খেলার মাঠে যখন আমাদের চোখ খুলেছে, তার আগেই চুনী গোস্বামী ফুটবল থেকে বিদায় নিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু আমি ওঁর ক্রিকেট দেখেছি। ১৯৭২-এর জানুয়ারি, ধানবাদের জামাডোবায় ডিগোয়াডি টাটা কোলিয়ারির স্টেডিয়ামে বাংলা বনাম বিহার রাজ্য দলের রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ। বাংলা দলে তখন নক্ষত্র সমাবেশ। কে নেই! কল্যাণ চৌধুরী, দেবু মুখোপাধ্যায়, অম্বর রায়, গোপাল বসু, অশোক গনদোত্রা, সুব্রত গুহ, দীপঙ্কর সরকার, দিলীপ দোশি, রুশি জিজিবয় এবং অন্যতম প্রধান আকর্ষণ বাংলার দলনায়ক চুনী গোস্বামী।
আবার বিহার ক্রিকেট দলও কম যায় না। দলজিৎ সিংহ, রবীন মুখোপাধ্যায়, রমেশ সাক্সেনা, আনন্দ শুক্ল, রাকেশ শুক্লরা দু’ভাই। দুর্দান্ত পেস বোলার অঞ্জন ভট্টাচার্য।
বাংলা দল প্রথমে ব্যাটিং পেল। ওপেনিং জুটি কল্যাণ চৌধুরী, দেবু মুখোপাধ্যায় অল্প রানে প্যাভিলিয়নে ফিরে এলেন। অম্বর রায়, গোপাল বসু সুবিধা করতে পারলেন না। কিন্তু বাংলার হয়ে লড়লেন দু’জন। অশোক গনদোত্রা আর অনমনীয় চুনী গোস্বামী। দিনের শেষে দুজনের নামের পাশে সেঞ্চুরি। বাংলা দল প্রথম ইনিংসে করল ৩১৪। বিহারের চেয়ে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকার সুবাদে সেই ম্যাচে বাংলা জিতল।
সে বছর বাংলা রঞ্জি ফাইনালে উঠেছিল, যদিও জিততে পারেনি, বম্বের কাছে হেরে যায়।
চুনীর অসামান্য লড়াকু খেলা স্বচক্ষে দেখার অভিজ্ঞতা ভুলব না।
বিপ্লব কান্তি দে, কুলটি, পশ্চিম বর্ধমান
মধ্যবিত্তের লজ্জা
সাধারণ মধ্যবিত্তের ছোট্ট সংসার। কর্তা কলকাতার এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বড় ছেলের চাকরি নেই, টিউশন পড়ায়। ছোট ছেলে কলেজে, মেয়ে স্কুলে পড়ে। টেনেটুনে সংসার চলে, সঞ্চয় তেমন নেই। লকডাউনের পর থেকেই কর্তা গৃহবন্দি, ছেলের টিউশন পড়ানো বন্ধ। ফলে, হাতে যে সামান্য টাকা ছিল তাও প্রায় শেষের পথে। কিন্তু কর্তা কাউকে সমস্যার কথা বলতে পারছেন না, কারণ পাড়ার লোক জানে তিনি চাকরি করেন, ধোপদুরস্ত পোশাক পরেন। মধ্যবিত্তের বড্ড দুরবস্থা লকডাউনের বাজারে। সরকারি চাকুরেরা মাইনে পাচ্ছেন। উচ্চবিত্তদের প্রচুর সঞ্চয়। পেনশনভোগীরা পেনশন পাচ্ছেন। নিম্নবিত্তরা সরকারি-বেসরকারি নানা সাহায্য পাচ্ছেন। কিন্তু বিপাকে মধ্যবিত্তরা। এঁরা টিউশন শিক্ষক, ছোট ব্যবসায়ী, বিমার এজেন্ট প্রমুখ। এঁদের রোজগার এখন অনিশ্চিত, অথচ এত লজ্জা, কিছুতেই হাত পাততে পারেন না।
নীলোৎপল জানা, পূর্ব মেদিনীপুর
ডিজিটাল
আমার হৃৎস্পন্দনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নেটওয়ার্কের ঘরে থ্রিজি-টুজি-ফোরজি আমার সঙ্গে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলে। অথচ আমাকে কর্তব্যনিষ্ঠ থাকতে হবে, তাই চোখকান বুজে অনলাইনে চল্লিশ শতাংশ পাঠ সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব পালন করে যাই। চেষ্টা করি ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছনোর। একটা থেকে আর একটা অ্যাপে ঠাঁইনাড়া হই। তার পর বুঝতে পারি আমার সাধের স্মার্টফোনটা অপ্রিয় সত্য আড়াল করার মতো স্মার্ট হতে পারেনি। তাই পর্দায় একের পর এক ভেসে ওঠে: ‘ম্যাম, জয়েন করতে পারছি না’, ‘ম্যাডাম, আপনার কথা কেটে কেটে যাচ্ছে, শুনতে পাচ্ছি না’, ‘ম্যাডাম সরি! আমার ইন্টারনেট ব্যালেন্স ছিল না বলে ক’দিন ক্লাসে আসতে পারিনি’। আমাদের ডিজিটাল ক্লাসরুমে এক ছাত্রকে তার বন্ধুরা ‘টুজি-টুজি’ বলে খ্যাপায়। নতুন নামকরণের সৌজন্যে সোনার পাথরবাটি, থুড়ি ডিজিটাল ইন্ডিয়া।
অনিশা ঘোষ, সোনারগ্রাম, হুগলি
বিচিত্রকর্মা
‘প্রয়াত অভিধানকার’ (১-৫) প্রসঙ্গে এই চিঠি। অধ্যাপক গৌরীপ্রসাদ ঘোষ শুধু একটি অতি উৎকৃষ্ট ইংরেজি-বাংলা অভিধানের প্রধান সম্পাদক, ইংরেজি সাহিত্যের পণ্ডিত অধ্যাপক, স্বয়ং হেলেন গার্ডনার কর্তৃক প্রশংসিত গবেষণাগ্রন্থ ‘দি ইনসাবস্ট্যানশিয়াল পিজেণ্ট’ গ্রন্থের প্রণেতা ছিলেন না, তঁার বিচরণ জীবন ও মননের আরও বহু ক্ষেত্রে। ভ্রমণপিপাসু এই অধ্যাপক শুধু হিমালয়ের দুর্গম অরণ্যেই ঘুরে বেড়াননি, কলকাতার স্কাইওয়াচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এই মানুষটি নিজে টেলিস্কোপ বানাতে পারতেন, রাতের পর রাত বাড়ির ছাদে তারাভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে বিনিদ্র রজনী যাপন করতেন। তাঁর ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে’ এবং ‘নক্ষত্র-নীহারিকার রোমাঞ্চলোকে’ গ্রন্থ দুটি বাঙালি পাঠকের কাছে মহাকাশের অপার রহস্য উন্মোচিত করেছে। ভৈনু বাপ্পু মানমন্দিরসহ জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার বহু পীঠস্থানে এই অপেশাদার জ্যোতির্বিদ আমন্ত্রিত হতেন। শেক্সপিয়রের ট্র্যাজেডি নিয়ে তাঁর গবেষণা ও জীবনব্যাপী চর্চার মতই নক্ষত্রজগতের রহস্য অনুসন্ধানে এই বর্ণময় ব্যক্তিত্বের ছিল অসীম আগ্রহ।
অনুবাদ সাহিত্যেও অধ্যাপক ঘোষের দান মনে রাখার মত। বাঙালি পাঠকের জন্য অনূদিত তাঁর ‘শেক্স্পিয়ার সনেটমালা’ আর অবাঙালি পাঠকের উদ্দেশে নিবেদিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যানুবাদ ‘গ্লিম্পসেস অব প্যারাডাইস— সিলেক্টেড পোয়েমস অ্যাণ্ড সংস’ দেশে-বিদেশে পাঠককুলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। নিজে বলতেন, ‘অনুবাদ করেছি প্রকাশের জন্য নয়। এর মাধ্যমে ওই মহান কবি-নাট্যকারদের প্রতি আমার জীবনব্যাপী ঋণের কণামাত্র পরিশোধ করার চেষ্টা করেছি।’ একটি চিঠিতে হেলেন গার্ডনার আমাদের মাস্টারমশাইকে বলেছিলেন, ‘আমরা দুজনেই অননুতপ্ত মানবতাবাদী’।
অত্যন্ত স্নেহবৎসল এবং ছাত্রদরদি, জীবন ও জ্ঞানের বহু ক্ষেত্রে স্বচ্ছন্দবিহারী এই বিচিত্রকর্মা মাস্টারমশাইকে তাঁর ছাত্রছাত্রীরা নিশ্চয়ই ভুলে যাবেন না।
শুভময় রায়, কলকাতা-৪৭
মানছে না
করোনা রুখতে হুগলি জেলা অরেঞ্জ জ়োন হিসাবে চিহ্নিত। শ্রীরামপুরের মাহেশ সংলগ্ন এলাকায় সংক্রমণ ধরা পড়ার পর, রোগ রুখতে বন্ধ করে দেওয়া হয় এখানকার বড় বড় সব বাজার, যার মধ্যে চাতরা অঞ্চলের শীতলাতলা বাজার অন্যতম। কিন্তু এখানে লকডাউনের বেশির ভাগ বিধিই ভঙ্গ করা হচ্ছে। বাজারের ভেতর বাজার না বসলেও, রাস্তার পাশে বসা বাজারে প্রচুর ভিড়। কোনও তদারকি নেই। লোকের মুখে মাস্ক নামমাত্র। মিষ্টির দোকানে পাঁচ-ছ’জন জটলা করে কিনছে। ইচ্ছাকৃত চিৎকার করে, হেঁচে, আনন্দের আবহ টানার প্রয়াস কারও কারও, সঙ্গে দেখিয়ে দেখিয়ে সুখটান।
অরিত্র মুখোপাধ্যায়, চাতরা, হুগলি
ব্যর্থ প্রেমিক
‘এক দিওয়ানা থা...’ (আনন্দ প্লাস, ১-৫) শীর্ষক লেখায়, রোমান্টিক নায়কের ভূমিকায় ঋষি কপূরের অভিনয়ের কথাই বিশেষ ভাবে বলা হয়েছে, কিন্তু তিনি কয়েকটি ছবিতে ব্যর্থ প্রেমিকের ভূমিকায় অভিনয় করেও প্রশংসিত হন।
‘লায়লা মজনু’ (১৯৭৭) ছবিতে তিনি ব্যর্থ প্রেমিক মজনু। মরুভূমিতে পথ হারানো, জনতা কর্তৃক প্রহৃত হওয়া প্রভৃতি দৃশ্যে তাঁর অভিনয় অতি উচ্চ মানের হয়েছিল। রফি-র গাওয়া ‘বরবাদে মুহব্বত’ গানটির দৃশ্যে তাঁর মর্মস্পর্শী অভিনয় ভোলা যাবে না।
‘প্রেমরোগ’ (১৯৮৩) ছবিতে তাঁর চরিত্র বেশ জটিল, কারণ তাঁর প্রেম এখানে অনুচ্চারিত। ছবির দ্বিতীয়ার্ধে নায়িকা বিধবা ও ধর্ষিতা হয়ে ফিরে আসার পর, ঋষি তাঁকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনছেন। চকোলেট হিরোর পাশাপাশি এই সব চরিত্রগুলিতে সূক্ষ্ম অভিনয় তাঁর প্রতিভার ব্যাপ্তির স্বাক্ষর বহন করে।
শ্রীশঙ্কর ভট্টাচার্য, কলকাতা-৩৯
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)