lottery

সম্পাদক সমীপেষু: লটারির নেশা মুক্তি

এই নেশা অনেকটা ধূমপানের নেশা বা মাদকাশক্তির মতো, ক্ষতি জেনেও মানুষ যা গ্রহণ করে। লটারির টিকিট কোম্পানির মালিকের কিন্তু কোনও ক্ষতি হয় না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২২ ০৬:০৩
Share:

লটারির টিকিট।

‘হতদরিদ্র আনারুল রাতারাতি লক্ষপতি’ (৮-১০) সংবাদটির প্রেক্ষিতে কিছু কথা বলতে চাই। খবরেই প্রকাশ যে, লটারির টিকিট কাটার নেশার কারণেই আনারুল জীবনের সমস্ত রোজগার-সহ পৈতৃক বসতবাড়ি, জমিজমা এমনকি নিজের মোটরবাইক পর্যন্ত খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে মামাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি বহু বছরের এই সর্বগ্রাসী নেশার থেকে মুক্তি চেয়েছেন এবং অঙ্গীকার করেছেন যে, আর লটারির টিকিট কাটবেন না। অর্থাৎ, তাঁর কথা থেকেই পরিষ্কার যে, লটারির টিকিট কাটার নেশা অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং সামাজিক ব্যাধি। লটারি নামক জুয়াখেলা কয়েক লক্ষ মানুষকে নিঃস্ব করে এক জনকে অর্থবান বানায়। এই নেশা অনেকটা ধূমপানের নেশা বা মাদকাশক্তির মতো, ক্ষতি জেনেও মানুষ যা গ্রহণ করে। লটারির টিকিট কোম্পানির মালিকের কিন্তু কোনও ক্ষতি হয় না। সরকারের এখান থেকে কিছু রাজস্ব আসে।

Advertisement

যদি কোনও বড় লটারির টিকিট দোকানের সামনে নজর দেওয়া যায়, তা হলে দেখা যাবে কয়েক জন হতদরিদ্র মানুষ বসে আছেন লটারি খেলার ফল বার হওয়ার আশায়। এটাই তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের রুটিন। এঁদেরই রক্ত শোষণ করে মাঝেমধ্যে দু’-এক জন লক্ষপতি হতে পারেন, কিন্তু সুখী হতে পারেন না। এই ধরনের সর্বগ্রাসী নেশা থেকে সমাজকে মুক্ত করা জরুরি।

রামমোহন চক্রবর্তী, নবদ্বীপ, নদিয়া

Advertisement

অব্যবস্থা

কিছু দিন আগে আমি আর আমার বান্ধবী পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ২৫ সেপ্টেম্বর ফেরার ট্রেন ছিল এনজেপি স্টেশন থেকে সকাল চারটে দশে। এত সকালে ট্রেন বলে বাধ্য হয়ে আইআরসিটিসি সাইট থেকে স্টেশনের রিটায়ারিং রুম বুক করি। ডিলাক্স রুম। ১৪৭৫ টাকা ভাড়া। আমরা ২৪ তারিখ রাতে স্টেশনে আসি। কেয়ারটেকার রুম দেখান। অত্যন্ত অপরিষ্কার রুম। বাথরুমও তথৈবচ। জানলাগুলোতে গ্রিল নেই, স্লাইডিং শাটার আর কোনও লক নেই। রাত দেড়টার সময় জানলা দিয়ে একটা লোক ঢুকে আসে আর চার্জিং পয়েন্ট থেকে মোবাইল খুলে নিয়ে পালায়। তাড়া করেও তাকে ধরতে পারিনি। জিআরপি থানায় গিয়ে তখনই ডায়েরি করি। এত ব্যস্ত স্টেশনে এই যদি নিরাপত্তা হয়, তা হলে রিটায়ারিং রুম রাখার দরকার কী?

সম্মতা সেনগুপ্ত , ভদ্রেশ্বর, হুগলি

পণ্ডশ্রম

গত বসন্তে রাজ্যের জেলায় জেলায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছিল। প্রত্যেক ছোট, বড় রাস্তার দু’ধার, খাল, নদীর দু’পার সেজে উঠেছিল অসংখ্য নারকেল গাছের চারায়। শুধু তা-ই নয়, বহু খরচ করে, মূল্যবান শ্রমদিবস ব্যয় করে সেই চারাগাছগুলিকে বাঁশের বেড়া ও জাল দিয়ে সুরক্ষিতও করা হয়েছিল। বতর্মানে চারাগুলির একটিও অবশিষ্ট নেই কোথাও! জাল ঘেরা কোটি টাকার প্রকল্প আক্ষরিক অর্থেই জলে গেল। ব্যর্থ হল সবুজ অভিযান।

অথচ, কয়েকটি বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ করলেই সবুজে ভরে উঠত বাংলা। রাস্তার ধারের উপযোগী গাছকে হতে হয় ছায়া প্রদানকারী, মাটির গভীরে মূল বিস্তারকারী, দ্রুতবর্ধনশীল এবং মিশ্র ফুল ফল যুক্ত। তেমনই কয়েকটি গাছ হল বকুল, কাঞ্চন, কল্কে, কামরাঙা, বাবলা, গুলমোহর, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, আম, নিম, অর্জুন ইত্যাদি। গাছগুলি চিরহরিৎ হওয়ায় সারা বছরই ছায়া দিতে পারে। উপরি পাওনা সৌন্দর্য ও পাখির কলতান। পরবর্তী কালে মৃত গাছ বিক্রি করেও পঞ্চায়েতের উপার্জন হতে পারে।

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল রক্ষণাবেক্ষণ। রোপণ করেই দায় সারলে অযত্নে, জলের অভাবে, গরু-ছাগলের উৎপাতে তা নষ্ট হয় অচিরেই। তাই নিরন্তর নজর রাখাও প্রয়োজন। আগামী দিনে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বৃক্ষ নির্বাচন, রোপণ ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা করলে পণ্ডশ্রম হয় না।

পার্থ পাল, মৌবেশিয়া, হুগলি

জৌলুস নেই

আমি ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড নাটোর পার্ক-এর বাসিন্দা। নাটোর পার্ক নামটি বাংলাদেশের বিখ্যাত নাটোরের মহারাজাদের এস্টেটের নামানুসারে রাখা হয়েছিল। কেননা তাঁরা কলকাতায় এলে এখানেই বাস করতেন। এখানে তাঁদের পেল্লায় রাজবাড়ি ছিল। সাজানো-গোছানো পাড়াটিতে দু’পাশের পামগাছ দিয়ে সাজানো অ্যাভিনিউ-এর আজ কোনও চিহ্ন নেই। বদলে তা এক কদর্য, অ-বাসযোগ্য বসতিতে পরিণত হয়েছে।

পাশেই রেললাইন, বন্ডেল গেটের উপর দিয়ে ফুটব্রিজ করা হয়েছে, যা প্রায় কেউই ব্যবহার করেন না। নীচ দিয়েই বিপজ্জনক ভাবে রেল লাইন পার হন। ফুটব্রিজে রাতের বেলায় মদের আসর বসানো হয়, মাতালরা জায়গা জুড়ে পড়ে থাকে। পথচারীরা, বিশেষত মহিলারা যাওয়া-আসা করতে ভয় পান।

এর নীচে বন্ডেল বাজার। নাটোর পার্কে ঢোকার মুখ তা যেন নরক দর্শনের অভিজ্ঞতা। যত্র-তত্র দোকান, ফেরিওয়ালা, রিকশাস্ট্যান্ড, সুলভ শৌচালয়, দুটো ময়লা ফেলার ভ্যাট, বাজারের আর একটা প্রবেশদ্বার এবং তিনটি মুরগির মাংসের দোকান এক ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টি করে। রাস্তায় গর্তের জমা জল থেকে দুর্গন্ধ বার হয়। পার্ক করে রাখা লরিগুলোতেও রাতদুপুরে প্রকাশ্যে মদের আসর বসে। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ ব্যাপারে একেবারে উদাসীন। তাঁকে অভিযোগ জানালে উল্টে তিনি বাসিন্দাদের দায়িত্ববোধকে দায়ী করেন। এই অবনতি কি কোনও ভাবে রোধ করা যায় না?

ব্রততী দাস, কলকাতা-৩৯

শুধু হিন্দি কেন

কিছু দিন আগে ইন্ডিয়ান অয়েলের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে আমার অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করেছিলাম। ভাষা পছন্দের ক্ষেত্রে চার বার আমি ইংরেজি ও এক বার বাংলা নির্দেশ করেছিলাম। আশ্চর্যজনক ভাবে, প্রতি বারই যিনি ফোন তুললেন তিনি হিন্দিতে বললেন “আপনি কি হিন্দিতে স্বচ্ছন্দ?” যত বারই আমি না বললাম তিনি তত বারই আমাকে ফোনটা কেটে নতুন করে ফোন করে যিনি ইংরেজি জানেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। শেষে আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আমি আমার পছন্দের ভাষা উল্লেখ করা সত্ত্বেও কেন তিনি ফোন ধরছেন? তিনি তখনও বলে গেলেন, ইংরেজিতে বা বাংলায় কথা বলতে চাইলে আমাকে আবার ফোন করতে হবে।

আমার প্রশ্ন, যদি হিন্দি ছাড়া অন্য কোনও ভাষায় কথা বলা কিংবা অভিযোগ জানানো না যায়, তা হলে অকারণে ইংরেজি, বাংলা বা অন্যান্য ভাষা পছন্দের অপশন দেওয়া হচ্ছে কেন? সংস্থার পক্ষ থেকে পরিষ্কার নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হোক যে, তাদের পরিষেবায় আর কোনও ভাষা থাকবে না। বুঝতে পারছি না, সংবিধানের কোন নিয়ম অনুসারে একটা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কাস্টমার কেয়ারে শুধুমাত্র হিন্দি জানা লোক বসিয়ে রাখা হয়? দেশের বাকি সমস্ত অ-হিন্দিভাষী মানুষ তা হলে কী ভাবে ওই সরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করবে?

এ ভাবে জোর করে হিন্দি ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার নীতির জন্যই প্রাদেশিকতা, সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ভারতের মতো বহু ভাষাভাষীর, বহু ধর্ম এবং সংস্কৃতির দেশে নির্দিষ্ট কোনও ভাষা বা ধর্ম বা সংস্কৃতিকে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। জোর করে চাপানোর চেষ্টা হলেই সহজাত ভাবে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠবে। তার ফলে দেশ শক্তিশালী হওয়ার পরিবর্তে আরও দুর্বল হবে। এই সহজ সত্যটা যত তাড়াতাড়ি দেশের কর্ণধাররা বুঝবেন, তত তাড়াতাড়ি দেশের মঙ্গল হবে।

সুরজিত কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement