সম্পাদক সমীপেষু: সর্বনেশে ইটভাটা

উত্তর মালদহের চাঁচলের বীরস্থল, আটঘরা, কৃষ্ণগঞ্জ, মালতীপুর, গোবিন্দপাড়ায় ইটভাটার ঘনত্ব এত বেশি যে ইদানীং আটঘরার কাছে বাস স্টপেজের নামই হয়ে গিয়েছে ভাটা স্টপেজ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০৯
Share:

‘‘ইটভাটার দূষণ প্রতিরোধে, অবশেষে নড়ে বসল প্রশাসন’’ (১৬-৩) শীর্ষক সংবাদটি আমজনতাকে একেবারেই আশাবাদী করে না। মালদহের গ্রাম-গ্রামান্তরে ইটভাটার বাড়বাড়ন্ত ঘটে চলেছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, স্থানীয় পঞ্চায়েত, বিডিও ও স্থানীয় থানার নাকের ডগায়। দেশের সর্বোচ্চ আদালত ও রাজ্যের হাইকোর্টের অসংখ্য হুঁশিয়ারি এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং সতর্কীকরণের মাঝে প্রায় প্রতি সপ্তাহে চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর, তুলসীছাট্টা, দৌলতপুর, রতুয়া, ভাদো, মানিকচক, কালিয়াচকে একটার পর একটা ইটভাটা গজিয়ে উঠেছে। সংখ্যাটা ৩৫০-এর বেশি।

Advertisement

উত্তর মালদহের চাঁচলের বীরস্থল, আটঘরা, কৃষ্ণগঞ্জ, মালতীপুর, গোবিন্দপাড়ায় ইটভাটার ঘনত্ব এত বেশি যে ইদানীং আটঘরার কাছে বাস স্টপেজের নামই হয়ে গিয়েছে ভাটা স্টপেজ। মাত্র ৬-৮ বছর আগে চাঁচল-সামসি রাজ্য সড়কের ধারে গোটা চারেক ইটভাটা দেখা যেত। আর সর্বত্রই ছিল ঘন আমবাগান এবং সবুজ ধানখেত কিংবা বাঁশবাগান। এখন এই রাজ্য সড়কের ২৩ কিমির মধ্যে ইটভাটার সংখ্যা ২৫-এরও বেশি। এটা শুধু রাজ্য সড়কের এক সামান্য ভগ্নাংশের চেহারা। চাঁচল-হরিশ্চন্দ্রপুরের ইটভাটার সংখ্যা ধরলে এটা দিয়ে দাঁড়াবে ৭০-এর বেশি।

আদালতের নির্দেশিকা, আমবাগানের ১.৬ কিমির বাইরে ইটভাটা করা যেতে পারে। তা গ্রাহ্যের মধ্যে আনে না ইটভাটা মাফিয়ারা। কারণ আমবাগান বলেই তো কিছু বাকি থাকছে না। ৩০-৪০ বছরের পূর্ণবয়স্ক আমগাছগুলোকে রাতারাতি কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে। ইলেকট্রিক করাত দিয়ে ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই এক একটা আমগাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। পাঁচ-ছ’টি ইলেকট্রিক করাত দিয়ে পনেরো বিঘার আমবাগান সাফ করতে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগছে। আরও ভয়ানক কথা হল, বয়স্ক আমগাছ পরিচর্যার জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বরাদ্দ টাকা বাগান-মালিকরা আত্মসাৎ করছে। সেই বাগান সাফ করে ইটভাটা তৈরি করতে ছ’মাসের বেশি সময় লাগে না।

Advertisement

ইটভাটার চুল্লির দূষণে তো আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ই, কিন্তু ইটভাটাগুলো যে ধুলোর স্রোত তৈরি করছে, সম্ভবত আদালতের গোচরে সেটা নেই। ‘ভাটা’ বাস স্টপেজের ৮-১০ কিমি রাস্তাতে ধুলোর ঝড়ে যাতায়াতই করা যাবে না। মাটি থেকে প্রায় তিন কিমি উচ্চতা পর্যন্ত ধুলো ছেয়ে থাকছে। পথচারী, সাইকেল আরোহী, গাড়ির চালক, অ্যাম্বুল্যান্স চালক প্রায় প্রত্যেকেরই চোখ বুজে যাচ্ছে এই ধুলোর স্রোতে। ইটভাটার জ্বলন্ত চুল্লির চিমনি থেকে প্রতিনিয়ত ছাইয়ের উদ্‌গিরণ হয়।

ভাটার এই রমরমার কারণ উদ্ঘাটন করাটা খুব কঠিন কিছু নয়। ১৫ বিঘা আমবাগান থেকে বছরে ১২-১৫ লক্ষ টাকা মুনাফা করাটা কার্যত দুঃসাধ্য। কিন্তু আমবাগান বা কৃষিখেত ধ্বংস করে ভাটা গড়ে তুলতে পারলে, অনায়াসে অত টাকা ঘরে নিয়ে যাওয়া যাবে। তা ছাড়া নগরায়ণের ক্ষুধাও সর্বগ্রাসী। সেই কারণে ইটের চাহিদাও তুঙ্গে। গোটা রাজ্যে কৃষিকাজে এখন আর আয় বলে তেমন কিছু নেই। ফলে কৃষিজমিতে অকৃষি চলবে না বলে যত আইনই থাক, সেই আইনকে ভেঙে ফেলার পিছনে এক ধরনের সামাজিক মদত থাকেই। ইটের বাজার সারা বছরই তেজি থাকে, যা দেখে শাসকরাও ভাবে অর্থনীতি যেখানে নানাবিধ কারণে মন্দায় ভুগছে, সেখানে নির্মাণ শিল্পে কিছুটা লোক তো নিয়োজিত হচ্ছে, অর্থনীতির একটা ক্ষেত্র অন্তত চাঙ্গা থাকুক। তাতে যদি পরিবেশ গোল্লায় যায় তো কুছ পরোয়া নেই। তা ছাড়া পুঁজিও এখানে খুব চলমান। কয়লা কেনা থেকে শুরু করে, মাটি কাটা সব কিছুতেই ব্যাপক অবৈধ টাকার লেনদেন চলে এই শিল্পে।

এই বল্গাহীন বাড়বাড়ন্তে, মালদহের কৃষিজমিতে এখন মরুভূমির পদধ্বনি। ইটভাটার চুল্লি ভূগর্ভস্থ জল টেনে নিচ্ছে, শুকিয়ে দিচ্ছে নির্বিচারে। যত ভূগর্ভস্থ জলে টান ধরছে, কৃষি যত বিপদের সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, তত বেশি করে অধিক অশ্বক্ষমতা-সম্পন্ন পাম্পসেট জমিতে বসানো হচ্ছে। সাবমার্সিবল পাম্পের প্রয়োগ মালদহের কৃষিজমিতে এখন ব্যাপক। এই অঞ্চলের প্রতিটি ‘সাবমার্সিবল’ পাম্পের দোকানদার প্রচুর টাকার বাণিজ্য করছেন, আর কৃষকরা চাপে পড়ছেন। বছর তিরিশ আগে ৬০০ টাকা খরচ করলেই একটা হ্যান্ড টিউবওয়েল বসানো যেত। এখন ‘সাবমার্সিবল’-এর খরচ পঞ্চাশ হাজার টাকারও বেশি। কৃষির খরচ কেন বাড়ছে শাসকগোষ্ঠী তা নিয়ে ভাবতে পারে। ইটভাটা শুধু দূষণই ছড়াচ্ছে না, কৃষিকাজকেই শেষের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

শান্তনু বসু চাঁচল, মালদহ

বাস স্ট্যান্ড নেই

জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের স্বার্থে ধুবুলিয়া নতুনবাজার সংলগ্ন যাত্রী প্রতীক্ষালয়টি ভেঙে ফেলা হয়েছে। আজ প্রায় দু’বছর হতে চলল, পুরনো রাস্তা দুই লেনে পরিণত, কিন্তু নিত্যযাত্রীরা রোদবৃষ্টি মাথায় বাসের অপেক্ষা করছেন। ধুবুলিয়া বাস স্ট্যান্ডে স্থানীয় বাস ছাড়াও দূরপাল্লার সব বাস থামে। আশপাশের কয়েক লক্ষ গ্রামবাসীর ভরসাস্থল এই বাস স্ট্যান্ড।

সুরজিৎ মণ্ডল ধুবুলিয়া, নদিয়া

রেলিং কাটুন

এক দিকে দুর্বার গতিতে যানবাহন ছুটল ডানকুনি উড়ালপুল জুড়ে, অন্য দিকে রাতারাতি রেল কর্তৃপক্ষ বন্ধ করল তার এক্তিয়ারে থাকা লেভেল-ক্রসিং। মানুষ পড়ল মহা আতান্তরে। স্থানীয় মানুষের তীব্র প্রতিবাদে পরবর্তী কালে পুলটির উত্তর দিকের গা ঘেঁষে গড়ে উঠল অপরিকল্পিত দু-দু’টি সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে সঙ্কীর্ণ ফুটপাত থেকে হুমড়ি খেয়ে, রেলিং ডিঙিয়ে যানবাহন ধরতে হয় যাত্রীদের, যা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য, ঝুঁকিপূর্ণ ও যন্ত্রণাদায়ক। সিঁড়ি সংলগ্ন স্বল্প পরিমাণ রেলিং কাটলেই সমস্যাটির সুরাহা সম্ভব।

ভানুপ্রসাদ ভৌমিক ডানকুনি, হুগলি

নতুন যন্ত্র

‘পাঁকে-চক্রেই খাবি খাচ্ছেন সাফাইকর্মীরা’ (৪-৪) লেখাটির প্রেক্ষিতে বলি, মানুষ নামিয়ে ম্যানহোল পরিষ্কার আইনত নিষিদ্ধ। পুরসভার নগর পরিকল্পনা দফতরের প্রাক্তন ডিসি বলেন, ‘‘যন্ত্রের উপরে এখনও আমরা পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে পারিনি। তাই এখনও মানুষ দিয়ে ম্যানহোল পরিষ্কার করতে হচ্ছে।’’ নিকাশি দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘অনেক জায়গায় ম্যানহোলে যন্ত্র প্রবেশ করানো যায় না। শুধুমাত্র সেখানেই পুরকর্মীরা নেমে পরিষ্কার করেন।’’

আমি এক জন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রাক্তন সহকারী বাস্তুকার, ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতায় ‘গ্র্যাবিং বাকেট’ নামে পাঁক উত্তোলনকারী একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করি। যাতে সাফাইকর্মীদের আর ম্যানহোল, ল্যাম্পহোল, গালিপিট-এ নামতে হবে না। বর্তমান যে ‘গালিপিট ক্লেনজিং মেশিন’, ‘ম্যানহোল ডিসিল্টিং মেশিন’ ব্যবহার করা হয়, তার দু’টি চোয়ালই একসঙ্গে হাঁ করে ম্যানহোলে নামাতে হয় পাঁক তোলার জন্য। কিন্তু গালিপিট বা ল্যাম্পহোলে (১ ফুট ৯ ইঞ্চি ফোকর়ে) ওই যন্ত্রটি মুখ খোলা অবস্থায় ঢোকানো যায় না, এ ছাড়া সরু অলিগলিতে গাড়ির উপর স্থাপিত ওই মেশিনটি চলাচলের বাধা সৃষ্টি করে। আমার যন্ত্রটি একটি আড়াই ফুট চওড়া ট্রলিভ্যানে চাপিয়ে চলাচলের উপযোগী। খনিজ তেল চালিত দামি ইঞ্জিন ছাড়াই, পুর মজদুররাই পুলি, দড়ির সাহায্যেই পাঁক, পলিমাটি তুলে একটি ছোট হাতগাড়িতে (জঞ্জাল ফেলার হ্যান্ডকার্টে) বহন করে, নির্দিষ্ট জায়গায় জমা করে, নগরীকে দূষণমুক্ত রাখতে সহায়তা করবেন।

যন্ত্রটি পেটেন্ট-প্রাপ্ত (১২৫৯১৮’-৭০এ), ৪ এপ্রিল ২০১২-তে ন্যাশনাল ইনোভেশন কাউন্সিল থেকে বিশেষ পুরস্কারপ্রাপ্ত। গত ৩০-৩১ জানুয়ারি ২০১৮ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান মেলায় মডেলটি প্রদর্শিত করে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে ৫০০০ টাকা অনুদান পেয়েছি।

জিতেন্দ্র নাথ দাস কলকাতা-৩

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement