রাত দশটার পর মাইক বাজবে না, গাড়ির হর্ন বাজবে, হর্ন বাজবে কাকভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। কারণ কয়েকটি বিশেষ অঞ্চল বাদে, গাড়ির হর্ন না বাজানোর কোনও সরকারি নিষেধ নেই। রাত সাড়ে তিনটে থেকেই যাত্রী নিয়ে তীব্র গতিতে (ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিমি) হর্ন দিতে দিতে অটোর ছোটা শুরু হবে, চলবে প্রায় পরের রাত একটা পর্যন্ত। এক-একটা বাইক তো তীব্র গতিতে সারা রাস্তাটা হর্ন বাজাতে বাজাতে ছোটে, দিনরাত্রি কোনও বাছ বিচার থাকে না। এখন রাস্তার পাশেই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল, বিয়েবাড়ি (বেশির ভাগেরই সরকারি অনুমতি নেই) গড়ে উঠেছে, ফলে যানজট লেগেই আছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ে হর্নের আওয়াজ। হর্নের শব্দের যন্ত্রণায় কম-বেশি সকলেই বিদ্ধ হন, সবচেয়ে বেশি বিদ্ধ হন রাস্তার পাশে বসবাসকারীরা, বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থরা। বাড়িতে ছোট্ট মেয়ে অসুস্থ থাকায় হর্ন বাজাতে নিষেধ করায় প্রহৃত হতে হয় (‘হর্ন বাজাতে নিষেধ, কান ছিঁড়ে নেওয়ার অভিযোগ’, ২১-২)।
যেখানে বাজির শব্দের তীব্রতা ৯০ ডেসিবেলের নীচে রাখার জন্য পরিবেশবিদরা সুপ্রিম কোর্টে যান, সেখানে গাড়ির হর্নের শব্দের তীব্রতা সর্বনিম্ন ১০৪ ডেসিবেল, সর্বোচ্চ ১১২ ডেসিবেল কেন চলতে দেওয়া হচ্ছে? শব্দদূষণের ৭০% গাড়ির হর্নের জন্য। শব্দদূষণে তাৎক্ষণিক মৃত্যু নেই ঠিকই, কিন্তু এর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব কম নয়। শব্দদূষণ মানুষের মধ্যে বিরক্তি উৎপাদন তো করেই, তা ছাড়াও তা থেকে হতে পারে উচ্চ-রক্তচাপ, ডিপ্রেশন, স্ট্রেস, শ্রবণশক্তি হ্রাস, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ঘুমে বিঘ্ন।
অসিতকুমার রায়
ভদ্রেশ্বর, হুগলি
মদ না খেলে
• ‘দোল ও মাতাল’ (১-৩) শীর্ষক চিঠিতে সমীরবরণ সাহা দোল পূর্ণিমার উৎসবে মদ খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। আজ শুধু দোল উৎসবে নয়, প্রত্যেক উৎসবেই তো মদ খাওয়ার প্রবণতা প্রচণ্ড বেড়ে গেছে। মদ না খেলে যেন উৎসবের আনন্দ উপভোগই করা যায় না। এমনকী শ্মশানেও আজ মদ না হলে চলে না। দাহকার্যে নিযুক্ত সকলেই হয়তো মদ খান না, কিন্তু কেউ কেউ তো খায়ই।
এই প্রসঙ্গে আর একটি অসুস্থ রীতির কথা উল্লেখ করব। কোনও কোনও মৃত্যু আজ আনন্দঘন উৎসবের খোরাক হয়ে ওঠে। বয়স্ক ব্যক্তি মারা গেলে কিছু পরিবারে উৎসবের ছবি ফুটে ওঠে। মৃত্যু যে বয়সেই হোক না কেন, তা সব সময় দুঃখের। বয়স্ক ব্যক্তি মারা গেলে বাজি ফাটিয়ে বাজনা বাজিয়ে মৃতদেহ নিয়ে শ্মশানযাত্রা কি সমর্থনযোগ্য স্বাভাবিক ঘটনা? বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যুতে দু’ফোঁটা চোখের জল না ফেলতে পারি, সংসারে তাঁর অবদানের কথা অস্বীকার করতে পারি, তা বলে এমন আনন্দ করতে করতে শ্মশানযাত্রা? এ কোন মানসিকতার পরিচয় তুলে ধরছি?
