Health Insurance

সম্পাদক সমীপেষু: মধ্যবিত্তের স্বাস্থ্য

অতিমারির সঙ্গে লড়াই আরও বেশ কিছু দিন চলবে। শুধুমাত্র নোট ছাপিয়ে, দান-খয়রাতি করে গেলে ভবিষ্যৎ সামাল দেওয়া যাবে কি?

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ০০:১৫
Share:

ছবি: সংগৃহীত

‘সমাজতন্ত্রের ওষুধই ভরসা?’ শীর্ষক নিবন্ধে (২৪-৬) অতনু বিশ্বাস যথার্থ বলেছেন, স্বনিযুক্ত এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের অসংখ্য কাজ-হারানো মানুষের এখন সরকারি অনুদানই ভরসা। কোনও দেশই প্রস্তুত ছিল না ‘শতাব্দীর ভয়ঙ্করতম সঙ্কট’-এর মোকাবিলার জন্য। তবে কিছু দেশ জনস্বাস্থ্যকে অবহেলা করে অর্থনীতিকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে, এ রকম ভাবনা অমূলক। ভারতের মতো দেশগুলিতে জনস্বাস্থ্য, সর্বসাধারণের চিকিৎসা দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলিত।

Advertisement

অতিমারির সঙ্গে লড়াই আরও বেশ কিছু দিন চলবে। শুধুমাত্র নোট ছাপিয়ে, দান-খয়রাতি করে গেলে ভবিষ্যৎ সামাল দেওয়া যাবে কি? কিছু বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে মানুষকে কাজে যেতে দেওয়া ঠিক সিদ্ধান্ত। রাষ্ট্র মানুষকে কাজ দেওয়ার এবং স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ করুক। এ প্রসঙ্গে আমার দু’টি নিবেদন: এক, এ রাজ্যে শ্রম দফতরের অধীনে কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্র আছে, যা প্ৰায় অকেজো। ‘যুবশ্রী’ নামে বেকারভাতা শুধু দেওয়া হয়। এই কেন্দ্রগুলিকে সক্রিয় করা হোক। দুই, ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য’ এখনও অলীক কল্পনা। বেসরকারি চিকিৎসা মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। অধিকাংশ মধ্যবিত্ত রাজ্যের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের আওতায়ও পড়েন না। রাজনীতির টানাপড়েনে কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত’-ও তাঁদের অধরা। সকলের জন্য স্বাস্থ্যবিমা বাধ্যতামূলক করা হোক।

শ্যামল মুখোপাধ্যায়, ঘটকপাড়া, বাঁকুড়া

Advertisement

সমাজতন্ত্র

অতনু বিশ্বাস বলেছেন, বিপর্যয় কালে ধনতন্ত্রের উপাসকরাও খানিকটা সমাজতান্ত্রিক ওষুধ গিলতে বাধ্য হয়েছেন। করোনা-বিধ্বস্ত ধনতান্ত্রিক দেশগুলির মানুষ বুঝতে পারছেন, তীব্র বৈষম্যমূলক সমাজে বিপর্যয় ঘটলে কেউই ভাল থাকতে পারে না। এ দেশে কয়েক দশক ধরে ধনীদের করভার লাঘব করে সাধারণ মানুষের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর ক্রমশ বেড়েছে। চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী ও শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে সংগঠিত শ্রমিকদের ঐক্য ভাঙা হয়েছে।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহণ প্রভৃতি পরিষেবার ভার পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। অর্ধেকের বেশি মানুষের কাজের নিরাপত্তা নেই, ন্যূনতম উপার্জনেরও নিশ্চয়তা নেই। এই অতিমারি সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি কাজ হারিয়েছেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা। এখন গরিব মানুষ এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি সরকার, রাজনৈতিক দলগুলি দরদ দেখাচ্ছে।

যাঁরা এত দিন সব ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে বাজার অর্থনীতির হাতে পরিষেবার ভার ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন, এখন তাঁরাও চিকিৎসায় সরকারি পরিষেবা বৃদ্ধির কথা বলছেন। এই বাজার অর্থনীতির দাপটেই এখনও আমাদের দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ জিডিপি-র মাত্র ১.২৯ শতাংশ। শ্রীলঙ্কা ও তাইল্যান্ডও এর থেকে বেশি খরচ করে।

কেন্দ্রীয় সরকার যে দু’টি আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, শুনতে অনেক মনে হলেও তা জাতীয় আয়ের মাত্র ২ শতাংশ। সুতরাং দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হলে সাধারণ মানুষের জোর বাড়াতেই হবে, তা যে কোনও নীতিতেই হোক। যে দেশে এখন ৪০ শতাংশ সম্পদ মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে আছে, সেখানে সমাজতান্ত্রিক ওষুধ ছাড়া গতি নেই।

সন্দীপ সিংহ, হরিপাল, হুগলি

সত্য বলার শর্ত

সেমন্তী ঘোষ যথার্থই বলেছেন (বিরোধিতা = ‘সিডিশন’, ৩০-৬), ‘‘জরুরি অবস্থা কেন, গণতন্ত্র দিয়েই আজ গণতন্ত্রকে স্তব্ধ করা যায়।’’ বস্তুত এই গণতান্ত্রিক আবহেই রচিত হচ্ছে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪-এ ধারা, ইউএপিএ। রচিত হয়েছে মিসা, এনএসএ, টাডা, পোটা-র মতো আইন। রাষ্ট্রের সমালোচনা করলেই এই আইনগুলিকে কাজে লাগিয়ে গ্রেফতার করা যায়। গ্রেফতারের সময়সীমাকে ইচ্ছামতো প্রলম্বিতও করা যায়। এনআরসি-সিএএ-এনপিআর যে হেতু ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থসিদ্ধি করার হাতিয়ার, তাই তার বিরুদ্ধে সমস্ত কার্যকলাপই রাষ্ট্রদ্রোহিতা। আর দেশপ্রেমিককে কী করে রাষ্ট্রদ্রোহী বানাতে হয়, তা তো রাষ্ট্রের অজানা নয়। তাই কাফিল খান, আনন্দ তেলতুম্বডে, গৌতম নওলাখা, মাসরাত জাহরা, সাফুরা জারগার, মিরান হায়দরদের এই পরিণতি। আরও শোচনীয় পরিণতি প্রত্যক্ষ করেছি নরেন্দ্র দাভোলকর, গোবিন্দ পানসারে, এম এম কালবুর্গি, গৌরী লঙ্কেশদের ক্ষেত্রে।

সেই কবে সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘সত্য ও মিথ্যা’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘‘আজ এই দুর্ভাগা রাজ্যে সত্য বলিবার জো নাই, সত্য লিখিবার পথ নাই – তাহা সিডিশন। অথচ দেখিতে পাই, বড়লাট হইতে শুরু করিয়া কনস্টেবল পর্যন্ত সবাই বলিতেছেন – সত্যকে তাঁহারা বাধা দেন না, ন্যায়সঙ্গত সমালোচনা – এমনকি, তীব্র ও কটু হইলেও নিষেধ করেন না। তবে বক্তৃতা বা লেখা এমন হওয়া চাই, যাহাতে গভর্নমেন্টের বিরুদ্ধে লোকের ক্ষোভ না জন্মায়, ক্রোধের উদয় না হয়, চিত্তের কোনপ্রকার চাঞ্চল্যের লক্ষণ না দেখা দেয় – এমনই। অর্থাৎ, অত্যাচার-অবিচারের কাহিনী এমন করিয়া বলা চাই, যাহাতে প্রজাপুঞ্জের চিত্ত আনন্দে আপ্লুত হইয়া উঠে, অন্যায়ের বর্ণনায় প্রেমে বিগলিত হইয়া পড়ে এবং দেশের দুঃখ-দৈন্যের ঘটনা পড়িয়া দেহ-মন যেন তাহাদের একেবারে স্নিগ্ধ হইয়া যায়! ঠিক এমনটি না ঘটিলেই তাহা রাজ-বিদ্রোহ।’’

গৌরীশঙ্কর দাস, সাঁজোয়াল, খড়্গপুর

সকলকে রেশন?

কেন্দ্র আরও পাঁচ মাস বিনামূল্যে রেশন দেবে বলে ঘোষণা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, কেন্দ্র এ রাজ্যের ৬.১ কোটি মানুষকে রেশন দিচ্ছে। এখানে ১০ কোটি মানুষ। বাকিদের দিকে তাকায়নি কেন্দ্র। তাঁর সরকার সকলকে রেশন দিচ্ছে। তাঁর আরও দাবি, দেশের ১৩০ কোটি জনগণের সকলকে যেন রেশন দেওয়া হয়।

এই দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত? রাজ্যে সকলকে রেশন দিতে গিয়ে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। রেশন যাঁদের দেওয়া হচ্ছে, তেমন বেশ কিছু পরিবারের মাসিক আয় পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা, বা তার বেশি। ফলে রেশনের চালের অপব্যবহার হচ্ছে। খোলা বাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ফড়ে কিংবা চালের দোকানদার কিনে নিচ্ছেন। তবুও কি সকলকে রেশন দিতেই হবে? এ তো সরকারি টাকার অপচয়। রেশন দ্রব্য এবং সরকারি ভর্তুকির সদ্ব্যবহার প্রয়োজন।

কৃষ্ণা পালুই, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

বাস্তব ছবি

সম্প্রতি পরিচালক সঞ্জয় পটেল-এর ‘ইউনিয়ন লিডার’ দেখলাম। ছবিটি গুজরাতের একটি কেমিক্যাল কারখানাকে কেন্দ্র করে। সেখানে শ্রমিকরা মান্ধাতার আমলের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন, যাতে অল্পবিস্তর গ্যাস লিক হওয়ায় সকলের শরীরেই ধীরে ধীরে বাসা বাঁধছে ক্যানসার। গল্পের মূলচরিত্র কর্মীদের সুপারভাইজ়ার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার দাবি জানান ম্যানেজমেন্টের কাছে। তিনি সারা দিন কারখানায় পরিশ্রমের পর যখন বাড়িতে রক্ত-মিশ্রিত প্রস্রাব করেন, হাসিমুখে সেই যন্ত্রণা লুকিয়ে রাখেন। ম্যানেজমেন্টের কাছে বার বার যন্ত্রপাতির পুনর্নির্মাণের দাবি জানানো হলেও কর্তৃপক্ষ টাকাপয়সা দিয়েই ব্যাপারটা রফা করতে চান, এমনকি এক সময় কারখানা বন্ধ করে দেন।

এই গল্পটি দেখার পর যদি নজরে পড়ে যায় ৩০ জুনের ঘটনা? সে দিন বিশাখাপত্তনমের একটি কারখানায় গ্যাস লিক হয়ে দু’জন মারা যান। তার আগে ১৩ জুন গুজরাতের একটি কারখানায় স্টোরেজ ট্যাঙ্ক-এর বিস্ফোরণে ১০ জন মারা যান। ভাতঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে!

প্রীতাঙ্ক ঘটক, কলকাতা-১৫৯

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement