জন্মসূত্রে আমি কলকাতা ভবানীপুরের বাসিন্দা।পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা সব এ কলকাতায়।
কর্মসূত্রে আমি এবং আমার স্ত্রী বহুকাল পূর্ব আফ্রিকার ভারত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত তানজানিয়া দেশের বন্দর শহর দার-এস-সালামের বাসিন্দা।
বড় সুন্দর এই শহরটির পত্তন করেন সোহেলী সভ্যতার প্রবক্তা সুলতান মাজিদ বিন সাঈদ ১৮৬২ সালে।এই শহরে আধুনিক বিশাল উঁচু উঁচু অট্টালিকার সঙ্গে মিল খাইয়ে সোহেলী স্থাপত্যের পুরনো নির্মিত ইমারতের বেশ মনোরম সহবাস। এই শহর আবার নতুন পুরনো ইমারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জনবসতির এক অতি মনোরম মিলনস্থল।
সোহেলী সভ্যতার হাত ধরে প্রাধ্যান্য পেয়েছে আরব বসতি, সঙ্গে শান্তি প্রিয় ও ধর্মভীরু স্থানীয় বাসিন্দা। আছে ১৮৯৬ সালের শেষ দিকে কেনিয়া -উগান্ডা রেল লাইন পত্তন করতে আসা দেশি গুজরাতি ভাইদের বংশধররা।আর আছি আমরা, নানা দেশ থেকে কর্ম সূত্রে আসা চাকুরিজীবীরা। এই শহরেই আছে আমাদের নিজেদের ক্লাব 'বঙ্গ সংঘ'। সে খানে আমরা সব প্রবাসী বাঙালিরা মিলে মিশে এক হই। এই যেমন গত বছরে আমরা ৪৪ তম দুর্গা পুজো উদযাপন করলাম। মা দুর্গার আশীর্বাদে আমাদের এ খানে এখনও মারণ রোগ করোনা যাকে আমরা মেডিকেল পরিভাষায় কোভিড ১৯ বলে জানি, সে ভাবে থাবা বসাতে পারেনি। কিছু সংক্রমণ ছড়িয়েছে তবে তেমন প্রভাব ফেলেনি। তার মানে এই নয় যে আমরা সবাই এই দেশে খুব বেশি সাবধানে আছি, প্রচন্ড ভাবে লকডাউন মানছি তাও নয়। আমাদের আশেপাশের সব দেশ কিন্তু বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে কিন্তু আমাদের এই দেশে এখনও পর্যন্ত সব কিছু মোটামুটি স্বাভাবিক। জীবন সেই একই ছন্দে বইছে, কোথাও কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর নেই। সবাই কাজ করছে নিজের মতো করে, তবে প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন পুরোপুরি বন্ধ এবং সরকার চেষ্টা করছে যত সম্ভব জমায়েত কম করা যায়। মানুষ আতঙ্কে নেই এমনটা নয়। সব সময়েই কী এক অজানা ভয় আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। কী জানি! কখন কি হয়।
আমরা যারা বাইরে কাজে বেরোচ্ছি, মারণ ভাইরাস বাড়িতে বয়ে নিয়ে আসার এক অজানা ভয় কাজ করছে অনবরত। বিশেষ করে আমরা যারা ভারতীয় তাদের মধ্যে ভয়টা বেশি। আমাদের সরকার সব সময় প্রচার করছে জনমত গড়ে তুলতে। রোগ প্রতিরোধ এর পরিকাঠামো বাড়ানোর চেষ্টা করছে অনবরত। আমার স্ত্রী গান শেখান, আপাতত ছুটি দিয়ে দিয়েছেন সব ছাত্র ছাত্রীদের। আমরা সবাই চেষ্টা করছি মাস্ক, হাতে গ্লাভস এবং সব সময় পরিষ্কার থাকতে।সুযোগ বুঝে লাগিয়ে নিচ্ছি হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এই অসুখের জেরে আমাদের এখানে মার খাচ্ছে ভারতীয় খাবার দোকান। সব,সবই প্রায়ই খালি। এ দিকে প্লেন বন্ধ জানিনা কবে বাড়ি ফিরতে পারব। বাবা-মা আর সব আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ রাখছি হোয়াটসঅ্যাপে।ভগবান সর্বদাই মঙ্গলময়। তিনিই আমাদের রক্ষা করবেন।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, তানজানিয়া
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)