Coronavirus

আশা রাখি, করোনার থাবা থেকে শীঘ্রই মুক্তি পাবে বিশ্ব

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২০ ১৭:০৯
Share:

এই মুহূর্তে ভার্জিনিয়াতে ‘স্টে অ্যাট হোম’ আর ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে অত্যাবশক পণ্য ও পরিষেবা ছাড়া সবই বন্ধ।

নর্দান ভার্জিনিয়ার একটি ছোট্ট শহর লিসবার্গ। ওয়াশিংটন ডিসি-র আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার আর লিসবার্গ-এর পরেই শুরু হয় কান্ট্রিসাইড। ওয়ালপেপার এর মতো সাজানো গোছানো রাস্তা দিয়ে ব্লুরিজ মাউন্টেন ও শেনানদোয়া নদী পেরিয়ে এক ঘণ্টার ড্রাইভে পৌঁছই আমার কর্মস্থল মার্টিনসবার্গ, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া। পেশায় আমি চিকিৎসক, সাইকিয়াট্রিস্ট।

আজকের তারিখে ভার্জিনিয়ায় প্রায় তিন হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং এর এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি নর্দার্ন ভার্জিনিয়ায়, যেখানে আমি থাকি। তবে কর্মস্থল ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪৫, মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে স্বস্তিদায়ক হলেও আমার মতো হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররাই আজ সব থেকে বিচলিত। শুধু নিজেকে নিরাপদ রাখা নয়, অন্যদেরও সুরক্ষিত রাখার দায়বদ্ধতা থাকার জন্য।

এই মুহূর্তে ভার্জিনিয়াতে ‘স্টে অ্যাট হোম’ আর ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে অত্যাবশক পণ্য ও পরিষেবা ছাড়া সবই বন্ধ। হাসপাতালগুলোতে যতটা সম্ভব পার্সোনাল প্রোটেকশন। এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে স্টাফদের গতিবিধি সীমাবদ্ধ করা রয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া রোগীদের আত্মীয়স্বজনদের ভিজিট না করতে দেওয়া, টেলিফোন এবং ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে স্টাফদের মধ্যে যোগাযোগ রাখা, মেডিসিন স্টাফ কাউন্টারে পৌঁছনোর জন্য রোবটিক ট্রলির সাহায্য নেওয়া, ক্লিনিকগুলোতে টেলি-মেডিসিন ও মুখোমুখি রোগী দেখার আগে পার্কিং লট-এ গাড়িতে বসে থাকা অবস্থাতেই প্রাথমিক স্ক্রিনিং করে ভিতরে আসতে দেওয়ার মতো অনেক পদক্ষেপ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও যখন শুনি আমার এক পরিচিত মেডিসিনের ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন আইসোলেশন রয়েছেন, তখন স্বাভাবিক নিয়মেই মুখের মাস্কটার দিকে নজর পড়ে। ব্যাগটা বার বার চেক করে দেখি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতলটা খালি হয়ে যায়নি তো? আজ থেকে দু’সপ্তাহ আগেও হাসপাতালে এন৯৫ বনাম সার্জিক্যাল মাস্ক পরা নিয়ে বিতর্ক ছিল। তবে, গত সপ্তাহে সমস্ত স্টাফদের বাধ্যতামূলক ভাবে মাস্ক ব্যবহার করার জন্য ইউনিভার্সিটি থেকে নির্দেশ এসেছে।

Advertisement

স্বাস্থ্যকর্মীদের কুর্নিশ জানিয়েছেন অনেকেই। ছবি: লেখক।


আজ আমরা এমন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, যখন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আইসিইউ-তে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। এবং আমেরিকার সার্জেন জেনারেল বলতে বাধ্য হন ‘ডেডলিয়েস্ট উইক’ অথবা যখন কেউ কেউ এই সময়কে পার্ল হারবার-এর ভয়াবহতার সঙ্গে তুলনা করছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: জেতা ছাড়া আর কোনও পথ নেই আমাদের কাছে

ইতিমধ্যেই কয়েক লক্ষ মানুষ কর্মহীন, সাধারণ মানুষের সে রকম সঞ্চয়ের মনোভাব না থাকায় তাঁরা অর্থনৈতিক ভাবে বিপন্ন বোধ করছেন। সরকার আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করলেও, তা যথেষ্ট নয়। পারিপার্শ্বিক আরও নানা কারণে ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় অনেকেই অবসাদগ্রস্ত। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় কন্সপিরেসি থিওরির জেরে অনেকেই প্যারানয়েড। মানসিক অসুস্থতা বেড়ে চলেছে অস্বাভাবিক হারে।

অন্য দিকে, মেডিকেল কলেজে আমার প্রাক্তন সহপাঠী বা সিনিয়ররা ভারতবর্ষের 'হেলথ কেয়ার সিস্টেম'-এ ঢালতরোয়াল ছাড়াই হাল ছেড়ে না দিয়ে নিজেদের এবং নিজেদের পরিবারকে হাই রিস্ক-এর মধ্যে ঠেলে দিয়েও পরিষেবা প্রদানের চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেই প্রচেষ্টায় সরাসরি অংশগ্রহণ করতে না পারলেও আমাদের মতো প্রবাসী ভারতীয় চিকিৎসকদের তরফ থেকে তাঁদের কুর্নিশ জানাই।

পৃথিবীর অন্যতম সুপার পাওয়ার এই দেশে আজ মৃত্যুর সংখ্যা ১৩ হাজারের কাছাকাছি আর আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লক্ষ ছুঁতে চলেছে, এই বাস্তব চিত্র আমেরিকার সাধারণ মানুষের গর্বকে কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ণ করেছে। নিউ ইয়র্ক বা ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটগুলোতে যেখানকার হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটরের অভাবে অসহায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেখানে আশার বাণী শুনিয়েছেন যে কিছু দিনের মধ্যেই তারা পুরো বিশ্বকে ভেন্টিলেটর সরবরাহ করতে পারবে! যাঁরা ভেন্টিলেটরের মতো জটিল যন্ত্র বানাতে পারেন, তাঁদেরও যখন রাশিয়া থেকে ৬০ টন মাস্ক-সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিষেবার সামগ্রী অথবা ভারতবর্ষের থেকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের মতো মেডিসিন আমদানির কথা ভাবতে হয়, তা শুধু একটি ভাইরাসের কাছে অসহায়তা নয়, বিশ্বজোড়া আধিপত্যের যৌক্তিকতা নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন তোলে।

তবে এ সময় তর্ক বিতর্কের নয়, দোষারোপের তো নয়ই। একটি আণুবীক্ষণিক জীবের থেকে এত ভয়, ভীতি, আশঙ্কা, অবসাদ থাকা সত্ত্বেও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসের উপর আস্থা রেখে আশা করি শীঘ্রই সমস্ত বিশ্ব বিপদ থেকে মুক্তি পাবে।

রাজদীপ বর্মণ, লিসবার্গ, ভার্জিনিয়া

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement