পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন শুরুর আগে এই বছরের জানুয়ারি মাসে নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা আমাদের মতো বেশ কিছু প্রতিবন্ধী সংগঠনের সঙ্গে অনলাইন মিটিং করেন। তাঁরা আমাদের জানান, যত বেশি সম্ভব প্রতিবন্ধী মানুষ যাতে ভোট দিতে পারেন, তার জন্য কমিশন বিবিধ পদক্ষেপ করবে। আমাদের মতো সংগঠনগুলি কী ভাবে এই কাজে সহায়তা করবে, তাই নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়। কমিশনার দৃঢ় ভাবে জানান যে, প্রতিবন্ধী অধিকার আইন মেনে একুশ রকমের প্রতিবন্ধকতাকে তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং সব ধরনের প্রতিবন্ধীরা যাতে ভোট দিতে পারেন, সেই বিষয়েও সচেষ্ট থাকবেন।
পশ্চিমবঙ্গের আট দফা নির্বাচনের প্রথম দু’দিন বিভিন্ন সংবাদপত্রে কমিশন পাতাজোড়া বিজ্ঞাপন দেয়। সেই বিজ্ঞাপনের শেষে প্রতিবন্ধীদের এবং বয়স্কদের জন্য কী কী বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে, তা লিখিত ছিল। ইংরেজি কাগজে পিডব্লিউডি, অর্থাৎ ‘প্রতিবন্ধকতা-যুক্ত ব্যক্তি’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা আইনসম্মত। কিন্তু বাংলা বিজ্ঞাপনে অদ্ভুত ভাবে দেখলাম, শারীরিক ভাবে ‘অক্ষম’ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এই ধরনের শব্দ ব্যবহারের ফলে অটিজ়ম, মানসিক অসুস্থতা এবং আরও বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা বাদ পড়ে গেল।
তা ছাড়া ‘অক্ষম’ শব্দটির মধ্যেই এক ধরনের নেতিবাচক দিক রয়েছে। বিজ্ঞাপনে সঠিক শব্দ হওয়া উচিত ছিল প্রতিবন্ধকতা-যুক্ত ব্যক্তি। এই ধরনের শব্দগুলোই আমাদের আইনে ব্যবহার করা হয়েছে এবং প্রতিবন্ধী আন্দোলনের কাছে গ্রহণযোগ্য। এই মর্মে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়ে আগামী দিনে বিজ্ঞাপনের ভাষা ঠিকমতো প্রয়োগ করার অনুরোধ জানিয়েছি।
অনেকে হয়তো মনে করেন, পরিভাষা নিয়ে এত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু প্রতিবন্ধী আন্দোলনের এক কর্মী হিসেবে বলতে পারি, নির্বাচন কমিশন আমাদের ‘অক্ষম’ বললে আমরা কখনও তা মেনে নিতে পারি না। কারণ লড়াই তো শুধু নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলিই করছে না। আমরাও লড়াই করছি এই সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে।
শম্পা সেনগুপ্ত, অধিকর্তা, শ্রুতি ডিসেবিলিটি রাইটস সেন্টার
অন্য নির্বাচন
আগে অনেক কষ্ট করে হুইলচেয়ার নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে যেতে হত। কিন্তু এ বারের অভিজ্ঞতা অন্য। গত ২৯ মার্চ, প্রথম বার ভোট দিলাম নিজের বাড়ি থেকে। নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণ ভাবে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সশস্ত্র চার জন জওয়ান, এক জন সশস্ত্র রাজ্য পুলিশ, এক জন ক্যামেরাম্যান এবং সংশ্লিষ্ট সকল পোলিং পার্সোনেল/অফিসার— চার দিকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়, ক্যামেরা। ভোটদান চলাকালীন প্রতি মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করা হল ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে। অনেক কষ্ট করে সহযোগী কারও সঙ্গে হুইলচেয়ার নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে হল না! নির্বাচন কমিশনকে এর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রসঙ্গত, আমি শারীরিক ভাবে ৯৫% বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি, এবং হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী।
অর্ণব কুমার হালদার, রায়দিঘি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
চুপ কেন
করোনার সময় ভোটের মিটিং-মিছিলে ভিড় দেখেও রাজ্যের মহামান্য হাই কোর্ট ও দেশের সুপ্রিম কোর্ট চুপ কেন? মানুষের জীবন বাঁচানোর স্বার্থে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা তো করাই যায়। অবাক হচ্ছি, পুজো, ইদের ভিড়ে রাশ টানতে যে ভাবে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল, তেমন কাউকে এখন পাওয়া গেল না! অতীতে প্রশাসনিক অপদার্থতায় কোর্ট অনেক বার এগিয়ে এসে রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে তো তেমন আইনি বাধাও নেই। আর মানুষের বাঁচার অধিকারে যেখানে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠে যাচ্ছে, সেখানে মানবাধিকার কমিশনেরও কি কোনও দায় নেই? সবই ভোটকালীন দায়বদ্ধতায় আটকে থাকবে!
অরিত্র মুখোপাধ্যায়, চাতরা, শ্রীরামপুর
টিকার পর
আমি আমার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গত ১৮ মার্চ আগরপাড়ায় সেনবাগানে পানিহাটি মিউনিসিপ্যালিটির অধীনস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়েছি। আমাদের দু’জনেরই বয়স সত্তরের বেশি। একটি ফোন নম্বর লিপিবদ্ধ করে দু’জনের আধার নম্বরও দেওয়া হয়েছিল নিয়ম মেনে। আমাদের দু’টি রাবার স্ট্যাম্প দেওয়া কাগজ দেওয়া হয়। বলা হয় ২৮ দিন পরে এসে দ্বিতীয় ডোজ় নিতে।
কিন্তু সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য লগ ইন করলে শুধুমাত্র আমার স্ত্রীয়ের সার্টিফিকেটই আসছে। আমারটা আসছে না। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করলে আমাকে জানানো হয়, এ ব্যাপারে ওঁদের কিছু করার নেই। যা করার মিউনিসিপ্যালিটির সদস্যরাই করবেন। অগত্যা আমি কোউইন অ্যাপে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। আশ্চর্যজনক ভাবে আমার মেলটি সেখানে পৌঁছয়নি। বেশ কয়েক বার চেষ্টার পর বাধ্য হয়ে আরোগ্য সেতুতে মেল করি, একই কথা জানিয়ে। সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর আসে যে, ওঁরা সার্টিফিকেট সংক্রান্ত কাজ করেন না, সেটা দেখে কোউইন সংস্থা।
আরোগ্য সেতুকে আবার মেল করি এই জানিয়ে যে, যদি কোউইন সংস্থার মেলের ঠিকানাটা একটু জানান, তা হলে উপকৃত হব। কিন্তু আমার ইমেলটি ওঁরা নিলেন না। ১০ মিনিট আগেই কিন্তু আমাকে ওঁরা উত্তর দিয়েছিলেন। ১০৭৫-এ ফোন করারও চেষ্টা করেছিলাম। যোগাযোগ করতে পারিনি। এ দিকে বিজ্ঞাপনের বহরের তো কোনও খামতি নেই।
রঞ্জিত মল্লিক, কলকাতা-১০৯
অবহেলায় পার্ক
বছর দুইও হয়নি, যাদবপুর সন্তোষপুরের জোড়াব্রিজ সংলগ্ন নিকাশি খালপাড় জুড়ে প্রচুর গাছ লাগিয়ে বাঁশের বেড়া দেওয়া হল। কাছেই তৈরি হল ছোটদের জন্য পার্ক, ছোট্ট এক বসার জায়গা এবং একটি সুলভ শৌচালয়। এলাকার মাননীয় বিধায়ক মহাশয় ঘটা করে এ সবের উদ্বোধনও করলেন। এরই মধ্যে গাছগাছালির বেহাল অবস্থা। প্রচুর গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গোড়ায় ময়লা আর আবর্জনার স্তূপ। অধিকাংশ জায়গায় বেড়া ভাঙা, নয়তো অস্তিত্বহীন। পরিচর্যা হয় না। পরিবেশ দূষণ আর দৃশ্যদূষণ যুগপৎ চলছে।
অসিত কর্মকার, কলকাতা-৭৫
করোনায় ভোট
‘এক দিনে লক্ষ পার’ (৬-৪) শীর্ষক সংবাদ উদ্বেগজনক। বিশ্বে আমেরিকার পর ভারতই সংক্রমণের এই অবস্থায় পৌঁছল। তবু স্বাস্থ্যবিধি কেউ মানছেন না! পশ্চিমবঙ্গে এখন ভোটের জন্য নেতা-নেত্রীদের ভিড় জমানোর প্রতিযোগিতা। কেউ মাস্ক পরছেন না, দু’গজ দূরত্বও রাখছেন না! অনুরোধ, ভোটের বাকি চার দফা কমিয়ে দু’দফা করা হোক। ভোটের জন্য মৃত্যু হলে তা দুর্ভাগ্যজনক হবে।
বিবেকানন্দ চৌধুরী, কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
শিল্পীর নাম
সল্টলেক বিকাশ ভবনের মেন গেট দিয়ে ঢুকেই বাঁ দিকে বিদ্যাসাগরের একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তি রয়েছে। সুন্দর মূর্তির ফলকে কোথাও শিল্পীর নাম নেই। শিল্পীর স্বীকৃতি কিন্তু জরুরি!
দেবাশিস বড়ুয়া, কলকাতা-১১০