গুরুদাস দাশগুপ্ত । —ফাইল চিত্র
সিপিআইয়ের নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত ১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি থেকে সংসদে ছিলেন বামেদের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর। কর্পোরেট দুর্নীতি এবং আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি ছিলেন ক্লান্তিহীন, একই সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলনকে এক ছাতার নীচে আনতে চেয়েছিলেন, যাতে রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে সমস্ত শ্রমিক জোটবদ্ধ হন। সে কারণেই অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কাউন্সিলের (এআইটিইউসি) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে, প্রায় একক ভাবে, স্বল্প-পরিচিত ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে একটি প্রধান বাহিনীতে রূপান্তরিত করতে পেরেছিলেন, এমনকি সিপিআইএম-এর ভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (সিআইটিইউ) সদস্য সংখ্যাও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে তিনি সংসদে হর্ষদ মেটা কেলেঙ্কারির কথা উত্থাপন করেন।
তিনি কংগ্রেস সদস্য রাম নিবাস মির্ধার নেতৃত্বে সিকিয়োরিটিজ় কেলেঙ্কারিতে জেপিসির সদস্য ছিলেন। তাঁর দলের সহকর্মীরা এখনও স্মরণ করেন, কমিটিতে আমলাদের প্রতি তাঁর জ্বলন্ত জিজ্ঞাসাবাদ। জেপিসির সিদ্ধান্তের প্রতিবেদনে গুরুদাস অসন্তুষ্ট হন, এমনকি কয়েক জন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে একটি বিকল্প প্রতিবেদনও লিখেছিলেন, যা সরকারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। প্রতিবেদনটি পরে একটি বই আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির তদন্তে থাকা পিসি চাকোর নেতৃত্বাধীন যৌথ সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। প্রথম বাম নেতা হিসেবে তিনিই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে ‘কর্তব্যে অব্যাহতি’র অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন এবং অবশেষে প্যানেলের প্রতিবেদনের সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায়, একটি দীর্ঘ মতবিরোধী নোটও দিয়েছিলেন। তাঁর প্রয়াণ ঘটল, কিন্তু তাঁর অসামান্য সংগ্রাম আমাদের মনে থাকবে ও প্রাণিত করবে।
অভিজিৎ রায়
জামশেদপুর
প্রতিষ্ঠার সাল
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে সুদেষ্ণা বসুর লেখাটিতে (‘বাঙালির সুর বেঁধে দিয়েছিলেন’, ২-১১) বলা হয়েছে, ‘‘...সনাতনপন্থী আদি ব্রাহ্ম সমাজ ভেঙে ১৮৭২ সালে কেশবচন্দ্র সেন প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্ম সমাজ’।’’ তথ্যটি ঠিক নয়। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কলিকাতা ব্রাহ্মসমাজের প্রথম অব্রাহ্মণ আচার্য ‘ব্রহ্মানন্দ’ কেশবচন্দ্র সেন কয়েকটি কারণে উক্ত সমাজ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বা উন্নতিশীল ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন ১৮৬৬ সালের ১১ নভেম্বর টাউন হলে, ব্রাহ্ম-প্রতিনিধি-সভার অধিবেশনে। এই সমাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কলিকাতা ব্রাহ্মসমাজের নতুন পরিচয় হয় আদি ব্রাহ্মসমাজ হিসেবে। ১৮৬৯ সালের ২২ অগস্ট দ্বারোদ্ঘাটন হয় ভারতবর্ষীয় ব্রহ্মমন্দির-এর। প্রসঙ্গত, ১৮৭২ সালে কেশবচন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভারত-আশ্রম, যাতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন সদ্য এমএ পাশ করা শাস্ত্রী উপাধিপ্রাপ্ত শিবনাথ ভট্টাচার্য, মতভেদের কারণে যাঁর নেতৃত্বে ১৮৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ। কেশবচন্দ্রের ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ পরিচিতি পায় নববিধান হিসেবে।
অরবিন্দ পুরকাইত
গোকর্ণী, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
রিভিউ নেওয়া
ভারত বনাম বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম টি টোয়েন্টি ম্যাচের শেষে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা হারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বললেন, ‘‘ভুল রিভিউ নিয়ে আমরা ম্যাচ হারলাম। পন্থ এখন অনেক ছোট, কখন কোথায় কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা বুঝতে ওর সময় লাগবে।’’ রোহিত নিজে তাঁর আউটের সময় ঠিক রিভিউ নিয়েছিলেন কী? বাংলাদেশের ফাস্ট বোলার শইফুলের বল রোহিতের ডান পায়ে হাঁটুর নীচে লেগেছিল, স্টাম্পের ভিতর ডান পা ছিল, আম্পায়ার আউট দিয়েছিলেন, তা সত্ত্বেও অভিজ্ঞ রোহিত কী ভাবে রিভিউ নিলেন? হারের মূল কারণ যদি শুধু ভুল রিভিউ নেওয়া হয়ে থাকে, তা হলে রোহিতের উচিত ছিল ঋষভের সঙ্গে নিজেকেও দায়ী করা।
প্রণয় ঘোষ
কালনা, পূর্ব বর্ধমান
বহুরূপী
কলকাতার কড়চা-য় ‘তুমি তো মানুষ’ স্তম্ভে (৪-১১) এক বহুরূপীর কথা পড়লাম। বহুরূপী সাজা এখন ক্ষয়িষ্ণু শিল্প। এক কালে বীরভূম, হুগলি, বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের অনেক দরিদ্র শ্রেণির মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে দিনের শিল্প এখন যেন ভিক্ষায় পরিণত হয়েছে। ক্বচিৎ রেলের কামরায়, বাজারের মোড়ে, অথবা পাড়ার গলিতে এঁদের দেখা মেলে। এখন বিয়েবাড়িতে বা অন্নপ্রাশনের দিনে ‘চার্লি চ্যাপলিন’ সাজিয়ে আনন্দ দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়েছে। বহুরূপী শিল্পে এই আধুনিকতার ছোঁয়াচ লাগলেও মূল শিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটেনি। যে প্রসঙ্গে এত কথা লিখলাম, সেই দীপঙ্কর হালদার-এর আপন দাদু বিখ্যাত বহুরূপী কালীপদ পালের সংক্ষিপ্ত আট/নয় পাতার জীবনী লিপিবদ্ধ আছে
ড. আদিত্য মুখোপাধ্যায়ের ‘বাংলার বহুরূপী’ নামক গ্রন্থে (বলাকা, ২০০৮) ১২৩ থেকে ১৩১ পাতায়। এই অংশেই বহুরূপী দীপঙ্কর হালদার ও তাঁর সহোদর ভ্রাতা বহুরূপী শুভঙ্কর হালদারের উল্লেখ আছে। একটি কথা। গ্রামটির নাম জোড়শম্ভু নয়, জ্যোৎশম্ভু।
রঞ্জিত কুমার দাস
বালি, হাওড়া
বলেন্দ্রনাথ
বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর চর্চা (‘স্বল্পায়ু’, কলকাতার কড়চা, ৩-১১) প্রসঙ্গে একটি সংযোজনের জন্য এই পত্র। বাগনান কলেজের অধ্যক্ষ (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য পড়াতেন) শ্যামসুন্দর মাইতি এক সময় বলেন্দ্র চর্চা করেছেন। তাঁর সম্পাদনায় ‘বলেন্দ্র কবিতা সমগ্র’ প্রকাশিত হয়েছে ১৩৮৪ বঙ্গাব্দে, ‘বঙ্গভারতী গ্রন্থালয়’ কুলগাছিয়া, হাওড়া থেকে। ভূমিকায় বলেন্দ্রনাথ সম্পর্কে আলোচনা ছাড়া রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেকের মন্তব্য যুক্ত হয়েছে। রয়েছে বলেন্দ্র-পত্নী সাহানা দেবীর কথা। অপর সম্পাদিত গ্রন্থ ‘বলেন্দ্র সমালোচনা সমগ্র’ গ্রন্থে রয়েছে সাহিত্য-ভাষা-চিত্রকলা-স্থাপত্য-ভাস্কর্য-সঙ্গীত-নৃত্য ও প্রসাধন সম্পর্কিত প্রবন্ধ। এ ছাড়া, শ্যামসুন্দর প্রণীত ‘বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর’ গ্রন্থটি বলেন্দ্রনাথের জীবন ও সাধনা সম্পর্কিত গবেষণা গ্রন্থ। ৪২টি আলোকচিত্র রয়েছে। অধুনালুপ্ত হাওড়া জেলার ‘বঙ্গভারতী গ্রন্থালয়’ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, যা আজ ইতিহাস।
শ্যামল বেরা
আন্দুল, হাওড়া
পশু ও মানুষ
‘নিষেধ উড়িয়ে ছবি, দাঁতাল মারল যুবককে’ (৪-১১) শীর্ষক খবর পড়ে মর্মাহত হলাম। মানুষকে বুঝতে হবে, পশুদের আশ্রয় দখল করে সে সভ্যতা পত্তন করেছে, তার ফলে পশুদের উগ্র প্রতিক্রিয়া তাকে সহ্য করতে হবে। কী ভাবে মানুষ ও পশুর সহাবস্থান হবে, সে সমস্যা নিরসনের চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে এই সচেতনতা গড়ে তুলতেই হবে, পশুকে অযথা বিরক্ত করা যাবে না। একে তাদের থাকার জায়গা আমরা কেড়ে নিয়েছি, তাদের স্বাভাবিক খাবার পাওয়ার সুযোগ সীমিত করে দিয়েছি, আমাদের রেলগাড়ি বা অন্যান্য যান তাদের নিয়মিত পিষে দিচ্ছে, তার পর তারা যদি দেখে তাদের শান্তিটুকু বারে বারে নষ্ট করা হচ্ছে, তখন তেড়ে আসবেই, আক্রমণ করবেই। জানতে হবে, বন্যপ্রাণীর ছবি তোলার সময় তাদের বিরক্ত না করাও এক ভাল ফোটোগ্রাফারকে শিখতে হয়। যখন হাতি তেড়ে আসছে, তখন প্রথমে ছুটে পালিয়ে, আবার ছবি তুলতে শুরু করা উচিত হয়নি।
কেদারনাথ সাহা
কলকাতা-৩৩
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।