বাজেটে নেই অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা বাড়ানোর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। ফাইল চিত্র।
বাজেট নিয়ে সুরজিৎ দাসের প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা (শেষ পর্যন্ত কার লাভ হল, ২-২)। এই বাজেটে যাঁদের লাভ হওয়ার কথা, তাঁদেরই হল। এখানে নেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কোনও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব, নেই অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা বাড়ানোর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
এ বারের বাজেট যখন সংসদে উপস্থিত করা হচ্ছে, তখন মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকার সমস্যা তীব্র রূপ ধারণ করেছে। অক্সফ্যাম ইন্টারন্যাশনাল-এর পেশ করা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০১২-২০২১ সালে ভারতে যত সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে, তার ৪০% রয়েছে ধনীতম ১% মানুষের হাতে। অন্য দিকে, দরিদ্রতম ৫০% মানুষের ভাগে পড়েছে এই সম্পদের মাত্র ৩%। অথচ, এই দরিদ্রতম ৫০% মানুষ জিএসটি বাবদ সরকারকে যে কর দেন, তা ধনীতম ১০ শতাংশের করদানের প্রায় ৬ গুণ। একটি অসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান বেকারত্বের হার ৮.৩%, যা গত ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশ জুড়ে কর্মসংস্থানের এমন সঙ্কট মোচনে বাজেট এক রকম উল্টো পথেই হেঁটেছে। আয়করের উপর সারচার্জের হার কমানোয় অতিধনীদের সর্বোচ্চ করের হার ৪৩% থেকে কমে ৩৯% হল। অথচ, এই জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ? এক বিরাট সংখ্যক দেশবাসী আজ দারিদ্রের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত। এঁদের নিয়ে চিন্তা থাকলে সরকার মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনায় ব্যয়বরাদ্দ ৩৩% (৩০,০০০ কোটি টাকা) কমাতে পারত না। কমাতে পারত না খাদ্যে ৩১% (৯০,০০০ কোটি টাকা), সারে ২২%, রান্নার গ্যাসে ৭৫% ভর্তুকির পরিমাণ। আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনার বরাদ্দ ৬৫% কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শ্রমজীবীদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন কেন্দ্রীয় স্কিম বা প্রকল্পের ব্যয়বরাদ্দও প্রায় অর্ধেক করা হয়েছে। পেনশন ফান্ডেও কাটছাঁট করা হয়েছে।
ক্ষুধা তালিকায় লজ্জাজনক অবস্থানে থাকা এবং অপুষ্ট জনগণের সংখ্যা ২০১৪ সালের ১৪.৮ থেকে ২০২২ সালে ১৬.৩-এ উন্নীত হওয়া সত্ত্বেও বাজেটে খাদ্যের উপর ভর্তুকি ৩১% কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। মিড-ডে মিলের বরাদ্দ ৯.৪% এবং এ সংক্রান্ত পুষ্টিভিত্তিক ভর্তুকি ৩৮% কমানো হয়েছে। কৃষক সংগঠনগুলিকে দেওয়া সরকারের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের প্রতিশ্রুতিকে কার্যকর করার পরিবর্তে ন্যাশনাল ফুড সিকিয়োরিটি অ্যাক্টের অধীনে খাদ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ১৭% বরাদ্দ কমানো হয়েছে। খাদ্য নিগম দেওয়া ভর্তুকিও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে গণবণ্টন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা, প্রধানমন্ত্রী কিসান সিঁচাই যোজনা, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনাতে বরাদ্দ ছাঁটাই হয়েছে। পেট্রোলিয়াম ভর্তুকি ৬৯০০ কোটি টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধিতে কোনও বৃদ্ধি ঘটেনি। বিভিন্ন রাজ্যের জন্য অর্থ কমিশনের বরাদ্দও ৪২,০০০ কোটি টাকা কমে গিয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে ৯২৫০ কোটি এবং শিক্ষা খাতে ৪৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমিয়ে বাস্তবে স্বাস্থ্য-শিক্ষাকে আরও মহার্ঘ করে দেওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। সব মিলিয়ে দেশের ১০-১৫ শতাংশকে খুশি করে বেকার, দরিদ্র, কৃষক ও শ্রমিকদের উপর আঘাত নামিয়ে আনা হল।
গৌরীশঙ্কর দাস, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
বিতর্কের কেন্দ্রে
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে এ রাজ্যে আসার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে একটি শব্দ— বিতর্ক। একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন বিদ্যুৎবাবু, তা সে কোনও ছাত্রকে বহিষ্কার, অধ্যাপকদের ধমকানি, পৌষমেলার অনুমতি খারিজ বা বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের চার পাশে দেওয়াল, যা-ই হোক না কেন। তবে অমর্ত্য সেনের নামে বেআইনি জমি দখলের অভিযোগ তুলে তিনি আগের ‘রেকর্ড’ ছাপিয়ে গিয়েছেন। কতটা জমি? ১৩ শতক বা সাত কাঠা। বিশ্বভারতীর মোট জমি কত? ইন্টারনেটের তথ্য অনুযায়ী ৬৭,০০০ কাঠা। অর্থাৎ, ওই বিতর্কিত জমিটুকুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের কোনও অসুবিধা হচ্ছে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বাকি থাকে ঔচিত্যের প্রশ্ন। জমির বেআইনি দখলের মতো বিষয় দেখার জন্য অফিসের কর্মচারী আছেন, আছেন উকিলও। সবাইকে টপকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জমি উদ্ধারে কোমর বেঁধে নামলেন, সাংবাদিকদের ডেকে বিজ্ঞপ্তি দিলেন, এটা আরও বেশি অবিশ্বাস্য।
এই ঘটনা ঘটছে এমন এক সময়ে, যখন উৎকর্ষের বিচারে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে বিশ্বভারতীর স্থান ক্রমশ নীচে নামছে! অথচ যখন বিদ্যুৎবাবু যোগদান করেন, এই স্থান ছিল ৩২তম। উপাচার্য মাঝে মাঝেই হুঙ্কার ছাড়েন, বিশ্বভারতীর হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু গত চার বছরে উল্লেখযোগ্য কী করেছেন, তার হিসাব তিনি পাকা রাজনীতিকের মতো এড়িয়ে গিয়েছেন।
দেবাশিস মিত্র, কলকাতা-৭০
মোবাইল ব্যবহার
সম্প্রতি শহরের একটি সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিরাপত্তারক্ষীদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক করেছেন। বিভিন্ন সময়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ভবনে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এই বিজ্ঞপ্তি খুব জরুরি পদক্ষেপ, অনুসরণযোগ্যও বটে। শুধুমাত্র কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী বা পুলিশকর্মীরাই কি মুঠোফোনের অপব্যবহার করছেন? অন্যান্য পেশায় যুক্ত কর্মীরাও তো একই কাজ করে থাকেন। অনেকেই হয়তো এমন ধরনের কাজে ব্যস্ত, যেখানে কর্তব্যরত অবস্থায় মুঠোফোনের ব্যবহার অন্যদের বিপদে ফেলতে পারে। অনেকে গাড়ি, বাইক চালাতে চালাতে মুঠোফোনের ব্যবহার করছেন। স্কুলবাসের চালক, বাসভর্তি ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে দিব্যি কথা বলতে বলতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। বিদ্যালয়ে বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীদের কাজের সময়ও মুঠোফোন ব্যবহার করতে দেখা যায়। হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদেরও তাই। বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থায় কর্তব্যরত কর্মী, ট্যাক্সিচালক, দোকানের কর্মচারী, ছোট্ট শিশুর হাত ধরে রাস্তা পারাপারে ব্যস্ত মা-বাবাদের মুঠোফোনে কথা বলতে দেখা যায়। মোবাইল স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে, ঘুমের ব্যাঘাতের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার প্রভাবে সামগ্রিক ভাবে কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা। বিপন্ন হচ্ছে শিশুরাও। সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয়েরও কারণ হচ্ছে মোবাইল।
আশিসকুমার রায়, কলকাতা-৮৪
শিশুর ভাষা
শিশুমনের বিষাদসিন্ধুর তরঙ্গে কচি হাতের কাঁচা লেখায় সমাজের একটি ‘পাকা কথা’ উঠে এল (কচি হাতের কাঁচা লেখাতেই বিষাদসিন্ধু, ১০-২)। শিশুরা যা বলে, তা কি কেবল শিশুসুলভ, না তার পিছনে ভাবনা রয়েছে? কেরলের এক প্রাইমারি স্কুলে মাস্টারমশাই জিজ্ঞাসা করলেন, একের সঙ্গে এক যোগ করলে কত হয়? হাত তুলে সবাই উত্তর দিল, ‘দুই’। কিন্তু যে ছেলেটি পিছনের বেঞ্চে বসে, সে ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে বলল ‘এক’। শিক্ষকের তিরস্কারে কাঁদতে কাঁদতে শিশুটি উত্তর দিল, একটা ছোট নদীর সঙ্গে আর একটা ছোট নদী যোগ করলে তো একটাই বড় নদী হবে। এই শিশু কি শাসনের যোগ্য? প্রত্যেকেরই শিশুর ভাষা বোঝা দরকার। তা না হলে এমন ভাষা ব্যবহারের কারণ কী, সে খোঁজ মিলবে না।
মহীদাস ভট্টাচার্য, কলকাতা-৮৪