সত্যকিংকর প্রতিহার
যমুনা, দেশড়া, বাঁকুড়া
রক্তদান ‘উপহার’
• শান্তপ্রিয় চক্রবর্তীর ‘রক্তদান ‘উৎসব’’ (৩-৩) শীর্ষক চিঠির সঙ্গে দু’একটা কথা যোগ করতে চাই। রাজনৈতিক দলগুলোর বা তাদের মদতে পুষ্ট ক্লাবগুলোর আয়োজনে বা উৎসাহে সংঘটিত রক্তদান শিবিরগুলোতে রক্তদাতাদের প্রকাশ্যে উপহার দেওয়ার প্রবণতা চালু হয়েছিল দু’এক বছর আগে। প্রবল সমালোচনায় তা প্রকাশ্যে দেওয়া বন্ধ হলেও, এখনও অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে ঠিক পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন উপহার। আর এই শিবিরগুলোতে রক্তদাতার সংখ্যা বাড়াতে, রক্তদানের আগে ইচ্ছুক ব্যক্তির শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষাও হয় ঢিলেঢালা ভাবে। এটা সামগ্রিক স্বাস্থ্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে সমাজে।
রতন দত্ত
কলকাতা-৮৬
রেহাই দিন
• বিভিন্ন নির্বাচনে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সরকারি, আধা সরকারি ব্যক্তিদের নির্বাচনকর্মী হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকও বাদ যান না। উল্লেখ্য, একটি স্কুলের দৈনন্দিন কাজের প্রধান দায়িত্বও প্রধান শিক্ষকের, আবার ছুটির দিনেও, বিদ্যালয়ের যে-কোনও দুর্ঘটনার (আগুন লাগা, ভেঙে পড়া, চুরি হওয়া ইত্যাদি) আশু সমাধানের দায়িত্বও প্রথমত তাঁরই। তা ছাড়া দৈনন্দিন কাজের মধ্যে এখন পড়ে ছাত্রছাত্রীদের মিড-ডে মিল খতিয়ান, শ্রেণি শিক্ষণের ব্যবস্থা তদারকি করা, ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ানো। ই-মেলের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি কাজের জন্য চাওয়া তথ্য স্কুলের নথি থেকে সরবরাহ করা তো রুটিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনকর্মী হিসাবে নিযুক্ত হলে কম-বেশি তিন দিন প্রশিক্ষণ ও নির্বাচনের জন্য কম-বেশি ৩ দিন নিযুক্ত থাকতে হয়। ওই দিনগুলিতে প্রধান শিক্ষককে নির্বাচনকর্মী হিসাবে তুলে নেওয়া হলে, স্কুল অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে।
অজিতকুমার দাস
প্রধান শিক্ষক, মণিরামপুর স্বামী মহাদেবানন্দ বিদ্যায়তন, বারাকপুর
চেতনা
• ট্র্যাফিক সিগনাল মেনে গাড়ি চলছে, কিন্তু গাড়িটা একটু দূরে আছে দেখলেই পথচারী দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে যাচ্ছে। কখনও আবার গাড়ির সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাত দেখিয়ে গাড়িকে থামিয়ে রাস্তা পার। আবার এও দেখা যায় অল্প সময়ের জন্য সিগনাল খোলা অবস্থায় গাড়ি থেমে গেলে, সবাই মিলে গাড়ির ফাঁক দিয়ে গলে যাওয়া শুরু করে দেয়। এর ফলে গাড়ি যেতে পারে না এবং ওই সময়ের মধ্যে সিগনাল লাল হয়ে গেলে, গাড়িকে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। যাদবপুরের ৮বি স্ট্যান্ডে ৫-৬ জন সিভিক ভলানটিয়ার ছাড়াও ২-৩ জন অফিসার/সারজেন্টও থাকেন। আশ্চর্য, এই মোড়ে কিন্তু চার-চারটে ইলেকট্রনিক সিগনাল আছে। অর্থাৎ তা সত্ত্বেও লোকবল নষ্ট হচ্ছে। কেন এটা করতে হবে? এর জন্য দায়ী কে? আমরা যদি একটু নিয়ম মানতাম, তা হলে অযথা এই ‘ম্যান পাওয়ার’-এর জন্য বিপুল টাকা খরচ করতে হত না। স্টপ লাইনে দাঁড়াব না, জেব্রা ক্রসিং দিয়ে হাঁটব না, সাবওয়ে ব্যবহার করব না, কিন্তু যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে তা হলে গাড়ি পোড়াব, রাস্তা অবরোধ করব— এই মনোভাব কেন?
প্রতিকার হিসাবে দুটো ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে—
১) ট্রেনে এক সময় ‘চেতনা’ বলে একটা বিশেষ ধরনের কয়েকটা বগিসহ ট্রেনের ব্যবস্থা থাকত। যারা বিনা টিকিটের জন্য ধরা পড়ত, শুনেছি তাদের ওই গাড়িতে করে নাকি বেশ দূরে ছেড়ে দেওয়া হত। সেই ভাবেই, যাঁরা সিগনাল অগ্রাহ্য করবে, তাদের একটা বাসে এক ঘণ্টা আটকে রাখা যায়।
২) জল কামানের মতো কোনও ব্যবস্থা চালু করা যায়। ট্র্যাফিক সিগনাল অগ্রাহ্য করলেই জলে ভিজিয়ে দাও। অফিস যাওয়া, দোকানপাট করা তখন সব বন্ধ হয়ে যাবে। অবশ্য আগে থেকে ঘোষণা করে এ-রকম ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে দেওয়া উচিত।
সমীর দত্ত
কলকাতা-৩২
ভ্রম সংশোধন
• ‘চড়িলাম কেন্দ্র ছাড়লাম...’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (১১-৩, পৃ ৮) সিপিএমের ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক বিজন ধরকে রাজ্য সভাপতি লেখা হয়েছে। সিপিএমে সভাপতি পদটির কোনও অস্তিত্ব নেই।
• ‘ইতিহাস হারানোর যন্ত্রণা’ শীর্ষক গ্রন্থ-সমালোচনায় (১১-৩) বুদ্ধদেব বসুর বইয়ের নাম ‘আমার শৈশব’-এর পরিবর্তে হবে ‘আমার ছেলেবেলা’।
অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটিগুলির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়