গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
চিঠি এক) এ কোন শিক্ষিত সমাজে বাস করছি আমরা?
আজ সকালে একটা অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হলাম। আমার মা ক্যান্সারের পেশেন্ট, গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তা জানতে পারি। এবং তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা শুরু করা হয়। গত ৮ই মার্চ কলকাতায় মায়ের অপারেশন করা হয়। মা দীর্ঘ দিনের সুগারের রুগি। এই অপারেশনের দরুণ মায়ের সুগার বেড়ে যায়। তাই কয়েক দিন পর পর রক্তের সুগার, হিমোগ্লোবিন ও অন্যান্য পরীক্ষা করাতে হয়। আমার ছেলে ঢাকায় পড়াশোনা করে। মাকে অপারেশনের পর গত ১৭ মার্চ নার্সিংহোম থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই দিন আমার ছেলে ঢাকা থেকে ফ্লাইটে ফিরে আসে। আমরা সকলে বহরমপুরে ফিরি। ফেরার পর থেকেই সেখানকার আশাকর্মীরা আমাদের পর্যবেক্ষণে রাখেন। সুতীরমাঠে আমাদের বাড়ির দরজায় একটা কাগজও লাগিয়ে দিয়ে যান। কাগজটিতে লেখা রয়েছে, কোভিড-১৯। তাতে ছেলের নাম এবং ১৭ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত কোয়রান্টিনের সময়। এই কাগজটি দেখে আমার কোনও হিতৈষী, শিক্ষিত প্রতিবেশী ফেসবুকে পোস্ট করেন যে, আমার ছেলে কোভিড পজিটিভ। আত্মীয়দের ফোনে জানতে পারি সে কথা। যদিও এক দিন পরেই দু্ঃখপ্রকাশ করে তিনি পোস্টটি তুলে নেন। এর মধ্যে মাকে ব্লাডসুগার, হিমোগ্লোবিন ও অন্যান্য টেস্ট করাতে বলেন চিকিৎসক। নাম উল্লেখ করছি না। তবে যে ছেলেটি বাড়িতে এসে মায়ের ব্লাড কালেক্ট করেন, তাঁকে গত কাল ফোন করি। তিনি বলেন, আজ সকালে এসে মায়ের ব্লাড নেবেন। আজ সকালে এসে তিনি কলিং বেল টেপার পর দরজা খুলতে খুলতে কাগজটিতে চোখ পরতেই আঁতকে ওঠে কোভিড-১৯ লেখা দেখে, পুরোটা পড়ার প্রয়োজন মনে না করেই “আমি ব্লাড নেব না” বলে বাইক স্টার্ট করে তৎক্ষণাৎ চলে যান তিনি। এমন ভাব করেন যেন মনে হয়, বাঘ-ভাল্লুক দেখেছে। আমি অবাক হয়ে যাই, এ কোন শিক্ষিত সমাজ, যেখানে আমরা বাস করছি? এঁরা কি মানুষ! এঁদের ব্যবহারে আমি মর্মাহত। যদি সত্যিই কোভিড-১৯ পজিটিভ হন, তা হলে আমাদের পাশে কি কেউ থাকবে না? এঁরা কি নিজেও জানেন, করোনাভাইরাস বহন করছেন কি না? হে ঈশ্বর, এদের তুমি ক্ষমা করো।
তনুশ্রী বাগ, সুতীরমাঠ, বহরমপুর
চিঠি দুই) অপারেশন করাতে এসে ভেলোরে আটকে পড়েছি, বাড়ি ফিরতে চাই
গত ১৭ মার্চ বাবা এবং এক কাকুর সঙ্গে ভেলোরের ক্রিস্টিয়ান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসেছিলাম। তখন থেকেই এখানে আটকে পড়েছি। আমার অপারেশন হওয়ার কথা ছিল ২৩ মার্চ। কিন্তু সমস্ত মেডিক্যাল রিপোর্ট তৈরি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও লকডাউনের জন্য আমার অপারেশন পিছিয়ে যায়। এই মুহূর্তে এখানে আমরা খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। টাকাপয়সাও সব শেষ হতে চলেছে। এখানে ঘরভাড়া দিতে এবং খাওয়াদাওয়া করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। দয়া করে আমাদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করুন। আমরা বাড়ি ফিরতে চাই। এখানে খুব কষ্টে রয়েছি। এই আবেদন মঞ্জুর করলে বাধিত থাকব।
ফিরোজ আহমেদ, থানা: মাটিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা
চিঠি তিন) নিঃশব্দে সামাজিক দ্বায়িত্ব পালন করে চলেছেন এই মহিলা
একটা অত্যন্ত বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এখন যে যার জীবন বাঁচাতে গৃহবন্দি। আব্যশিক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে কাজ করে চলেছেন। এ ছাড়াও সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যাঁরা নিঃশব্দে সামাজিক দ্বায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এ রকমই এক জন যূথিকা দত্ত। কামালগাজির বাসিন্দা এই মহিলা এক মহান কাজে ব্রতী। আশপাশের এলাকার সব পথকুকুরকে নিজের দ্বায়িত্বে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়ান তিনি। করোনা-আতঙ্কে যাঁর বিন্দুমাত্র ঘাটতি হয়নি। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এই চড়া রোদে রাস্তায় বসে এমনটা করে চলেছেন তিনি। অবলা জীবগুলো কথা বলতে পারে না। পারলে হয়তো ধন্যবাদ জানানোর ভাষা থাকত না তাদের। আর যিনি এই কাজটি করছেন, তিনি তাঁর মুখে মাস্কের আড়াল থেকেই বলেন, “সবাই যদি মুখ ফিরিয়ে নিই, এরা যাবে কোথায়? থাকুক প্রাণের ভয়, তবুও আমি ওদের খাইয়ে যাব।”
করোনা-আতঙ্ককে অগ্রাহ্য করে পথকুকুরকে নিজের দ্বায়িত্বে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়ান যূথিকা দত্ত। ছবি: সুদীপ্ত দাস।
প্রার্থনা করি, তিনি সুস্থ থাকুন আর নিজের মানবধর্ম পালন করে যান।
সুদীপ্ত দাস, কামালগাজি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)