আমার বাবা গত এপ্রিলের শেষে মারা যান। উনি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে চাকরি করতেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে উনি পেনশন ভোগ করেছেন। বাবার মৃত্যুর পরের মাসেই মায়ের পারিবারিক পেনশন ঢুকে যাওয়ার কথা। কিন্তু মা পেনশন না পাওয়ায় ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করি ও চিঠি দিই। কলকাতার সেন্ট্রাল পেনশন প্রসেসিং সেন্টার (সিপিপিসি) থেকে জানতে পারি বাবার পেনশন পেমেন্ট অর্ডার (পিপিও)-এ পুরো নাম ছিল না। অথচ, আধার, প্যান, ভোটার কার্ড— সব জায়গায় পুরো নাম রয়েছে। এই অবস্থায় বাবার পেনশন হওয়াই উচিত ছিল না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে যদি পিপিও এবং কেওয়াইসি-তে বৈষম্য থেকে থাকে, তা হলে সেটা আগে দেখা হল না কেন? একই ভাবে, মৃত্যুর শংসাপত্রেও বাবার পুরো নাম দেওয়া থাকায় মা পেনশন পাচ্ছিলেন না।
এর পর আমি বাবা এবং মায়ের সমস্ত কাগজপত্র প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে মেল করি। এ দিকে ব্যাঙ্ক থেকে আমাকে জানায় যে যদি বাবার মৃত্যুর শংসাপত্রে পুরো নাম বদলে নামের আদ্যক্ষর দিয়ে করে নিই, তা হলে মা পারিবারিক পেনশন পেয়ে যাবেন। সেইমতো বাবার মৃত্যুর শংসাপত্রে নাম বদলে ব্যাঙ্কে জমা দিই। এই সময়টায় মা বার্ধক্যজনিত কারণে খুব অসুস্থ ছিলেন। তাই ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে বার বার অনুরোধ করি যাতে উনি জীবিত থাকাকালীন পেনশনটা পেতে পারেন। ব্রাঞ্চ ম্যানেজারও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নিজের বৈধ পিপিও থাকা সত্ত্বেও জীবিত অবস্থায় মা পেনশন পেলেন না। গত অক্টোবরে তাঁর মৃত্যু হয়। এই গাফিলতি কার? ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের না সিপিপিসি কলকাতার? তা ছাড়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও কি এর দায় এড়াতে পারে, যেখানে গোটা বিষয়টা তাদের মেল করে জানানো হয়েছিল?
অশোক কুমার রায়, কলকাতা-৮৪
অযথা হয়রানি
নভেম্বর মাস পেনশনভোগীদের জীবন-শংসাপত্র বা লাইফ সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার মাস। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পেনশনভোগীরা নিজেরাই ব্যাঙ্কে গিয়ে শংসাপত্রটি জমা দেন। জীবিত পেনশন প্রাপককে চোখের সামনে দেখে এবং তাঁর জীবন প্রমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ব্যাঙ্ক আধিকারিক শংসাপত্রটি গ্রহণ করেন। আর যেখানে পেনশন প্রাপক অসুস্থতার কারণে ব্যাঙ্কে হাজির হতে অপারগ হন, সেখানে অন্য কোনও ব্যক্তি তাঁর হয়ে ব্যাঙ্কে গিয়ে জীবন-শংসাপত্র জমা দেন। তবে এ ক্ষেত্রে শংসাপত্রটি কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কয়েক জন ব্যক্তির দ্বারা স্বাক্ষরিত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে। যেমন, নিবন্ধিত ডাক্তার, গেজ়েটেড অফিসার, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, পুরসভার কাউন্সিলর-সহ অন্যান্য ব্যক্তি।
কিন্তু সম্প্রতি কতিপয় ব্যাঙ্কের আচরণ অসংখ্য পেনশন প্রাপকের দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এঁরা জীবন-শংসাপত্রের সঙ্গে আরও কিছু নথি দাবি করছেন। যেমন, প্যান কার্ড, আধার কার্ড, পিপিও-র কপি। অথচ, এই সব নথি ব্যাঙ্কের কাছেই থাকার কথা। তা ছাড়া, যাঁরা অসুস্থতার কারণে নিজেরা হাজির হতে পারছেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে জীবন-শংসাপত্র কেবলমাত্র গেজ়েটেড অফিসারদের দ্বারাই স্বাক্ষর করার কথা বলা হয়েছে। একই ফরমান জারি হয়েছে পারিবারিক পেনশন প্রাপকদের ক্ষেত্রেও। এখানে মৃত পেনশন প্রাপকদের স্বামী বা স্ত্রী পারিবারিক পেনশন পেয়ে থাকেন। অথচ, অনেক সময়ই প্রবীণ পেনশন প্রাপকের ক্ষেত্রে কোনও গেজ়েটেড অফিসারের স্বাক্ষর জোগাড় করা সম্ভব হয় না। ফলে পেনশনটাই অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
তা ছাড়া, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশও রয়েছে, কোনও ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে নিজে ব্যাঙ্কে উপস্থিত হতে না পারলে ব্যাঙ্কেরই কোনও কর্মীকে ওই ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে জীবন-শংসাপত্র নিয়ে আসতে হবে। কোনও ভাবেই তাঁরা পেনশন আটকে দিতে পারবেন না। এই মর্মে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ও রয়েছে। পেনশন প্রাপক জীবিত রয়েছেন কি না, সেটা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ যদি নিশ্চিত করতে পারেন, তবে এত নথি বা স্বাক্ষরের প্রয়োজন কী? পেনশন প্রাপকদের অযথা হয়রানি বন্ধ হোক।
তপন কুমার ভট্টাচার্য, ওলাইচণ্ডীতলা, হুগলি
লাগাম কবে?
সম্প্রতি একটি মর্মান্তিক পথ-দুর্ঘটনায় এক বালকের মৃত্যুর পর প্রশাসন বিচলিত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দু’টি বেসরকারি বাসের রেষারেষির ফলেই হয় দুর্ঘটনাটি। এর পর মন্ত্রী-সান্ত্রিরা জরুরি বৈঠকে বসে পর্যালোচনা করেছেন এবং কমিশন প্রথাকে মূল অপরাধী চিহ্নিত করেছেন।
এই প্রসঙ্গে দু’-একটি অপ্রিয় প্রসঙ্গ উল্লেখ না করলেই নয়। রাজ্যে বাস ভাড়া শেষ বার বেড়েছে সম্ভবত বছর ছয়েক আগে। তার পর তেল, যন্ত্রাংশ বা মূল্যবৃদ্ধিকে বিন্দুমাত্র আমল না দিয়ে ‘জনস্বার্থে’ ভাড়া অপরিবর্তিত থেকেছে। কোনও বেসরকারি সংস্থা নিজের ক্ষতি স্বীকার করে দীর্ঘ দিন ব্যবসা চালাবে না। ফলে ন্যূনতম সাত টাকা ভাড়াকে বাসমালিকরা দশ টাকা করে দিয়েছেন। অন্যান্য পর্যায়েও তাঁরাই ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যাত্রীরা বেশি ভাড়া দিলেও সরকার এই অন্যায়ের কথা কি একেবারেই জানে না? জানলেও কোনও পদক্ষেপ করত কি?
আর, বাসের রেষারেষি, মোড়ের মাথায় বা রাস্তার মাঝখানে যাত্রী ওঠানো-নামানো— এ তো ট্র্যাফিক পুলিশ ছাড়া জনসাধারণও প্রত্যহ দেখছে। ব্যবস্থা কি শুধু দুর্ঘটনার পরই নিতে হয়? গণ-পরিবহণের বাস্তবসম্মত আমূল সংস্কার এবং ট্র্যাফিক নিয়মকে কঠোর ভাবে প্রয়োগ না করলে নৈরাজ্য এবং মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় লাগাম টানা অসম্ভব।
অমিতাভ মিত্র, কলকাতা-৩০
কাজের চাপ
সর্বত্রই শুনি বেসরকারি কার্যালয়গুলিতে কাজের প্রচুর চাপ। অথচ, বর্তমানে সরকারি ক্ষেত্রেও চিত্রটা এর চেয়ে খুব আলাদা নয়। আমার স্বামী দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের সরকারি কর্মচারী। প্রায় প্রতি দিন কর্মক্ষেত্রে অসম্ভব মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়, কাজের বোঝা সামলাতে তিনি হিমশিম খান। সঠিক ভাবে নিয়োগও হচ্ছে না বহু দিন, ফলে বিপুল পরিমাণ কাজ জমা হচ্ছে। অনেক সময়েই তিনি ঠিকমতো বিশ্রাম পান না। এখন রেল-দুর্ঘটনা যে বেড়েছে, তা-ও সম্ভবত এর ফলেই। যে কোনও কর্মীর ক্ষেত্রেই মানসিক শান্তি, বিশ্রাম খুবই জরুরি।
কর্মক্ষেত্রে কাজের সম-বিতরণের জন্য শূন্যপদে নিয়োগের ব্যবস্থা করুক সরকার। একই সঙ্গে উচ্চপদস্থদের দ্বারা অধস্তনদের অপ্রয়োজনে হেনস্থাও বন্ধ হোক।
বিপাশা সরকার, কলকাতা-৬৫
দীর্ঘ অপেক্ষা
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর। সম্প্রতি এখানে মানুষকে সবচেয়ে অসুবিধা তথা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে হাবড়ায় অবস্থিত ভূমি রাজস্ব দফতরের কাজকর্ম নিয়ে। হাবড়া ব্লক-১ বিএল অ্যান্ড এলআরও অফিস হাবড়ার প্রাণকেন্দ্র তথা যশোর রোডের পাশেই অবস্থিত এবং এর পরিধিও সুবিশাল। প্রতি দিন শয়ে শয়ে মানুষ এই অফিসে আসেন জমি-জায়গা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সুষ্ঠু পরিষেবার আশায়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সম্প্রতি এমন কোনও বিষয় নিয়ে এলে এই অফিসে অযথা ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অভিযোগ, ব্যস্ত সময়ে দিনের পর দিন অফিসে এসে বহু ক্ষণ আধিকারিকদের জন্য বসে থেকেও তাঁদের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হচ্ছে না। এঁদের মধ্যে গৃহবধূ, প্রবীণ নাগরিকরা ছাড়াও স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও আছে। এই দফতর যদি নিষ্ঠার সঙ্গে সমস্ত কাজ সম্পন্ন করত, তা হলে সকলে উপকৃত হতেন।
প্রণব রায়, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা