Health sector

সম্পাদক সমীপেষু: বদলি এড়াতে

রোগী রেফার করার প্রবণতা আগেও ছিল এবং এখনও আছে। কিন্তু ২০১১ সালের আগে কলকাতার হাসপাতালে রেফার করা হত, কারণ তখন শহরতলি ও গ্রামীণ হাসপাতালের পরিকাঠামো বলতে কিছুই ছিল না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:১৮
Share:

বর্তমানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীকে রেফার করা হয় কারণ, জটিল চিকিৎসার দায় কেউই নিতে চান না। ফাইল চিত্র।

‘নন্দ ঘোষ’ (৩-১২) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে যে প্রশ্নগুলো সামনে এসেছে, সেগুলি রাজ্যের ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের মনের কথা। তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যেতেই পারে, ২০১১ সালের আগের ৩৪ বছর রাজ্যে গ্রাম ও শহরতলিতে সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো বলতে কিছুই ছিল না। সব ব্যবস্থাই ছিল কলকাতাকেন্দ্রিক, এবং সেখানেও পরিকাঠামোর যথেষ্ট অভাব ছিল। পরবর্তী ১১ বছরে প্রায় সারা রাজ্য জুড়েই ঝাঁ-চকচকে হাসপাতাল ভবন নির্মাণ এবং সঙ্গে মানুষের চিকিৎসার জন্যে নিখরচায় স্বাস্থ্য বিমা— এগুলি তৃণমূল সরকারের উল্লেখযোগ্য অবদান, তা মানতেই হবে। কিন্তু যে সব চিকিৎসার জন্যে এই পরিকল্পনাগুলো করা হয়েছে, এবং তার জন্যে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, তার পরেও মূল লক্ষ্যে উন্নতি হচ্ছে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর মিলেছে বলে মনে হয় না।

Advertisement

রোগী রেফার করার প্রবণতা আগেও ছিল এবং এখনও আছে। কিন্তু ২০১১ সালের আগে কলকাতার হাসপাতালে রেফার করা হত, কারণ তখন শহরতলি ও গ্রামীণ হাসপাতালের পরিকাঠামো বলতে কিছুই ছিল না। সেই সময়ে শাসক দলের নেতাদের সুপারিশে অনেকেই রেফার হয়ে চিকিৎসার সুযোগ পেতেন। বর্তমানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীকে রেফার করা হয় কারণ, জটিল চিকিৎসার দায় কেউই নিতে চান না। রোগীর অবস্থার অবনতি বা মৃত্যু হলে চিকিৎসক আক্রান্ত হতে পারেন, এই ভয়ও কাজ করে। অথচ, এই ক্ষেত্রে কোথায় গাফিলতি, দেখার কেউ নেই। এই নিয়ে কোনও সমীক্ষা হয় বলেও মনে হয় না। যদি হত, তবে এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিবৃতি দিতে হত না। বাস্তব হচ্ছে, চিকিৎসকরা নিজেদের পিঠ বাঁচাতে চান, বদলির হাত থেকে নিস্তার পেতে চান। ক্ষমতাসীনের সঙ্গে তর্ক করে চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ গড়াইয়ের মতো হয়রান হতে চান না। হাসপাতালের ভবন নির্মাণ ও স্বাস্থ্য বিমা খাতে সরকারের যে অর্থ ব্যয় হয়েছে, সেই অর্থে কি জেলা হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসার মান উন্নত করা যেত না?

অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি

Advertisement

ডাক্তারের ঝুঁকি

সম্পাদকীয় ‘নন্দ ঘোষ’ প্রসঙ্গে বলতে চাই, ‘রেফার রোগ’ ঠেকাতে প্রথমে জেলায় জেলায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল খুলেছিল তৃণমূল সরকার। পরে আইসিসিইউ, নবজাতকদের আইসিসিইউ, ডায়ালিসিস প্রভৃতি খুলে কিছু দিন আত্মতুষ্টিতে ভুগছিল। তার পরেও ‘রেফার রোগ’ সারাতে স্বাস্থ্যভবনে বিশেষ সেল (২৪×৭) গঠন করা হয়েছিল। তাতেও কাজ না হওয়ায় এ বার প্রসূতি মৃত্যু হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুমকি দেওয়া হয়েছে। রেফার না করার জন্য প্রসূতি, বা অপর কোনও সঙ্কটাপন্ন রোগীর মৃত্যু হলে কে তার দায়িত্ব নেবে? যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগে মামলা হলে ডাক্তারকেই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সরকারকে নয়।

মহম্মদ মুসা, রানাঘাট, নদিয়া

বিএড আসন

আশির দশকে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি বিএড কলেজ ছিল হাতেগোনা, প্রতিটি কলেজে আসন সংখ্যা ২০০-২৫০টি। শিক্ষাবর্ষ ছিল এক বছরের। যে সমস্ত শিক্ষক এই টিচার ট্রেনিং ছাড়া চাকরি পেতেন, পরবর্তী কালে তাঁদের ডেপুটেশনে পাঠানো হত। এই কলেজগুলি ছিল মোটের উপর স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন। কিন্তু ‘নিয়মের বাইরেও নিয়োগ, টাকার বিনিময়ে শংসাপত্র’ (২৫-১০) খবরটি পড়ে চমকে উঠলাম। ২০১৪ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে ৫৫০টির অধিক বেসরকারি বিএড কলেজ গজিয়ে উঠেছে, সঙ্গে ডিইএলইডি কোর্সও পড়ানো হচ্ছে প্রচুর টাকার বিনিময়ে। দু’বছরে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা কোর্স ফি-র বিনিময়ে রাতারাতি রেজিস্ট্রেশন, অ্যাডমিট কার্ড এবং শংসাপত্র মেলে কী করে? এত বিএড কলেজের অনুমোদনই বা কেন দেওয়া হল? কিছু কলেজের বৈধতা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। সরকারি কলেজ এবং সরকার অধীনস্থ কলেজগুলিতে আসন কমিয়ে এখন মাত্র ৫০টি। অন্য দিকে বেসরকারি কলেজগুলিতে আসনসংখ্যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০০টি। পরোক্ষ ভাবে বেসরকারি কলেজগুলোকে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে না কি? গরিব ছাত্রছাত্রী টাকার অভাবে বেসরকারি কলেজে ভর্তি হচ্ছে না। অথচ, সরকারি কলেজগুলোতে আসন সীমিত। যদি বিএড আসনের এত চাহিদা থাকে, তা হলে কেন সরকারি কলেজে আসন কমানো হচ্ছে? সরকারি এবং সরকার পোষিত বিএড কলেজে আসনসংখ্যা অবশ্যই বাড়ানো দরকার।

স্বপন আদিত্য কুমার বিশ্বাস, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

ইলেকট্রিক গাড়ি

বিকল্প জ্বালানি সম্পর্কিত প্রবন্ধে (‘কেমন হবে ভবিষ্যতের যান’, ২৫-১১) অনেক গবেষণালব্ধ তথ্য দিয়েছেন শাশ্বত চৌধুরী এবং অরিজিৎ দাস। বিদ্যুৎচালিত (ইভি) গাড়ি পরিবেশের ক্ষতি রোধ করবে, কার্বন নিঃসরণ কম করবে, এটা প্রচলিত ধারণা। আমার একটু অন্য দৃষ্টিভঙ্গি আছে, এ বিষয়ে। পেট্রল, ডিজ়েল বা প্রাকৃতিক গ্যাসচালিত গাড়ি ঘন জনবসতি অঞ্চলে চললে ক্ষতিকর গ্যাস আশেপাশের মানুষজন ও জীবজন্তুদের স্বাস্থ্যহানি করে। অন্য দিকে, ইভি গাড়ির ব্যাটারি চার্জ হয় বিদ্যুতে, যা বৃহৎ উৎপাদন কেন্দ্রে তৈরি হয়ে সরবরাহ হয়। এ দেশের অধিকাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কয়লা ব্যবহার করে। তাই সেখানেও কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে প্রচুর। আর আছে সালফার ডাইঅক্সাইড। ফারাকটা হল, কাছাকাছি জনবসতি না থাকলে দূষিত গ্যাস সরাসরি গ্রহণ করতে হয় না। কিন্তু সার্বিক ভাবে কার্বন নিঃসরণ কমছে না, বরং বাড়ছে। কারণ, কয়লার তাপ উৎপাদন ক্ষমতা অনেক কম ডিজ়েল বা পেট্রলের থেকে। তার সঙ্গে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই ডেকে আনে নানা সমস্যা।

কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারত পুনর্নবীকরণ-যোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদক উৎস, যেমন— সৌরশক্তি, জলবিদ্যুৎ, বায়ুশক্তি ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের দেশ পর্যাপ্ত সূর্যালোকিত ও জলসিঞ্চিত হলেও পরিকল্পনা ও সদিচ্ছার অভাবে এ সবের ব্যবহার একেবারে প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। তাই পরিবেশ সংরক্ষণ করতে ইভি প্রচলন কোনও সার্বিক সমাধান নয়। তার উপর ব্যাটারির উপাদান কোবাল্ট, নিকেল, লিথিয়াম তাদের নিজস্ব বিপদবার্তা নিয়েই আছে। এর সঙ্গে অগ্নিসুরক্ষার প্রশ্নটাও থাকছে।

তা ছাড়া, এলপিজি থেকে কাঠ, কয়লায় ফিরে আসতে বাধ্য হওয়া দরিদ্র জনগণ, বিশেষত রান্নাঘরে মহিলারা আগের মতোই তীব্র স্বাস্থ্য সঙ্কটের মুখে। এই ধরনের ব্যর্থতা ঢাকতে ইভি-র ঢক্কানিনাদ তুলে সভা গরম করা যায়, প্রকৃত উন্নতি করা যায় না। পরিবেশ সংরক্ষণ জটিল বিষয়, দীর্ঘমেয়াদি, বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ছাড়া সেটা সম্ভব নয়।

কৌশিক দাস, বেঙ্গালুরু

চাষির ভবিষ্যৎ

দীপায়ন প্রামাণিক তাঁর ‘চাষির বিদায়’ (১-১২) চিঠিতে যথার্থই বলেছেন, কৃষিকাজ যত কর্পোরেটের অধীনে আসবে, তত আরও বেশি কৃষক শ্রমিকে পরিণত হবেন। পশ্চিমে প্রযুক্তির উন্নতি কৃষিকাজেরও উন্নতি করেছে, কিন্তু শস্যের জোগান বাড়ায়, আর বিশ্ববাজারে চাহিদা অপরিবর্তিত থাকায়, দাম কমে গেল। আগে কৃষক কম উৎপাদন করে কম উপার্জন করছিলেন, এখন উৎপাদন বৃদ্ধির পরেও উপার্জন কম। তাই বহু চাষি কৃষি থেকে সরে গেলেন। আমেরিকার আজ মাত্র ১-৩ শতাংশ কৃষিজীবী।

সমরেশ কুমার দাস, জালুকি, নাগাল্যান্ড

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement