজধানীর সাজসজ্জা খাতে বিপুল ব্যয় করা হচ্ছে। এটা কি একটি উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে, এই অতিমারির দুঃসময়ে, যুক্তিসঙ্গত?
সঞ্জয় রায়
দানেশ শেখ লেন, হাওড়া
ভাষা
রাজনীতির ভাষা কোনটা? যে ভাষা বিপুলসংখ্যক মানুষের মন জয় করতে পারে, রাজনীতির অঙ্গনে সে ভাষাকেই সফল বলে মানতে হবে। ভদ্রলোকের ভাষার সীমাবদ্ধতা এখানেই। এ ভাষায় শ্রোতার হৃদয়ের চেয়ে মগজের কাছে বেশি পৌঁছনো যায়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বক্তৃতা যেমন ভদ্রভাষা-নির্ভর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষা তেমনই আটপৌরে। এতে ‘রেটোরিক’-এর বালাই নেই, ভদ্রলোক ভাবমূর্তি রক্ষার কোনও দায় নেই। এ ভাষা দ্রুত আবেগ সঞ্চার করে, কখনও রসিকতা কিংবা বাক্যবাণের সাহায্যে নেত্রী শ্রোতার মনের কাছে অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারেন। ভোটেও তার সুফল মেলে। “বিজেপিকে এ বার সব সিটে বোল্ড আউট করে দিন”— এ কোনও পরুষবাক্য নয়, আবার সুললিতও নয়। কিন্তু এ ভাষায় দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার ম্যাজিক আছে। বা, নির্বাচনী জনসভায় তিনি যখন প্রশ্ন তোলেন, “খেলা হবে?”, শব্দবন্ধটির অর্থ শ্রোতার কাছে পৌঁছে যায় এবং তাতে সম্মতিও মেলে। কেবলমাত্র দলীয় অথবা সাংগঠনিক স্তরে নয়, ভাষা ব্যবহারের কৌশলেও তিনি বিরোধী মহলের সমস্ত নেতানেত্রীর চেয়ে এগিয়ে।
শিবাশিস দত্ত
কলকাতা-৮৪
গিরগিটি কেন
বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর (‘গিরগিটিদিগকে কেহ চাহে না’, ৪-৫) নিবন্ধটি সাধুভাষায় রচিত। কিন্তু বাংলা সাধুভাষার সঙ্গে গিরগিটি শব্দটি ঠিক মানায় না। তিনি যদি গিরগিটির বদলে ‘কৃকলাস’ শব্দটি ব্যবহার করতেন, তা হলে তা অধিক মানানসই ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হত। যদিও ‘কৃকলাস’ শব্দটি সকলের কাছে সুবোধ্য নয়।
চতুর্ভুজ দাস
রঘুদেববাটি, হাওড়া
দুধ নষ্ট
‘দুধে স্নান’ (৪-৫) প্রতিবেদনটি পাঠ করে বিস্মিত এবং স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছি। পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী বিধানসভা ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর জয় লাভের জন্য পূর্বস্থলী-১ ব্লকের অন্তর্গত শ্রীরাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা তৃণমূল কর্মী দীপক ঘোষ জলের পরিবর্তে কুড়ি কেজি দুধ দিয়ে স্নান করে তৃপ্তি লাভ করলেন, সেই সঙ্গে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। আমাদের এই রাজ্য, যেখানে হাজার হাজার মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন, যাঁদের খাদ্যতালিকায় দুধের উপস্থিতি কদাচিৎ ঘটে, হাজার হাজার শিশু অপুষ্টির শিকার, সেই রকম রাজ্যের এক জন অধিবাসী কী করে দুধ নষ্ট করে স্নান করতে পারেন? বর্তমান বাজার দরে কুড়ি কেজি দুধের দাম প্রায় ৮০০ টাকা। ওই মূল্যের দুধ অনাহারক্লিষ্ট, অপুষ্ট শিশুদের না দিয়ে স্নান করে নষ্ট করার পক্ষে কোনও যুক্তি থাকতে পারে না। দীপকবাবু অন্তত একটি দরিদ্র, অপুষ্টিযুক্ত শিশুর জন্য দুধ জোগানের ব্যবস্থা করলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতেন।
হারান ভৌমিক
বীরনগর, নদিয়া
হুমকি
নন্দীগ্রামের ভোটের ফল নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে, তার শেষ কোথায়? ইতিমধ্যে যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে গণনায় কারচুপির আভাস মিলছে। যিনি জিতলেন সেই প্রার্থী, শুভেন্দু অধিকারী সারা দিন ঘরে বন্দি থাকলেন। মাঝরাতে লোক মারফত নিজের জয়ের সার্টিফিকেট আনিয়েছেন। কেন এত রাখঢাক? এ সত্য পরে নিশ্চয়ই উদ্ঘাটিত হবে। কিন্তু ভবিষ্যতে কোনও রিটার্নিং অফিসার সাহস করে ভোটের কাজে যাবেন কি! যা জানা যাচ্ছে, তাঁকে নাকি খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কোনও মতেই যেন পুনর্গণনায় রাজি না হন। এ তো হিন্দি ছবিতে দেখি। এই নিরীহ সরকারি অফিসারের দোষ কোথায়? সত্যি যদি আদালতে কেস ওঠে, তখন তো রিটার্নিং অফিসার হিসেবে সব দোষ ওঁকে ঘাড় পেতে নিতে হবে! সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা ভীত। কারণ, আমাদের বাড়িতেও সরকারি কর্মচারী আছেন।
চন্দন চক্রবর্তী
কলকাতা-৬৩