Corona

বার্লিনকে যারা চেনেন, তাঁরা ভাল করেই জানেন এ শহর সহজে দমে না! 

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০ ১৮:১২
Share:

সুনসান বার্লিন। —নিজস্ব চিত্র।

১৬ বছর ধরে এই শহরের ধমনীর টান জানি। কর্মসূত্রে আমি একটি বৃহত্তর আমেরিকান ইলেকট্রনিক কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত। বার্লিন সরকারি ভাবে কোয়রান্টিনে যাওয়ার আগেই আমাদের কর্মকর্তারা আমাদের অফিস আর তার সংলগ্ন সুদৃশ্য বিপণি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

Advertisement

আজ প্রায় পাঁচ সপ্তাহ হতে চলল অপ্রত্যাশিত ভাবে ছুটিতে আছি। অপ্রয়োজনে বাইরে যাওয়া বন্ধ করলেও এক বারের জন্যও ভয় আমাদের গ্রাস করতে পারেনি। কী রকম যেন একটা প্রচ্ছন্ন আস্থা ছিল জার্মান চিকিৎসা ব্যবস্থার উপরে।

এখানকার মেডিক্যাল সিস্টেমের সম্পর্কে যাঁদের ধারণা নেই, তাঁদের জন্য একটা উদাহরণ দিই। বার্লিনকে ঘিরে এস ৪১ আর এস ৪২ চক্ররেল চলে। সমস্ত রুটের কোথাও যদি এক জন সাধারণ নাগরিকও অসুস্থ হয়ে পড়েন, সমস্ত রুটের রেল আটকে দেওয়া হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই মানুষটির চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় এখানে থাকার সবচেয়ে প্রাথমিক শর্তই হল মেডিকেল সুরক্ষার আওতায় আসা।

Advertisement

আরও পড়ুন: সঙ্ঘাত তো শেষ কালই, আজও কেন ঘরে বসে কেন্দ্রীয় দল?

যদি না থাকে, তাঁরা থাকার যোগ্যতা হারায়। আর যাদের সামর্থ্য নেই অথচ যে কোনও কারণে থাকার অধিকার আছে, তাঁদের জন্য সরকারের সমাজকল্যাণ ও পরিবার দফতর খাদ্য, বাসস্থান ও সামাজিক সুরক্ষার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থাও অব্যাহত রাখে। এ কারণেই বিগত বছরগুলোতে জার্মানিই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলি থেকে আগত শরণার্থীদের মূল লক্ষ্য।

সাধারণ শারীরিক গোলযোগেও আমরা ডাক্তারের কাছে যেতে অভ্যস্ত, আর সে কারণেই আমাদের সবার মেডিক্যাল প্রোফাইল হাউজ ফিজিসিয়ানের কাছে থাকে। বার্লিনের সবচেয়ে বড় হসপিটাল ফেসিলিটি চ্যারিটি-র নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ২ বছরের উপরে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে মেডিসিন এবং রিসার্চের প্রত্যেকটি বিভাগ কীভাবে একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতোভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করে। বার্লিনের তিনটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ও এই ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই কাজ করে।

জানুয়ারি মাসে করোনার প্রাথমিক প্রাদুর্ভাবের সময়েই জার্মানি প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল। সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক দফতর আর রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের সাংগঠনিক প্রধানরা মিলে সবকিছুই আয়ত্তে রাখার চেষ্টা করে গিয়েছে সব সময়ে। চ্যান্সেলর মের্কেলও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জনসংযোগ মাধ্যমের দ্বারা সাধারণের মধ্যে কখনও আতঙ্কের সৃষ্টি হতে দেননি।

প্রাথমিক ভাবে টয়লেট পেপার আর কিছু সাধারণ সামগ্রীর সাময়িক অভাব হলেও, কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি বদলে যায়। তার পর থেকে কখনওই কোনও অভাব দেখতে পাইনি। আজকেও বাইরে যখন বেরিয়েছিলাম, তখনও মনে হল যে জীবনযাত্রা স্বাভাবিকই আছে। আশপাশের পার্কগুলোতে লোকের ভিড় চোখে পড়ার মতো। শহর যেন নিজে থেকেই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে।

লকডাউন সরকারিভাবে ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা চলছে সরকারিভাবেই।সব কিছুর পরেও সাধারণ মানুষও যেন এ ব্যাপারে কিছুটা নিরুত্তাপ। পড়ে পাওয়া ছুটির চোদ্দো আনা যে যে ভাবে পারছে কাটাচ্ছে। আমিও এ সময় কখনও হোম অফিস আর কখনও কলিগদের ভার্চুয়াল কুকিং কোর্স দিয়ে সময় কাটাচ্ছি নতুন দিনের আশায়। বাড়িতে বাবা, মা বোন আর আত্মীয় স্বজনের চিন্তা এর সঙ্গে নিত্যসঙ্গী।

আরও পড়ুন: ত্রাণ নিয়ে বিক্ষোভ, বাদুড়িয়ায় জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ, মাথা ফাটল পুলিশের

ইতালি, স্পেন, ইংল্যান্ডের তুলনায় জার্মানিতে কম মৃত্যুর হার যেন এর মধ্যে আশার আলো। আর প্রকৃতি কোনও লকডাউন মানে না। নিজের খেয়ালে চেরি, আপেল, নাসপতি গাছগুলো ফুলে ফুলে ভরে গিয়েছে। মাটিতে ল্যাভেন্ডার, টিউলিপ আর ড্যাফোডিলের মেলা। যেন আগামী দিনের পূর্বাভাস। সবাই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।

রঞ্জন হাওলাদার, বার্লিন, জার্মানি

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement