করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কার্যত সুনামির আকার নিয়েছে। এই পত্র লিখছি পয়লা বৈশাখ। সে দিন গোটা দেশে দৈনিক সংক্রমণ দু’লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের সংযুক্ত মোর্চার কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল হক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। অনেক বিশিষ্ট মানুষ করোনায় আক্রান্ত। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যে মারাত্মক হবে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বার বার সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমাদের চেতনা হয়নি। হাটে-বাজারে চৈত্র সেলের সীমাহীন ভিড় দেখে কে বলবে, করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ হচ্ছে? তার উপর প্রায় কারও মুখে মাস্ক নেই। যে দু’এক জনের আছে, তা-ও থুতনিতে বা পকেটে।
রাজনৈতিক নেতাদের চরম উদাসীনতা ও অদূরদর্শিতা করোনার এই ভয়ঙ্কর অবস্থার জন্য দায়ী। এ বঙ্গে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রথমে তেমন থাবা ফেলেনি। কিন্তু ময়দানে বিরাট জনসভা ও রোড শো-র বহর সেই ঢেউকে পৌঁছে দিয়েছে সুনামিতে। নির্বাচন কমিশন এই ধরনের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারত। সেই ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেন নির্বাচন কমিশন সে পথে হাঁটল না, প্রশ্ন থেকে গেল। আশঙ্কা, এর পর দেশে তো বটেই, এ রাজ্যেও মৃত্যুমিছিল দেখা যাবে। কোভিড রোগী বেড না পেয়ে, চিকিৎসা না পেয়ে বেঘোরে মারা যাবেন। এর জন্য আগামী প্রজন্মের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে আজকের রাজনীতিবিদদের। জেগে ঘুমোনো নির্বাচন কমিশনও তার দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারবে না।
সফিয়ার রহমান
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
উপেক্ষিত
‘বাইরে থেকে লোক এসে করোনা ছড়াচ্ছে: মমতা’ (১৫-৪) শীর্ষক সংবাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করি। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুমাত্র বিজেপি দলের যাঁরা বাইরে থেকে আসছেন, তাঁদেরই দোষারোপ করেছেন। এটা ঠিক নয়। এটা সত্যি, এই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপি দলের হয়ে প্রচারের কাজে অন্য রাজ্য থেকে বেশি সংখ্যক রাজনৈতিক ব্যক্তি আসছেন। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রচারের কাজেও অনেকে আসছেন। যেমন— জয়া বচ্চন, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, কানহাইয়া কুমার, কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী। অতএব দোষটা কেবল বিজেপির নয়।
হিমাচল প্রদেশের সুদূর কল্পাতেও দেখেছি, নির্মাণ কাজ করছেন বাঙালি শ্রমিকরা। কেরল, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড প্রভৃতি রাজ্যেও প্রচুর বাঙালিকে কর্মসূত্রে থাকতে দেখেছি। এই সমস্ত রাজ্যে কোথাও সাময়িক লকডাউন, কোথাও রাত্রিকালীন কার্ফু অথবা ১৪৪ ধারা ঘোষণা করা হচ্ছে। সেখানে কর্মরত বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যে ফিরতে শুরু করেছেন। গত বছর লকডাউনে বাইরের রাজ্য থেকে যে শ্রমিকরা এ রাজ্যে ফিরেছিলেন, তাঁদের থেকে মানুষ যাতে আক্রান্ত না হন, সেই কারণে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এখন কোভিড আক্রান্তদের সেবা ও টিকা প্রদানের কাজে স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যস্ত থাকায়, এবং অন্য কর্মচারীরা বিধানসভা ভোটের কাজে ব্যস্ত থাকায়, ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজটি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। যা আগামী দিনের জন্য অশনিসঙ্কেত।
পার্থসারথী মণ্ডল
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
দায়হীন
ভোটের উত্তাপের মতোই পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে করোনার গ্রাফ। এই সংক্রান্ত এক জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশনও বেশ কিছু নিয়ম-নির্দেশিকা দিয়েছে। কিন্তু সার্বিক সচেতনতার অভাব এবং প্রশাসনের দায়সারা মনোভাবের জন্য ভোটপ্রচার, জনসভা, পথসভা, র্যালি, এবং সর্বোপরি বিগত কয়েক দফার ভোটদানের দিনগুলিতেও সচেতনতার কোনও আশানুরূপ দৃশ্য ধরা পড়েনি। জনস্বাস্থ্যের উপরে কি আমরা স্থান দিয়েছি রাজনীতি ও ক্ষমতার লড়াইকে? হাই ভোল্টেজ প্রচার চলছে রোজই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলের মঞ্চ থেকে করোনা সচেতনতার কোনও বার্তা ভেসে আসেনি। আমরা কি আরও এক বার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিচ্ছি?
পাঁচকড়ি মোদক
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
ঝুঁকির যাত্রা
বেশি সংক্রমিত রাজ্য থেকে বিমানে এলে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট থাকা আবশ্যক। ট্রেনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম বলবৎ হবে না কেন? শুধুমাত্র হাওড়াতে মহারাষ্ট্র থেকে চারটি ট্রেন নিয়মিত আসে-যায়, হাজার হাজার যাত্রী আসেন। সংক্রমণের আশঙ্কা থাকেই। প্রথম থেকেই না আছে ভাল ভাবে থার্মাল পরীক্ষা, না স্যানিটাইজ়েশনের ব্যবস্থা। এই ট্রেনগুলোর প্ল্যাটফর্ম ও যাত্রীদের প্রস্থান গেট আলাদা করে ন্যূনতম পরীক্ষার ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে করুক রেল।
অরিত্র মুখোপাধ্যায়
শ্রীরামপুর, হুগলি
অবজ্ঞার ফল
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভেঙে দিয়েছে সব রেকর্ড। এর মধ্যে কুম্ভের শাহি স্নান, ইফতার, চড়ক, নির্বাচনী জমায়েত করোনাবিধি অবজ্ঞা করে হয়ে চলেছে। সরকারকে কড়া পদক্ষেপ করার দিকে আমরাই বাধ্য করছি। সকল নাগরিককে করোনাবিধি মেনে চলতে হবে, যাতে না দেখতে হয় হাসপাতাল, শ্মশান, কবরস্থানের দৈন্যদশা।
সোমেশ সরকার
শেওড়াফুলি, হুগলি
কোন উৎসব?
অতিমারির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় যে উৎসব চলেছে, তাতে স্বাস্থ্যের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উপেক্ষিত সাধারণ মানুষ। নেতানেত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি-বিহীন জনসমাগমের মধ্যে প্রচার অতিমারিকে ভয়াবহ করে তুলেছে। ভুক্তভোগী ভোটকর্মী জানেন, নির্বাচনী কাজের প্রস্তুতির জন্য গিয়ে কী ভয়ানক অভিজ্ঞতা হয়। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির কোনও বালাই থাকে না। শতাধিক মানুষের একত্র সমাবেশ করোনা সংক্রমণকে ভয়াবহ করে তুলেছে। ভোটকর্মীদের মাধ্যমে তাঁদের পরিবার পরিজনের মধ্যে ছড়িয়ে গেল মারণরোগ। ২ মে-র পর এই রাজ্যের পরিস্থিতি কোন শোচনীয় জায়গায় পৌঁছবে, কে জানে! গণতন্ত্রের উৎসব সে দিন শোকোৎসবে পরিণত হবে না তো!
দীপশংকর রায়
শ্রীরামপুর, হুগলি
মেরুদণ্ড
করোনা সংক্রমণ বাড়ায় সিবিএসই বোর্ডের দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল করা হল এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা স্থগিত হল। সাধুবাদ। কিন্তু বিধানসভা ভোট স্থগিত হচ্ছে না কেন? গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যে যে ভাবে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে, এবং সামাজিক দূরত্ব রক্ষা না করে, মাস্ক ছাড়া যে ভাবে ভোটের প্রচার চলছে, তাতে ভোটের পর সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হবে, ভাবছি। চিকিৎসা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত।
দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির ফলাফলের উপর নির্ভর করে ছাত্রছাত্রীদের সারা জীবন। যারা বেশি খেটে ভাল ফলাফলের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল, তাদের প্রতি অবিচারের সম্ভাবনা থাকল। হয়তো প্রায় সবাইকে গড় নম্বর দিয়ে দেওয়া হবে। সুশাসকের খোঁজে আমরা শিক্ষার মানের সঙ্গে আপস করতে রাজি। ভোট হয়ে যাবে। কিন্তু সরকার শাসন করবে কাকে? মানুষের মৃত্যু তো অনিবার্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রাষ্ট্র যে শিক্ষাকে ভোটের তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না, সেটা সমাজের কাছে দুর্ভাগ্যজনক। শিক্ষা সমাজের মেরুদণ্ড।
সুমন চক্রবর্তী
কলকাতা-৬৫