সম্পাদক সমীপেষু: থিসরাস এবং রজে

যে থিসরাসটির আদলে ‘যথাশব্দ’ বা ‘সংসদ সমার্থশব্দকোষ’ পরিকল্পিত ও সঙ্কলিত হয়েছে তার স্রষ্টা ছিলেন পিটার মার্ক রজে (১৭৭৯-১৮৬৯) (ছবিতে)।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৯ ০০:০৪
Share:

কলকাতার কড়চায় (২২-৭) প্রকাশিত ‘বহুমুখী’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি পড়ে কারও মনে হলেও হতে পারে বাংলা ভাষায় প্রথম থিসরাসটি বুঝি অশোক মুখোপাধ্যায় দ্বারা সঙ্কলিত হয়েছে! প্রকৃত প্রস্তাবে ‘‘রজে-র থিসরাসের বিষয় এবং শব্দবিন্যাসের ধরনকে প্রায় অবিকল ব্যবহার করে, বাংলা ভাষায় প্রথম থিসরাস ছাপা হয়েছে ‘যথাশব্দ’। ১৯৭৪ সালে ঢাকার বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত এই অভিধানের সঙ্কলক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। ...মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের আগে প্রাণতোষ ঘটক একটি ছোট আকারের সমার্থশব্দ-সঙ্কলন করেছিলেন— নাম ‘রত্নমালা’ (আশ্বিন ১৩৬২; ১৯৫৫)। এই গ্রন্থের বিন্যাস বিষয়ভিত্তিক নয়— বর্ণনাক্রমিক।... আরও একটি বাংলা-ইংরেজি দ্বিভাষিক থিসরাস তথা ‘অভিধান’ প্রকাশিত হয়েছে— মণিমঞ্জুষা ( বৈশাখ ১৩৯৩; ১৯৮৬), সঙ্কলক ড. জগন্নাথ চক্রবর্তী। এই অভিধানের বিন্যাস বিষয়ানুযায়ী নয়— বর্ণানুক্রমিক।’’ এ সব তথ্য স্বয়ং অশোক মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘সংসদ সমার্থশব্দকোষ’ (ডিসেম্বর ১৯৮৬)-এর ভূমিকায় জানিয়েছিলেন।

Advertisement

যে থিসরাসটির আদলে ‘যথাশব্দ’ বা ‘সংসদ সমার্থশব্দকোষ’ পরিকল্পিত ও সঙ্কলিত হয়েছে তার স্রষ্টা ছিলেন পিটার মার্ক রজে (১৭৭৯-১৮৬৯) (ছবিতে)। ১৮৫২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল এই বিশ্ববিশ্রুত থিসরাসটি। 'Thesaurus of English words and phrases classified and arranged so as to facilitate the expression of ideas and assist in literary composition'. হ্যাঁ, প্রথম প্রকাশের সময় এত বড় নামই ছিল এই বিষয়ভিত্তিক বর্গীকৃত শব্দভাণ্ডারটির; যার সঙ্কলনের কাজ রজে শুরু করেন ১৮০৫ সালে। তখন তিনি ২৬। অতঃপর প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বহুবিধ ব্যস্ততার মধ্যেও অভিধান সঙ্কলনের কাজে বিরত হননি তিনি। পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থটি যখন প্রকাশিত হল তখন তিনি ৭৩।

রজে পেশায় ছিলেন এক জন চিকিৎসক। বেশ পসারও ছিল। তা ছাড়া বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তাঁর আগ্রহ ও বিচরণ ছিল অবাধ। গণিতবিদ্যায় অসামান্য সব গবেষণার কাজ করেছিলেন তিনি। লগারিদ্‌মের জন্য যে স্লাইড রুল-এর কথা আমরা জানি তার আবিষ্কর্তা ছিলেন রজে। এই আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৮১৪ সালে রয়াল সোসাইটি অব লন্ডন-এর ফেলো নির্বাচিত হন।

Advertisement

ফিলোজ়ফিকাল ট্রানজ়্যাকশনস অব দ্য রয়াল সোসাইটি অব লন্ডনে ৯ ডিসেম্বর ১৮২৪ তারিখ রজে তাঁর যুগান্তকারী গবেষণাপত্র ‘পারসিসট্যান্স অব ভিশন উইথ রিগার্ড টু মুভিং অবজেক্টস’ পাঠ করলেন। শারীরবিদ্যা বিশারদ ও গণিতজ্ঞ ডা. রজে সেখানে বললেন, মানুষ যে কোনও দৃশ্যই দেখুক, দৃশ্যটি চোখের সামনে থেকে সরে যাওয়া মাত্র দৃষ্টি থেকে বিলীন হয় না। চলচ্চিত্রের মূল সূত্রটি নিহিত রয়েছে এই ‘অবিরত দৃষ্টিতত্ত্ব’র মধ্যে। পৃথক পৃথক আলোকচিত্র অল্প দূরত্বে সাজিয়ে দ্রুতগতিতে চোখের সামনে উপস্থিত করলে ‘পারসিসট্যান্স অব ভিশন’-এর দরুন চিত্রটিকে চলমান বলে মনে হয়। এই ভ্রমের ওপরই চলচ্চিত্রের অবস্থান।

উল্লেখ করা যেতে পারে, এর ৭০ বছর পর ২৮ ডিসেম্বর ১৮৯৫, বিশ্বে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হল। আয়োজক দুই ভাই— অগ্যুস্ত ল্যুমিয়ের ও লুই ল্যুমিয়ের।

বিশ্বজিৎ দাস ঠাকুর

কলকাতা-৬৫

রামরাম বসু

‘ধর্মচ্যুত হননি কেরি সাহেবের মুনশি’ (রবিবাসরীয়, ৪-৮) প্রসঙ্গে এই চিঠি। ‘কেরী সাহেবের মুন্সী’ উপন্যাসে রামরাম বসুর চরিত্রটি খুব প্রশংসনীয় নয়। কিন্তু তিনি কি সত্যিই ও-রকম? দোভাষী রামরাম অর্থলোভে মিশনারিদের সঙ্গে ঘুরেছেন, এ কথা ভুল। তাঁর চরিত্রদোষেরও প্রমাণ নেই। বৈদান্তিক রামরাম ছিলেন প্রকৃত ধার্মিক।

রামরামের ধর্ম ও সমাজচিন্তার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর রচনা ও চিঠিপত্রে। তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি উইলিয়াম চেম্বার্সের ফারসি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। তাঁর মতো ইংরেজি-ফারসি জানা বিচক্ষণ ব্যক্তি ইচ্ছা করলে কোম্পানিতে বেশি বেতনে কাজ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি লোভী ইংরেজ বণিকদের চেয়ে সৎ পণ্ডিত খ্রিস্টানদের সাহচর্য বেশ পছন্দ করতেন।

গোঁড়ামি তাঁকে গ্রাস করেনি। মানবকল্যাণে খ্রিস্টের আত্মাহুতি তাঁকে আকৃষ্ট করে। রামরামকে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের জন্য ডাক্তার জন টমাস কিছুটা চাপ দিলেও, ভারতবন্ধু কেরি সে পথে যাননি। রামমোহনের আগে রামরামই সর্বপ্রথম ছাপার অক্ষরে ‘পরব্রহ্মের’ কথা লিখেছেন। রামমোহনের ‘বেদান্তগ্রন্থ’-এর (১৮১৫) অনেক আগেই ‘লিপিমালা’ (১৮০২) প্রকাশিত। অবশ্য ‘পরব্রহ্মে’র কথা শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে বহু বার উল্লিখিত। এমনকি অষ্টাদশ শতকে কলকাতার টোলে-চতুষ্পাঠীতে বেদান্ত পড়ানো হত।

রামরাম তাঁর নিজস্ব ধর্মমত কোথাও ব্যক্ত করার প্রয়োজন মনে করেননি। তাঁর ধর্মভাবনার মধ্যে বাংলার সমন্বয় প্রাণধর্ম প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে হিন্দু সনাতন ধর্মের পাশাপাশি ইসলামি সুফিবাদের সৌভ্রাতৃত্বের সোপান গড়ে উঠেছিল। প্রচলিত বেদান্তচর্চায় তাঁর যুক্তিবাদী মন গঠিত হয়েছিল। মিশনারিদের জন্য লিখিত হলেও ‘জ্ঞানোদয়’ (১৮০০) পুস্তিকায় প্রতিফলিত হয়েছে ব্রাহ্মণশাসিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও দুর্নীতিগ্রস্ত সামাজিক ব্যবস্থার প্রতি তীব্র নিন্দা।

তিনি বঙ্গজ কায়স্থ রাজা প্রতাপাদিত্যের বংশধর বলে গৌরব বোধ করতেন। ঔদার্য থাকা সত্ত্বেও তাঁর জাত্যভিমান ছিল প্রবল। অথচ তিনিই প্রথম বাংলায় খ্রিস্টীয় সঙ্গীত (১৭৭৮) লিখেছেন। তাঁর ‘প্রতাপাদিত্য চরিত’ (১৮০১) বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক ঐতিহাসিক জীবনীসাহিত্য। ‘লিপিমালা’ (১৮০২) বাংলা গদ্যের প্রথম পত্রসঙ্কলন। তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন। তিনিই প্রথম বাঙালি যাঁর রচনা ইংরেজি, হিন্দি ও ওড়িয়া ভাষায় অনূদিত হয়।

তিনি ধর্মচ্যুত হননি, নীতিবিচ্যুত হননি। স্বধর্মে থেকে পরধর্মের নতুন বিষয় জানতে চেয়েছেন। হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন: সহিষ্ণু থেকে সহমর্মী।

সুরঞ্জন মিদ্দে

কলকাতা-৮২

একটি আর্জি

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি, সংক্ষেপে জাইকার তরফে, মডেল সিটি ঘোষণা করা হল উত্তরপাড়া শহরকে। এখানকার পুরসভা এলাকার পচনশীল বর্জ্য থেকে সার তৈরি করে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখছে এবং আর্থিক লাভেরও মুখ দেখছে। পুরসভার কাছে আর্জি, উত্তরপাড়া গৌরী সিনেমার উল্টো দিকে উত্তরপাড়া আউটডোর হাসপাতালটি বহু দিন ধরে বন্ধ। বাড়িটি নোংরা দুর্গন্ধময়। তা ছাড়া বিভিন্ন সুযোগসন্ধানী লোকের ঠেক। ওটি পরিষ্কার করে, আবার আউটডোর বিভাগটি চালু করা হোক।

নবনীতা চট্টোপাধ্যায়

উত্তরপাড়া, হুগলি

জিএসটি মকুব

আমি এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মচারী। ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন কর্মরত এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিমার বন্দোবস্ত করেছে। যদিও অবসরপ্রাপ্তদের প্রিমিয়াম নিজেদের দিতে হয় এবং কর্মরতদের টাকা ব্যাঙ্ক বহন করে। প্রিমিয়ামের হারও কর্মরতদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তার উপর জিএসটি শতকরা ১৮ টাকা। গত চার বছরে প্রিমিয়াম ৭৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮৭৯২ টাকা হয়েছে, যেটা অনেকের এক মাসের পেনশনের চেয়েও বেশি। সেই কারণে এত টাকা দিয়ে বিমা করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। জিএসটি পরিষদের কাছে আবেদন, স্বাস্থ্যবিমায় সবার জন্য জিএসটি মকুব করা হোক, বিশেষ ভাবে বয়স্ক মানুষদের কথা বিবেচনা করে। কারণ, শেষ বয়সে বয়স্ক মানুষের চিকিৎসার জন্য মোটা টাকা ব্যয় করতে হয়।

সুব্রত দাশগুপ্ত

কলকাতা-৫৫

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement