অমিতাভ গুপ্ত ‘এ বার নতুন অক্ষের খেলা’ (২৩-১১) নিবন্ধে লালু যুগের অবসান প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। কয়েকটি প্রশ্ন ওঠে। প্রথমত, সত্যি কি জাত, বর্ণ, ধর্ম ছেড়ে কোনও নতুন পথে যাত্রা শুরু হল, যে পথ শুধু ‘সামাজিক উন্নতির রূপরেখার ছবি আঁকে’? লেখক যে বলছেন, নতুন পরিচয় ‘জাতি পরিচিতি’ নয়, ‘শ্রেণি পরিচিতি’, সেটি কি নতুন বোতলে পুরনো মদ নয়? দ্বিতীয়ত, লালু যুগের অবসান হল— এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া বোধ হয় চটজলদি সিদ্ধান্ত। লালু প্রসাদ যাদবের তিন দশকের কর্মকাণ্ড অস্বীকার করার উপায় নেই। সময় যদি এই নেতা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অন্য কথা বলে, আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।
তৃতীয়ত, বর্ণবাদ আমাদের সমাজকে এমন জড়িয়ে রয়েছে যে, আমরা ছটফট করলেও নিষ্কৃতির পথ পাচ্ছি না। না হলে এই একটি নিবন্ধেই ‘উচ্চবর্ণ’ শব্দটি অন্তত ১৫ বার লিখতে হত না! ‘নিম্নবর্ণ’ শব্দটিও লজ্জায় মাঝে মাঝে ‘নিম্নবর্গ’ হত না। সর্বস্তরের মানুষেরই এখন মুক্তির পথ খোঁজার সময় এসেছে। নয়তো আবার এই ভোটের মরসুমে হরিজন, দলিত ইত্যাদি শব্দ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তাঁদের ‘পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি’ থেকে এখনকার রাজনীতিবিদদের অন্য কোনও ভাবনা থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তাঁরা এই একটি অঙ্কই ভাল বোঝেন। খুব শীঘ্রই আমাদের রাজ্যে তেমনটা দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
সুকুমার বারিক
কলকাতা-২৯
অপব্যবহার
‘যাঁরা শবরীর প্রতীক্ষায়?’ নিবন্ধে (২০-১১) সেমন্তী ঘোষ সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীর গ্রেফতার ও জামিন প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের এক তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য তুলে ধরেছেন— ‘আমরা যদি আজকেই এর একটা হেস্তনেস্ত না করি, তা হলে কিন্তু আমরা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলব। আমি ওঁর চ্যানেল দেখি না, আদর্শের দিক থেকে আমাদের অনেক দূরত্ব থাকতে পারে, কিন্তু সাংবিধানিক বিচারে তার প্রতিফলন পড়তে পারে না...’। সাংবিধানিক যৌক্তিকতা ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় কিন্তু এমনই এক সতর্কবাণী ২০১২ সালে মহারাষ্ট্র সরকারকে দ্ব্যর্থহীন ভাবে মনে করিয়ে দিয়েছিল। সেই সময় কার্টুন-শিল্পী অমিত ত্রিবেদীর বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের করা মামলাকে খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি দীপক মিশ্র ও ইউ ইউ ললিতকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ বলেছিল যে, রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইনের ১২৪ (এ) মামলা সম্পর্কিত শুনানিতে সরকারের সমালোচনা করার জন্য কাউকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা কিংবা মানহানির দায়ে অভিযুক্ত করা যাবে না। যে হেতু এটি সংবিধানের ১৯ (১)(ক) ধারায় বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মূলে কুঠারাঘাত করে থাকে, ফলে তথ্য ও অধিকার আইনের ৬৬ (এ) ধারাটির অধিকারও লঙ্ঘিত হয়। তাই সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল— যদি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হয়, সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বা অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উপর বিরূপ প্রভাবের উপক্রম হয়, তখন সরকার এ রকম ওয়েবসাইট ‘ব্লক’ করে ব্যবস্থা করতে পারবে। সেই সময় সর্বোচ্চ আদালত সাংবিধানিক মৌলিক আদর্শবোধকে রক্ষা করতে বলেছিল সরকারকে। অথচ, এখন দেখা গেল, এই নির্দেশিকা উপেক্ষা করে অর্ণব গোস্বামীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করা হল।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, এ দেশে ২০১৯ সালে দেশদ্রোহের মামলা হয়েছে ৯৩টি, ২০১৬-র তুলনায় ১৬৫ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে সংশ্লিষ্ট আরও এক কালাকানুন ইউএপিএ বা সন্ত্রাসবাদী ক্রিয়াকলাপ প্রতিরোধ আইনে মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২২৬। রাষ্ট্র ইউএপিএ আইনের ৩৫নং ধারা সংশোধন করেছে, যাতে যে কাউকে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়ে জেলে পোরা যাবে। এ ধরনের কালাকানুনের মাধ্যমে দেশ জুড়ে অসংখ্য প্রতিবাদী-সত্তার উপরে আক্রমণ বাড়ছে।
সুতরাং, উচ্চতম ন্যায়ালয়ের বিভিন্ন নির্দেশিকা ও সতর্কবাণীকে পাথেয় করে শক্তিশালী ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার সময় হয়েছে।
পৃথ্বীশ মজুমদার
কোন্নগর, হুগলি
নিরাপত্তা কই?
ভূপেন হাজরিকার গানের পঙ্ক্তি অনুরণিত হচ্ছে, “সংখ্যালঘু কোনও সম্প্রদায়ের ভয়ার্ত মানুষের না-ফোটা আর্তনাদ যখন গুমরে কাঁদে, আমি যেন তার নিরাপত্তা হই, নিরাপত্তা হই, নিরাপত্তা হই।”
সত্য এই যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভারতের নাগরিক তথা বঙ্গবাসী হিসেবে আমি বিজেপি নেতাদের সাম্প্রদায়িকতা পূর্ণ বক্তব্যে আতঙ্কিত ও বিচলিত। পিতৃদেব তাঁর ছাত্রাবস্থায় স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁকে পুলিশের অত্যাচার ও আত্মগোপনের যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল। দেশভাগের সময় তিনি বলেছিলেন, “সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ, সে মাটি সোনার বাড়া।” তাই থেকে গেলেন ভারতের পুণ্যভূমিতে। জন্ম থেকেই জেনেছি, এ মাটি আমার স্বপ্নসাধনা, এ মাটি আমার প্রাণ, এর উন্নয়ন আমার কর্ম। বাংলার শান্তি-শৃঙ্খলা, সুস্থ সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য বজায় রাখার দায়িত্ব বাংলার সব মানুষের।
বর্তমান পরিস্থিতিতে স্পষ্ট যে, কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের এই মুহূর্তে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নেই। তাই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের যেখানে জয়ী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা, সেই আসনগুলো বাদ দিয়ে অন্য আসনগুলির প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ানোই হবে মানবিকতার আসল পরিচয়।
সৈয়দ আনসার উল আলাম
খেপুত, পশ্চিম মেদিনীপুর
উটপাখি
বিমান বসু (‘ভোটের আগে মুখ নয়, আন্দোলন চাই, বোঝালেন বিমান’, ২৩-১১) জানালেন যে, তাঁরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এবং আগামী নির্বাচনে কোনও ‘মুখ’-কে তুলে ধরবেন না। একটি মার্ক্সবাদী দল আন্দোলন করতে চাইছে, খুব ভাল খবর। কিন্তু এ রাজ্যে আন্দোলন করার ক্ষমতা বা ইচ্ছে বাম নেতৃবৃন্দের আছে কি? ২০১৮-য় লক্ষাধিক কৃষকের লং মার্চে এ রাজ্যের ক’জন কৃষক বা নেতা ছিলেন? এনআরসি-বিরোধী কয়েকটি মিছিল বা জনসমাবেশ (যা এ রাজ্যে প্রায় সব দলই করেছিল) ছাড়া সাম্প্রতিক অতীতে কোনও আন্দোলন বামফ্রন্ট করেছে বলে মনে পড়ে না। দ্বিতীয়ত, শ্রমিক-কৃষক আন্দোলন এবং ভোটের রাজনীতি, এ দুটোকে একসূত্রে বাঁধা কি সম্ভব? যে দলের শাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার বন্ধ ছিল বামফ্রন্টের পরিচয়, সেই কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী জোট ভোটবাক্সের রাজনীতি হতে পারে, তাকে আন্দোলন বললে ঘোড়াও হাসবে। ইভিএম-এ বোতাম টেপার সময় যোগ্য নেতার কথাই মাথায় রাখবেন। ‘মুখ’টাকে অস্বীকার করা বালিতে মুখ গোঁজার সমান।
দেবাশিস মিত্র
কলকাতা-৭০
সেই নাটক
‘নারদ কাণ্ডে তৃণমূল ও বিজেপি নেতাদের নথি তলব ইডি-র’ (২৪-১১) শীর্ষক সংবাদ কৌতুকের সৃষ্টি করেছে। আসন্ন ভোটের মুখে আবার সেই নাটক। এটা হল ভোট মহড়ার কাঁচামাল, সংবাদমাধ্যমেরও রসদ। মামলাগুলি দীর্ঘায়িত করে ভোটের আগে এক ধরনের পালার অভিনয় চলে। আইন আইনের পথে চলুক, এটাই আমরা চাই। কিন্তু আইন যে ভোটের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি হয়ে পড়ে, তা বড় আশ্চর্যের।
বিবেকানন্দ চৌধুরী
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান