‘শিশুকে বাঁচাতে রাত ২টোয় ভিড় ভোপাল স্টেশনে’ (৩-৪) শীর্ষক খবরের পরিপ্রেক্ষিতে এই লেখা। ভোপাল রেল স্টেশনে রাত দুটোর সময় হাতে অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে জনতার ভিড় দেখিয়ে দিল যে, মনুষ্যত্ব আজও টিকে আছে। দিল্লি যাওয়ার পথে ট্রেনে অসুস্থ সন্তানকে বাঁচাতে কৃত্রিম অক্সিজেনের প্রয়োজন হওয়ায় শিশুটির অভিভাবকরা তাঁদের এক বন্ধুর সাহায্যে অক্সিজেনের জন্য সমাজমাধ্যমে আবেদন করেন। আর সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে অগণিত ভোপালবাসী রাতের ঘুম ভুলে অক্সিজেনের সিলিন্ডার হাতে স্টেশনে পৌঁছে যান। এই ঘটনা মনুষ্যত্বের পাশাপাশি সমাজমাধ্যমের উপকারিতার কথাটিও প্রমাণ করল। আসলে যে কোনও যোগাযোগের মাধ্যমকে আমরা কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছি, তার উপর নির্ভর করে সেই মাধ্যমের ভাল-মন্দের দিকগুলো। প্রদীপের আলোয় পড়াশোনাও করা যায়, আবার দুষ্কর্মও করা যায়। এতে আলোর কোনও গরিমা বা কলঙ্ক হয় না। তাই মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদির ব্যবহার কখন কী ভাবে করা উচিত, তা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের একটা সচেতনতার পাঠ দেওয়া দরকার। অনেকেই বলেন মোবাইল ফোন কমবয়সি ছেলেমেয়েদের ক্ষতি করছে। কিন্তু আমরা বড়রাও কি এ ব্যাপারে নিজেদের ভূমিকা পালন করছি? সাধুবাদ জানাই সেই সহৃদয় ভোপালবাসীদের, যাঁরা সমাজমাধ্যমের ডাকে সাড়া দিয়ে অত রাতে ছুটে গিয়েছিলেন এক অচেনা শিশুর জীবন বাঁচাতে।
কুশল রায়
কলকাতা-১০৮
পড়ুয়াদের পাশে
‘স্কুলের গণ্ডি আরও ছড়াতে হবে’ (৬-৪) প্রবন্ধে লেখকের সঙ্গে সহমত পোষণ করার সূত্রেই এই চিঠি। অতিমারির সময়ে স্কুলছুট শিশুদের জন্য সুন্দরবনের জনৈক হেডমাস্টারমশাই একটি টোটোকে কম্পিউটার, প্রোজেক্টর ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে ভাবে আধুনিক শিক্ষাযানে পরিণত করেছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। আমাদের রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের ব্যতিক্রমী সংগঠন ‘শিক্ষা আলোচনা সোসাইটি’র সদস্যরা অতিমারির এই দু’বছরে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষাদান করেছেন। এই কাজে তাঁদের সাহায্য করতে শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা এগিয়ে এসেছেন। জেনে ভাল লাগল যে, আমাদের দেশে দরদি শিক্ষকের অভাব নেই, যাঁরা আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে নিজেদের খরচে বাংলা, অঙ্ক ও ইংরেজি ‘লেসন প্ল্যান’ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, অতিমারির চতুর্থ ঢেউয়ের কথা ভেবে তাঁরা নবনির্মাণ: কমিউনিটি শিক্ষার হাতবই নামে একটি পুস্তক ছাপিয়েছেন এবং নিজেদের ওয়েবসাইটে তার সফট কপি আপলোড করে দিয়েছেন। তাঁদের এই কাজকে আমরা সাধুবাদ জানাই। শিখন সেতু গ্রন্থ প্রসঙ্গে লেখক ঠিকই বলেছেন যে, সরকারের এই বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা উচিত ছিল। আবার এ কথাও যথার্থ যে, সব কিছু সরকারের উপর ছেড়ে দিলে চলবে না। সকল স্তরের শিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে এই প্রজন্মের স্কুলছুট পড়ুয়াদের মানসিক এবং পড়াশোনার ঘাটতি মেটানোর জন্য। না হলে অদূর ভবিষ্যতে এ প্রজন্মের দশা বেহাল হয়ে পড়বে।
দোলনচাঁপা তিওয়ারি দে
গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর
ব্যতিক্রমী শিক্ষক
‘স্কুল বাঁচাতে চপ ভাজছেন হেড স্যর’ (১৫-৪) শিরোনামে সংবাদটি সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। সমাজের অনেক ধরনের মানুষকে নিয়েই লেখালিখি হয়, সরকারি তরফে সহায়তা করার ব্যবস্থাও হয়, কিন্তু এঁদের কথা কেউ বলেন না। সত্যি সত্যিই এঁরা ব্রাত্য। কারণ, এঁরা চাইতে পারেন না, আন্দোলন করতে পারেন না, মাথা নত করতে পারেন না। শিক্ষকরাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষান্তে এক-এক জন মানুষ এক-এক ভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যবশত কেউ কেউ স্থানীয় প্রান্তিক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা নামক সমাজসেবায় নিজেকে যুক্ত করে বসেন। এখানে টাকা বেশি নেই। তবে এঁরা যে মানসিক সুখের সন্ধান পান, সেটা টাকা দিয়ে পাওয়া যায় না। অত্যন্ত কম বেতনে এই যে গুরুদায়িত্ব পালন এঁরা করে চলেছেন, এর জন্য যদি সরকার কিছুটা দায়িত্ব বহন করে এবং এঁদের পাশে দাঁড়ায়, তবে এই পেশায় একটু স্থিরতা আসে।
পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে তিন ধরনের। প্রথমত সরকারি, দ্বিতীয়ত স্থানীয় প্রান্তিক বেসরকারি এবং তৃতীয়ত কর্পোরেট বা মিশনারিজ় বেসরকারি। উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ ভাল ছাত্রছাত্রী প্রাথমিক পাঠ পায় কিন্তু ওই দ্বিতীয় পর্যায়ের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দুঃখের কথা হল, এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সবচেয়ে কম বেতনে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেন। আন্তরিক ভাবে শিক্ষকতা করেন ছাত্রছাত্রীকে মানুষ করার জন্য। এই ধরনের স্কুলের বেতন অত্যন্ত কম, তাই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। এই দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বহু স্কুল চিরতরে বন্ধ হওয়ার পথে। বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা অন্য কাজে নিযুক্ত হয়েছেন। এটি সমাজের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর কিছুটা সমাধান একমাত্র রাজ্য সরকারই করতে পারে।
রামমোহন চক্রবর্তী
নবদ্বীপ, নদিয়া
কেন ভুল
উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা প্রশ্নপত্রে ভুল ছিল। সেই তথ্য জানাতে ‘ভুল প্রশ্ন’ (সম্পাদক সমীপেষু, ১৬-৪) শিরোনামে শিবশঙ্কর দত্ত যে চিঠি লিখেছেন, সেই প্রসঙ্গে এই পত্র। প্রথম ভুল প্রসঙ্গে তিনি ঠিক তথ্য দিলেও, দ্বিতীয় ভুলে ঠিক তথ্য দেননি। তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রশ্নে ছিল ‘বর্ধমানে কোন গান বেআইনি?’ সেই তথ্য বলতে গিয়ে তিনি ‘বাংলা গানের ধারা’-র প্রসঙ্গ এনেছেন। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, সিলেবাস বহির্ভূত ‘বাংলা গানের ধারা’ থেকে প্রশ্নকর্তা প্রশ্নটি দিয়েছেন। আসলে প্রশ্নকর্তা তথ্যটি এনেছেন আমার বাংলা গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বন্যার সঙ্গে যুদ্ধ’ রচনা থেকে। পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় সংবাদ সংগ্রহে বর্ধমানে যান। সে সময় দামোদর নদীর বন্যা ছিল মানুষের নিত্যসঙ্গী। এই যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য বর্ধমানের বাসিন্দারা নেমে পড়েন বাঁধ বাঁধার কাজে। সেই বাঁধে বসে লেখক যখন ‘বাঁধ ভেঙে দাও’ এই বিখ্যাত গানটি গাইছিলেন, তখন গণনাট্য সঙ্ঘের দু’জন শিল্পী-অভিনেতা তথা নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্য ও শম্ভু মিত্র উপস্থিত হন। চুপি চুপি বিজন ভট্টাচার্য তাঁর প্রিয় লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের পিঠে প্রকাণ্ড একটি কিল মেরে বসেন এবং মজা করে জানান, ‘বর্ধমানে এ গান নিষিদ্ধ’। এই রচনাটিও ছিল সিলেবাস বহির্ভূত। আসলে প্রশ্নকর্তা যখন প্রশ্ন করেন, তখন তাঁর কাছে কাউন্সিল থেকে সমস্ত সিলেবাস ও প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। তিনি তা বার বার দেখবেন না? প্রশ্নে ভুল থাকবে কেন? শিক্ষার্থীদের কাছে কোন বার্তা যাচ্ছে? এটা আত্মসচেতনতার অভাব নয়?
সূর্যকান্ত মণ্ডল
কলকাতা-৮৪
সাঁকোর রেলিং
গঙ্গাধরপুর কামারশালা থেকে কর্ড লাইনে মির্জাপুর-বাঁকিপুর স্টেশন যাওয়ার রাস্তায় পঞ্চায়েতের অনতিদূরের সাঁকোর রেলিং দীর্ঘ দিন ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। এই রাস্তা দিয়ে প্রতি দিন প্রায় হাজারখানেক গাড়ি যাতায়াত করে। শুধু তা-ই নয়, এই সমস্ত এলাকা থেকে অতি সহজে সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালে পৌঁছনো যায়। এ ছাড়াও শতাধিক ছাত্রছাত্রী সিঙ্গুর মহামায়া উচ্চ বিদ্যালয়, গোলাপমোহিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, সিঙ্গুর সরকারি কলেজে যাতায়াত করে এখান দিয়েই। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, নাগরিক নিরাপত্তার স্বার্থে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে অবিলম্বে সাঁকোর রেলিং সংস্কার করা হোক।
তাপস দাস
সিঙ্গুর, হুগলি