মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধার কার্ডের ব্যবহারে অতিরিক্ত উৎসাহ দেখাচ্ছে। ভোটার কার্ডের সঙ্গে, প্যান কার্ডের সঙ্গে, রেশন কার্ডের সঙ্গে নাকি অাধার কার্ডের সংযুক্তি দরকার। কেউ বলছে, প্যান ও অাধার যুক্ত না হলে ব্যাঙ্কের কাজকর্ম আর করা যাবে না। কেউ বলছে, আধার কার্ডের সঙ্গে ভোটার কার্ড না জুড়লে, সামনের নির্বাচনে আর ভোট দেওয়া যাবে না। এগুলো সত্যি না রটনা?
আধার কার্ডে কোনও ভুল থাকলে, তা শোধরাতে পোস্ট অফিসে যেতে হবে। অনেক পোস্ট অফিসেই কর্মীর অভাবে এই কাজ হচ্ছে না। পোস্ট অফিসের উপর এই বোঝা না চাপিয়ে, আগে যে এজেন্সিগুলো আধার কার্ড তৈরি করছিল, তাদেরই তো ভুল সংশোধনের কাজে লাগানো যেতে পারত। আবার প্যান কার্ডে যদি ভুল থাকে, তা সংশোধন করতে নাকি আধার কার্ড লাগবে। আধার কার্ডের বিশ বচ্ছর আগে প্যান কার্ড পেতে শুরু করেছে মানুষ। তা হলে প্যান কার্ডের ভুল ঠিক করতে অাধার কার্ড লাগবে কেন? পুরো ব্যাপারটাই গুলিয়ে যাচ্ছে, মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে।
দীপক রঞ্জন কর
কলকাতা-৭৭
সুপারস্ট্রাকচার
সেমন্তী ঘোষ লিখেছেন ‘‘অর্থনীতিই যে ভিত বা ‘বেস’, আর বাকি সব ওপরকার বায়বীয় ‘সুপারস্ট্রাকচার’, মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনের ফল বার হতে এমন একখানা পুরনো আপ্তবাক্যে ফিরে যাওয়ার আবার একটা সুযোগ এসেছে’’ (‘ভোট কেবলই কৌশল নয়’, ১-১১)।
‘আপ্তবাক্য’ কথাটির আভিধানিক অর্থ, অভ্রান্ত বা প্রামাণিক কথা। কিন্তু অর্থনীতি সম্পর্কিত উপরের তথ্যটি অবশ্যই ভ্রান্ত। যাঁদের নামে এই আপ্তবাক্যটি চলে, সেই মার্ক্স
এবং এঙ্গেলস বহু বার তা দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানিয়েছেন।
জোসেফ ব্লককে লেখা চিঠিতে (২১ সেপ্টেম্বর, ১৮৯০) এঙ্গেলস বলেন ‘‘ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা অনুযায়ী বাস্তব জীবনের উৎপাদন এবং পুনরুৎপাদনই ইতিহাসের শেষতম নির্ণায়ক উপাদান। এর বেশি কিছু মার্ক্স বা আমি কেউই বলিনি। এখন আমাদের কথাকে বিকৃত করে কেউ যদি বলেন অর্থনীতিই একমাত্র নির্ণায়ক শক্তি, তিনি এই তত্ত্বকে একটি অর্থহীন, বিমূর্ত এবং অবাস্তব বুলিতে পরিণত করেন। অর্থনৈতিক অবস্থা অবশ্যই ভিত, কিন্তু উপরিকাঠামোর (সুপারস্ট্রাকচার) অন্য উপাদানসমূহ— শ্রেণিসংগ্রামের রাজনৈতিক রূপ এবং তার ফলাফল, যেমন কোনও যুদ্ধে জিতে বিজয়ী শ্রেণিকর্তৃক নতুন সংবিধান প্রণয়ন, আইনগত রূপরেখা এবং বিশেষত এই সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কে তার ছাপ, রাজনৈতিক, আইনি, দার্শনিক তত্ত্বসমূহ, ধর্মীয় মত এবং সেগুলির গোঁড়া মতবাদ হয়ে ওঠা— এগুলিও ঐতিহাসিক সংগ্রামসমূহকে প্রভাবিত করে এবং বহু ক্ষেত্রে তাদের রূপরেখা নির্ধারণ করে। এই উপাদানগুলির পারস্পরিক ঘাত-প্রতিঘাত, যা অসংখ্য আকস্মিক ঘটনার জন্ম দেয়, তাদের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক আন্দোলন শেষ পর্যন্ত নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। না হলে ইতিহাসের কোনও সন্ধিক্ষণে এই তত্ত্বের প্রয়োগ একটি সাধারণ বীজগাণিতিক প্রথম ডিগ্রির সমীকরণের চেয়েও সহজতর হয়ে ওঠে।’’
স্পষ্টতই এঙ্গেলস এই অতিসরলীকরণের বিরুদ্ধে লেখনী ধারণ করেছেন। বরজিয়াসকে প্রেরিত আর একটি চিঠিতে (২৫ জানুয়ারি, ১৮৯৪) এঙ্গেলস আরও প্রাঞ্জল ভাবে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেন, ‘‘রাজনীতি, আইন, দর্শন, ধর্ম, সাহিত্য, শিল্পের উন্নয়ন নির্ভর করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর। কিন্তু এই প্রতিটিই আবার পরস্পরের উপর বহু প্রভাব ফেলে, প্রভাবিত করে অর্থনৈতিক ভিত্তিটিকেও। সুতরাং অর্থনৈতিক পরিস্থিতিটাই একমাত্র সক্রিয় কারণ, আর অন্য ব্যাপারগুলো স্রেফ নিষ্ক্রিয় ফলাফল— তা ঠিক নয়।’’ সুতরাং ‘সুপারস্ট্রাকচার’ বায়বীয় বা নিষ্ক্রিয় কিছু নয়, বরং অত্যন্ত কঠিন বাস্তব উপাদানে নির্মিত, যা সমাজ পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
অবশ্য এঙ্গেলস স্বীকার করেছেন অর্থনীতিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার যে প্রবণতা তরুণ সমাজের মধ্যে দেখা যায়, তার জন্য আংশিক ভাবে তিনি এবং মার্ক্সই দায়ী। মূলত প্রতিপক্ষের মোকাবিলায়, পরিস্থিতির বিশ্লেষণে অনেক সময় তাঁরাও অর্থনীতির উপর অতিরিক্ত জোর দিয়েছেন, অন্য উপাদানগুলিকে যথোচিত গুরুত্ব দেওয়ার সময় বা সুযোগ অনেক সময় তাঁদের ছিল না। কিন্তু ইতিহাসের বিশ্লেষণে তত্ত্বকে বাস্তবে প্রয়োগের সময় কোনও ভ্রান্তিকে তাঁরা অবশ্যই প্রশ্রয় দেননি। (জোসেফ ব্লককে লেখা চিঠি, সেপ্টেম্বর ২১-২২, ১৮৯০)।
শুধু এটিই নয়, মার্ক্সের বহু তত্ত্বেরও অতি সরলীকরণ ‘মার্ক্সবাদীরা’ও অনেক সময় করেছেন। যেমন ফয়েরবাখের উপর তাঁর লেখা একাদশতম থিসিসে মার্ক্সের বহু চর্চিত উক্তি ‘‘দার্শনিকেরা এ পর্যন্ত দুনিয়াকে বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, আসল বিষয় হল কী ভাবে তাকে পাল্টে দেওয়া যায়।’’ অনেক সময়েই এটাকে এমন ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়, যেন বিশ্বকে ব্যাখ্যা করা এবং তাকে পাল্টানো দু’টি আলাদা এবং পরস্পর-বিচ্ছিন্ন বিষয়। আসলে কিন্তু দু’টিই ওতপ্রোত। সবটাই নির্ভর করে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে তার উপর— জীর্ণ সমাজব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে, না কি জীবনহারা অসুন্দরকে উৎখাত করে এক নতুন সমাজ ব্যবস্থা গঠনের জন্য।
(তথ্যসূত্র: অন লিটারেচার অ্যান্ড আর্ট, মার্ক্স, এঙ্গেলস, প্রগ্রেস পাবলিশার্স, মস্কো)
শিবাজী ভাদুড়ী
সাঁতরাগাছি, হাওড়া
‘আমরা বাঙালি’
‘গরুর সোনা ও হাম্বা’ (৭-১১) শীর্ষক পত্রে লেখক লিখেছেন, ‘‘‘আমরা বাঙালি’ থাকলে আর এক বার রাতের দেওয়ালে লেখা হত ‘‘বাঙালি গর্জে ওঠো’’।’’ সকলের অবগতির জন্যে জানাই, ‘আমরা বাঙালি’ সংগঠন বহাল তবিয়তেই রয়েছে আর বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষায় ও বাঙালি জাতির স্বার্থে অবিরাম সংগ্রাম, আন্দোলন করে চলেছে। আগামী ১৬ নভেম্বরে কলকাতার ধর্মতলা রাণী রাসমণি সরণিতে ‘অসমে এনআরসি-র নামে বাঙালি বিতাড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে’ এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেছে। ‘আমরা বাঙালি’ চির কাল বাংলা ও বাঙালির ভাষা, জাতিসত্তা ও আত্মমর্যাদার জন্যে সংগ্রাম করে যেতে বদ্ধপরিকর।
জ্যোতিবিকাশ সিংহ
মল্লিকপাড়া, হুগলি
লঘু শাস্তি
2 ‘‘লঘু’ শাস্তি, ক্ষুব্ধ কুহেলীর বাবা মা’ (৯-১১) শীর্ষক খবরের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। ঘটনার আড়াই বছর পরে তিন জন ডাক্তারের মাত্র তিন মাসের জন্য লাইসেন্স বাতিলের শাস্তির সিদ্ধান্ত একটা প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। গাফিলতির কারণে একটা শিশুর মৃত্যু হলে, তা গুরুতর অপরাধ নয়? তিন মাস পরেই তো ওই ডাক্তারেরা নিজ কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাবেন, কুহেলী তো কখনও ফিরবে না। আর যে প্রতিষ্ঠান এই মারাত্মক গাফিলতির জন্য দায়ী, তার কর্তাকর্ত্রীদের কোনও শাস্তিই হবে না?
বিশ্বনাথ মুর্মু
হাওড়া