‘ভাঙা গাছ কই! মিলছে না হিসেব’ (১-৭)— মনে করায় বৃক্ষগণনার প্রয়োজন। বৃক্ষরোপণে আমাদের ঐতিহ্য দীর্ঘ। রবীন্দ্রনাথ ৩০ আষাঢ়, ১৩৩৫ সালে বৃক্ষরোপণ উৎসব প্রবর্তন করেন। পশ্চিমবঙ্গে আশির দশক থেকে বৃক্ষরোপণ আন্দোলন শুরু হয়েছে। আজ ‘একটি গাছ, একটি প্রাণ’ জনপ্রবাদে পরিণত। কিন্তু হিসেব রাখার প্রয়োজন বুঝিনি। সরকারি ভাবে বনসৃজন প্রক্রিয়া গুরুত্ব পেয়েছে নানা পরিকল্পনায়। সেগুলো ছিল প্রধানত অরণ্যকেন্দ্রিক। আমপানে ভাঙা গাছ বেআইনি ভাবে কেটে বিক্রি করা হয়েছে, সরকারের কোষাগারে টাকা জমা পড়েনি, তাই বোঝা যাচ্ছে হিসেব না থাকার ক্ষতি।
২০১৫ সালে জাতীয় স্তরে পরিবেশ মন্ত্রক ভারতে প্রথম বৃক্ষগণনার প্রস্তাব দেয়। গাছের হিসেব কষতে বন দফতরের সঙ্গে পঞ্চায়েত বা ব্লকের যোগাযোগ থাকা দরকার। স্থানীয় ভাবে পঞ্চায়েত/ব্লকের সাধারণত আগে খবর পাওয়ার কথা। কিন্তু কে আগে উদ্যোগী হবে, এই চাপান-উতোরে হিসেবই পণ্ড হতে বসেছে। পরিবেশ দফতরেরও দায়িত্ব আছে। এখন তো বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমেও বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। সরকারি দফতরের সঙ্গে নাগরিক সমাজের নানা সংস্থাও দায়িত্ব নিয়েছে বিভিন্ন ভাবে। সব পক্ষ উদ্যোগী হলে বৃক্ষগণনা দ্রুত কার্যকর হওয়ার কথা। তখন হিসেব পেতে কষ্ট হবে না। রাজস্বের ক্ষতিও কমবে।
শুভ্রাংশুকুমার রায়
চন্দননগর, হুগলি
গণতন্ত্রের পরিচয়
2 বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় (‘মাতৃভূমি রক্ষার অধিকার’, ১-৭) বলেছেন যে, ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধে যে বামপন্থীরা দৃঢ়তার সঙ্গে চিনের আগ্রাসনের বিরোধিতা করেনি, আজ তাদেরই উত্তরসূরিদের প্রধানমন্ত্রী আহ্বান করছেন চিনা আক্রমণ নিয়ে আলোচনায়। তারা দেশপ্রেমীদের সমালোচনা করার সুযোগ পাচ্ছে। এটা আমাদের গণতন্ত্রের মাহাত্ম্য।
স্বাধীনতা সংগ্রামে সঙ্ঘ পরিবারের ভূমিকায় না-ই বা গেলাম। এটা নিশ্চয় প্রশ্ন করা যায় যে, ডোকলামে কী হয়েছিল, তা বলা নিয়ে এত গড়িমসি কি দেশাত্মবোধের কারণে? বন্ধুভাবাপন্ন নেপাল যখন আলোচনায় বসতে চায়, তখন আমরা কেন করোনার দোহাই দিই? আর চিনের সঙ্গে সংঘর্ষে এতগুলো প্রাণ যাওয়ার পরও কেন একই পরিবেশে আলোচনায় বসতে পারি? বিনায়কবাবু সারা বিশ্বের কমিউনিস্ট পার্টিগুলিকে একহাত নিয়েছেন। সে বেশ করেছেন। কিন্তু একটা দেশ যুদ্ধে যাচ্ছে আর সে দেশের কিছু নাগরিক প্রতিবাদ করছে, দেশদ্রোহী বামপন্থীদের বাদ দিয়েও এমন অনেক উদাহরণ আছে।
লেখক বৈরী মনোভাবাপন্ন দেশ থেকে আমদানি বর্জনের পক্ষপাতী। বেশ। কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে বিলাতি পণ্য বর্জনের কথাটা উত্থাপন করে গোল বাধিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ বিদেশি পণ্যের বিরোধিতা নিয়ে গাঁধীজির সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন, কারণ তাঁর মতে, সাধারণ মানুষ বিলাতি ক্যালিকো কেনে তা সস্তা বলে। গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধার যে মাপকাঠি লেখক নির্মাণ করেছেন, সেটাও ঠিক নয়। অতিমারির কারণে যখন বড় প্রতিবাদ সংগঠিত করা সম্ভব নয়, সেই পরিবেশে সরকার এনআরসি, সিএএ, এনপিআর-এর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ছাত্রদের বন্দি করছে। এটা কি গণতন্ত্রের পরিচায়ক?
প্রণব কান্তি বসু
কলকাতা-৩২
সেনার কর্তব্য
2 বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘সেনাবাহিনী যদি প্রশ্ন করে যে তারা কেন আপনার ঘুম নির্বিঘ্ন করার জন্য শূন্য ডিগ্রির নীচে দাঁড়িয়ে থাকবে সিয়াচেন বা গালওয়ানে?’’ এই প্রশ্নের উত্তরটি সহজ— এটি তাঁদের চাকরি ও এর জন্য তাঁরা করদাতাদের অর্থে বেতন পান। দাঁড়িয়ে না থাকার স্বাধীনতা প্রত্যেকের আছে, তবে চাকরিটা ছেড়ে দেওয়ার পর।
তপন পাল
বাটানগর
আইনের পথ
2 সবাই যদি নিজের হক নিজেই বুঝে নিতে পারত, তার চেয়ে সুখের আর কিছু হত না। দুর্ভাগ্য, এ দেশে তেমন স্বপ্ন দেখতে পারাটাও স্বপ্ন। তাই, এক জনের হকের কথা অপরকে বলতে হয়। সেটাই করতে গিয়েছিলেন দেগঙ্গার কিছু যুবা। তাঁরা দেখলেন, তিন লক্ষ উনিশ হাজার জনসংখ্যা বিশিষ্ট এই ব্লকের লোকেরা প্রধানত কৃষিজীবী, বেশির ভাগ লোকই কাজ পান না। এঁদের একটি সমীক্ষা পড়ে জানতে পারি, এই ব্লকে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের রূপায়ণ সন্তোষজনক নয়। সমীক্ষাভুক্ত পরিবারের বয়ান এবং ওয়েবসাইটে তাঁদের জব কার্ডের রেকর্ডে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। লোকে যে শুধু কাজ পাননি, তা-ই নয়, অনেকেই এই আইনের বিষয়বস্তু ও তাৎপর্য জানেন না। এই যুবারা আইনি সহায়তা ও শ্রমিক কৃষক কল্যাণ কেন্দ্র নামে ছোট একটি সংগঠন বানিয়ে দেগঙ্গার গ্রামে গ্রামে এই আইন নিয়ে প্রচার শুরু করেন। এর মধ্যে ঘটে করোনা এবং আমপান বিপর্যয়। দুর্ভাগ্য, রাজ্যের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কর্তব্য রাজনীতির কান্ডারিরা বহু ক্ষেত্রেই পালন করেননি। উল্টে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। এই নিয়ে গত ২২ জুন দেগঙ্গা ব্লকে প্রায় ২০০০ মানুষ জড়ো হন (‘ক্ষতিপূরণের দুর্নীতি নিয়ে উত্তাল দেগঙ্গা’, ২৩-৬)। আইনি সহায়তা ও শ্রমিক কৃষক কল্যাণ কেন্দ্রের সংগঠক যুবারাও এতে যোগ দেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ ১৬ জনকে গ্রেফতার করে এবং নানা ধারায় মামলা রুজু করে।
দেগঙ্গাতে সরকার আইন ভেঙেছে, একশো দিনের কাজ দেয়নি। তা-ও সরকারের শাস্তি হয়নি। কিন্তু মানুষ কাজের দাবিতে বিক্ষোভ করতে গেলে তাঁদের ধরে জেলে পুরে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, বলা হচ্ছে, ওঁরা বহিরাগত, মাওবাদী ইত্যাদি। সারা দেশ জুড়ে শাসকরা এই বার্তা দিয়ে চলেছে। বাংলাও সেই ট্র্যাডিশনের বাইরে নয়। দেগঙ্গার লোক কাজ না পাক, সরকারের নাম করে ফড়ে-ঠিকাদাররা যেমন খুশি লুটপাট করুক, লেখাপড়া জানা লোক যেন এ নিয়ে প্রতিবাদ না করে! করলেই তারা ‘মাওবাদী’।
কুমার রাণা
কলকাতা–১৬৩
দেশদ্রোহী?
2 কাশ্মীরে সংবাদমাধ্যমের বাক্স্বাধীনতা হরণ করার বিষয়ে (‘দমননীতি’, ২৫-৬) অনেকেরই মত, ‘‘ঠিকই তো, বাক্স্বাধীনতা মানে তো আর দেশের বিরুদ্ধে কথা বলা নয়।’’ এই শিক্ষিত মানুষের কাছে ‘দেশ’ বলতে বোঝায় শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন সরকার। যাঁরা সরকারের সমালোচনা করেন, তাঁরা দেশদ্রোহী। গণতন্ত্র কি এই শিক্ষাই দেয়? যদি এই শিক্ষিত সমাজের কাছে গণতন্ত্র ও বাক্স্বাধীনতার অর্থ এতটাই সঙ্কীর্ণ হয়, তা হলে দেশে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা থাকাটাই স্বাভাবিক। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে হিন্দুরা কতটা বিপদে আছে জানা না গেলেও, দেশের গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা আজ গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি।
সৌমিতা দেবনাথ
নাদনঘাট, পূর্ব বর্ধমান
মিউনিখ ও কবি
2 সোমেশ্বর ভৌমিককে ধন্যবাদ (‘মিউনিখের সঙ্গে পাকাপাকি জড়িয়ে গেল রবীন্দ্রনাথের নাম’, ২৭-৬)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে সারা বিশ্বের কত মানুষকে মানসিক ভাবে প্রেরণা দিয়েছেন, তার হিসেব হয় না। যিনি তাঁর গানেই বলে গেছেন— “আপন হ’তে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া।” আমরা, যারা শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রী, তারা জানি যে, আমরা সত্যিই অসীম সৌভাগ্যের অধিকারী। মিউনিখের এই তথ্য সকলকে আরও এক বার জানিয়ে দিল তিনি আমাদের বিরাট শক্তির উৎস। মানসিক শিক্ষার জন্য, মানসিক উৎকর্ষ তৈরির জন্য আমরা তাঁর কাছে চিরঋণী।
প্রজ্ঞাপারমিতা রায়
নরেন্দ্রপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।