জাহাঙ্গির। ছবি: সংগৃহীত
‘ভবানন্দ এবং’ (২৭-১২) শীর্ষক চিঠিতে, পত্রলেখক জানিয়েছেন, বাংলার সুবেদার পদ থেকে মানসিংহকে সরিয়ে জাহাঙ্গির কুতুবুদ্দিন খাঁকে বহাল করেন শের আফগানের বেগম নুরজাহানকে করায়ত্ত করার জন্য। কিন্তু সত্যিই কি জাহাঙ্গির মেহেরুন্নিসা (পরবর্তী কালে নুরজাহান)-এর প্রণয়াসক্ত ছিলেন এবং এ কারণেই শের আফগানকে হত্যা করেছিলেন?
টমাস রো, এডওয়ার্ড থেরি, উইলিয়াম ফিজ, ক্যাপ্টেন হকিন্স, মেনুচি মুঘল শাসনকালে বিভিন্ন সময়ে ভারতে আসেন। এঁরা তৎকালীন সম্রাট বা তাঁর পরিবার সম্পর্কে যে-সব তথ্য দিয়েছেন, তাতে অনেক কুৎসা থাকলেও, কোথাও মেহেরুন্নিসার প্রতি জাহাঙ্গিরের প্রণয়াসক্তি বা জাহাঙ্গিরের শের আফগান-হত্যা সম্পর্কে কোনও উল্লেখ নেই। সম্রাট নিজেও তাঁর আত্মজীবনী ‘তুজুক-ই-জাহাঙ্গিরী’তে নিজের অনেক দোষের কথা উল্লেখ করলেও, মেহেরুন্নিসার প্রতি প্রণয়াসক্তি বা শের আফগান-হত্যা প্রসঙ্গের কোনও উল্লেখ নেই। এমনকি সমসাময়িক কয়েকটি ফারসি ইতিহাস ‘মা-আসেরে-জাহাঙ্গিরী’, ‘পান্দ-নামায়ে-জাহাঙ্গিরী’, ‘তারিখ-ই-সেলিমশাহী’তেও ঘটনা দুটির কোনও উল্লেখ নেই।
প্রশ্ন উঠতে পারে, তা হলে এ কাহিনি কী ভাবে ইতিহাসের পাতায় শিকড় গেড়ে বসল? ইতিহাস ঘাঁটলে এই ঘটনার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় কাফি খাঁর ‘মুন্তাখাবুল লোবাব’ গ্রন্থে। জাহাঙ্গিরের সমসাময়িক কোনও ইতিহাসবিদ যে-ঘটনার কথা উল্লেখ করলেন না, সে ঘটনা আওরঙ্গজেবের আমলে কাফি খাঁ কী ভাবে জানলেন? কারণ ‘ঘটনা’টির বয়স তখন প্রায় ৭০ বছর।
এই কাফি খাঁ ছিলেন মুঘল পরিবার বিদ্বেষী। তাঁর ভ্ৰষ্টাচারে রুষ্ট হয়ে আওরঙ্গজেব তাঁকে মুঘল পরিবার নিয়ে ইতিহাস লিখতে নিষেধ করলে, তিনি প্রকৃত নাম হাসিম খাঁ-র পরিবর্তে, কাফি খাঁ ছদ্মনামে লিখতে শুরু করেন। পরে ইতিহাসবিদ এলফিনস্টোন, কাফি খাঁকে অনুসরণ করে ইতিহাস রচনা করায়, এই বিদ্বেষমূলক গল্পটি সংক্রামিত হয়েছে সাধারণের মধ্যেও।
প্রকৃত ইতিহাস হল, শাহজাদা খুসরুর পক্ষাবলম্বী মানসিংহ যদি সাম্রাজ্যের কোনও ক্ষতি করে বসেন, তাই তাঁকে এবং তাঁর বিরোধী (পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সময়) শের আফগানকে বাংলায় রাখা সমীচীন মনে না করে, জাহাঙ্গির তাঁদের দিল্লিতে ফেরত আসার ফরমান দিয়ে ভাই কুতুবুদ্দিনকে পাঠান। শের আফগান জানতেন, সম্রাট তাঁর প্রতি প্রীত নন। তাই কুতুবুদ্দিনের মুখে দিল্লি যাওয়ার কথা শুনেই ভাবলেন, এটা তাঁকে বিপদে ফেলার কৌশল। ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি কুতুবুদ্দিনকে হত্যা করেন। এক জন কাশ্মীরি সৈন্য এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে শের আফগানকে হত্যা করেন। এ ঘটনার বিবরণ ইতিহাসে আছে। একই সময়ে সংঘটিত দুটি হত্যাই হয়েছিল বর্ধমানে। শহরের পশ্চিম প্রান্তে এই দুই নিহতেরই সমাধি রয়েছে একই জায়গায় পাশাপাশি।
স্বামীর মৃত্যুর পর মেহেরুন্নিসাকে দিল্লি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জাহাঙ্গির- জননীর কাছে সহচরী হিসাবে চার বছর কাটানোর পর, নওরোজের এক উৎসবে সম্রাট প্রথম মেহেরুন্নিসাকে দেখেন। তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বিবাহ করেন। প্রশ্নটা এখানেই— যে সম্রাট তাঁকে বিবাহ করার জন্য তাঁর স্বামীকে হত্যা করলেন, তিনি কী কারণে চার বছর অপেক্ষা করলেন? সেই সময় ভূ-ভারতে এমন কোনও শক্তি ছিল, যা সম্রাটকে নিরস্ত করতে পারত?
ইতিহাসবিদ নিজামুদ্দিনের ‘তাবকাত-ই-আকবরী’ গ্রন্থে জাহাঙ্গিরের বাল্য ও যৌবনের কাহিনি লিপিবদ্ধ থাকলেও, সেখানে কোথাও জাহাঙ্গির-মেহেরুন্নিসার প্রণয়ের কথা উল্লিখিত নেই।
শুধুমাত্র এক জন ভণ্ড ইতিহাসবিদের বিদ্বেষপ্রসূত কল্পনার জন্য ইতিহাসের পাতায় চিরকালের জন্য কলঙ্কিত হয়ে গেলেন সম্রাট জাহাঙ্গির।
প্রদীপনারায়ণ রায়
শক্তিপুর, মুর্শিদাবাদ
সরকারি শিক্ষা
পশ্চিমবঙ্গের সরকার পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থার একটি বড় ত্রুটি তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই এই পত্র। সরকার পরিচালিত, সরকার পোষিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি আজ শিক্ষকহীনতায় ভুগছে। বহু বিদ্যালয় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়েছে অথচ উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগে এক জন শিক্ষক-শিক্ষিকাও নিযুক্ত হননি। পত্রলেখকের বিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে মাত্র ১ জন শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন, যদিও বিদ্যালয়টি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়েছিল ২০১২ সালে। (২ জন শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছিলেন, ১ জন অন্যত্র চলে গিয়েছেন)। মাধ্যমিক স্তরে অঙ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষক কেউ নেই। পত্রলেখকের বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক বিভাগে ৫টি শিক্ষকপদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগে ২টি শিক্ষকপদ শূন্য। অথচ যোগ্য তরতাজা যুবক-যুবতীরা কর্মহীনতায় ভুগছে। এই চিত্র পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র।
২০১৬ সালের পরে কোনও পরীক্ষাই হয়নি। ২০১৩-র পর ২০১৬-তে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়। শিক্ষক নিয়োগের প্রাথমিক পর্বটি (Prior permission) দীর্ঘ দিন ধরে অজানা কারণে বিদ্যালয় পরিদর্শক মহাশয়ের দফতরে ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বারে বারে তাগাদা দিয়েও কোনও সদর্থক উত্তর পাচ্ছেন না। ফলে সাধারণের শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যস্ত। সবাই জানেন, প্রধানত নিম্নবিত্ত শ্রেণির অভিভাবকেরাই এখনও তাঁদের সন্তানদের সরকারি বা সরকার পোষিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠান। এক জন অভিভাবক যখন তাঁর সন্তানের কাছে শুনবেন, আটটি পিরিয়ডের মধ্যে চার-পাঁচটি ফাঁকা গিয়েছে, বা নির্ধারিত বিষয়ের বদলে অন্য বিষয় পড়ানো হয়েছে, তখন তিনি কি তাঁর নিজের আত্মীয়দের সরকারি প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে ভর্তি করানোর উপদেশ দেবেন?
অন্য একটি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকহীন শ্রেণিঘরে বসে থাকবে আর শিক্ষকরা অবস্থানে বসবেন, তা নাকি শিক্ষা বিভাগ মেনে নেবে না। বহু দিন ধরে যে শ্রেণিকক্ষগুলি শিক্ষক অভাবে শূন্য পড়ে থাকল, তা তো অনশনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য নয়, তার দায় কার?
বেহাল শিক্ষাব্যবস্থার নিরসনে এক জন সামান্য প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিম্নোক্ত প্রস্তাবগুলি পেশ করছি। (প্রস্তাবগুলো শিক্ষা দফতরে পেশ করা হয়েছিল কিন্তু প্রাপ্তিস্বীকারও করা হয়নি)।
১) অবিলম্বে স্থায়ী ভিত্তিতে যে কোনও মূল্যে স্বচ্ছতার সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ শুরু হোক। প্রয়োজনে মামলাকারীদের সঙ্গে বিচারালয়ের বাইরে সমঝোতা হোক। বছরে দু’টি পরীক্ষা নেওয়া হোক।
২) পরিদর্শকের সংখ্যা বাড়িয়ে শিক্ষাবিষয়ক পরিদর্শন বছরে অন্তত তিন বার করা হোক।
৩) যে বিদ্যালয় পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া সব ছাত্রছাত্রীকে কোনও বছর নষ্ট না করে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ করতে পারবে, সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিশেষ উৎসাহভাতা দেওয়া হোক।
৪) বিদ্যালয়ে ছুটির অত্যাচার কমিয়ে প্রকৃত শিক্ষণ দিবস বাড়ানো হোক।
৫) শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিক্ষাবহির্ভূত কাজে নিযুক্ত করা বন্ধ হোক।
শোভনাভ ভট্টাচার্য
প্রধান শিক্ষক, আক্রমপুর হাই স্কুল, উত্তর ২৪ পরগনা
স্পঞ্জ আয়রন
পুরুলিয়া জেলার গড়পঞ্চকোট পাহাড়, পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে। কিন্তু সেই সৌন্দর্য আজ ম্লান হয়ে পড়ছে পাহাড়ের গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলির দূষণে। বিস্তীর্ণ জঙ্গল এলাকা জুড়ে গাছপালা সব কালো হয়ে গিয়েছে। সব সময় আকাশ যেন কালো মেঘে ঢেকে থাকে। বাতাস ভারী হয়ে থাকে কয়লার গুঁড়োয়, লোহার গুঁড়োয়। পুকুরের জল কালো হয়ে গিয়েছে। স্নান করলে চর্মরোগও দেখা দিচ্ছে। চাষবাষের ক্ষতি হচ্ছে। গবাদি পশুরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তাপস কুমার দাস
বার্নপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।