Coronavirus

আমেরিকায় ঘরে বসে কাজ করাটা কেমন অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা মনোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।আমেরিকায় করোনাতে  আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রাথমিক দু’-তিন হাজার ছাড়িয়ে তিন লক্ষতে  পৌঁছে গেছে। 

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ১৮:২৮
Share:

বাজার-দোকানে জিনিস নেই।

এখনও এক মাস হয়নি। মার্চের আট তারিখ রবিবার ধুমধাম করে বন্ধুদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমাদের পঁচিশ বছরের বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছিলাম। কী মজা , হুল্লোড়, হাসাহাসি। কত মানুষ, শুভানুধ্যায়ী, পরিচিতরা এসে উপভোগ করে গেলেন আমাদের সঙ্গে সেই আনন্দ আয়োজন। শুধু একজন ছাড়া। প্রাজ্ঞ প্রবীণ মানুষটি দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, বিশেষ সাবধানতা পালন করতে না আসার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। সারা বিশ্ব থেকে আসতে থাকা খবরের ভিত্তিতে ততদিনে তিনি জানতে পেয়েছেন COVID-19 ভাইরাস বয়স্কদের জন্যে মারাত্মক। একমাত্র ওয়াশিংটন স্টেট্ ছাড়া করোনার আক্রমণ তেমন ছড়ায় নি তখন আমেরিকায়। ভয়ভীতিও সর্বগ্রাসী হয়ে দেখা দেয়নি মার্কিনবাসীদের মধ্যে। ওঁর স্ত্রী রাগ করে বললেন , তোমার জন্যে অমন সুন্দর অনুষ্ঠানে যাওয়া হল না আমার। ঋষিতুল্য মানুষটি নাছোড়বান্দা। যেন ভয়াবহতা দিব্যচক্ষে দেখতে পেয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

পরের সপ্তাহে অফিসে কানাঘুষো শোনা গেল, আমাদের কলোরাডো-সহ আমেরিকার অনেক প্রদেশেই লকডাউন হতে পারে। শুক্রবার অর্থাৎ গত ১৩ মার্চ, শুক্রবার অফিস থেকে বলে দেওয়া হল বাড়ি থেকে কাজ করতে। আপাতত দু’সপ্তাহ, তার পর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। তত ক্ষণে টিউবলাইট দেরিতে হলেও জলে উঠেছে মাথার মধ্যে। যদি অবস্থা আরও খারাপ হয়! কিছু সাবান, টয়লেট পেপার, ডিসইনফেক্ট্যান্ট, মাস্ক, চাল ডাল, টিনের খাবার মজুত করে রাখা দরকার অনিশ্চিত অন্তরীণ থাকার দিনগুলিতে। অবস্থা কোন দিকে মোড় নেয় বলা যায় না। দোকানে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ। যে জায়গায় থরে থরে সাজানো থাকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস, সে সমস্ত তাক বিলকুল খালি। কে বা কারা সমস্ত তুলে নিয়ে গিয়েছে রাতারাতি। শোনা গেল, কয়েকদিন নিয়মিত সাপ্লাইও আসছে না।

তার পর দেখতে দেখতে তিন সপ্তাহ লকডাউনে কাটিয়ে ফেলেছি। আমেরিকায় করোনাতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রাথমিক দু’-তিন হাজার ছাড়িয়ে তিন লক্ষতে পৌঁছে গেছে। কমার কোনও লক্ষণ নেই। পরের দু’সপ্তাহ নাকি আরও ভয়ংকর হবে। মৃত্যুর সংখ্যাও তাল মিলিয়ে বাড়ছে। মাস্ক, ভেন্টিলেটরের অপ্রতুলতা দেখা দিচ্ছে হাসপাতালে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ফুটপাতেও করোনা হানা, কলকাতায় গোষ্ঠী সংক্রমণের প্রাথমিক ইঙ্গিত?​

তবু তার মাঝেও ভাল কিছু দেখা যাচ্ছে। লোকজন বাইরে কম বেরোচ্ছেন। কিছুটা হলেও ঘরে বসে কাজ করার ব্যাপারটা অভ্যেস করে ফেলছেন মানুষ। প্যানিক ব্যাপারটা এখন তেমন দেখা যাচ্ছে না মানুষের মধ্যে। সুপারমার্কেট, দোকানে জিনিসপত্র আবার পাওয়া যাচ্ছে আগের মতোই। হাইওয়ে ধরে চলতে থাকা লজিস্টিক্সের মেরুদণ্ড ট্রাকবাহিনীর চলন দেখে কারণটা বুঝতে অসুবিধে হয় না। স্যানিটাইজার, মাস্ক অবশ্য এখনও নেই দোকানগুলিতে। হয়ত হেলথকেয়ার কর্মীদের চাহিদা মিটিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনোর মতো যথেষ্ট সাপ্লাই নেই এখনও। সে যাক গে। সাবান দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে অসুবিধে হচ্ছে না তেমন। কেমন যেন অভ্যেস হয়ে গিয়েছে এত দিনে।

দোকান বাজার পোস্ট অফিসে যেতে হচ্ছে না তেমন। পোস্ট অফিস , ফেডেক্স , ইউপিএস বাড়ি বয়ে পৌঁছে দেয় অনলাইনে কেনা জিনিসপত্র। তবু বেরোতে হলে দেখি সবজায়গায় ছ’ফুট দূরত্ব রাখার জন্য দাগ কাটা রয়েছে। চেক আউট কাউন্টার প্লাস্টিকের আবরণে ঢাকা। ওপারের ক্লার্কটির হাতে গ্লাভস , মুখে মাস্ক। ঘন ঘন স্যানিটাইজার দিয়ে কাউন্টারের তাক, কম্পিউটার , ক্রেডিট কার্ড প্রসেসিং মেশিন মুছছেন তিনি। মানুষজন সুশৃঙ্খল ভাবে কেনাকাটা করছেন। বৃদ্ধদের জন্য বেশির ভাগ দোকানে আলাদা সময় দেওয়া হয়েছে। বাজার করার সময় সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা-৯টা, যাতে অন্যদের সঙ্গে হুড়োহুড়ি করতে না হয় দুর্বল মানুষগুলিকে। পৃথিবীর সব থেকে শক্তিশালী দেশ ভেবেছিল এ আগুনের আঁচ পড়বে না গায়ে। তাই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল না যথেষ্ট। এখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্যাচ আপ করতে চাইছে। কতটা সফল হবে সময়ই বলবে। তবু চারপাশের স্থিতধী মানুষদের দেখে ভরসা পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: করোনার ধাক্কা কর্মক্ষেত্রে, লকডাউনের জেরে বেকারত্বের হার বাড়ল ২৩ শতাংশ​

এ সবের মধ্যেও রসবোধের অভাব হয়নি মার্কিনীদের। এক মার্কিন বন্ধু মজার কথা লিখেছে, এক সুপারমার্কেটে সকাল ৭টায় দোকান খোলার আগে বুড়োবুড়িদের লম্বা লাইন। সেই লাইন ভেঙে এক তরুণ যুবককে এগিয়ে যেতে দেখে এক বয়স্ক মহিলা তাঁর লাঠি দিয়ে ধাঁই করে এক ঘা বসিয়ে দিয়েছেন। ওই যুবক ফিরে দরজার কাছে আবার আসার চেষ্টা করতেই এক বয়স্ক ভদ্রলোক তাঁর ক্রাচ দিয়ে ফের এক ঠেলা দেন। ছেলেটি চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘‘আমাকে দোকান খুলতে না দিলে আপনারা শপিং করবেন কী করে! ’’

অমিত নাগ

ডেনভার, কলোরাডো, আমেরিকা

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement