এমন উৎসবহীন বৈশাখ যেন আর না আসে
ক্যাম্পাস থেকে সাধারণত দুই ইদ আর পূজার ছুটিতে বাসায় আসা হয়। এ বার চলে আসতে হলো অসময়ে। বাসায় এলে আগে অনেক আনন্দ হত। অনেক দিন পর জমে উঠত পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা। ঘুরতে বেরিয়ে পড়তাম ইচ্ছেমতো। কিন্তু এ বারের ঘরে ফেরার চিত্রটা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। চেনা মানুষগুলো পরিচিত সেই আচরণ করতে পারে না। বন্ধুরা এখন বলে না— দোস্ত, পার্কে যাবি? কেউ এখন ঘর থেকে বের হয় না। টঙের দোকানগুলো আর আমাদের ডাকে না। নিয়ম করে প্রতি মাসে রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমাদের এখন আর দেখা হয় না। এ দিকে বাসায়ও তেমন একটা প্রাণবন্ত থাকা যায় না। একঘেঁয়ে হয়ে যায় সময়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাই ফিরতে হয় বারবার।
অন্য দিকে টিউশন ছেড়ে চলে আসতে হল। আমরা যারা টিউশনি করে নিজের খরচ বহন করি, তাঁদের জন্য এই সময়টা খুব সঙ্কটের হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন মহল সবার কথা বললেও, শিক্ষার্থীদের এই দুর্ভোগ নিয়ে কাউকে কথা বলতে দেখা যায়নি তেমন। যে বাসাটি ভাড়া নিয়ে আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলেমিশে থাকি, সেখানে জমছে বাসা ভাড়া। বাড়ছে ঋণের বোঝা। ঠিক এই সমস্যাটি সারা দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থীর। হয়তো ওপার বাংলার শিক্ষার্থীদেরও এমন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কথাও গুরুত্ব সহকারে ভাবা প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট মহলের।
এত এত আক্ষেপের মাঝে কিছু ভালো দিক আছে এই বন্দি জীবনে। বই পড়া হচ্ছে এই অবসরে। গল্প লেখার চ্যালেঞ্জ আদান-প্রদান করি। অনেকদিন যাদের সাথে কথা হয়নি তাঁদের খোঁজ নেই। ভিডিয়ো চ্যাট করি লম্বা সময় নিয়ে। সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে এতে। রোমন্থন করি পুরনো অনেক স্মৃতি। অবশ্য এ বারের পয়লা বৈশাখও স্মৃতি দিয়েই কাটাতে হল। বৈশাখ এলে আমরা উৎযাপন করতে পারব না, তা কখনও ভাবিনি। এমন উৎসবহীন বৈশাখ যেন আর না আসে।
রুবাইদ আহমেদ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে মহারাষ্ট্রে আটকে পড়েছি
আমার বাড়ি বাকুড়াঁ জেলার ওন্দা থানার বিক্রমপুর গ্রামে। আমি মহারাষ্ট্রের সাভেডিতে আটকে পড়েছি। আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। তাই আমি এইটুকু উপকার চাই যে, আমার স্ত্রীর সাথে থেকে হাসপাতালে কেউ যেন সাহায্য করে। আপনাদের কাছে আমার এই অনুরোধ, দয়া করে আপনারা আমাকে সাহায্য করুন। আমার কাছে টাকাও বেশি নেই, কী করব কিছু বুঝতে পারছি না। সাহায্যের অপেক্ষায় রইলাম।
মানস সীট।
মোবাইল: ৬২৯৭৪১৭৯১৬
সুরতে অনাহারে দিন কাটাচ্ছি
আমার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ২ নং ব্লকের নগেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। আমি-সহ মোট ১৭ ডন গূজরাটের সুরতে আটকে পড়েছি লকডাউনের জন্য। আমরা প্রায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছি। হাতে টাকা নেই। আমারা বাড়িতে ফিরে যেতে চাই। দয়া করে বড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।
বিক্রম হালদার
ইমেল: bikramh468@gmail.com
কিডনির অসুখে আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবা, প্রশাসনের সাহায্য চাই
আমি পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বেড়ুগ্রামের বাসিন্দা। গত এক বছর ধরে কিডনির অসুখে আক্রান্ত আমার বাবা। বয়স ৬৮ বছর। সপ্তাহে দু-তিনটে ডায়ালিসিস নিতে হয়। লকডাউন থাকায় সব ধরণের গণপরিবহণ বন্ধ। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই বৃদ্ধ বাবাকে বাঁচানোর তাগিদে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে প্রায় ৪০ কিমি দূরে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হচ্ছে। মাঝে-মাঝে শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় রাতেও হাসপাতালে ভর্তি করার দরকার হয়। সঙ্গে চিকিৎসা ও ডায়ালিসিস সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজ-পত্র থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এমনকি, বাবার হাতে ডায়ালিসিসের যে ফিশচুলা চ্যানেল করা আছে, সেটা দেখানো সত্ত্বেও পুলিশ দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় আটকে রাখছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় থানায় লিখিত আবেদন করে সাহায্য চেয়ে যোগাযোগ করলে আমায় বলা হয়, ‘‘এ রকম কোনও সরকারি নির্দেশনামা নেই। রোগীর সাথে প্রয়োজনীয় কাগজ থাকলে পুলিশের আটকানোর কথা নয়।’’ অথচ বাড়ি থেকে বোলপুর যাওয়ার রাস্তায় অন্তত দু’-তিন জায়গায় হয়রানি হতে হচ্ছে। অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া অন্য গাড়িতে যাওয়ার জন্য এই দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। আমাদের গ্রামের একমাত্র অ্যাম্বুল্যান্সটি কয়েক মাস ধরে থানায় আটকে রয়েছে। আশেপাশে আর কোনও অ্যাম্বুল্যান্স পাচ্ছি না। ফলে এক দিকে অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে যেমন রাস্তায় পুলিশের হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে, অন্যদিকে প্রাইভেট গাড়ি করে মাসে ১০-১২ বার ডায়ালিসিস করতে যাওয়ার জন্য বিপুল অংকের টাকা খরচ হচ্ছে। যা বাবার পেনশনের স্বল্প টাকায় কুলিয়ে উঠছে না।
এই অবস্থায় স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন যদি মানবিক হয়ে কিছু সাহায্য করেন খুব উপকার হয়।
মৃণাল কান্তি ভট্টাচার্য
মোবাইল: ৯৭৩২৩৬৬৫১৯
কেপটাউন-এ পরিস্থিতি কি আসতে পারে ভেবেই উদ্বিগ্ন
কেপটাউন বরাবরই আমার প্রিয় জায়গার মধ্যে পড়ে এখানকার সৌন্দর্যের জন্য। যখন ভেবেছিলাম অফিস থেকে কেপটাউন আসতে হবে কাজের জন্য, খুব খুশি হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি, না কী পরিস্থিতি আসতে পারে সামনে। এখনও অবধি সংখ্যাটা ২৭০০ দেখাচ্ছে। কিন্তু ভাবলেই ভয় লাগছে, যেখানে প্রথম বিশ্বের দেশগুলো এ ভাবে করোনর কবলে তোলপাড়, এই তৃতীয় বিশ্বের দেশে কি অবস্থা হবে।
কোনও সন্দেহ নেই, ভারত চেষ্টা করছে খুব ভাল ভাববে সামলানোর এবং এর জন্য পুরো প্রশংসা প্রাপ্য ডাক্তার, পুলিশ, প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের। কিন্তু এ দেশে প্রথমত গরিব অনেক বেশি। তার উপর তৃতীয় বিশ্বের দেশ হওয়ায় সাহায্য হয়তো অনেক দেরিতে আসবে। তবে এখানকার সরকার চেষ্ট করছে পুরোপুরি সামলানোর। প্রায় ১ মাস হতে চলল আমরা গৃহবন্দি। লোকজন ও যতটা সম্বব বুঝেই বেরোচ্ছেন, দূরত্ব বজায় রেখেই চলছেন সবাই। আমি জানি যে, আমরা নিশ্চয়ই পারব এই অসুখ থেকে সেরে উঠতে। নিশ্চয়ই আবার আলো উঠবে এই অন্ধকার জগৎটাকে দুমড়ে মূচড়ে দিয়ে। তত দিন অবধি শুধু ঘরে বসে অপেক্ষা করা আর যতটা সম্ভব পরিবারকে সময় দেওয়া। এটাই সেই সেরা সময়, যেখানে নিজেকে গান-বাজনা, আঁকা, রান্না বা ওয়েব সিরিজ, যা ভালো লাগে তাতে মনোনিবেশ করা। আর আমাদের মতো যাঁরা পরিবার ছেড়ে দূরে আছেন, তাদের ভিডিও কলই ভরসা পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য। ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সম্রাট মুখোপাধ্যায়
নয়ডার সেক্টর ২২-এ আটকে পড়েছি আমি। এটা হটস্পট জোন। মানে আরও বেশি করে নিয়ন্ত্রণ ও টেস্ট কিট দিয়ে প্রত্যেক মানুষকে টেস্ট করা দরকার। কিন্তু জানি না, সরকার কী করছে। দুধের দোকানে লম্বা লাইন। একটা সব্জির গাড়ি আসছে। সেখানেও লম্বা লাইন। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়, এই জায়গাগুলো পুলিশ ও সরকারের দেখা উচিত। আর দোকানগুলো রোজ দু’ঘণ্টার জন্য খোলা হোক, যাতে এই ভিড় টা কমানো যায়। প্রত্যেকটা গরিব মানুষ, যাঁরা এখন কোনও কাজ করছেন না, তাঁদের তাঁদের সবাইকে দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হোক। না হলে অনেক মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যাবে। দিল্লি এনসিআর যেটা দেশের রাজধানী, সেখানে যদি এই ফাঁকফোকর থাকে, তাহলে সেটা খুবই দুঃখের। আশা করি, যেন সেরে ওঠে ইন্ডিয়া আগের মতো খুব তাড়াতাড়ি।
সুদীপ্তা বন্দ্যোপাধ্যায়