Education system

সম্পাদক সমীপেষু: শিক্ষার নিম্ন মান

স্বাধীনতার পর শিক্ষার প্রসার অবশ্যই বেড়েছে। বহু বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। শিক্ষাগ্রহণের হারও যথেষ্ট বেড়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্ণ হওয়ার পরেও শিক্ষার হার ষোলো আনা পূর্ণ আজও হয়নি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:০৩
Share:

স্বাধীনতার আগে শিক্ষার সার্বিক হার পীড়াদায়ক ছিল। ভাবা হয়েছিল, স্বাধীনতার পর সেই পীড়া দূর হবে। ফাইল চিত্র।

‘চিন্তাহীন, তাই নিশ্চিন্ত’ (২৩-১) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি বেশ বলিষ্ঠ। শিক্ষার ঘাটতি শিক্ষকরা মিটিয়ে দেবেন, এমন ভাবনা পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর মনে আসা উচিত নয়। এমনিতেই প্রতিনিয়ত শিক্ষা-ঘাটতি বেড়েই চলেছে। পশ্চিমবঙ্গে দিন-দিন শিক্ষাব্যবস্থার দৈন্য ধরা পড়ছে। স্বাধীনতার আগে শিক্ষার সার্বিক হার পীড়াদায়ক ছিল। ভাবা হয়েছিল, স্বাধীনতার পর সেই পীড়া দূর হবে। স্বাধীনতার পর শিক্ষার প্রসার অবশ্যই বেড়েছে। বহু বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। শিক্ষাগ্রহণের হারও যথেষ্ট বেড়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্ণ হওয়ার পরেও শিক্ষার হার ষোলো আনা পূর্ণ আজও হয়নি। বরং জনসংখ্যার হার যতটা বেড়েছে, শিক্ষার হার সেই অনুপাতে ততটা বাড়েনি।

Advertisement

সদ্য প্রকাশিত ‘এএসইআর ২০২২’ বা অ্যানুয়াল স্টেটাস অব এডুকেশন রিপোর্ট ২০২২ বলেছে, কোভিডকালের পর স্কুলে ভর্তি বেড়েছে, লেখাপড়ার মান বেড়েছে ইত্যাদি। এ দিকে এডুকেশন রিপোর্টের ভিতরে রয়েছে হাড় হিম করা সমীক্ষার খবরও। এই সংবাদপত্রেই সেই সমীক্ষার বৃত্তান্ত প্রকাশিত হয়েছে (সরকারি স্কুলে ভর্তি-হার ভাল, চিন্তা শেখার বহরেই, ১৯-১)। এটি অসরকারি সংস্থা ‘প্রথম’-এর বার্ষিক রিপোর্ট। সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে, বহু পড়ুয়া রিডিং পড়তে পারে না। তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের ৩২.৬ শতাংশ মাত্র ফেলে আসা ক্লাস দ্বিতীয় শ্রেণির বই গড়গড়িয়ে পড়তে পারে। প্রাথমিকের পড়ুয়াদের মাত্র ৩২.৪ শতাংশ বিয়োগ করতে পারে। এবং সমীক্ষা থেকে স্পষ্ট, অন্য সব রাজ্যের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গেই টিউশন-নির্ভরতা বেড়েছে। ৭৪.২ শতাংশ ছাত্রছাত্রী টিউশন নির্ভর। অন্য দিকে, রাজ্য সরকার প্রদত্ত বহু সুবিধাদি প্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও ৩১.৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী স্কুলে ভর্তি হয়েও স্কুলে যায় না। বোঝা যায়, শিক্ষা আজও অবহেলার শিকার। অথচ, রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলো থেকেই মসৃণ ভাবে পড়া শিখে, নামতা শিখে, অঙ্ক কষা শিখে পড়ুয়াদের হাই স্কুলে ভর্তি হওয়া উচিত। সেই ভাবে পড়ুয়াদের তৈরি করে দেওয়া উচিত বুনিয়াদি স্কুলগুলোর। কিন্তু তা হয় না। হাই স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর দেখা যায় বহু পড়ুয়া, হাই স্কুলে পড়ার ন্যূনতম মানটুকুও প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নিয়ে যায় না। এর জন্য প্রাথমিক স্কুলগুলোই দায়ী। রাজ্যের শিক্ষা দফতরের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। শিক্ষাব্যবস্থাকে সচল রাখতে অর্থ ব্যয় হবে, আবার প্রচুর অর্থ ব্যয়েও শিক্ষাব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ থাকবে, এই ব্যবস্থা চলতে পারে না।

সব বিষয়ে রাজ্য সরকারকে দোষারোপ করা উচিত নয়। এক শ্রেণির শিক্ষকের গয়ংগচ্ছ মনোভাবও প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার এই দুরবস্থার কারণ। অনেক অভিভাবকও সন্তানের পড়াশোনার দিকে তাকান না। সব দোষ শিক্ষকদের ঘাড়ে চাপিয়ে উদাসীন থাকেন।

Advertisement

শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক, শিক্ষার সঙ্গে জড়িত পদাধিকারী, সকলকেই শিক্ষার এই চরম দুরবস্থার দায় নিতে হবে।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়, এক্তেশ্বর, বাঁকুড়া

ক্যামেরার মোহ

শ্রীদীপের ‘নিজেই দৃশ্য, নিজেই দর্শক’ (২১-১) শীর্ষক প্রবন্ধটি বাড়ির বারান্দায় বসে পড়তে পড়তে মাঝেমধ্যেই চোখ চলে যাচ্ছিল উল্টো দিকের দেওয়ালে টাঙানো, কিছুটা বিবর্ণ, হলদেটে সাদা-কালো ও ফ্রেমে বাঁধানো একটা ছবির দিকে। প্রায় ৬৫ বছরের পুরনো ছবিটিতে শায়িত এক মৃত ব্যক্তিকে ঘিরে বসে থাকা ও দাঁড়ানো অবস্থায় বেশ কিছু মানুষ দৃশ্যমান। ছবির মৃত ব্যক্তি এবং তাঁকে ঘিরে থাকা মানুষগুলোর মধ্যে অনেকেই আমার রক্ত সম্পর্কিত পূর্বসূরি। কেউ কেউ নিছকই পরিচিতজন। প্রবন্ধে আলোচিত ‘সেলফি জেনারেশন’-এ অবস্থান করেও, ফ্রেমবন্দি এক টুকরো মহার্ঘ অতীতের মুখোমুখি হই প্রতি দিন।

কাকতালীয় কি না জানি না, তবে ওই একই দিনে ব্র্যান্ডেড সালোঁর স্থানীয় শাখায় অপেক্ষা করার সময় চোখে পড়েছিল, এক তরুণী নিজের মুঠোফোনে তাঁর কেশদামের সৌন্দর্যায়ন প্রণালীর প্রতিটি পর্যায়ের সেলফি তুলে তৎক্ষণাৎ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করছেন। এ ভাবে প্রতি মুহূর্তে নিজেকে জাহির করা কিংবা নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার প্রবণতা, ক্রমেই আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। মুঠোফোনে নিজস্বী তোলার প্রেক্ষাপট হোটেল-রেস্তরাঁ, পুজোমণ্ডপ, বিয়েবাড়ি থেকে শুরু করে রেললাইন, ব্রিজ, বাঘ-সিংহের খাঁচা, যা কিছু হতে পারে। মুহূর্তে আন্তর্জালে ছড়িয়ে দেওয়া সে সব ছবিতে লোকের সাড়া পেলে ভাল, না পেলে নতুন কোনও প্রেক্ষাপটে নিজস্বীর আত্মপ্রকাশ। এর ফলে তরুণ সমাজের মধ্যে দেখা দিচ্ছে আত্মপরিচয়ের সঙ্কট।

সেলফির এই নেশাকে হাতিয়ার করে মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোও বদলে নিয়েছে তাদের বিপণন কৌশল। সেলফি ক্যামেরা আর মেগাপিক্সেলের মোহে ধরা দিচ্ছেন ক্রেতারা। মনে পড়ে, বহু বছর আগে দাদার বিয়েতে অ্যানালগ এসএলআর ক্যামেরায় ছবি তুলতে গিয়ে, বিয়েবাড়িতে ‘ক্যামেরা ম্যান’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছিলাম। বর্তমানে ডিজিটাল এসএলআর ব্যবহার করলেও, সেই তকমা জোটে না। কারণ হাতে হাতে মোবাইল ক্যামেরা আর সকলেই ‘ক্যামেরা ম্যান’। যদিও ক্যামেরায় ছবি তোলা আর মোবাইলের ক্যামেরায় ছবি তোলার মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে।

মুঠোফোনের সেলফি-র ভার্চুয়াল সম্প্রচারে আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই, যত ক্ষণ না পর্যন্ত তথাকথিত নেটিজ়েনদের কাছ থেকে প্রভূত সাড়া পাওয়া যায়। অন্য দিকে, আত্মপ্রচারের এই প্রবল ঢক্কানিনাদে আত্মমর্যাদা, আত্মসমীক্ষা, আত্মত্যাগ, আত্মনিয়ন্ত্রণ-এর মতো শব্দগুলো যেন ক্রমেই ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। সেলফি জেনারেশন-এর এই নিজস্বী নিমগ্নতাকে এক-এক সময় কেমন যেন দিশাহীন দেখায়।

অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

শ্মশানে ঘুষ

সোনার বাংলা যে আজ কাটমানির বাংলায় পর্যবসিত হয়েছে, আর তার হাত যে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রসারিত, তা টের পেলাম সম্প্রতি কেওড়াতলা শ্মশানে গিয়ে। কেওড়াতলা শ্মশান এখন চকচকে, ব্যবস্থাও খুব ভাল। ইলেক্ট্রিক চুল্লিতে পোড়াতে ‘সরকারি খরচ’ এই বাজারে খুব কম। রেট চার্টের বোর্ডের তলায় লেখা আছে— এ ছাড়া কাউকে কোনও টাকা দেবেন না। কিন্তু আমরা যখন অস্থিভস্ম নিতে গেলাম, কর্তব্যরত ডোম ভস্ম দেওয়ার পরে কিছু টাকা দাবি করলেন। মানুষের সবচেয়ে দুর্বলতম মুর্হূতে দরাদরির কোনও রকম মানসিকতা থাকে না। বকশিশ মানুষ খুশি হয়ে দেয়। আর সেটা যখন দাবি করা হয়, তখন সেটা হয় কাটমানি বা তোলা। শেষ পর্যন্ত দরাদরি করে ৫০০ টাকা দিয়ে আমরা অস্থিভস্মের ছাড়পত্র পেলাম। এই ব্যাপারটা নিশ্চয় কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। যদি তাঁরা অস্থিভস্মের জন্য একটা চার্জ লিখে দেন, তবে আমজনতাকে দরাদরির মতো অপ্রিয় পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় না।

পোপো মুখোপাধ্যায়, কলকাতা

দ্রুত পরীক্ষা

সম্প্রতি সমাপ্ত হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি এ, বি এসসি তৃতীয় বর্ষের অনার্সের পঞ্চম সিমেস্টারের অধিকাংশ পরীক্ষা (শেষ পরীক্ষাটি হবে ফেব্রুয়ারি ৯)। তিনটি অনার্স পরীক্ষা পর পর তিন দিন অনুষ্ঠিত হল, ১৭, ১৮ এবং ১৯ জানুয়ারি। যদি প্রতিটি পরীক্ষার মাঝে এক দিন করে বিরতি দেওয়া যেত, তবে তা অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত হত। কর্তৃপক্ষ হয়তো প্রশাসনিক সুবিধার কথা ভেবে দ্রুত গতিতে পরীক্ষা শেষ করতে চেয়েছেন, কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের এ রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন না করাই ভাল। শিক্ষার পরিবেশ ও পথ যত মসৃণ হবে, তত বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রী শিক্ষার সুযোগ নিতে আসবে।

সুরজিত কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement